নড়াইলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে বৈষম্যবিরোধী তিন নেতাকে শোকজ
Published: 12th, June 2025 GMT
নড়াইলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে দেওয়া চিঠিতে কেন তাঁদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংগঠনটির মুখপাত্র নুসরাত জাহান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।
শোকজের নোটিশ পাওয়া তিন নেতা হলেন সংগঠনটির জেলা শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুর রহমান (মেহেদী), আমিরুল ইসলাম ও সদর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম (মামুন)।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৯ জুন নড়াইল জেলা শাখার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে জড়িত ছিলেন জেলা শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুর রহমান ও আমিরুল ইসলাম। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাঁদের কেন সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে না, তার যৌক্তিক কারণ আগামী সাত দিনের মধ্যে জানাতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না পেলে তাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সদর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম মামুনকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, আগামী সাত দিনের মধ্যে যৌক্তিক কারণ সংগঠনকে জানাতে হবে। একই সঙ্গে কারণ দর্শানোর আগপর্যন্ত তাঁকে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো।
নোটিশ পাওয়া আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘৯ জুন আমার ওপর হামলা করা হয়েছিল। আর এখন আমাকেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। আমি নিয়মানুযায়ী নোটিশের জবাব দেব।’
আরেক যুগ্ম সদস্যসচিব আমিরুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি মোটরসাইকেলে আছেন জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। অন্যদিকে সদর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম মামুনকে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, ৬ জুন সংগঠনের ফেসবুক পেজে জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে একটি পোস্ট দেন সংগঠনটির যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুর রহমান। পোস্টে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি ছবি সংযুক্ত করে প্রশাসনকে শহীদ, আহত ও সাধারণ মানুষের প্রতি আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান। পোস্টটি পরে আরেক যুগ্ম সদস্যসচিব আমিরুল ইসলাম মুছে ফেলেন। এ নিয়ে মেসেঞ্জার গ্রুপে দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপর ৮ জুন জ্যেষ্ঠ নেতারা মীমাংসার চেষ্টা করলেও তাঁরা সাড়া দেননি। পরদিন ৯ জুন নড়াইল শহরের পুরোনো বাস টার্মিনালে তাঁদের মধ্যে মারামারি হয়। এতে দুই-তিনজন আহত হন।
সংগঠনটির জেলা শাখার সংগঠক মিনহাজুল ইসলাম বলেন, অদক্ষ-অথর্ব ও অযোগ্য ব্যক্তিরা সংগঠনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ কুক্ষিগত করে রেখেছেন। তাঁদের অবহেলার জন্য এত বড় অঘটন ঘটেছে। যাঁরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন, তাঁদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আহত আবদুর রহমান একজন গুলিবিদ্ধ জুলাই যোদ্ধা। জুলাই–পরবর্তী প্রেক্ষাপটে পুনরায় তাঁর আহত হওয়ার ঘটনা সত্যিই হৃদয়বিদারক। একই সঙ্গে রাশেদুলসহ অন্যরাও আহত হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য গ ম সদস যসচ ব আম র ল ইসল ম আবদ র রহম ন স গঠনট র ন স গঠন র আহ ব
এছাড়াও পড়ুন:
চামড়াশিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট আমলের পুরোনো চক্র ও সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলন। এই সিন্ডিকেট ও চামড়াশিল্প ধ্বংসের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংগঠনটি আয়োজিত ‘চামড়া শিল্পের নৈরাজ্য ও সিন্ডিকেট রুখো’ শীর্ষক মানববন্ধনে এসব কথা বলা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মির্জা শরিফুল আলম। সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান, কলামিস্ট মীর আবদুল আলীম, রাজনীতিবিদ নুরুজ্জামান হীরা, মানবাধিকারকর্মী আব্দুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ।
কয়েক বছর ধরে কাঁচাচামড়ার দাম কমছে। দাম না পেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নদী বা খালে ফেলে দিয়েছেন কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন– এমন ঘটনাও ঘটছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি বছর ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ট্যানারি মালিকদের। এর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সংগ্রহ হয় কোরবানির সময়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান বলেন, এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। কিছু ক্ষেত্রে বর্গফুটের হিসাবে চামড়ার দাম আরও কম পড়েছে। কোরবানিদাতাদের থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন। সেসব চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেছেন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার দাম পড়ে গেছে তলানিতে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও বেশির ভাগ ছাগলের চামড়া নষ্ট হয়েছে। বিদেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। দেশে ও বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। অথচ কোরবানির চামড়া শিল্প নিয়ে গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, বিদেশি চক্রান্তে দেশের সোনালি আঁশখ্যাত পাট শিল্পকে সুকৌশলে ধ্বংস করা হয়েছে। এবার আরেক সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। গত বছরের মতো এবারও কম দামে সব ধরনের চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। এতে করে গরিব-অসহায় মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।