মায়ের সঙ্গে গোসলে নেমে ভেসে যায় তিন বোন, একজনের লাশ উদ্ধার
Published: 11th, June 2025 GMT
মায়ের সঙ্গে নদীতে গোসলে নেমেছিল তিন বোন—মরিয়ম (৭), তৈয়বা (১০) ও টিয়া (১৪)। পানিতে বল নিয়ে খেলছিল তারা। হঠাৎ হাত ফসকে বলটি স্রোতে ভেসে যায়। বল ধরতে গিয়ে স্রোতের টানে একসঙ্গে তিন বোনই ভেসে যায়। স্থানীয় লোকজন ছোট দুই বোনকে উদ্ধার করতে পারলেও নিখোঁজ হয় তৈয়বা। ঘটনার ৩৩ ঘণ্টা পর উদ্ধার হয়েছে তার লাশ।
ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের মুশকিলাহাটী এলাকায়। মারা যাওয়া তৈয়বা স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। মেয়েদের বাবা কামাল মিয়া পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে মেঘনা নদীর ভৈরব রেলসেতু এলাকায় কবিতা বেগম তাঁর তিন মেয়েকে নিয়ে গোসল করতে যান। মেয়েরা পানিতে নেমে বল হাতে খেলছিল। এ সময় বলটি হাত থেকে ছুটে স্রোতের টানে দূরে চলে যায়। বল আনতে গিয়ে হঠাৎ তিন বোনই পানির স্রোতে ভেসে যায়। মা কাপড় ধোয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। নদীতে মেয়েদের ডুবে যেতে দেখে চিৎকার করেন তিনি। আশপাশে থাকা অন্যরা ছুটে এসে মরিয়ম ও টিয়াকে জীবিত উদ্ধার করেন। তবে তলিয়ে যায় তৈয়বা।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ভৈরব ইউনিটের সদস্যরা নদীতে তল্লাশি শুরু করেন। পরে ময়মনসিংহ থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল অভিযানে যোগ দেয়। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে নদীতে ভেসে ওঠে তৈয়বার লাশ।
তৈয়বার বাবা কামাল মিয়া বলেন, ‘আমার মেয়েরা ভালো করে সাঁতার জানত না। বল নিয়ে নদীতে গোসল করা আমার মেয়েদের পছন্দ। এই বলই আমার মেয়ের জীবন নিয়ে গেল।’ তিনি আরও বলেন, ছোট ও বড় মেয়ে সুস্থ আছে।
উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দেন ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস পরিদর্শক আজিজুল হক। তিনি বলেন, মেঘনায় স্রোত ছিল। এ জন্য উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা কঠিন ছিল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহে ছিনতাইয়ের শিকার ব্যাংক কর্মকর্তা, ৯৯৯–এ ফোন পেয়ে ৩ জনকে আটক
ময়মনসিংহ নগরীতে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়া এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন পেয়ে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে ছিনতাই হওয়া মুঠোফোন ও ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে তোলা টাকা।
ভুক্তভোগী ব্যাংক কর্মকর্তা মনিরুল হক (৩১) নগরের ছোট বাজার এলাকার আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হকের ছেলে।
পুলিশ জানায়, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ব্যাংকের কাজ শেষে মাসকান্দা এলাকায় যান মনিরুল হক। কেনাকাটা শেষে বাসায় ফেরার সময় রাত সাড়ে আটটার দিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে নামার পর একটি দল তাঁর পথরোধ করে। ছিনতাইকারীরা তাঁকে চাকু দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র দিতে বলে। প্রথমে তিনি রাজি না হলে মারধর শুরু করে। পরে সঙ্গে থাকা আড়াই হাজার টাকা, মুঠোফোন, মানিব্যাগ ও এতে থাকা ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ছিনিয়ে নেয়।
মনিরুল হক বলেন, ‘ভয় দেখিয়ে ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ডও নিয়ে যায়। একপর্যায়ে আমি চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে ছিনতাইকারীরা চলে যায়। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন দিলে টহলরত পুলিশ আমার কাছে এসে ঘটনার বিস্তারিত শোনে।’
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নগরের বলাশপুর নয়াপাড়া এলাকার শরাফ উদ্দিনের ছেলে তানভির হোসেন ওরফে অন্তর (২৫), শম্ভুগঞ্জের রাঘবপুর এলাকার আদাস আলীর ছেলে মো. মিলন (২৫) ও একই গ্রামের সাদিকুল ইসলামের ছেলে সাব্বির আহমেদকে আটক করা হয়েছে। গতকাল দিবাগত রাত ১২টা থেকে দেড়টার মধ্যে তাঁদের নিজ নিজ এলাকা থেকে আটক করা হয়। পুলিশের ভাষ্য, তানভির হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি ডাকাতি মামলা ও মিলনের বিরুদ্ধে একটি ছিনতাইয়ের মামলার তথ্য আছে থানায়।
ছিনতাইয়ের শিকার মনিরুল হক বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও দুই থেকে তিনজনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
নগরের ৩ নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল হোসেন বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তার ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ওই এলাকায় ছিনতাই কাজে জড়িত ব্যক্তিদের ছবি দেখালে ব্যাংক কর্মকর্তা দুজনকে চিনতে পারেন। পরে একে একে তিনজনকে আটক করা হয়। এ চক্রের আরও সদস্য আছে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, থানায় মামলা শেষে আজ মঙ্গলবার পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে ছিনতাইকারী দলের তিন সদস্যকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।