দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এর প্রভাব পড়েছে সবজি ও মাছের বাজারে। সরবরাহ কম থাকায় এসব পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। বৃষ্টির স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাজারে ক্রেতার আনাগোনাও কমেছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁও, তেজকুনিপাড়া ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় সবজি ক্ষেত ডুবে গেছে। এ জন্য সরবরাহ কিছুটা কম। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে। একই সঙ্গে বাজারে মাছের সরবরাহও কমেছে। তবে বৃষ্টি না কমলে সবজির দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তারা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে। দু’দিন আগে কাঁচামরিচের কেজি ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। বেগুনের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ধুন্দল ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে। টমেটোর কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বৃষ্টির কারণে মানুষ বাজারে আসতে পারছে না। তাছাড়া পাইকারি বাজারে সবজির দামও বাড়তি।
সবজির সরবরাহ কম থাকায় এর প্রভাব পড়েছে মাছ ও মুরগির বাজারে। বাজারে মাঝারি আকারের প্রতি কেজি রুই ও কাতলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে। তিন-চার দিন আগে এই দরের চেয়ে অন্তত কেজিতে ২০ টাকা কমে কেনা গেছে এসব মাছ। পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছের কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা দরে।
সোনালি মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হবে ২৮০ থেকে ৩১০ টাকা। তিন-চার দিন আগে এই দর ছিল ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়েনি। আগের মতোই প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। ডিমের দামও অপরিবর্তিত। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়।
তেজকুনিপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্ষার সময় সাধারণত মাছের সরবরাহ কম থাকে। এ সময় মাছ কম ধরা পড়ে। সেজন্য দামও কিছুটা বাড়তি থাকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সবজ সবজ র দ ম সরবর হ ক ম রগ র সবজ র
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ব অর্থনীতিতে ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব এখনো তেমন একটা পড়েনি: আইএমএফ
মার্কিন শুল্কবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বজুড়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, বাস্তবে তার প্রভাব এখন পর্যন্ত অনেকটাই সীমিত। তবু তার কোনো প্রভাব পড়েনি—এমনটা ভাবার সময় আসেনি। তেমনটা ভাবা হলে বিষয়টি ভুল হবে—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আইএমএফ ২০২৫ সালের জন্য বৈশ্বিক ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা বাড়িছে। সংস্থাটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কবৃদ্ধির মাত্রা প্রত্যাশার চেয়ে কম হওয়ায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
ওয়াশিংটনের হিসাবমতে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে বাণিজ্যচুক্তিগুলো করেছে, সেগুলোর ফলে শুল্কহার এপ্রিলের চেয়ে কম—বেশির ভাগ দেশের জন্য তা ১০ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
আইএমএফের নতুন পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। জুলাই মাসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, চলতি বছর প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও মহামারির আগের গড় প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭ শতাংশের তুলনায় কমই হবে। সংস্থাটির ধারণা, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ২ দশমিক ১ শতাংশ।
আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের-অলিভিয়ার গুরিঞ্চাস ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তারা ছাড় দিয়েছে। অন্যদিকে বেশির ভাগ দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ থেকে বিরত আছে। তাঁর ভাষায়, ব্যবসায়ীরাও সময় নষ্ট করেননি—শুল্কবৃদ্ধির আগেই আমদানি বাড়িয়েছেন, সরবরাহব্যবস্থা নতুন করে সাজিয়েছেন।
গুরিঞ্চাস সতর্ক করেছেন, বাণিজ্য–উত্তেজনা এখনো প্রশমিত হয়নি। এসব চুক্তি কতটা টিকবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। সেই সঙ্গে মার্কিন আমদানিকারকেরা শেষ পর্যন্ত বাড়তি খরচের বোঝা ভোক্তার ঘাড়েই চাপিয়ে দিতে পারেন। তাঁর মন্তব্য, অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, পুরো চিত্র ফুটে উঠতে সময় লাগে।
চলতি বছর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র যেন এক বিশৃঙ্খল বাণিজ্যযুদ্ধের ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে আছে। কখনো শুল্ক বাড়ানো, কখনো তা স্থগিত রাখা, আবার কখনো হঠাৎ নতুন চুক্তি—এই ওঠানামার মধ্যে বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
এর মধ্যে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য–সম্পর্ক আবারও টান টান হয়ে উঠেছে। বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ে বিবাদের জেরে ট্রাম্প চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ১ নভেম্বর থেকে তা কার্যকর হবে—এমন দিনক্ষণও ঠিক করে রেখেছেন তিনি। বর্তমানে চীনের পণ্যে শুল্ক আছে ৩০ শতাংশ। নতুন করে ১০০ শতাংশ শুল্ক যোগ হলে মোট শুল্কভার দাঁড়াবে ১৩০ শতাংশ।
গুরিঞ্চাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অভিবাসননীতির কারণে দেশটির শ্রমবাজারে চাপ পড়ছে। এ কারণে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা দেখছি, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে বিদেশে জন্ম নেওয়া কর্মীর সংখ্যা দ্রুত কমছে—শুল্কবৃদ্ধির সঙ্গে এ বিষয়ও সরবরাহ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
গুরিঞ্চাসের মন্তব্য যেন বিশ্ব অর্থনীতির সারকথাই তুলে ধরে—যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেলে সেই অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমিত থাকে না; পৃথিবীর সবার ওপর তার প্রভাব পড়ে। কেননা, বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর জিডিপির মূল উৎস হচ্ছে রপ্তানি। সেই রপ্তানির মূল গন্তব্য আবার যুক্তরাষ্ট্র।