যুক্তরাষ্ট্র জড়ালেও যুদ্ধের ফল অনিশ্চিত
Published: 22nd, June 2025 GMT
ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক অস্ত্র কর্মসূচিতে ইসরায়েলের হামলায় দীর্ঘ মেয়াদে কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ হামলায় আগামী দিনগুলোতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যদি ট্রাম্প প্রশাসনকে যুক্ত করতে পারেন, তবু এমন সম্ভাবনা ক্ষীণই থেকে যাবে।
গতকাল শনিবার দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। কূটনীতিক, সামরিক বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ও এর প্রধানমন্ত্রী প্রচারণায় ক্রমবর্ধমান প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে পারেন। আর এসবের মধ্যেই পুরো অঞ্চল বিপজ্জনকভাবে অস্থিতিশীল হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিভেদকারী বিশাল বোমা ব্যবহারের ফলেও পাহাড়ের গভীরে তৈরি ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ বাড়ছে। প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েলের দূরপাল্লার আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা নিয়েও।
বিশেষজ্ঞরা ইরানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের আভিযানিক সাফল্য এবং তেহরানে শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন ও তার পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে পার্থক্য করছেন।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক টবি ডজ বলেন, ‘ইসরায়েলে জন্মলগ্ন থেকে একটি শক্তিশালী প্রবণতা আছে, যা তাদের রাজনীতিবিদদের কাছে এ বার্তা দিয়েছে যে, সহিংসতা (মূলত আগ্রাসন) রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান দেবে। আমার মনে হয়, ইরানের শাসন ব্যবস্থা যতটা বলা হয়েছে, তার চেয়েও স্থিতিশীল। আর যেহেতু প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ ও পরমাণু বিস্তারের প্রতি ইরানের দীর্ঘ প্রতিশ্রুতির ইতিহাস আছে, তাই বোমা দিয়ে এটি দূর করা সম্ভব নয়।’
বিশ্লেষকরা ইসরায়েলের কৌশল নিয়েও বিভ্রান্ত। এ ছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন অত্যন্ত অসম্ভাব্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে যোগদানের জন্য চাপ দেওয়ার আশায় সংঘাত শুরুর কৌশলও এক ধরনের জুয়া বলে মনে করছেন তারা। ইসরায়েলের প্রত্যাশা, যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানে হামলায় জড়াতে পারলে তাদের বাঙ্কার ধ্বংসকারী বোমার অভাব পূরণ হবে।
বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন, ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনার উপরিভাগ কঠিন পাথর দ্বারা আচ্ছাদিত। এ কারণে স্থাপনা ধ্বংস করতে হয়তো বেশ কয়েকটি বোমা ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। এটি একটি জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান হতে হবে, যার সাফল্যের নিশ্চয়তাও নেই। ফলে ইরান ওই অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটির বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু করতে পারে। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত তীব্রতর হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।
ইসরায়েলে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল সি কার্টজার ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন অভিজ্ঞ সদস্য স্টিভেন এন সাইমন এ সপ্তাহে ফরেন অ্যাফেয়ার্সে লেখেন, ফর্দোতে হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের নজরে পড়বে। ইরান প্রায় নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করে প্রতিশোধ নেবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রও প্রতিশোধ নিতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, পরে যা অবশিষ্ট থাকবে তা হলো, ইরানের শাসন ব্যবস্থার নেতৃত্বদানকারীরা। এতে যুক্তরাষ্ট্র আবার শাসন পরিবর্তনের ব্যবসায়ে নেমে পড়বে। এটি এমন এক ব্যবসা, যেখানে খুব কম মার্কিনিই জড়িত থাকতে চান।
ইসরায়েলের কর্মকর্তারা মনে করেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার মাধ্যমে তারা শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারবেন। এ নিয়ে ইতোমধ্যেই ওই অঞ্চলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। ইরাকের ধর্মগুরু গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ আলি আল-সিস্তানি এক বিরল বার্তায় মধ্যপ্রাচ্যের গভীর বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
বেরোবি শিক্ষকের মুক্তি চায় রাবির সাংবাদিকতা বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সহকারী অধ্যাপক মো. মাহামুদুল হকের মুক্তি চেয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। শনিবার সকালে রাবির বিভাগীয় সভাপতি ড. মো. মোজাম্মেল হোসেন বকুলের সই করা বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে বেরোবি শিক্ষক মো. মাহামুদুল হককে যেভাবে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা হতাশাজনক। আমরা অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করছি। মাহামুদুল সাংবাদিকতা পেশায় সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে পরিচিত। এ ধরনের একজন ব্যক্তির পক্ষে প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ডে জড়ানো কল্পনাতীত। মামলায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করাটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাজানো ঘটনা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
বিভাগীয় শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের আহ্বান জানান। মাহামুদুলকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
এ বিষয়ে বেরোবির সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান তাবিউর রহমান বলেন, আমরা একটি পরিবার। এ বিভাগের কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে, বরদাশত করব না। যদি তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা না করা হয়, আমরা বড় কর্মসূচির চিন্তা করব।
উল্লেখ্য, গত ২ আগস্ট পুলিশের ভয়ে পালানোর সময় পড়ে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যান ছমেস উদ্দিন। এ ঘটনার ১০ মাস পর গত ৩ জুন হত্যার অভিযোগে মামলা করা হয়। এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় শিক্ষক মাহামুদুলকে।