হালদা নদীর পুরোনো বেড়িবাঁধের অন্তত ১৭টি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক বর্ষায় নদীতে পানি বাড়ার পর আশপাশের লোকজনের নজরে আসে এসব ফাটল। এ কারণে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ১২ গ্রামের মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এসব গ্রামে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের বাস।
এলাকার লোকজন ও পাউবো সূত্র জানায়, হালদা নদীতীরের পুরোনো বেড়িবাঁধটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ। সুন্দরপুর থেকে শুরু হয়ে এই বাঁধটি শেষ হয়েছে সমিতিরহাটে গিয়ে। সম্প্রতি পাউবো বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় বেড়িবাঁধের ২ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার সংস্কার করে। এ ছাড়া ধুরুং খালের ৫ কিলোমিটার খনন ও স্লুইসগেট নির্মাণ সম্পন্ন করে তারা। মাস দুয়েক আগে শেষ হওয়া কাজে খরচ হয়েছে এক কোটি টাকা।
বুধবার পুরোনো বেড়িবাঁধের আশপাশের দৌলতপুর, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি ও সুন্দরপুর ঘুরে দেখা যায়, ভাঙনের ফলে লোকজনের বসতবাড়ি ঝুঁকিতে পড়েছে। কারও বাড়ির কাঁচা দেয়াল দেবে গেছে, কোনো কোনো জায়গায় গ্রামীণ মেঠোপথ ভেঙে গেছে। সড়কের পাশে লাগানো গাছপালার গোড়াসহ উপড়ে পড়ে থাকতেও দেখা গেছে।
সুয়াবিলের মোহাম্মদ সোহেল ও গোলাম সরোয়ার, দৌলতপুরের আমান উল্লাহ, সুন্দরপুরের মরিয়ম বেগম জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে অন্তত চারটি স্থানে ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছেন তারা। এ জায়গাগুলো ধসে পড়লে নাজিরহাট পৌরসভার দৌলতপুর; সুন্দরপুর, সমিতিরহাট, হারুয়ালছড়ি ও সুয়াবিল ইউনিয়নের মন্দাকিনী, পূর্ব সুয়াবিল, ছাদেকনগর, পূর্ব ধলই, আরবানিয়া, হারুয়ালছড়ি ও আজিমপুরসহ হালদা তীরবর্তী অন্তত ১২টি গ্রামের মানুষের বসতঘর, মাছের ঘের ও ফসলের ক্ষতি হবে।
সুন্দরপুর ইউনিয়নের পাঁচ পুকুরিয়া ছিপায়ের বাড়ি, নাজিরহাট পৌরসভার রশিদাপুকুর পাড়, কুম্ভর পাড়, সুয়াবিল ইউনিয়নের ভাংগা দিঘির উত্তর পাশ, সমিতিরহাট ইউনিয়নের আরবানিয়া, রোসাংগিরি ইউনিয়নের শীলেরহাটের পাশের ফাটলগুলো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন এলাকার লোকজন।
সমিতিরহাট ইউনিয়নের আরবানিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ শানেওয়াজের ঘরের ২০০ ফুট দূরেই এমন একটি ফাটল দেখা যায়। তিনি বলেন, বছরখানেক আগে ছয় লাখ টাকা খরচ করে ঘর তুলেছেন। এজন্য এনজিও থেকে ঋণও নিতে হয়েছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে প্রবল বর্ষণে হালদায় পানি বাড়ার পর বাঁধের ফাটলটি চোখে পড়ে তাঁর। এখানে ধস নামলে স্রোতে তাঁর ঘর ভেঙে যেতে পারে। তখন তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় দাঁড়াবেন এ নিয়েই তাঁর দুশ্চিন্তা।
এ বিষয়ে পাউবো চট্টগ্রাম উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সোহাগ তালুকদারের ভাষ্য, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হালদার দুই তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত জায়গাগুলো মেরামতে তিন কোটি টাকার জরুরি বরাদ্দ চেয়েছেন। সুন্দরপুর, পাঁচপুকুরিয়াসহ কয়েকটি জায়গা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব জায়গায় স্থায়ীভাবে ব্লক ফেলে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে আছে। এই ভাঙন সামাল দিতে হলে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধের গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মাদারীপুরের সাবেক দুই ডিসিসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান
শিবচরে পদ্মা সেতু রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মাদারীপুরের সাবেক দুই জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন ও মো. ওয়াহিদুল ইসলামসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় এ সংক্রান্ত নোটিশ মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ অভিযুক্তদের কাছে পাঠিয়েছে ।
দুদক সূত্র জানায়, পদ্মা রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন জন্য দুদক মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামানকে দলনেতা ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান অপুকে সদস্য করে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
খুকৃবির সাবেক উপাচার্যসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুবির নতুন ক্যাম্পাসের জমি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ, তথ্য চেয়েছে দুদক
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৯ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি ৮ অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য এবং চাহিদাপত্র চেয়ে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে তারা হলেন- মাদারীপুর সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওহিদুল ইসলাম, সাবেক জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ ফারুক আহম্মদ, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ঝোটন চন্দ্র, মাদারীপুরের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস।
মোহাম্মদ সুমন শিবলী, প্রমথ রঞ্জন ঘটক, আল মামুন, মো. নাজমুল হক সুমন, মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কানুনগো (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাসির উদ্দিন, মো. আবুল হোসেন, রেজাউল হক এবং মাদারীপুর কালেক্টরেট রেকর্ড রুম শাখার রেকর্ড কিপার মানিক চন্দ্র মন্ডল।
দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, “মাদারীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ও ড. রহিমা খাতুনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তথ্য ও বিভিন্ন চাহিদাপত্র চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নোটিশ অভিযুক্তদের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
ঢাকা/বেলাল/মাসুদ