করোনা শনাক্তের কিট সংগ্রহে জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও দেশি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিট সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে কিছু কিট স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি চাহিদার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ২৮ হাজার দ্রুত শনাক্ত কিট দিয়েছে গতকাল। আজ ১০ হাজার আরটিপিসিআর কিট দেওয়ার কথা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের কাছে ১ লাখ আরটিপিসিআর কিট ও ৫ লাখ দ্রুত শনাক্তকরণ কিট চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে কিট বিক্রি করত, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর পাশাপাশি ঢাকায় চীনা দূতাবাসের সঙ্গেও কথা হয়েছে।

আরও পড়ুননতুন ধরনের করোনা ‘এক্সএফজি’ শনাক্ত, ভারত ভ্রমণে সতর্কবার্তা১০ জুন ২০২৫

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৩ জনের। পরীক্ষা হওয়া ১০১ জন ও শনাক্ত ১৩ জনের সবাই ঢাকা শহরের। এর অর্থ ঢাকার বাইরে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না।

এক সপ্তাহে একাধিক জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা শহরে। কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলায় এ মাসে ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, একজন রোহিঙ্গাশিবিরের। কক্সবাজারে আরটিপিসিআর করার সুযোগ আছে। তবে দ্রুত করোনা পরীক্ষার কিট নেই। চট্টগ্রাম জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় গত ১০ দিনে ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরটিপিসিআর থাকলেও জেলায় কোনো দ্রুত পরীক্ষার কিট নেই।

বরিশাল বিভাগের কোনো জেলায় করোনা পরীক্ষার কোনো ধরনের কিট নেই বলে বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়েছে। সিলেট জেলাতেও কোনো পরীক্ষার কিট নেই বলে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুনকরোনা বাড়ছে, পরীক্ষার কিট সংকট, টিকার মজুত কম ০৯ জুন ২০২৫

জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যতটুকু পরীক্ষার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণ দ্রুত ও বেশি ছড়িয়ে পড়লে তা ঝুঁকি বাড়াবে। সুতরাং সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যক্তিপর্যায়ে, সামাজিক পর্যায়ে ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো পর্যন্ত বিশেষ কোনো সতর্কতা জারি করেনি। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, ২, ৪, ৬ ও ৮ জুন স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনলাইনে করোনা বিষয়ে সভা করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জেলার সব সিভিল সার্জনকে, সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা কী আছে, টিকা দেওয়ার প্রয়োজন হলে কীভাবে তা দেওয়া হবে, এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা হচ্ছে।

আরও পড়ুনসংক্রমণ রোধে এখনই পদক্ষেপ নিন৫৪ মিনিট আগে

টিকা নিয়ে সংশয়

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) কার্যালয় জানিয়েছে, তাদের কাছে ৩১ লাখ টিকা মজুত আছে। এই টিকা ফাইজার কোম্পানির। এর মধ্যে ১৭ লাখের বেশি টিকার মেয়াদ শেষ হবে ৫ আগস্টের মধ্যে। গত দুই মাসে এই টিকাগুলো বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ফাইজারের এই টিকা তৈরি করা হয়েছিল করোনার মূল ভাইরাসকে মাথায় রেখে। বাংলাদেশে এখন ছড়িয়ে পড়া ধরনের ক্ষেত্রে তা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে কারও কারও সংশয় আছে। এ ব্যাপারে কারিগরি কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। সেই কমিটি গঠনের কাজ চলছে।

আরও পড়ুনদেশে আরও ১৩ জন করোনায় আক্রান্ত১৪ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশে করোনার অমিক্রন ধরনের একটি উপধরন এখন ছাড়িয়ে পড়ছে। এই উপধরনটিকে বলা হচ্ছে জেএন–১। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, নতুন এই উপধরনের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে কম।

তবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার খবরটি এসেছে ঠিক ঈদের সময়। এ সময় বহু মানুষ পশুর হাটে একত্রিত হয়েছেন। ছুটিতে বড় বড় শহর থেকে গ্রামে যাওয়ার সময় মানুষকে দীর্ঘ সময় বাস–ট্রেন–লঞ্চে ভিড়ের মধ্যে থাকতে হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও ভিড় ছিল প্রচণ্ড। এসবই সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

আরও পড়ুনবাড়ছে করোনা, নতুন ধরনের প্রকোপ০৭ জুন ২০২৫

স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে

বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনের। মহামারির শুরু থেকেই মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর ও জনস্বাস্থ্যবিদ মোশতাক হোসেন গতকালও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে, সাবান পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করতে হবে, জ্বর–কাশি–শ্বাসকষ্ট থাকলে সুস্থ মানুষ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ র ক ট প রথম আল ক স ক রমণ ধরন র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

এবার চাকরি থেকে বরখাস্ত হলেন যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস

সাময়িক বরখাস্তের পর এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসকে ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’–এর কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার জারি করা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এই গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে এই দণ্ড কার্যকর হবে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।

প্রজ্ঞাপনে বিভিন্ন তথ্য ও অভিযোগ উল্লেখ করে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসকে ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক হিসেবে নিয়োগের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে যোগদানও করেন। তাঁর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ায় তাঁর আদেশ প্রত্যাহার বা বাতিলের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি গত বছরের ৩ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। এরপর তাঁকে যুগ্ম সচিব হিসেবে পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হলেও এখন পর্যন্ত তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেননি। অর্থাৎ তিনি গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে এখনো বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন, যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুসারে ‘পলায়ন’–এর পর্যায়ভুক্ত অপরাধ।

ধনঞ্জয় কুমার দাসের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যার মামলা রুজু হওয়াসহ আরও বিভিন্ন অভিযোগের কথা উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া, তদন্ত বোর্ড গঠন ও সরকারি কর্ম কমিশনের মতামতের কথা তুলে ধরা হয় প্রজ্ঞাপনে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ‘চাকরি থেকে বরখাস্ত’ করার দণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে, বরখাস্ত হওয়া যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস গতকাল রাতে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘অবৈধ ইউনূস সরকার আমাকে নাকি বরখাস্ত করছে! আজ থেকে আমি মুক্ত, স্বাধীন। নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে এমন অথর্ব সরকারের অধীনে আমাকে একদিনও চাকরি করতে হয়নি। থ্রি চিয়ার্স ফর “মোখলেসীয় সিভিল সার্ভিস”।’

আরও পড়ুনতিন সচিবসহ যেসব কর্মকর্তাকে পাঠানো হলো বাধ্যতামূলক অবসরে২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ