ঘুমের সময় বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের পর এমনটা বেশি হতে দেখা যায়। এর পেছনে আছে অনেক কারণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স বা শরীরে লবণের তারতম্য, পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন, স্নায়বিক সমস্যা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অথবা দীর্ঘ সময় এক ভঙ্গিতে থাকা।

মাসল ক্র্যাম্পের সঠিক কারণ শনাক্ত করতে সঠিক ইতিহাস ও মূল্যায়ন জরুরি। নিজেকে প্রশ্ন করুন ও চিকিৎসককে অবহিত করুন—

কখন টান লাগে? (দিন–রাত, নির্দিষ্ট সময়)

কতক্ষণ স্থায়ী হয়?

কোন পেশিতে হয়?

আগে থেকে কোনো ওষুধ নিচ্ছেন কি না? (ডাইউরেটিক্স, স্ট্যাটিন ইত্যাদি)

পানি ও ইলেকট্রোলাইট গ্রহণ ঠিক আছে কি না?

অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি, স্পাইনাল ডিজঅর্ডার, মেটাবলিক ডিজঅর্ডার আছে কি না।

উত্তরগুলো আপনার চিকিৎসককে সঠিক রোগনির্ণয়ে সাহায্য করবে। সমস্যা শনাক্ত করার পর চাই সঠিক ব্যবস্থাপনা।

করণীয়

১.

জীবনযাপন ও ঘুমানোর ধরন: ঘুমানোর সময় পায়ের পাতা যেন ডরসিফ্লেক্সড অবস্থায় অর্থ্যাৎ পায়ের আঙুল ওপরের দিকে থাকে। এ জন্য বালিশের সাহায্যে পা একটু উঁচু করে রাখা যেতে পারে। এটি ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করবে। দীর্ঘক্ষণ এক ভঙ্গিতে না থাকার অভ্যাস করুন। দীর্ঘ সময় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার কাজ করতে হলে মাঝেমধ্যে উঠে হাঁটাহাঁটি বা নড়াচড়া করে সচল থাকা উচিত। হাই হিল বা আঁটসাঁট জুতা এড়িয়ে চলুন।

২. স্ট্রেচিং ও এক্সারসাইজ: ঘুমের আগে নিয়মিত স্ট্রেচিং করতে পারলে উপকৃত হবেন। যেমন:

কাফ স্ট্রেচ: দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়ান, একটা পা সামনের দিকে নিয়ে একটু ভাঁজ করুন, আরেক পা সোজা রাখুন, গোড়ালি মাটিতে থাকবে। দেয়ালে ধাক্কা বা ঠেলা দিন। ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, ৩-৫ বার।

হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ: চেয়ারে সোজা হয়ে বসে একটি পা সোজা রেখে অন্যটি ভাঁজ করুন, সোজা পায়ের দিকে ঝুঁকুন যতটা সম্ভব। ২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।

প্ল্যান্টার ফ্যাশা স্ট্রেচ: পায়ের আঙুলগুলো হাত দিয়ে পেছনের দিকে টেনে ধরুন, ২০ সেকেন্ড। যাদের প্রায়ই মাসল ক্র্যাম্প হয়, তারা রাতে ঘুমানোর আগে এই অভ্যাসগুলো করলে সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।

হঠাৎ টান লাগলে

১. সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রেচ: হঠাৎ পেশিতে টান লাগলে সঙ্গে সঙ্গে সেই পেশিকে ধীরে ধীরে স্ট্রেচ করুন। উদাহরণস্বরূপ, পায়ের ক্যাফ মাসলে হলে বসে বা দাঁড়িয়ে পায়ের গোড়ালি মাটিতে রেখে আঙুল উঁচু করে টানুন। হাত দিয়ে পায়ের আঙুল টেনে ধরুন।

২. হাইড্রেশন ও নিউট্রিশন: পর্যাপ্ত পানি খান। মনে রাখবেন মাসল ক্র্যাম্পের একটি অন্যতম কারণ পানিশূন্যতা। বিশেষ করে গরমের দিনে প্রচুর পানি খান, সেই সঙ্গে যথেষ্ট তরল।

পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন কলা, দুধ, ডাবের পানি) খান। রক্তে এই সব খনিজ লবণ কমে গেলেও ক্র্যাম্প হয়।

৩. ওষুধ: এত কিছুর পরও মাসল ক্র্যাম্প হতে থাকলে চিকিৎসকেরা কিছু ওষুধ দিয়ে থাকেন। যেমন কুইনাইন গোত্রের ওষুধ, মাংসপেশি শিথিল করার ওষুধ, ম্যাগনেশিয়াম সাপ্লিমেন্ট, নিউরোপ্যাথিক ব্যথা থাকলে প্রিগাবালিন বা গ্যাবাপেনটিন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ খাওয়া যাবে না।

৪. রোগনিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে স্নায়ুজনিত জটিলতা থেকে এই সব সমস্যা বেশি হয়। থাইরয়েডের সমস্যা যাদের আছে, তাদেরও এ সমস্যা বেশি হয়। তাই চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে থাইরয়েডের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে পারেন। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মাসল ক্র্যাম্প হওয়াটা খুব স্বাভাবিক, সাধারণত সন্তান প্রসবের পর এটি সেরে যায়। স্থূলতা বা ওজনাধিক্য একটি বড় কারণ, তাই ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। 

৫. থেরাপি ও পরামর্শ: নানা ধরনের ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। যেমন আইআরআর থেরাপি, টেনস থেরাপি, মায়োফেসিয়াল রিলিজ, ট্রিগার পয়েন্ট রিলিজ টেকনিকস ইত্যাদি। 

স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেনদেনিং ব্যায়াম শিখে নিন। এগুলো আপনার পেশিকে সুস্থসবল রাখবে।

পজিশনাল পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতন থাকবেন। যেমন দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করলে মাঝেমধ্যে পা উঠিয়ে নাড়াতে হবে বা পায়ের পাতা ঘোরাতে হবে।

শোয়া অবস্থায় পায়ের আঙুল নিচের দিকে ঝুলে থাকা এড়াতে হবে। 

ঘুমের সময় কম্বল ভারী হলে খেয়াল রাখতে হবে পায়ের আঙুল যেন নিচের দিকে বেঁকে না থাকে।

একইভাবে একটানা ২০ মিনিটের বেশি বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না।

প্রয়োজনে ফাংশনাল ব্রেইস ব্যবহার সহায়ক হতে পারে।

ডা. মো. সাকিব-আল-নাহিয়ান, রেজিস্ট্রার, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

মাসল ক্র্যাম্প বা পেশির খিঁচুনি কেন হয়, হলে কী করবেন

ঘুমের সময় বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের পর এমনটা বেশি হতে দেখা যায়। এর পেছনে আছে অনেক কারণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স বা শরীরে লবণের তারতম্য, পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন, স্নায়বিক সমস্যা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অথবা দীর্ঘ সময় এক ভঙ্গিতে থাকা।

মাসল ক্র্যাম্পের সঠিক কারণ শনাক্ত করতে সঠিক ইতিহাস ও মূল্যায়ন জরুরি। নিজেকে প্রশ্ন করুন ও চিকিৎসককে অবহিত করুন—

কখন টান লাগে? (দিন–রাত, নির্দিষ্ট সময়)

কতক্ষণ স্থায়ী হয়?

কোন পেশিতে হয়?

আগে থেকে কোনো ওষুধ নিচ্ছেন কি না? (ডাইউরেটিক্স, স্ট্যাটিন ইত্যাদি)

পানি ও ইলেকট্রোলাইট গ্রহণ ঠিক আছে কি না?

অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি, স্পাইনাল ডিজঅর্ডার, মেটাবলিক ডিজঅর্ডার আছে কি না।

উত্তরগুলো আপনার চিকিৎসককে সঠিক রোগনির্ণয়ে সাহায্য করবে। সমস্যা শনাক্ত করার পর চাই সঠিক ব্যবস্থাপনা।

করণীয়

১. জীবনযাপন ও ঘুমানোর ধরন: ঘুমানোর সময় পায়ের পাতা যেন ডরসিফ্লেক্সড অবস্থায় অর্থ্যাৎ পায়ের আঙুল ওপরের দিকে থাকে। এ জন্য বালিশের সাহায্যে পা একটু উঁচু করে রাখা যেতে পারে। এটি ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করবে। দীর্ঘক্ষণ এক ভঙ্গিতে না থাকার অভ্যাস করুন। দীর্ঘ সময় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার কাজ করতে হলে মাঝেমধ্যে উঠে হাঁটাহাঁটি বা নড়াচড়া করে সচল থাকা উচিত। হাই হিল বা আঁটসাঁট জুতা এড়িয়ে চলুন।

২. স্ট্রেচিং ও এক্সারসাইজ: ঘুমের আগে নিয়মিত স্ট্রেচিং করতে পারলে উপকৃত হবেন। যেমন:

কাফ স্ট্রেচ: দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়ান, একটা পা সামনের দিকে নিয়ে একটু ভাঁজ করুন, আরেক পা সোজা রাখুন, গোড়ালি মাটিতে থাকবে। দেয়ালে ধাক্কা বা ঠেলা দিন। ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, ৩-৫ বার।

হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ: চেয়ারে সোজা হয়ে বসে একটি পা সোজা রেখে অন্যটি ভাঁজ করুন, সোজা পায়ের দিকে ঝুঁকুন যতটা সম্ভব। ২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।

প্ল্যান্টার ফ্যাশা স্ট্রেচ: পায়ের আঙুলগুলো হাত দিয়ে পেছনের দিকে টেনে ধরুন, ২০ সেকেন্ড। যাদের প্রায়ই মাসল ক্র্যাম্প হয়, তারা রাতে ঘুমানোর আগে এই অভ্যাসগুলো করলে সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।

হঠাৎ টান লাগলে

১. সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রেচ: হঠাৎ পেশিতে টান লাগলে সঙ্গে সঙ্গে সেই পেশিকে ধীরে ধীরে স্ট্রেচ করুন। উদাহরণস্বরূপ, পায়ের ক্যাফ মাসলে হলে বসে বা দাঁড়িয়ে পায়ের গোড়ালি মাটিতে রেখে আঙুল উঁচু করে টানুন। হাত দিয়ে পায়ের আঙুল টেনে ধরুন।

২. হাইড্রেশন ও নিউট্রিশন: পর্যাপ্ত পানি খান। মনে রাখবেন মাসল ক্র্যাম্পের একটি অন্যতম কারণ পানিশূন্যতা। বিশেষ করে গরমের দিনে প্রচুর পানি খান, সেই সঙ্গে যথেষ্ট তরল।

পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন কলা, দুধ, ডাবের পানি) খান। রক্তে এই সব খনিজ লবণ কমে গেলেও ক্র্যাম্প হয়।

৩. ওষুধ: এত কিছুর পরও মাসল ক্র্যাম্প হতে থাকলে চিকিৎসকেরা কিছু ওষুধ দিয়ে থাকেন। যেমন কুইনাইন গোত্রের ওষুধ, মাংসপেশি শিথিল করার ওষুধ, ম্যাগনেশিয়াম সাপ্লিমেন্ট, নিউরোপ্যাথিক ব্যথা থাকলে প্রিগাবালিন বা গ্যাবাপেনটিন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ খাওয়া যাবে না।

৪. রোগনিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে স্নায়ুজনিত জটিলতা থেকে এই সব সমস্যা বেশি হয়। থাইরয়েডের সমস্যা যাদের আছে, তাদেরও এ সমস্যা বেশি হয়। তাই চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে থাইরয়েডের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে পারেন। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মাসল ক্র্যাম্প হওয়াটা খুব স্বাভাবিক, সাধারণত সন্তান প্রসবের পর এটি সেরে যায়। স্থূলতা বা ওজনাধিক্য একটি বড় কারণ, তাই ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। 

৫. থেরাপি ও পরামর্শ: নানা ধরনের ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। যেমন আইআরআর থেরাপি, টেনস থেরাপি, মায়োফেসিয়াল রিলিজ, ট্রিগার পয়েন্ট রিলিজ টেকনিকস ইত্যাদি। 

স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেনদেনিং ব্যায়াম শিখে নিন। এগুলো আপনার পেশিকে সুস্থসবল রাখবে।

পজিশনাল পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতন থাকবেন। যেমন দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করলে মাঝেমধ্যে পা উঠিয়ে নাড়াতে হবে বা পায়ের পাতা ঘোরাতে হবে।

শোয়া অবস্থায় পায়ের আঙুল নিচের দিকে ঝুলে থাকা এড়াতে হবে। 

ঘুমের সময় কম্বল ভারী হলে খেয়াল রাখতে হবে পায়ের আঙুল যেন নিচের দিকে বেঁকে না থাকে।

একইভাবে একটানা ২০ মিনিটের বেশি বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না।

প্রয়োজনে ফাংশনাল ব্রেইস ব্যবহার সহায়ক হতে পারে।

ডা. মো. সাকিব-আল-নাহিয়ান, রেজিস্ট্রার, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ