Samakal:
2025-11-05@15:06:01 GMT

শেয়ারবাজারে বড় দর পতন

Published: 22nd, June 2025 GMT

শেয়ারবাজারে বড় দর পতন

যুদ্ধ ভীতিতে ফের কাবু দেশের শেয়ারবাজার। রোববার ভোরে ইরান আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার খবরে সিংহভাগ শেয়ার দর হারিয়েছে। তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৩৩৪টি দরই হারিয়েছে। এতে প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৭৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৬৭৭ পয়েন্টে নেমেছে। সূচক পতনের হার ১ দশমিক ৬২ শতাংশ। এমন দর পতনে লেনদেনও নেমেছে ৩০০ কোটি টাকার নিচে।
এর আগে পাকিস্তানে ভারতের হামলার খবরে গত ৭ মে ঢাকার শেয়ারবাজারের প্রধান সূচকটি এক দিনেই দেড়শ পয়েন্ট হারিয়েছিল। অবশ্য পরের দিনই সিংহভাগ শেয়ারের দর বাড়লে সূচকটি ফিরে পেয়েছিল ৯৯ পয়েন্ট।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসসহ শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, ইরানে ইসরায়েলের আগ্রাসনের খবরে শেয়ারবাজারে কিছু উদ্বেগ থাকলেও এতদিন তা সামলে চলছিল। গত ১৩ জুন ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তিন দিন ঊর্ধ্বমুখী ছিল শেয়ারদর ও সূচক। ওই তিন দিনে সূচক প্রায় ১১২ পয়েন্ট বৃদ্ধির বিপরীতে বাকি দুই দিনে হারিয়েছিল ৬৬ পয়েন্ট। অর্থাৎ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও বাজারে বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি।
জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, মনে হচ্ছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ‘ওভ্যার রিয়েক্ট’ (বেশি প্রতিক্রিয়া) দেখাচ্ছে। পাকিস্তান-ভারত সংঘাতের শুরুতেও এমনটা হয়েছিল, যদিও ওই সংঘাতে বৈশ্বিক বা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় সমস্যা তৈরির শঙ্কা ছিল না।
মনিরুজ্জামান বলেন, সমস্যা হলো এ বাজারের বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক আস্থার সংকটে ভুগছেন। ভালো ভালো শেয়ারের পিই রেশিও ৩ থেকে ৭ মধ্যের নেমে এসেছে। তার পরও ক্রেতা নেই। সামান্য শঙ্কায়ও দর পতনের ভয়ে কেউ শেয়ার কেনা বন্ধ করেন, অন্যরা শেয়ার বিক্রি করতে নেমে যান। এটাই এ বাজারের বড় সমস্যা।

তাহলে কি ইরানে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই– এমন প্রশ্নে এ কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বি-২ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে বলেছে, এগুলো ধ্বংস করেছে। ফলে ইরানের পরমাণু বোমা বানানোর সক্ষমতা বিনষ্ট করায় তাদের শঙ্কার অবসান হওয়ায় নতুন করে কিছু না করতে পারে। ট্রাম্পের ঘোষণায় তেমনটি মনে হচ্ছে। আবার এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানও যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ঘাঁটিতে হামলা চালায়নি। অনেক খারাপ খবরের মধ্যেও এটা ‘মন্দের ভালো’।
যেহেতু রোববার লেনদেন শুরু হওয়ার আগে এসব খবর এসেছিল, ফলে বিনিয়োগকারীদের এতটা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু ছিল না– মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, এই আগ্রাসনে উদ্বেগের জায়গা হলো দীর্ঘমেয়াদে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হওয়া এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। তেলের দাম কিছুটা বাড়লেও এখনও হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়নি। এগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে। 
গতকাল তালিকাভুক্ত মাত্র ১৫ শেয়ারের দর বেড়েছে। এর মধ্যে ৩ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত দর বেড়েছে মাত্র চারটির। বিপরীতে ৩ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে ১৫৭টি। ডিএসইতে ২৭১ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র য ক তর ষ ট র শ য় রব জ র

এছাড়াও পড়ুন:

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের পেছনে ছিল রাজনৈতিক বিদ্বেষ: অ্যাটর্নি জেনারেল

দেড় দশক আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে যে রায় সর্বোচ্চ আদালত দিয়েছিল, তার পেছনে রাজনৈতিক বিদ্বেষ ছিল বলে আদালতে শুনানিতে দাবি করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

আজ বুধবার আসাদুজ্জামান আপিল বিভাগে এ–সংক্রান্ত শুনানিতে বলেছেন, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ‘শর্ট অর্ডার’ (সংক্ষিপ্ত রায়) যেদিন ঘোষণা করেন, সেদিনই রায়ের দিন। ঘোষিত রায় ১৬ মাস পর পরিবর্তন করা হয়। এ ক্ষেত্রে আইন ও রীতি অনুসরণ করা হয়নি। ঘোষিত রায় নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই পরিবর্তন করা হয়েছিল, যা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারার অপরাধ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ অষ্টম দিনের মতো শুনানি হয়। গত ২১ অক্টোবর এই শুনানি শুরু হয়েছিল। পরবর্তী শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখা হয়েছে।

১৯৯৬ সালে সংবিধানে যোগ হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাদ পড়ে। তার জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আনা হয়েছিল। ওই সংশোধনের ঠিক আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন।

ওই রায় হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। সংক্ষিপ্ত রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আরও দুটি নির্বাচনের জন্য রাখার বিষয়টি সংসদ বিবেচনা করতে পারে বলে উল্লেখ ছিল। তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়ে কিছু ছিল না।

আজ শুনানিতে সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দেশের মেঠো পথ ধরে যারা হাটে যায়, তারাও জানে হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। হুকুমটা নড়ানোর জন্য যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে হুকুম নড়াতে হয়। উনি (খায়রুল হক) হুকুম নাড়িয়ে দিয়েছেন। এ জন্য প্রক্রিয়া আছে। সংক্ষুব্ধ পক্ষ রিভিউ করতে পারে কিংবা আদালত সুয়োমটো (স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে) পারে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রুলস ভঙ্গ হয়েছে। আইন ও রীতি অনুসারে হয়নি। এই রায় আইনের দৃষ্টিতে অকার্যকর।’

আসাদুজ্জামান বলেন, কোনো সরকারি কর্মচারী যদি দুর্নীতিগ্রস্ত বা বিদ্বেষপূর্ণভাবে এমন কোনো প্রতিবেদন, আদেশ, রায় বা সিদ্ধান্ত প্রদান করে, যা সে জানে যে আইনের পরিপন্থী, তাহলে তাঁকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানি শুরুর আগে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০১১ সালের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেই আবেদনগুলোর ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। তারপর এই শুনানি শুরু হয়।

‘সামরিক শাসনে মানুষের মুক্তি বিরল ঘটনা’

গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হলে আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের হাঁটা শুরু হয়েছিল। দুই বছরের মাথায় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। বাক্‌স্বাধীনতার কণ্ঠরুদ্ধ করা হয়। জনগণ তখন ফুঁসে উঠেছিল।

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তখন গণতন্ত্র হত্যার সাথে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁরা বললেন, আমরা যেটা বলব, সেটাই গণতন্ত্র, একদলীয় শাসন থাকবে। আমি যেটা বলব, সেটা গণতন্ত্র, আমি রাষ্ট্রপতি যেটা বলব, সেটি বিচার বিভাগ। আইনের শাসন বলতে আমি যেটা বলব, বাকশাল রক্ষীবাহিনী যেটা বলবে, সেটা আইনের শাসন। কথা বলবেন, আপনার কণ্ঠ রুদ্ধ করা হবে। সব পত্রিকার স্বাধীনতা হরণ করলেন। প্রতিবাদ উঠেছিল, প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বিগত দুই বছর সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বিরল ঘটনা সামরিক শাসনে সেই মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন।’

১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন নিয়ে মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘১৯৭৫ সালের একটি পর্বের পরে দেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন একটি সামরিক শাসন। গণতন্ত্রের স্বাদ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আজকের আওয়ামী লীগ, সেটা কিন্তু সামরিক শাসনের করুণায়।’

পদ ছেড়ে ভোট করবেন আসাদুজ্জামান

পদ ছেড়ে দিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান। আজ বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পাওয়া আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি ভোট করব। আমি নমিনেশন ওখানে চেয়েছি। আমি ভোট করব, আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আছি এখনো। আমার অ্যাটর্নি জেনারেল পদ ছেড়ে গিয়ে আমি ভোট করব। যখন সময় আসবে, তখন করব।’

গত বছরের ৮ আগস্ট রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পান আসাদুজ্জামান। তিনি বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

তাহলে এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল কে হচ্ছেন, এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ যাকে মনে করে।’

আরও পড়ুনতত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল: সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে অসংগতি তুলে ধরে আপিল মঞ্জুরের আরজি০৪ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ