টানা তিন দিন ধরে ইসরায়েলের হামলা মোকাবিলা করে যাচ্ছে ইরান। ইতিমধ্যে সামরিক নেতৃত্বের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ ২৪০ জনের বেশি ইরানি নিহত হয়েছেন। তবে ইরান একক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে যেভাবে পাল্টা আঘাত হেনেছে, তা ইসরায়েল আগে কখনো অনুভব করেনি। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বৃহত্তম শহরগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে, যার মধ্যে আছে তেল আবিব ও হাইফার মতো শহরও।

ইসরায়েল-ইরান উভয় পক্ষ কে কার কতটা ক্ষতি করেছে এবং ঠিক কোন স্থানগুলোয় আঘাত হেনেছে, অনেক ক্ষেত্রে তা স্পষ্ট নয়। কারণ, সামরিক হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সঠিকভাবে পাওয়া কঠিন। উভয় পক্ষের কাছে কত ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত আছে এবং ইসরায়েল ও ইরান কত দিন এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে, তা–ও জানা কঠিন।

আমরা যা জানি, তা হলো ইরানের কাছে আছে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি। যেখানে ধারণা করা হয়, তাদের কাছে বিভিন্ন পাল্লা ও গতির হাজার হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

বর্তমান হারে সম্ভবত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে ইরানের। ইসরায়েলের উল্লেখযোগ্য ক্ষতির কারণ হতে এটি যথেষ্ট সময়। দেশটির মানুষ এমন হামলা ও ক্ষতির সঙ্গে অভ্যস্তও নয়; বিশেষ করে গাজা উপত্যকা, লেবানন ও ইয়েমেনের দুর্বল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ ছাড়া।

ইরান আরও প্রকাশ করছে—যেসব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়েছে, সেগুলোর চেয়ে আরও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র কতটা কার্যকর হতে পারে সেই সক্ষমতা। রোববার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছে।

ইসরায়েলের ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে, ইরান আগের আক্রমণগুলোয় যেসব পুরোনো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল, সেগুলোর তুলনায় রোববার ব্যবহার করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শক্তি ও গতিতে আরও উন্নত।

অবশ্য ইরানের কাছে উন্নত এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল মজুত রয়েছে তা নয় এবং শেষ পর্যন্ত ব্যবহার করতে করতে এটি ফুরিয়ে যাবে। তবে এরপরও সাধারণ মানের ক্ষেপণাস্ত্র, হাজার হাজার ড্রোনসহ এসব উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের ক্ষতি করার জন্য ইরানের যথেষ্ট সামরিক ক্ষমতা রয়েছে। যারা বিশ্বাস করে যে স্বল্প মেয়াদে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো শক্তি ইরানের নেই, তাদেরও ভুল প্রমাণ করতে পারবে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ এড়ানো

ইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুচ্ছ ইসরায়েলের আয়রন ডোমকে গুরুতরভাবে পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। যে কারণে ইরানের আক্রমণ প্রতিরোধ–প্রতিহত করার জন্য ইসরায়েলকে তাদের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে বর্তমান সংঘাতের পক্ষ নয়; বরং তিনি হুমকি দিয়েছেন, ইরান যদি মধ্যপ্রাচ্য মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানে, তবে এর পরিণতি মারাত্মক হবে। মার্কিন স্বার্থের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা সামরিক ঘাঁটিগুলোও আছে।

মার্কিন ঘাঁটি বা কর্মীদের ওপর আক্রমণই সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ডেকে আনবে ইরানের জন্য, যে কারণে এমন আক্রমণ তারা এড়াতে চায়। তাই এ ব্যাপারে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সতর্ক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করতে চাইবেন না অথবা ইসরায়েলের আক্রমণের সঙ্গে মার্কিন সামরিক শক্তিগুলোও যুক্ত হোক—এমন অজুহাত তৈরি করতে চাইবেন না। একটি যৌথ ইসরায়েলি-মার্কিন আক্রমণ ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থানগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করবে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।

ইরানের সরকার ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, ইসরায়েল যদি তার আক্রমণ বন্ধ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় ফিরেও আসতে সম্মত হয়, এরপরও তারা প্রতিশোধ নেওয়া চালিয়ে যাবে।

এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও তুরস্কের মতো দেশগুলোয় অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলো আক্রমণে যুক্ত হয়ে যেতে পারে, যেসব দেশ ইরানের প্রত্যক্ষ শত্রু নয় এবং তেহরান এই দেশগুলোকে সংঘাতে টানতে চাইবে না। এসব দেশ ইরানের জন্য সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু ইরানের অন্যান্য বিকল্প আছে। ইরান ও ওমানের মধ্যে অবস্থিত হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার বারবার হুমকি দিয়েছে তেহরান। প্রতিদিন লাখ লাখ ব্যারেল তেলের পরিবহন হয় এ প্রণালি দিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, এমন ঘটনা ঘটলে তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে ১০০ ডলার পর্যন্ত উঠে যাবে, যা গত শুক্রবার ব্যারেলপ্রতি ৭৮ ডলার পর্যন্ত উঠে আবার কমে গিয়েছে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা ইরানিদের হাতে শক্তিশালী একটি তাস। লড়াই চলতে থাকলে স্বল্প মেয়াদে হলেও হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার আশঙ্কা আছে।

আরও পড়ুনইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিণতি কী৫ ঘণ্টা আগেথামার পথ কী হবে

তবে শেষ পর্যন্ত ইরান যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পথ খুঁজবে। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য আঞ্চলিক বড় যুদ্ধের আশঙ্কার অবসান ঘটবে। নয়তো ইরানের নিজস্ব অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার মুখেও পড়তে হবে দেশটিকে। ইরানের আরও জানার কথা, ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধ পরিস্থিতি সামলানোর সক্ষমতার একটা সীমা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের কারণে ইরানের চেয়েও আরও সহজে গোলাবারুদের মজুত পূরণ করার ক্ষমতা আছে তার।

ইরানের সরকার ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, ইসরায়েল যদি তার আক্রমণ বন্ধ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় ফিরেও আসতে সম্মত হয়, এরপরও তারা প্রতিশোধ নেওয়া চালিয়ে যাবে।

তবে এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর নির্ভর করবে। ট্রাম্পকে ইসরায়েল এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে থামানোর জন্য চাপ দিতে হবে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা করতে ইচ্ছুক কি না, সেটি স্পষ্ট নয়। এ সংঘাতের বিষয়ে ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। একদিকে তিনি লড়াইয়ের অবসান ঘটানোর জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছেন, একই সঙ্গে ইরানকে হুমকিও দিয়েছেন।

ইরান আরও জানে যে ট্রাম্প এমন ব্যক্তি নন, যাঁকে বিশ্বাস করা বা যাঁর ওপর নির্ভর করা যায়। গত সপ্তাহে ইরানে ইসরায়েলের হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রতারণামূলক আচরণ করেছে। ইসরায়েল হামলা করার পরিকল্পনা করছে, তা গোপনে জানা সত্ত্বেও রোববার ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা চলবে—এমন ভান করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

তবু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তিই ইরানকে থামাতে সহায়তা করতে পারে। নয়তো ইরান এখন পর্যন্ত যে শক্তি প্রকাশ করেছে, তা বজায় রাখা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠবে।

দোরসা জাব্বারি ইরানি সাংবাদিক। আল–জাজিরা টিভি চ্যানেলে কর্মরত।

আলজাজিরা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: রাফসান গালিব

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ন র জন য পর স থ ত ব স কর ইসর য ক ষমত র ওপর ব যবহ

এছাড়াও পড়ুন:

চব্বিশ নিয়ে যেন একাত্তরের মতো ‘চেতনা ব্যবসা’ না হয়: ফুয়াদ

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার  আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, ‘‘জুলাই, ২৪ নিয়ে যেন একাত্তরের মতো ‘চেতনা ব্যবসা’ না হয়। জুলাই থেকে শিখে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়বো। যারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না তাদের বাস্তবতা অওয়ামী লীগের মতো হবে। 

শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের ড. আতহার উদ্দীন মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে তিনি চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। 

আমার বাংলাদেশ পার্টির পটুয়াখালী জেলা শাখার আহ্বায়ক  প্রফেসর ড. এএসএম ইকবাল হোসাইনের সভাপতিত্বে চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মেজর আব্দুল ওহাব মিনার ও সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী নাসীর। আলোচনা শেষে উপস্থিত সবাই জুলাই আন্দোলনের প্রদর্শিত চিত্র ঘুরে দেখেন।

ইমরান//

সম্পর্কিত নিবন্ধ