Samakal:
2025-06-23@09:47:01 GMT

আফসোসের হার হামজাদের

Published: 11th, June 2025 GMT

আফসোসের হার হামজাদের

শেষ মুহূর্তে হামজা চৌধুরীর ডান পায়ের বুলেট গতির শট যদি জাল কাঁপাত কিংবা ফয়সাল আহমেদ ফাহিম যদি পোস্টের ওপর দিয়ে মেরে সুযোগ নষ্ট না করতেন, তাহলে ম্যাচের গল্পটি অন্য রকম হতো। বাংলাদেশের ফুটবল উন্মাদনায় যোগ হতো নতুন মাত্রা। কিন্তু উপচে পড়া গ্যালারির সমর্থন পেয়েও জ্বলে উঠতে পারেনি আক্রমণভাগ। ভাগ্যটাও যেন সঙ্গে ছিল না এদিন। রেফারির কয়েকটি সিদ্ধান্ত পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। তাই দর্শকদের তুমুল উন্মাদনা শেষ হলো এসব আফসোস নিয়ে। 

সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ২ গোলে পিছিয়ে পড়েও যে লড়াকু পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন হামজা চৌধুরী-শমিত সোমরা, তা হৃদয় কেড়েছে দর্শকের। কিন্তু পরাজয়ের কারণে সমর্থকরা মুখ গোমড়া করে ফিরেছেন বাসায়। মঙ্গলবার জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলের পরাজয়ে মূল পর্বে খেলার পথে বড় ধাক্কা খেল হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দল। গ্রুপ ‘সি’তে দুই ম্যাচে বাংলাদেশের পয়েন্ট মাত্র ১। সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের। বাংলাদেশের পরের ম্যাচ ৯ অক্টোবর হংকংয়ের বিপক্ষে একই স্টেডিয়ামে।

এদিন ষষ্ঠ প্রবাসী হিসেবে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে শমিত সোমের। এই মিডফিল্ডারের সঙ্গে শুরুর একাদশে জায়গা হয় আরও চার প্রবাসী তারিক কাজী, হামজা চৌধুরী, কাজেম শাহ ও ফাহমিদুল ইসলামের। ছয় প্রবাসীর মধ্যে বেস্ট ইলেভেনে ছিলেন না জামাল ভূঁইয়া। ভুটান ম্যাচের একাদশে থাকা তাজ উদ্দিন, সোহেল রানাকে রাখেননি কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে শুরু থেকেই নিখুঁত পাসিং, চাপ সৃষ্টি করা, দুর্দান্ত বোঝাপড়া আর টানটান ছন্দে চলা এক ফুটবল শো এদিন দেখান বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। 

গোল বাদে প্রথমার্ধের পুরোটা সময় ছন্দময় খেলা উপহার দেন শমিত-ফাহমিদুলরা। মধ্যমাঠে হামজা চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের আক্রমণের মূল কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর লং পাসগুলো ছিল বিপজ্জনক। শমিত সোম দেখিয়েছেন ফুটবলশৈলী। আর মুভমেন্ট, বল কন্ট্রোল, স্পিড– সব জায়গায় নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন ফাহমিদুল। রাইট উইংয়ে শাকিল আহাদ তপু কয়েকবারই গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেন। কখনও রাকিব হোসেন, কখনও বা ফাহমিদুল তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। 

পরিকল্পিত ফুটবল খেলা বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে ম্যাচের ৪৫ মিনিটে। সিঙ্গাপুরের স্টুয়ার্ট হ্যারিসের লম্বা থ্রোতে গোলের রাস্তা খোলে। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের শট লাফিয়ে উঠে ফিস্ট করেন গোলরক্ষক মিতুল মারমা। বল চলে যায় হ্যারিসের পায়ে। ততক্ষণে গোলপোস্ট থেকে অনেক দূরে চলে যান মিতুল। তাঁর ক্রসে ডান পায়ের ভলিতে জাল কাঁপান নাম্বার সেভেন সং।

অথচ প্রথম ৪৫ মিনিট বাংলাদেশই গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল বেশি। ১৫ মিনিটে দারুণ একটি আক্রমণ শানায় তারা। ডান প্রান্ত দিয়ে শাকিল আহাদ তপুর নিখুঁত পাসে বক্সের মধ্যে বল পান রাকিব হোসেন। তাঁর নেওয়া দুর্বল শট সিঙ্গাপুরের এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে গোলরক্ষকের হাতে চলে যায়। ৩৯ মিনিটে হৃদয়ের ডিফেন্স চেরা পাস খুঁজে নেয় ফাহমিদুলকে। ইতালিয়ান এ প্রবাসীর শট প্রতিহত করেন বাহারুদ্দিন। এর মধ্যে ম্যাচের ৩১ মিনিটে মিতুল মারমা অসাধারণ সেভ করেন। বাঁ প্রান্ত থেকে ফান্দির শট দূরের পোস্ট দিয়ে চলে যাচ্ছিল জালে। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণভাবে বলটি ফেরান বাংলাদেশ গোলরক্ষক।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোলের সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ৪৮ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে রাকিবের ক্রসে বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি কাজেম শাহর বদলি হিসেবে নামা শাহরিয়ার ইমন। এর ১০ মিনিট পরই সিঙ্গাপুর দ্বিতীয় গোল করলে বাংলাদেশ শিবিরে নেমে আসে হতাশা। ৫৮ মিনিটে হামি শাহিনের শট মিতুল মারমা ফেরালেও বল চলে যায় ইকশান ফান্দির পায়ে। ঠান্ডা মাথায় প্লেসিং শটে জাল কাঁপান তিনি। 

এই গোলের পর উত্তাল গ্যালারিতে নেমে আসে নীরবতা। ৬৭ মিনিটে প্রবাসী আর বাংলাদেশি ফুটবলারের সমন্বয়ে গোলের আনন্দে মেতে ওঠে সবাই। মাঝমাঠ থেকে হামজার নিখুঁত পাস খুঁজে নেয় রাকিব হোসেনকে। তাঁর শট সিঙ্গাপুর গোলরক্ষকের পায়ের ফাঁক দিয়ে চলে যায় জালে। এরপর প্রচুর চাপ প্রয়োগ করে খেলতে থাকেন স্বাগতিকরা। বেশ কয়েকটি কর্নার আদায় করেন হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার শিষ্যরা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোলটি মেলেনি। তাই উৎসবের মঞ্চটা রূপ নেয় বিষাদে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রব স ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

পরিদের জন্য একটি দিন

ছোটবেলায় আমরা প্রায় সবাই কোনো না কোনো এক পরির গল্প শুনে ঘুমিয়েছি। দাদি-নানির মুখে শোনা কল্পনার জগতে হারিয়ে গিয়েছি, অথবা মায়ের কণ্ঠে ঝিমিয়ে পড়েছি একজোড়া ডানাবিশিষ্ট এক অলৌকিক সত্তার গল্প শুনতে শুনতে। সেই পরিরা হেসে উঠত গোলাপি ঠোঁটে, ঝলমলে পোশাক পরে ঘুরে বেড়াত প্রজাপতির মতো ডানায়, হাতে থাকত ইচ্ছাপূরণের জাদুর কাঠি। তারা কখনও বাঁচাত রাজকন্যাকে, কখনও পথ দেখাত হারিয়ে যাওয়া পথিককে আর আমরা শিশুরা ছোট ছোট কষ্ট ভুলে হারিয়ে যেতাম সেই রূপকথার মধ্যে।
২৪ জুন, আন্তর্জাতিক পরি দিবস। এমন এক দিন, যখন আমরা ফিরে তাকাই সেই ছোটবেলার দিকে, আবারও একটু পরি হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখি।
পরি চরিত্রের শিকড় ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বের নানা সংস্কৃতিতে। ইতালীয় লোককথা হোক কিংবা মধ্যযুগীয় ফরাসি সাহিত্যে চার্লস পেরোঁর ‘ফেয়ারি টেলস’–সব জায়গাতেই পরির উপস্থিতি চোখে পড়ে। পিটার প্যানের পাশে থাকা টিংকারবেল, সিন্ডারেলার পাশে থাকা গডমাদার বা শিশুর দাঁত নিয়ে যাওয়া টুথ ফেয়ারি–সব চরিত্রই পরিকে নতুন নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা কেবল সুন্দর নয়, তারা সাহায্য করে, পথ দেখায়, রক্ষা করে।
বাঙালির কল্পনায় পরি এসেছে নানা রূপে। শাড়ি পরে, টিকলি আর টিপ পরে; যে মুখটিপে হাসে। সবচেয়ে সুন্দর রূপ– সেই পরি দেখতে মায়ের মতো।
পরির গল্প শুনে একটি শিশু মনে করে– সেও পরি। সে উড়তে পারে, শুধু ডানাগুলো এখন অদৃশ্য। মায়ের কোলে লাফিয়ে এসে পড়া এক উড়ন্ত পরি; সে কখনও ধবধবে সাদা ডানাওয়ালা, আবার কখনও নিজের মতো সাদামাটা, শ্যামলা ও ঢ্যাঙা। যাদের ডানা আছে, কিন্তু কেউ দেখে না।
আবার ছোটবেলায় গল্পখেকো মেয়েটি যে বইয়ের মলাটে প্রথম পরি দেখেছিল, সে এখন বড় হয়ে নিজেকেই পরি ভাবে। সে জানে, পরি মানে শুধু সৌন্দর্য নয়, তার থাকে ইচ্ছা পূরণ করার ক্ষমতা। পরি মানে স্বাধীনতা। নিজে উড়তে পারা। কাউকে ঠেস না দিয়ে নিজেই হাল ধরতে পারা।
আমরা অনেক সময় বলি, ‘ডানাকাটা পরি’। এই কথার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক নির্মম বাস্তবতা। আমাদের সমাজে বহু মেয়েকে আমরা সেই ডানাকাটা পরিতে পরিণত করি; যাদের স্বপ্নগুলো আমরা নিঃশব্দে ছেঁটে দিই। তারা পড়তে চায়, সাজতে চায়, উড়তে চায়– কিন্তু বলা হয়, এত স্বাধীনতা তোমাদের জন্য নয়। যেন পরি হতে গেলে তাকে শুধু সুন্দর হতে হবে; ওড়ার সাহস কিংবা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার নেই। আসলে ডানাটা ওড়ার প্রতীক। সেই ওড়াকে পশ্চাৎপদ সমাজ ভয় পায়। যে নারী নিজে পথ বেছে নেন, নিজের মতো করে বাঁচেন, তাঁকে আমরা পরি না বলে ‘বিদ্রোহী’ বলি। অথচ তিনিই তো প্রকৃত পরি, যে কারও দয়ার পাত্র নন, নিজের শক্তিতে উড়তে জানেন।
আজকের দিনেও আমাদের চারপাশে অনেক পরি আছেন। যারা হয়তো পরির মতো দেখতে নন; যাদের ডানাগুলো তাদের মন আর মস্তিষ্কে লুকানো। তারা কেউ মা, কেউ শিক্ষক, কেউ চিকিৎসক, কেউবা একা ঘর সামলে চাকরি করেন। তারা হয়তো রূপকথার পরির মতো ঝলমলে নন; কিন্তু তারা নিজেরাই নিজের ইচ্ছাপূরণ করেন। অন্যদের ইচ্ছেও পূরণ করতে জানেন। তাদের ডানাগুলো হয়তো ধবধবে সাদা নয়; কিন্তু সেই ডানাতেই উড়ে সাহস, সহমর্মিতা, মমতা আর শক্তি।
আন্তর্জাতিক পরি দিবসে আমরা চাই পরিকে শুধু রূপকথায় নয়, জীবনের বাস্তবতায় স্বীকৃতি দিতে। আমাদের কন্যাদের শেখাতে পারি– তারা পরি হতে পারে শুধু রূপে নয়, সাহসে। আমাদের বোন, মা, প্রেমিকা বা বন্ধুরা– তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো গল্পের পরি। তারা যেন নিজস্ব স্বপ্ন নিয়ে উড়তে পারে, সেই স্বাধীনতা যেন আমরা দিতে শিখি।
আজ একটি ছোট উৎসব করা যেতে পারে– পরির থিমে সাজানো একটি পার্টি, ছোটদের অঙ্কন প্রতিযোগিতা বা শুধু একটি বই পড়া, যেখানে একটি পরি একা লড়ে জিতেছে। এমন গল্প পড়া, যেখানে পরি শুধু সুন্দর নয়, সাহসীও।
এই বিশেষ দিবসে আমরা যেন ভুলে না যাই পরির ডানার যত্ন নিতে হয়। যাদের আমরা ভালোবাসি, যাদের আমরা সম্মান করি, যারা আমাদের পাশে থাকে তাদের ডানাগুলো আমরা যেন না ছেঁটে ফেলি। বরং তাদের ওড়ার সাহস দিই। তাদের বলি– ‘তুমি পারবে। তুমি পরি।’ এটুকুই চাওয়া প্রত্যেক নারী যেন তাঁর ভেতরের পরিকে চিনতে পারেন আর তাঁর ডানাগুলো ছড়িয়ে দিতে পারেন আকাশজুড়ে। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এক অকুতোভয় বুদ্ধিজীবীর ৯০তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
  • শিক্ষকই তো তিনি আমার
  • সরাসরি: ‘যে আলোচনার টেবিল ইরান কখনও ছাড়েনি, সেখানে কীভাবে ফিরবে?’ 
  • আফসোসে রেখে গল টেস্ট ড্র
  • সিন্ধু চুক্তি আর পুনর্বহাল নয়: অমিত শাহ 
  • প্রেমের গুঞ্জনে জাহ্নবীর সিলমোহর
  • দর্শক আমাকে এশা নামে ডাকছে, এখানেই কাজের সার্থকতা: পূজা
  • দর্শক আমাকে এশা নামে ডাকছেন, এখানেই কাজের সার্থকতা: পূজা ক্রুজ
  • পরিদের জন্য একটি দিন