মিয়ানমারে জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির সাগাইং অঞ্চলের পালেতে জান্তা বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। কান ডাক পুলিশ ফাঁড়ির কাছে বোমা হামলার সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে  বিমানটি কাছাকাছি একটি গ্রামের বৌদ্ধ মঠে বিধ্বস্ত হয়। ধ্বংসস্তূপ থেকে এক পাইলটের হেলমেট ও খুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ইরাবতী।

এদিকে দেশটির উত্তর শান রাজ্যের নওংকিও শহর ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। শহরটি বর্তমানে জাতিগত ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জান্তা সেনারা এটি দখলের জন্য সামনে এগিয়ে আসছে। ম্যান্ডালে-লাশিও-মুসে বাণিজ্যপথে অবস্থিত এই শহরটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরের জুলাইয়ে টিএনএলএ শহরটি দখলের পর সেনা সরকার এটি পুনর্দখলের জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। লড়াই তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কায় শহর ও এর আশপাশের এলাকা থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা।

চীনের চাপের মুখে সম্প্রতি দেশটির কুনমিং শহরে বৈঠক করেছে জান্তা সরকার ও টিএনএলএর বিদ্রোহীরা। আগস্টে আবার বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও এরই মধ্যে নতুন করে হামলা জোরদার করেছে জান্তা বাহিনী।

চলমান এ অস্থিরতার মধ্যেই আগামী ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে জান্তা সরকার। তারা বলছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ২৬৭টি টাউনশিপে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। মিয়ানমারের প্রবাসী সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ বলছে, দেশের প্রায় ১৪৪টি টাউনশিপ বর্তমানে প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সরাসরি সংঘর্ষ চলছে ৭৯টি এলাকায়। তবে এই নির্বাচনে সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও কয়েকটি ছোট দল ছাড়া বড় কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না। 

এশিয়ার আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ানের বর্তমান সভাপতি মালয়েশিয়া জান্তা সরকারকে নির্বাচন বন্ধ করে সহিংসতা থামানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য মিত্র দেশগুলো তার নির্বাচনকে সমর্থন দিচ্ছে বলে দাবি করেছেন মিন অং হ্লাইং।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে

সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।

শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।

পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।

শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • সুদানের রাস্তায় শত শত মরদেহ, পালিয়েছে ৬০ হাজার বাসিন্দা
  • চীনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি, মিয়ানমারের দুই শহর থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর