ডেঙ্গু সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের ৫৮টি জেলায় ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি রোগী দেখা যাচ্ছে বরিশাল বিভাগে এবং একই বিভাগের বরগুনা জেলায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ হিসাবে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার আরও নতুন ১০৮ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তির তথ্য দিয়েছে কন্ট্রোল রুম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন বরিশাল বিভাগের হাসপাতালগুলোতে। এই বিভাগে নতুন ৮৯ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরপর বেশি রোগী ঢাকা বিভাগে, নতুন মোট ১৪ জন। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে ভর্তি হয়েছেন যথাক্রমে চারজন ও একজন। খুলনা, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলায় গতকাল কোনো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হননি।

এ বছর গতকাল পর্যন্ত যে ছয় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি, তার মধ্যে আছে চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁও ও সুনামগঞ্জ।

গত মার্চ থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যার ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। ওই মাসে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৩৬। এপ্রিলে ভর্তি হন ৭০১ জন। পরের মাসে অর্থাৎ মে মাসে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৭৩ জনে। আর জুনের প্রথম ১২ দিনে রোগী হয়েছে ১ হাজার ৬৬ জন।

বরিশাল-বরগুনায় রোগী বেশি

দেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৫ হাজার ৪১১ জন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৩৬৪। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৪৪ শতাংশ এই বিভাগেই। আক্রান্ত সবচেয়ে কম রংপুর ও সিলেট বিভাগে। এই দুই বিভাগে এ পর্যন্ত ১৯ জন করে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

জেলাভিত্তিক হিসাবে রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায়। এই জেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ দেশের

মোট আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর ২৭ শতাংশ উপকূলের এই জেলায়।

গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে বরগুনায় তিনজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হলো। এ নিয়ে এই জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পাঁচজনে দাঁড়াল। এর মধ্যে তিনজনই নারী। বুধবার বরগুনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত দুই রোগীর মৃত্যু হয়। তাঁরা হলেন চান মিয়া (৭৫) ও ঘোষাই দাস (৮৫)। চান মিয়া বুধবার দুপুরে মারা যান। এর সাত ঘণ্টা পর বরগুনা পৌর শহরের থানাপাড়া এলাকার ঘোষাই দাস মারা যান। এর আগে গত ২৫ মার্চ ও ২৬ এপ্রিল আরও দুজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাসকিয়া সিদ্দিকী বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় অন্য রোগীদের চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমরা ডেঙ্গুর চিকিৎসা দিতেই হিমশিম খাচ্ছি। তার ওপর এখানে চিকিৎসক-সংকট প্রকট।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মৃত্যু বেশি

এ বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৩ জন। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ১৫ জন। বেশি মৃত্যু ঘটেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে, মোট ১৩ জন।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, বরগুনা]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বর শ ল ব ভ গ জন ড ঙ গ র বরগ ন হয় ছ ন সবচ য় গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইরান ১০০টির কম ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, অল্প কিছু আঘাত হেনেছে: ইসরায়েল

তেহরানে শুক্রবার পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার জবাবে রাতে ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩’ নামের এ অভিযানে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা করা হয়। এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। এ বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, ইরান আজ রাতে ইসরায়েলের দিকে ১০০টির কম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে তার মধ্যে অল্প কিছু ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে। 

সিএনএনের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র এফি ডেফরিন এক ভিডিও বার্তায় বলেন, কিছু আঘাত হয়েছে, তবে বেশিরভাগই প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিহত করা হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, রাতে আরও হামলা হতে পারে, তাই সাধারণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে, ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের সমুদ্র উপকূলবর্তী সমতল এলাকায় অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মাঝে একজন ছিলেন ৬০ বছর বয়সী একজন নারী, যাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে, তখন তার শরীরে কোনও প্রাণচিহ্ন পাওয়া যায়নি। এছাড়া ৪৫ বছর বয়সী এক পুরুষকেও উদ্ধার করা হয়, পরে যাকে মৃত ঘোষণা করা হয়, জানিয়েছে এমডিএ।

তেল আবিবে রকেট হামলায় নারী নিহত: ইসরায়েলের জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ইসরায়েলের তেল আবিব শহরের দক্ষিণে রিশোন লেজিয়োন এলাকায় বাড়িঘরের কাছে ইরানের রকেট হামলায় অন্তত একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪০ জনের বেশি। ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক প্যারামেডিক সদস্যকে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ও কয়েকজন ব্যক্তি ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েছেন।

আয়ালন অঞ্চলের জরুরি সেবা বিভাগের উপপরিচালক রামি মুশার বলেন, ‘এটি একটি কঠিন ও জটিল পরিস্থিতি। ভবনগুলোর ভেতর আর কোনো হতাহত আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে আমরা এখনো কাজ করে যাচ্ছি।

নিউইয়র্ক টাইমসও ইসরায়েলি পুলিশের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে তেল আবিবের কাছে একটি শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ঘটনাস্থলেই ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ