ভুয়া মামলার দৌরাত্ম্য চলিতেই থাকিবে?
Published: 21st, June 2025 GMT
ভুয়া মামলা দিয়া নিরীহ মানুষ হয়রানি বন্ধ হইল না। এই ক্ষেত্রে সর্বশেষ দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি ঘটিল রংপুরে। শনিবার সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, নগরীর রাধাকৃষ্ণপুর এলাকায় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণকারী মুদি দোকানদার ছমেস উদ্দিনকে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা বানাইয়া গত ৩ জুন হাজিরহাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়। সেই মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হককে; যদিও তিনি ছিলেন গত বৎসরের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সক্রিয় সমর্থক। আরও বিস্ময়কর, মামলার বাদী হিসাবে ছমেসের স্ত্রী আমেনা বেগমের নাম থাকিলেও, সমকালকে তিনি নিজে বলিয়াছেন– মামলার প্রাথমিক তথ্যবিবরণীতে তাহার স্বামীকে স্থানীয় নজিরেরহাটে অভিযুক্তদের ইন্ধনে তৎকালীন সরকার সমর্থক কতিপয় ব্যক্তি কোপাইয়া হত্যা করিয়াছে বলা হইলেও, বাস্তবে গত বৎসরের ২ আগস্ট পুলিশের ধাওয়ায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হইয়া মারা গিয়াছেন। উপরন্তু, মামলাটি তিনি নিজে করেন নাই, পুলিশ তাহাকে ডাকিয়া নিয়া কাগজে স্বাক্ষর করিতে বলায় তিনি তাহা করিয়াছেন।
স্মরণ করা যাইতে পারে, এই রকমই আরেকটা ভুয়া হত্যা মামলার সূত্র ধরিয়া আমরা গত ৩০ এপ্রিল এই স্তম্ভে এহেন আইনের শাসনপরিপন্থি কর্মকাণ্ডের ভয়ংকর পরিণাম সম্পর্কে সরকারকে সতর্ক করিয়াছিলাম। সেই মামলাটি হইয়াছিল গত ২০ এপ্রিল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে, যেখানে আলোচ্য মামলাটির ন্যায় আসামি করা হইয়াছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহিত জ্ঞাত-অজ্ঞাত মোট ৪০৮ জনকে। এমনকি অভিনেতা ইরেশ যাকেরকেও সেই আসামিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাহা খোদ অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টাকেও বিস্মিত করিয়াছিল। তদুপরি, সেই মামলাটির বাদীও সমকালকে বলিয়াছিলেন, মামলা হইবার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না, তাই মামলায় কে কীভাবে যুক্ত হইল, তাহা নির্দিষ্ট করিয়া বলা তাহার পক্ষে কঠিন।
শুধু এই দুই মামলাই নহে, গত বৎসরের আগস্ট হইতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যতগুলি হত্যা বা হত্যচেষ্টার মামলা দায়ের হইয়াছে, সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠিয়া আসিয়াছে, সেইগুলির উল্লেখযোগ্য অংশের উদ্দেশ্য নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি। গত ২৭ এপ্রিল দৈনিক প্রথম আলো জুলাই আন্দোলনের সহিত সম্পর্কযুক্ত বলিয়া কথিত ৪০টি মামলা লইয়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেইখানে ২১টি মামলার ক্ষেত্রে কোনো কোনো আসামির নিকট অর্থ দাবি ও লেনদেনের অভিযোগ আসে, বাকি ১৯ মামলার সহিত রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, পেশাগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের সম্পর্ক উঠিয়া আসে। কিন্তু হতাশাজনক হইল, অদ্যাবধি এই সকল আইনবিরোধী তৎপরতা বন্ধে সরকার বা কর্তৃপক্ষের তরফে কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয় নাই। বরং সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আইন উপদেষ্টা একাধিকবার বলিয়াছেন, মামলা করা যেই কাহারও অধিকার; তাহারা এই অধিকার চর্চায় বাধা প্রদান করিতে অনিচ্ছুক। কিন্তু মামলার নামে অন্যকে হয়রানি করিবার অধিকার যে কাহারও থাকিতে পারে না, ইহাও স্মরণে রাখা প্রয়োজন। আমরা ইহাও মনে করি, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করিয়া ভুক্তভোগী ও তাহাদের স্বজনদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করিতে হইলে আলোচ্য ভুয়া মামলাসমূহ দ্রুত প্রত্যাহার এবং নিরীহ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করা গুরুত্বপূর্ণ।
আলোচ্য মামলাটি প্রমাণ করিল, গত ১৪ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হইতে পুলিশের মাঠ প্রশাসনকে মামলা গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বনের যেই নির্দেশনা প্রদান করা হইয়াছিল তাহা কার্যকর হয় নাই। পুলিশের মহাপরিদর্শক গত এপ্রিলে বলিয়াছিলেন, মামলা হইলেই গ্রেপ্তার করা যাইবে না। তদন্তে যাহার দায়ভার পাওয়া যাইবে, তাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গৃহীত হইবে। বাস্তবে এই নির্দেশনাটিরও প্রতিফলন ঘটে নাই। তবে দায়িত্ব গ্রহণকালে অন্তর্বর্তী সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার করিয়াছিল তাহার জন্যও ভুয়া ও বায়বীয় মামলার দৌরাত্ম্য বন্ধ করিতে হইবে। রংপুরের ঘটনায় দ্রুত কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বল য় ছ কর য় ছ আগস ট হইয় ছ হয়র ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এই মামলায় ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ বুধবার অভিযোগ গঠন ও সূচনা বক্তব্যের দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
পরে বিকেলে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, আবু সাঈদের মামলায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য হাসিবুরসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধ হওয়া মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এই মামলায় সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে ২৭ ও ২৮ আগস্ট।
এই মামলায় ৩০ আসামির মধ্যে ছয়জন গ্রেপ্তার আছেন। তাঁরা হলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সাবেক চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী মো. আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।
বাকি ২৪ জন আসামি পলাতক। তাঁরা হলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদ, গণিত বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডল, চিকিৎসক মো. সরোয়ার হোসেন, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার মো. হাফিজুর রহমান, সাবেক সেকশন অফিসার মো. মনিরুজ্জামান পলাশ, রংপুর মহানগর পুলিশের (আরপিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, সাবেক উপকমিশনার মো. আবু মারুফ হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহ নূর আলম পাটোয়ারী, সাবেক সহকারী কমিশনার মো. আরিফুজ্জামান, সাবেক পরিদর্শক (নিরস্ত্র) রবিউল ইসলাম, সাবেক এসআই (নিরস্ত্র) বিভূতিভূষণ রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজুর রহমান, সহসভাপতি ফজলে রাব্বি ও আখতার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সেজান আহম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এমএলএসএস মোহাম্মদ নুরুন্নবী মণ্ডল ও আমির হোসেন, নিরাপত্তা প্রহরী নুর আলম মিয়া ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. মাহাবুবার রহমান।