চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে তিন জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত ৮টার দিকে জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- আরাফাত হোসেন (১৮), আনিস (১৮) ও রিয়াজ (১৮)। তাদের বাড়ি মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রেললাইনে বসে পাঁচ বন্ধু গল্প করছিলেন। এসময় ট্রেন চলে এলে তিন বন্ধু কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

আরো পড়ুন:

তিন দিন আগে বিয়ে, যুবকের ঝুলন্ত লাশ মিলল ভারতে

রেললাইনের পাত চুরির অভিযোগে প্রকৌশলী আটক

চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাশুক মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রেলওয়ে পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে গেছে। লাশ উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে।

ঢাকা/রেজাউল/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

আপনি কি জানেন, এই ১০টি উদ্ভাবন মুসলিমদের

প্রতিদিন সকালে যখন আপনি এক কাপ কফি পান করেন বা দাঁত পরিষ্কার করেন, তখন আপনি হয়তো ভাবেন না যে, এই দুটিই মুসলিম উদ্ভাবকদের অবদান। জ্যোতির্বিদ্যা থেকে চিকিৎসা, স্থাপত্য থেকে সংস্কৃতি—মুসলিম ঐতিহ্য বিশ্ব সভ্যতাকে অসাধারণ উদ্ভাবন উপহার দিয়েছে। মুসলিম পণ্ডিত ও উদ্ভাবকদের হাত ধরে এসেছে এমন ১০টি উদ্ভাবনের গল্প থাকছে আজ।১. বীজগণিত: গণিতের ভিত্তি

নবম শতকের মুসলিম পণ্ডিত মুহাম্মাদ ইবন মুসা আল-খাওয়ারিজমিকে বলা হয় ‘বীজগণিতের জনক’। তিনি শুধু বীজগণিত নয়, অ্যালগরিদমের ধারণাও উদ্ভাবন করেন। ৮১৩-৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তিনি তাঁর গ্রন্থ ‘আল-জাবর’ (পূর্ণ নাম: আল-কিতাব আল-মুখতাসার ফি হিসাব আল-জাবর ওয়াল-মুকাবালা) রচনা করেন, যেখান থেকে ‘অ্যালজেব্রা’ শব্দটির উৎপত্তি।

৮২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাগদাদের বিখ্যাত জ্ঞানকেন্দ্র ‘বাইতুল হিকমাহ’র প্রধান নিযুক্ত হন। তাঁর এই অবদান আধুনিক প্রকৌশল, ইলেকট্রনিকস, স্থাপত্য এবং জ্যোতির্বিদ্যার পথ সুগম করেছে।

২. কফি: সকালের সঙ্গী

কফি সংস্কৃতির জন্ম ১৫ শতকের মুসলিম বিশ্বে, বিশেষ করে ইয়েমেন ও ইথিওপিয়ার উচ্চভূমিতে। ইয়েমেনের সুফিরা প্রথম কফি পান করতেন রাতের ইবাদতের সময় জেগে থাকার জন্য। বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে কফি সাফাভি, মোগল ও মিসরীয় সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

আজ বিশ্বজুড়ে কফি আমাদের জীবনের অংশ, কিন্তু এর শুরুটা ছিল মুসলিম সংস্কৃতির হাত ধরে।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়: জ্ঞানের প্রথম আলো

বিশ্বের প্রথম ডিগ্রি প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় নবম শতাব্দীতে মরক্কোর ফেজে, মুসলিম নারী ফাতিমা আল-ফিহরিয়ার হাত ধরে। তাঁর বোন মরিয়ম একই সময়ে পাশের আল-কারাউইয়িন মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। আল-কারাউইয়িন বিশ্ববিদ্যালয় আজও হাজার বছরের বেশি সময় ধরে সক্রিয়। এটি জ্ঞানের প্রতি মুসলিমদের গভীর শ্রদ্ধার প্রতীক।

আরও পড়ুনতাবুতে সাকিনার রহস্যময় ইতিহাস ১১ অক্টোবর ২০২৪৪. হাসপাতাল: স্বাস্থ্যসেবার পথিকৃৎ

আধুনিক হাসপাতালের শিকড় মুসলিম বিশ্বে। ৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে বিশ্বের প্রথম হাসপাতাল বলা হয়। নাম ছিল ‘বিমারিস্তান’। এটি আব্বাসীয় খলিফা হারুন আল-রশিদের শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এরপর মধ্যযুগীয় মুসলিম অঞ্চলে আরও হাসপাতাল গড়ে ওঠে, যেমন ৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে কায়রোতে আহমদ ইবন তুলুন হাসপাতাল। দশম শতকে বাগদাদে আরও ৫টি হাসপাতাল এবং ১৫ শতকে কর্ডোভায় ৫০টি প্রধান হাসপাতাল ছিল। এসব হাসপাতালে ধনী-গরিবনির্বিশেষে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হতো।

৫. অস্ত্রোপচার: চিকিৎসার নতুন দিগন্ত

১০ শতকে আন্দালুসিয়ার (স্পেন ও উত্তর আফ্রিকা) মুসলিম চিকিৎসক আল-জাহরাভিকে ‘আধুনিক অস্ত্রোপচারের জনক’ বলা হয়। তিনি ২০০টির বেশি অস্ত্রোপচারের যন্ত্র উদ্ভাবন করেন, যার মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের স্ক্যালপেল ও রিট্র্যাক্টর।

১০০০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কিতাব আত-তাফসির (The Method of Medicine) নামে ৩০ খণ্ডের একটি বিশ্বকোষ রচনা করেন, যা পাঁচ দশকের চিকিৎসা অভিজ্ঞতার সারসংকলন। এই গ্রন্থ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইউরোপের চিকিৎসকদের পথপ্রদর্শক ছিল।

৬. উড়াল: আকাশ জয়ের প্রথম পদক্ষেপ

৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে, রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের বিমান উদ্ভাবনের হাজার বছর আগে, আন্দালুসিয়ার উদ্ভাবক আব্বাস ইবনে ফিরনাস প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ‘বাতাস থেকে ভারী’ যন্ত্র নিয়ে উড়তে সক্ষম হন।

তিনি কাঠ ও রেশম দিয়ে একটি গ্লাইডার তৈরি করেন এবং কর্ডোভার লা আররুজাফা পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে প্রায় ১০ সেকেন্ড আকাশে ভেসে থাকেন। এটি ছিল বিমান চলাচলের ইতিহাসে একটি মাইলফলক।

আরও পড়ুনহারিয়ে যাওয়া জীবনীর খোঁজ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪৭. ফাউন্টেন পেন: লেখার শিল্প

৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে মিসরের খলিফা মা’আদ আল-মুইজ একটি কলম তৈরির নির্দেশ দেন, যা হাত বা কাপড়ে দাগ ফেলবে না। কারিগরেরা এমন একটি কলম উদ্ভাবন করেন, যার ভেতরে কালি সংরক্ষণের জায়গা ছিল এবং চাপ দিলে কালি নিবে পৌঁছাত। এটিই ছিল আধুনিক ফাউন্টেন পেনের পূর্বসূরি।

৮. ক্যামেরা: দৃষ্টির বিজ্ঞান

মধ্যযুগীয় গণিতজ্ঞ হাসান ইবনে আল-হায়সাম বিশ্বের প্রথম ক্যামেরার পেছনের মানুষ। ৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের বসরায় জন্ম নেওয়া ইবনে আল-হায়সাম প্রথম সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করেন যে দৃষ্টি মস্তিষ্কে সংঘটিত হয় এবং আলো বস্তু থেকে চোখে আসে, চোখ থেকে আলো বের হয় না।

চীনা দার্শনিক মোজির সময় থেকে ক্যামেরা অবসকিউরা (অন্ধকার কক্ষে ছোট গর্ত দিয়ে বাইরের ছবি প্রক্ষেপণ) সম্পর্কে জানা গেলেও, ইবনে আল-হায়সাম সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণের জন্য স্ক্রিন ব্যবহার করে এর প্রথম প্রযুক্তিগত প্রয়োগ করেন।

আল-আন্দালুসের রাজদরবারে তিনি ছিলেন একজন ট্রেন্ডসেটার। তিনি কাচের পাত্রে পানীয় পরিবেশন, টেবিলক্লথের জন্য চামড়ার কভার, নিজের তৈরি টুথপেস্ট ও ডিওডোরেন্ট এবং মৌসুমি ফ্যাশনের ধারণা প্রচলন করেন।৯. তিন কোর্সের খাবার: রন্ধনশিল্পের শৈলী

নবম শতাব্দীর কবি ও সংগীতজ্ঞ আবু আল-হাসান আলী ইবনে নাফি, যিনি জিরিয়াব নামে পরিচিত, তিন কোর্সের খাবারের ধারণা উদ্ভাবন করেন।

আল-আন্দালুসের রাজদরবারে তিনি ছিলেন একজন ট্রেন্ডসেটার। তিনি কাচের পাত্রে পানীয় পরিবেশন, টেবিলক্লথের জন্য চামড়ার কভার, নিজের তৈরি টুথপেস্ট ও ডিওডোরেন্ট এবং মৌসুমি ফ্যাশনের ধারণা প্রচলন করেন। তাঁর আরব-আন্দালুসিয়ান সংগীত শৈলীও ছিল যুগান্তকারী।

১০. মিসওয়াক: দাঁতের যত্ন

মিসওয়াক, সালভাডোরা পারসিকা গাছের ডাল দিয়ে তৈরি দাঁত পরিষ্কারের কাঠি, প্রায় ৬০০ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হাত ধরে জনপ্রিয় হয়। তিনি নিজে দিনে অন্তত পাঁচবার মিসওয়াক ব্যবহার করতেন। মিসওয়াকে অল্প পরিমাণে ফ্লোরাইড থাকায় এটি মাড়ি শক্ত করে, দুর্গন্ধ দূর করে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।

১৯৮৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দাঁতের যত্নে মিসওয়াকের ব্যবহারকে উৎসাহিত করে।

এই ১০টি উদ্ভাবন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মুসলিম পণ্ডিত ও উদ্ভাবকেরা বিশ্বসভ্যতায় অমূল্য অবদান রেখেছেন। তাঁদের জ্ঞান ও সৃজনশীলতা ইসলামের শিক্ষার প্রতিফলন, যা জ্ঞানার্জন ও মানবকল্যাণকে উৎসাহিত করে।

সূত্র: হাইফেন অনলাইন ডটকম

আরও পড়ুনমুসলিম সভ্যতায় রান্নার শিল্প১২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ