Samakal:
2025-08-10@03:56:02 GMT

সাগর-নদে ভয় আরাকান আর্মি

Published: 23rd, June 2025 GMT

সাগর-নদে ভয় আরাকান আর্মি

সাগরে মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় ১১ জুন। পরদিনই কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার কায়ুকখালী ঘাট থেকে সাগরে যাত্রা করে দুটি ট্রলার। ১৫ জন মাঝিমাল্লাকে নিয়ে যাওয়া ট্রলার দুটি ১৪ জুন সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে ধাওয়া করে ধরে ফেলে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। তারা সবাইকে মারধর করে ট্রলারগুলো থেকে মাছ, জাল লুটে নেয়। এমনকি বাদ পড়েনি ট্রলারে রাখা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও। এ ঘটনার পর থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে উপকূলীয় জেলেপল্লিতে। তারা নাফ নদ বা সাগরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
১৪ জুন লুটপাটের শিকার একটি ট্রলারের মালিক মোহাম্মদ শওকত। অন্যটির মালিক নুরুল ইসলাম। নুরুলের ভাষ্য, তাঁর ট্রলারে ছিলেন নুর হাকিমের নেতৃত্বে সাত মাঝিমাল্লা। আরাকান আর্মি সবাইকে আটকের পর মারধর করে মাছ, জাল লুটে নেয়। পরে ট্রলারসহ মাঝিদের ছেড়ে দিলেও সাগরে মাছ শিকারে মানা করে। জালসহ তাঁর অন্তত এক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। 
রোববার পৌরসভার কায়ুকখালী ঘাটে সার বেঁধে মাছ ধরার ট্রলারগুলো নোঙর করে রাখতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখানে এমন ট্রলারের সংখ্যা প্রায় আড়াইশ। স্বাভাবিক সময় হলে হয়তো হাতে গোনা কিছু ট্রলার থাকত ঘাটে। একটি ট্রলারের মালিক নুরুল আলম বলেন, আরাকান আর্মি দুটি ট্রলারে লুটপাট চালানোর পর এই ঘাট থেকে কোনো ট্রলার মাছ ধরতে যাচ্ছে না। তাই মাছ শিকারে নির্ভরশীল পরিবারগুলো আর্থিক সংকটে পড়েছে।
সেখানেই কথা হয় জেলে ফারুক বাবুলের সঙ্গে। কায়ুকখালী পাড়ার এই বাসিন্দার পরিবারে সদস্যসংখ্যা ৬। প্রতি দফায় মাছ ধরতে গেলে ২-৩ হাজার টাকা আয় করেন বাবুল। কিন্তু আরাকান আর্মির ভয়ে কেউ ট্রলার নিয়ে সাগরে যাচ্ছেন না। তিনিও পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সংসার চালাতে গিয়ে ধারদেনায় ডুবতে বসেছেন। 
একই যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন নয়াপাড়ার জেলে নুর আমিন। তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যই ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায়। নুর আমিন বলেন, মাছ শিকারে না যেতে পারলে তাদের মতো মানুষকে না খেয়ে থাকতে হবে। জেলেদের মাছ শিকারের বাধা দূর করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। 
কায়ুকখালী ঘাট বোট মালিক সমিতির নেতা আবুল কালাম বলেন, আরাকান আর্মির সদস্যরা ট্রলার দুটিকে স্পিডবোট দিয়ে ধাওয়া করেছিল। পরে তেল-জালসহ সব লুটে নেয়। আগেও মাছ শিকারে গিয়ে আরাকান আর্মির সদস্যদের হাতে জেলেরা অপহৃত হয়েছেন। সেই ভয়ে এবার কোনো ট্রলারই মাছ শিকারে যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে তারা খুব দুর্দিন কাটাচ্ছেন। 
ট্রলার মালিক, জেলে ও মাঝিমাল্লাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত আট মাসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদসহ সংলগ্ন এলাকা থেকে অন্তত ২৩০ জেলেকে অপহরণ করে আরাকান আর্মি। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত অপহৃত হন ১৫১ জন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সহায়তায় এদের মধ্যে প্রায় ২০০ জনকে কয়েক দফায় ফেরত আনা হয়।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী মনে করেন, ‘অধিকাংশ জেলেই সীমানা অতিক্রম করেন। এই সুযোগ নেয় আরাকান আর্মি। তাই আমাদের জেলেদের সতর্ক থেকে মাছ শিকার করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও নজরদারি রাখতে হবে। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেজন্য বিষয়টি সমাধানের পথ সরকারকে খুঁজতে হবে।’
টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সীমানায় জেলেরা নির্ভয়ে মাছ শিকার করতে পারবেন। কোস্টগার্ডের সদস্যরা এসব এলাকায় সব সময় সতর্ক আছে। জেলেরা যাতে কোনোভাবেই জলসীমা অতিক্রম না করেন।’
একইভাবে জেলেদের সতর্ক করে দেন বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো.

আশিকুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, সাগরগামী জেলেদের কেউ তাদের কাছে এমন ঘটনা জানাননি। তারা খোঁজখবর নেবেন। দেশের জলসীমায় প্রত্যেক জেলেই নির্ভয়ে মাছ শিকারে যেতে পারবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম আর ক ন আর ম পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীতে আগুনে পুড়ল ১১টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার সেবারহাটে একটি আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, গোডাউনসহ ১১টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়ে গেছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সেনবাগ, চৌমুহনী ও মাইজদীর পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।

ফায়ার সার্ভিস ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেবারহাট বাজারে ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের পাশের একটি কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কারখানা থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এরপর আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

শুরুতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আশপাশের এলাকার হাজারো মানুষ আগুন নেভাতে এগিয়ে যান। পরে খবর পেয়ে রাত পৌনে একটার দিকে সেনবাগ ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভাতে শুরু করে। কিন্তু তখন আগুনের ভয়াবহতা বাড়ায় বেগমগঞ্জের চৌমুহনী ও জেলা শহর মাইজদী ফায়ার স্টেশন থেকে আরও তিনটি ইউনিট এসে কাজে যুক্ত হয়। সকাল সাতটায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

সেবারহাট বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি বাহার উল্যাহ আজ রোববার সকালে প্রথম আলোকে বলেন,  আগুনে আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, মেশিনারিজ সামগ্রী, থাই অ্যালুমিনিয়াম পণ্য বিক্রির দোকানসহ কমপক্ষে ১১টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আগুনে ব্যবসায়ীদের ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের সেনবাগ স্টেশনের পরিদর্শক বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আসবাবপত্র তৈরির কারখানার বয়লার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে তদন্ত ছাড়া প্রকৃত কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ