কিটের অভাব, ঢাকার বাইরে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না
Published: 11th, June 2025 GMT
করোনা শনাক্তের কিট সংগ্রহে জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও দেশি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিট সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে কিছু কিট স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি চাহিদার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ২৮ হাজার দ্রুত শনাক্ত কিট দিয়েছে গতকাল। আজ ১০ হাজার আরটিপিসিআর কিট দেওয়ার কথা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের কাছে ১ লাখ আরটিপিসিআর কিট ও ৫ লাখ দ্রুত শনাক্তকরণ কিট চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে কিট বিক্রি করত, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর পাশাপাশি ঢাকায় চীনা দূতাবাসের সঙ্গেও কথা হয়েছে।
আরও পড়ুননতুন ধরনের করোনা ‘এক্সএফজি’ শনাক্ত, ভারত ভ্রমণে সতর্কবার্তা১০ জুন ২০২৫স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৩ জনের। পরীক্ষা হওয়া ১০১ জন ও শনাক্ত ১৩ জনের সবাই ঢাকা শহরের। এর অর্থ ঢাকার বাইরে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না।
এক সপ্তাহে একাধিক জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা শহরে। কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলায় এ মাসে ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, একজন রোহিঙ্গাশিবিরের। কক্সবাজারে আরটিপিসিআর করার সুযোগ আছে। তবে দ্রুত করোনা পরীক্ষার কিট নেই। চট্টগ্রাম জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় গত ১০ দিনে ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরটিপিসিআর থাকলেও জেলায় কোনো দ্রুত পরীক্ষার কিট নেই।
বরিশাল বিভাগের কোনো জেলায় করোনা পরীক্ষার কোনো ধরনের কিট নেই বলে বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়েছে। সিলেট জেলাতেও কোনো পরীক্ষার কিট নেই বলে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুনকরোনা বাড়ছে, পরীক্ষার কিট সংকট, টিকার মজুত কম ০৯ জুন ২০২৫জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যতটুকু পরীক্ষার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণ দ্রুত ও বেশি ছড়িয়ে পড়লে তা ঝুঁকি বাড়াবে। সুতরাং সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যক্তিপর্যায়ে, সামাজিক পর্যায়ে ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো পর্যন্ত বিশেষ কোনো সতর্কতা জারি করেনি। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ২, ৪, ৬ ও ৮ জুন স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনলাইনে করোনা বিষয়ে সভা করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জেলার সব সিভিল সার্জনকে, সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা কী আছে, টিকা দেওয়ার প্রয়োজন হলে কীভাবে তা দেওয়া হবে, এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা হচ্ছে।
আরও পড়ুনসংক্রমণ রোধে এখনই পদক্ষেপ নিন৫৪ মিনিট আগেটিকা নিয়ে সংশয়
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) কার্যালয় জানিয়েছে, তাদের কাছে ৩১ লাখ টিকা মজুত আছে। এই টিকা ফাইজার কোম্পানির। এর মধ্যে ১৭ লাখের বেশি টিকার মেয়াদ শেষ হবে ৫ আগস্টের মধ্যে। গত দুই মাসে এই টিকাগুলো বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ফাইজারের এই টিকা তৈরি করা হয়েছিল করোনার মূল ভাইরাসকে মাথায় রেখে। বাংলাদেশে এখন ছড়িয়ে পড়া ধরনের ক্ষেত্রে তা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে কারও কারও সংশয় আছে। এ ব্যাপারে কারিগরি কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। সেই কমিটি গঠনের কাজ চলছে।
আরও পড়ুনদেশে আরও ১৩ জন করোনায় আক্রান্ত১৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে করোনার অমিক্রন ধরনের একটি উপধরন এখন ছাড়িয়ে পড়ছে। এই উপধরনটিকে বলা হচ্ছে জেএন–১। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, নতুন এই উপধরনের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে কম।
তবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার খবরটি এসেছে ঠিক ঈদের সময়। এ সময় বহু মানুষ পশুর হাটে একত্রিত হয়েছেন। ছুটিতে বড় বড় শহর থেকে গ্রামে যাওয়ার সময় মানুষকে দীর্ঘ সময় বাস–ট্রেন–লঞ্চে ভিড়ের মধ্যে থাকতে হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও ভিড় ছিল প্রচণ্ড। এসবই সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুনবাড়ছে করোনা, নতুন ধরনের প্রকোপ০৭ জুন ২০২৫স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে
বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনের। মহামারির শুরু থেকেই মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর ও জনস্বাস্থ্যবিদ মোশতাক হোসেন গতকালও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে, সাবান পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করতে হবে, জ্বর–কাশি–শ্বাসকষ্ট থাকলে সুস্থ মানুষ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ র ক ট প রথম আল ক স ক রমণ ধরন র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সুপার ব্যালন ডি’অর ফিরলে জিততে পারেন কে, মেসি না রোনালদো
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু হবে শনিবার। এ টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স দিয়ে নিশ্চিত হতে পারে এবারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী। এর মধ্যে গতকাল সুপার ব্যালন ডি’অরের প্রসঙ্গ ফিরিয়ে এনেছে পুরস্কারটি প্রচলন করা ফরাসি সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’।
সুপার ব্যালন ডি’অর একবারই দেওয়া হয়েছে। একাধিকবার ব্যালন ডি’অরজয়ী ফুটবলারদের মধ্যে ভোটাভুটির মাধ্যমে ১৯৮৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর এ ট্রফি জেতেন আর্জেন্টিনা, স্পেন ও রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি আলফ্রেডো ডি স্টেফানো। বিশেষ এ পুরস্কারের জন্য তখন শুধু ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়দের বিবেচনা করা হতো।
আরও পড়ুনঢাকায় মেয়েদের সাফে অংশ নেবে না ভারত৩ ঘণ্টা আগেভোটাভুটিতে ডাচ কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফ ও ফরাসি কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনিকে পেছনে ফেলে সুপার ব্যালন ডি’অর জেতেন আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া ডি স্টেফানো। স্পেনের নাগরিকত্বও থাকায় মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকায় দুবার ব্যালন ডি’অরজয়ী এই কিংবদন্তি জায়গা পান।
ব্যালন ডি’অরের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডলে গতকাল বাংলাদেশ সময় রাতে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘এমন একটি ব্যালন ডি’অর, যা বাকিগুলোর চেয়ে আলাদা। ১৯৮৯ সালে একজন খেলোয়াড় এই ট্রফি জিতেছিলেন, যা আর কারও নেই; সুপার ব্যালন ডি’অর। কিন্তু তিনি কে ছিলেন? এখন যদি এই পুরস্কার আবারও দেওয়া হয়, তাহলে কে এটা জয়ের যোগ্য?’
ভিডিওতে ডি স্টেফানো, প্লাতিনি, ক্রুইফদের ছবি দেখানোর পাশাপাশি কণ্ঠের ধারাবর্ণনাও আছে, ‘১৯৮৯ সালে ফ্রান্স ফুটবল গত তিন দশকের সেরা ব্যালন ডি’অরজয়ীকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তা একটি নিয়মের ভিত্তিতে: একাধিকবার ব্যালন ডি’অরজয়ী। কারা ভোট দিয়েছিলেন? ফ্রান্স ফুটবলের পাঠক, বিচারকমণ্ডলী এবং পূর্বের (ব্যালন ডি’অর) বিজয়ীরা।’ ভিডিওটির শেষে জানতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কি নতুন সুপার ব্যালন ডি’অর চান? তাহলে এটা কে জিততে পারেন?’
একটি বিষয় জানিয়ে রাখা ভালো, ১৯৮৯ সালে সুপার ব্যালন ডি’অর পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকায় আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা বিবেচিত হননি। কারণ, ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এ পুরস্কার শুধু ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়দেরই দেওয়া হতো। ম্যারাডোনাকে ১৯৯৫ সালে ‘গোল্ডেন ব্যালন ডি’অর’ দেওয়া হয়েছিল, যেটা ছিল ইউরোপের বাইরের খেলোয়াড়দের জন্য।
আরও পড়ুনপোল্যান্ড কোচের পদত্যাগ, ‘যুদ্ধ’ জিতলেন লেভা৪ ঘণ্টা আগেফ্রান্স ফুটবল সুপার ব্যালন ডি’অর পুরস্কারটি ফিরিয়ে আনছে কি না, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা যায়নি। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’ এর আগে জানিয়েছিল, ২০২৯ সালে সুপার ব্যালন ডি’অর দেওয়া হতে পারে। কিন্তু ব্যালন ডি’অরের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডলে সুপার ব্যালন ডি’অরের প্রসঙ্গ ফিরে আসায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে গুঞ্জন, অনেকে আবার এক ধাপ এগিয়ে এখনই বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন, এখন এ পুরস্কার দেওয়া হলে কে জিততে পারেন।
সুপার ব্যালন ডি’অর পুরস্কার ফিরিয়ে আনা হলে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি লিওনেল মেসি ও পর্তুগালের কিংবদন্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তা জয়ের দৌড়ে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। মেসি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন আটবার, রোনালদো জিতেছেন পাঁচবার। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে প্রায় সব পুরস্কারই জেতা হয়ে গেছে মেসির। রোনালদো শুধু বিশ্বকাপই জিততে পারেননি। এ ছাড়া মেসির মতোই ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার, একাধিকবার জিতেছেন লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ।
১৯৯৫ থেকে এ পর্যন্ত হিসাব করলে মেসি ও রোনালদোর বাইরে শুধু একজন খেলোয়াড়ই একাধিকবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। ব্রাজিলের হয়ে দুবার বিশ্বকাপজয়ী রোনালদো নাজারিও। ১৯৯৭ ও ২০০২ সালে বর্ষসেরার এ পুরস্কার জেতেন কিংবদন্তি স্ট্রাইকার।