যুদ্ধ ভীতিতে ফের কাবু দেশের শেয়ারবাজার। রোববার ভোরে ইরান আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার খবরে সিংহভাগ শেয়ার দর হারিয়েছে। তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৩৩৪টি দরই হারিয়েছে। এতে প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৭৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৬৭৭ পয়েন্টে নেমেছে। সূচক পতনের হার ১ দশমিক ৬২ শতাংশ। এমন দর পতনে লেনদেনও নেমেছে ৩০০ কোটি টাকার নিচে।
এর আগে পাকিস্তানে ভারতের হামলার খবরে গত ৭ মে ঢাকার শেয়ারবাজারের প্রধান সূচকটি এক দিনেই দেড়শ পয়েন্ট হারিয়েছিল। অবশ্য পরের দিনই সিংহভাগ শেয়ারের দর বাড়লে সূচকটি ফিরে পেয়েছিল ৯৯ পয়েন্ট।
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসসহ শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, ইরানে ইসরায়েলের আগ্রাসনের খবরে শেয়ারবাজারে কিছু উদ্বেগ থাকলেও এতদিন তা সামলে চলছিল। গত ১৩ জুন ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তিন দিন ঊর্ধ্বমুখী ছিল শেয়ারদর ও সূচক। ওই তিন দিনে সূচক প্রায় ১১২ পয়েন্ট বৃদ্ধির বিপরীতে বাকি দুই দিনে হারিয়েছিল ৬৬ পয়েন্ট। অর্থাৎ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও বাজারে বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি।
জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, মনে হচ্ছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ‘ওভ্যার রিয়েক্ট’ (বেশি প্রতিক্রিয়া) দেখাচ্ছে। পাকিস্তান-ভারত সংঘাতের শুরুতেও এমনটা হয়েছিল, যদিও ওই সংঘাতে বৈশ্বিক বা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় সমস্যা তৈরির শঙ্কা ছিল না।
মনিরুজ্জামান বলেন, সমস্যা হলো এ বাজারের বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক আস্থার সংকটে ভুগছেন। ভালো ভালো শেয়ারের পিই রেশিও ৩ থেকে ৭ মধ্যের নেমে এসেছে। তার পরও ক্রেতা নেই। সামান্য শঙ্কায়ও দর পতনের ভয়ে কেউ শেয়ার কেনা বন্ধ করেন, অন্যরা শেয়ার বিক্রি করতে নেমে যান। এটাই এ বাজারের বড় সমস্যা।
তাহলে কি ইরানে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই– এমন প্রশ্নে এ কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বি-২ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে বলেছে, এগুলো ধ্বংস করেছে। ফলে ইরানের পরমাণু বোমা বানানোর সক্ষমতা বিনষ্ট করায় তাদের শঙ্কার অবসান হওয়ায় নতুন করে কিছু না করতে পারে। ট্রাম্পের ঘোষণায় তেমনটি মনে হচ্ছে। আবার এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানও যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ঘাঁটিতে হামলা চালায়নি। অনেক খারাপ খবরের মধ্যেও এটা ‘মন্দের ভালো’।
যেহেতু রোববার লেনদেন শুরু হওয়ার আগে এসব খবর এসেছিল, ফলে বিনিয়োগকারীদের এতটা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু ছিল না– মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, এই আগ্রাসনে উদ্বেগের জায়গা হলো দীর্ঘমেয়াদে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হওয়া এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। তেলের দাম কিছুটা বাড়লেও এখনও হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়নি। এগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে।
গতকাল তালিকাভুক্ত মাত্র ১৫ শেয়ারের দর বেড়েছে। এর মধ্যে ৩ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত দর বেড়েছে মাত্র চারটির। বিপরীতে ৩ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে ১৫৭টি। ডিএসইতে ২৭১ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র য ক তর ষ ট র শ য় রব জ র
এছাড়াও পড়ুন:
দুই মাসে এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি ৬৫৭৭ কোটি টাকা
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই–আগস্ট) শুল্ক–কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। আন্দোলন থেমে যাওয়ার পরও রাজস্ব আদায়ে ভালো করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
আজ রোববার গত জুলাই–আগস্টের শুল্ক–কর আদায়ের হালনাগাদ চিত্র প্রকাশ করেছে এনবিআর। সেখানে দেখা গেছে, গত জুলাই–আগস্টে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়ে আদায় হয়েছে ৫৪ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা এবং ঘাটতি ৬ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
গত মে ও জুনে এনবিআরের আন্দোলনের কারণে গত অর্থবছরের বড় আকারের রাজস্ব ঘাটতি হয়। শেষ দুই মাসে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব হয়নি। আন্দোলনের নানা কর্মসূচিতে রাজস্ব আদায় বিঘ্ন হয়। কিন্তু জুলাই–আগস্টেও রাজস্ব আদায়ে গতি আসেনি।
এনবিআরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, আন্দোলনের পর এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্যে বরখাস্ত ও বদলি–আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাজস্ব আদায়ে মনোযোগ কম।
এনবিআরের হিসাবে, এ বছরের জুলাই–আগস্টে ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়। এই খাত থেকে আদায় হয়েছে ২২ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া কাস্টমস খাতে ১৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা এবং আয়করে ১৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা আদায় হয়।