সাগরে মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় ১১ জুন। পরদিনই কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার কায়ুকখালী ঘাট থেকে সাগরে যাত্রা করে দুটি ট্রলার। ১৫ জন মাঝিমাল্লাকে নিয়ে যাওয়া ট্রলার দুটি ১৪ জুন সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে ধাওয়া করে ধরে ফেলে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। তারা সবাইকে মারধর করে ট্রলারগুলো থেকে মাছ, জাল লুটে নেয়। এমনকি বাদ পড়েনি ট্রলারে রাখা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও। এ ঘটনার পর থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে উপকূলীয় জেলেপল্লিতে। তারা নাফ নদ বা সাগরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
১৪ জুন লুটপাটের শিকার একটি ট্রলারের মালিক মোহাম্মদ শওকত। অন্যটির মালিক নুরুল ইসলাম। নুরুলের ভাষ্য, তাঁর ট্রলারে ছিলেন নুর হাকিমের নেতৃত্বে সাত মাঝিমাল্লা। আরাকান আর্মি সবাইকে আটকের পর মারধর করে মাছ, জাল লুটে নেয়। পরে ট্রলারসহ মাঝিদের ছেড়ে দিলেও সাগরে মাছ শিকারে মানা করে। জালসহ তাঁর অন্তত এক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
রোববার পৌরসভার কায়ুকখালী ঘাটে সার বেঁধে মাছ ধরার ট্রলারগুলো নোঙর করে রাখতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখানে এমন ট্রলারের সংখ্যা প্রায় আড়াইশ। স্বাভাবিক সময় হলে হয়তো হাতে গোনা কিছু ট্রলার থাকত ঘাটে। একটি ট্রলারের মালিক নুরুল আলম বলেন, আরাকান আর্মি দুটি ট্রলারে লুটপাট চালানোর পর এই ঘাট থেকে কোনো ট্রলার মাছ ধরতে যাচ্ছে না। তাই মাছ শিকারে নির্ভরশীল পরিবারগুলো আর্থিক সংকটে পড়েছে।
সেখানেই কথা হয় জেলে ফারুক বাবুলের সঙ্গে। কায়ুকখালী পাড়ার এই বাসিন্দার পরিবারে সদস্যসংখ্যা ৬। প্রতি দফায় মাছ ধরতে গেলে ২-৩ হাজার টাকা আয় করেন বাবুল। কিন্তু আরাকান আর্মির ভয়ে কেউ ট্রলার নিয়ে সাগরে যাচ্ছেন না। তিনিও পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সংসার চালাতে গিয়ে ধারদেনায় ডুবতে বসেছেন।
একই যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন নয়াপাড়ার জেলে নুর আমিন। তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যই ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায়। নুর আমিন বলেন, মাছ শিকারে না যেতে পারলে তাদের মতো মানুষকে না খেয়ে থাকতে হবে। জেলেদের মাছ শিকারের বাধা দূর করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
কায়ুকখালী ঘাট বোট মালিক সমিতির নেতা আবুল কালাম বলেন, আরাকান আর্মির সদস্যরা ট্রলার দুটিকে স্পিডবোট দিয়ে ধাওয়া করেছিল। পরে তেল-জালসহ সব লুটে নেয়। আগেও মাছ শিকারে গিয়ে আরাকান আর্মির সদস্যদের হাতে জেলেরা অপহৃত হয়েছেন। সেই ভয়ে এবার কোনো ট্রলারই মাছ শিকারে যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে তারা খুব দুর্দিন কাটাচ্ছেন।
ট্রলার মালিক, জেলে ও মাঝিমাল্লাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত আট মাসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদসহ সংলগ্ন এলাকা থেকে অন্তত ২৩০ জেলেকে অপহরণ করে আরাকান আর্মি। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত অপহৃত হন ১৫১ জন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সহায়তায় এদের মধ্যে প্রায় ২০০ জনকে কয়েক দফায় ফেরত আনা হয়।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী মনে করেন, ‘অধিকাংশ জেলেই সীমানা অতিক্রম করেন। এই সুযোগ নেয় আরাকান আর্মি। তাই আমাদের জেলেদের সতর্ক থেকে মাছ শিকার করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও নজরদারি রাখতে হবে। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেজন্য বিষয়টি সমাধানের পথ সরকারকে খুঁজতে হবে।’
টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সীমানায় জেলেরা নির্ভয়ে মাছ শিকার করতে পারবেন। কোস্টগার্ডের সদস্যরা এসব এলাকায় সব সময় সতর্ক আছে। জেলেরা যাতে কোনোভাবেই জলসীমা অতিক্রম না করেন।’
একইভাবে জেলেদের সতর্ক করে দেন বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম আর ক ন আর ম পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।
পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি এখন সারানো হয়েছে।
ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।
ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে। পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’
ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’
ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে