জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে রাজি হয়নি বাংলাদেশ
Published: 22nd, June 2025 GMT
বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার চীনের কুনমিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এক বৈঠকে তিন পক্ষের সহযোগিতা বাস্তবায়নে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) গঠনের কথা বলা হলেও বাংলাদেশ এতে রাজি হয়নি।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, তিন দেশের বৈঠকের পর চীন যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এ প্রস্তাবেও বাংলাদেশ রাজি হয়নি। তখন ঠিক হয়, চীন ও পাকিস্তান আলাদাভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ তখন দুই দেশকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে তার খসড়া দেখানোর অনুরোধ জানায়। খসড়ার একাধিক বিষয়ে বাংলাদেশ ভিন্নমত জানায়। তার মধ্যে মূল আপত্তি ছিল জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রসঙ্গটি। বাংলাদেশের আপত্তি সত্ত্বেও চীন গত শুক্রবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আর পাকিস্তান তাদের বিজ্ঞপ্তির খসড়া বাংলাদেশকে দেখায়নি।
আলোচনায় বাংলাদেশ স্পষ্ট করেই জানিয়েছিল, জেডব্লিউজি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমোদন প্রতিনিধি দলের নেই। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মত নিতে হবে।
পাকিস্তানের বিজ্ঞপ্তিতে ‘বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় কাঠামোর প্রথম বৈঠক’ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কি তিন দেশের মধ্যে নতুন কোনো জোট গঠন হয়েছে? নাকি চীন নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ কুনমিংয়ের বৈঠকে জেডব্লিউজি গঠনে রাজি হয়নি। মূলত বেশ কিছু খাতে সম্ভাব্য ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় কোনো জোট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়নি।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ যুগ্ম সচিব পর্যায়ে হওয়া উচিত বলে ওই আলোচনায় মত দিয়েছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। ভিডিও লিংকের মাধ্যমে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি তিন দেশের প্রথম জেডব্লিউজির বৈঠক ইসলামাবাদে করারও প্রস্তাব দেন। কিন্তু বাংলাদেশ জেডব্লিউজি গঠনে রাজি না হওয়ায় এ নিয়ে অগ্রগতি হয়নি।
জানা গেছে, গত মাসের মাঝামাঝি চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে কুনমিংয়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশ বৈঠকে যোগ দেওয়া নিয়ে দ্বিধায় ছিল। কারণ, বৈঠকের লক্ষ্য–উদ্দেশ্য সম্পর্কে চীন তখন কোনো কিছু স্পষ্ট করেনি।
সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন কূটনীতিক মনে করেন, কুনমিংয়ে গত বৃহস্পতিবারের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক বাংলাদেশ এড়িয়ে চললেই ভালো হতো। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে।
চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী ও পাকিস্তানের অতিরিক্ত সচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী বৈঠকে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ ভিডিও লিংকের মাধ্যমে যুক্ত হন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রসচ ব প রক শ গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
সাত কলেজ ঘিরে নতুন সংকট
ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ ঘিরে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। এসব কলেজ একীভূত করে সরকার যে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় করতে যাচ্ছে, তার কাঠামো নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন।
এরই মধ্যে গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করেছে। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। সাতটি কলেজ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠকেন্দ্র (একাডেমিক ক্যাম্পাস)। একেক ক্যাম্পাসে আলাদা আলাদা বিষয়ে (ডিসিপ্লিন) পড়ানো হবে।
শিক্ষকেরা বলছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে না। তাঁরা মনে করেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষার সংকোচন এবং কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য বিলুপ্ত হবে। এমনকি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পদও বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়বে।
প্রস্তাবিত কাঠামোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে গতকাল একযোগে নিজ নিজ কলেজে মানববন্ধন করেছেন সাত কলেজের শিক্ষকেরা।
শিক্ষকেরা বলছেন, সাত কলেজের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় হোক, সেটির বিপক্ষে তাঁরাও নন। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।শিক্ষকেরা বলছেন, সাত কলেজের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় হোক, সেটির বিপক্ষে তাঁরাও নন। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজ হলোঢাকা কলেজ
ইডেন মহিলা কলেজ
বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ
কবি নজরুল কলেজ
বাঙলা কলেজ
তিতুমীর কলেজ
এই সাত কলেজে বর্তমানে দেড় লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। আর শিক্ষক রয়েছেন হাজারের বেশি।
এসব কলেজের মধ্যে বর্তমানে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। বাকি পাঁচটি কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকও পড়ানো হয়।
এসব কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চমাধ্যমিক স্তর অস্তিত্বসংকটে পড়বে। ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা গতকাল কলেজের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, প্রস্তাবিত কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অন্যদিকে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আগে থেকে আন্দোলন করে আসছেন কলেজগুলোর স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী।
কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চমাধ্যমিক স্তর অস্তিত্বসংকটে পড়বে।জানতে চাইলে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করে দেওয়ার জন্য গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দায়িত্ব ছিল স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করে দেওয়া। তাঁরা কাজটি করে দিয়েছেন। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে মতামত দেওয়া যাবে। এরপর অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এখনকার মতো কাঠামো অনুযায়ী কলেজগুলো আগামী কয়েক বছর চলবে।
২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তখন থেকেই সংকট ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত করার আগেই অধিভুক্তি বাতিল করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এখন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় সাত কলেজের কার্যক্রম চলছে।
যেভাবে চলবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়
খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চারটি ভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। এর মধ্যে স্কুল অব সায়েন্সের আওতায় ঢাকা কলেজে ফলিত গণিত, প্রাণিবিদ্যা, ডেটা সায়েন্স, প্রাণরসায়ন ও জৈবপ্রযুক্তি; ইডেন কলেজে পদার্থবিদ্যা, ফলিত রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা, ফরেনসিক সায়েন্স এবং বদরুন্নেসা কলেজে মনোবিজ্ঞান এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিষয় চালু করা যাবে।
স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিসের আওতায় বাঙলা কলেজে যেসব বিষয় চালু করা যাবে, তার মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকতা ও যোগাযোগ অধ্যয়ন, উন্নয়ন অধ্যয়ন, অর্থনীতি, চলচ্চিত্র অধ্যয়ন এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি।
২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তখন থেকেই সংকট ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।স্কুল অব বিজনেসের আওতায় তিতুমীর কলেজে থাকবে হিসাববিজ্ঞান, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, হোটেল অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস, ব্যাংক অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স ম্যানেজমেন্ট এবং স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিসের আওতায় কবি নজরুল কলেজে আইন এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজে অপরাধবিজ্ঞান বিষয় চালু করা যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ‘হাইব্রিড’পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে, বাকিগুলো সশরীর। পরীক্ষা হবে সশরীর।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার মতো যোগ্য হবেন, তাঁরা থাকতে পারবেন। যদিও শিক্ষকেরা আশঙ্কা করে বলেছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় করার সময় যে অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছিল, এখনো তা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ‘হাইব্রিড’পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে, বাকিগুলো সশরীর। পরীক্ষা হবে সশরীর।