এবার মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা
Published: 24th, June 2025 GMT
কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর দুই দিন না পেরোতেই এই হামলা চালাল তেহরান। ইরান–ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় মধ্যপ্রাচ্য সংকট আরও জটিল হলো।
গতকাল সোমবার রাতে কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার কথা জানায় ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোর (আইআরজিসি)। বিবৃতিতে আইআরজিসি বলেছে, ইরানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার ওপর হামলার জবাব দিতে কোনো পরিস্থিতিতেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এ হামলা ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ কাতার বা দেশটির জনগণের বিরুদ্ধে নয় বলে জানিয়েছে ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদ। তারা বলেছে, আবাসিক এলাকা থেকে দূরের মার্কিন ঘাঁটিতে এই হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানের হামলার সময় কাতারে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় রাজধানী দোহার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শহরের এক বাসিন্দা সিএনএনকে বলেন, ‘হামলার আকস্মিকতায় আমার শিশুরা চমকে ওঠে। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার সময় বুঝতে পারছিলাম না আমি কী করব। কারণ, নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে সরকার আগে থেকে কিছু জানায়নি।’
কাতার সরকারের দাবি, হামলায় কেউ হতাহত হননি। আল–উদেইদ বিমানঘাঁটি এলাকায় শনাক্ত হওয়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আকাশে থাকতেই ধ্বংস করা হয় বলে জানান কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ সৌদ বিন আবদুল রহমান। পরে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানায়, নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
আর হামলার নিন্দা জানিয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, এই হামলা কাতারের সার্বভৌমত্ব, আকাশসীমা এবং জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন।
গতকাল রাতে বাহরাইনেও সাইরেন বাজানো হয় এবং বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়। হামলার আশঙ্কায় সিরিয়ায় অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি কাসরাককেও সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়। আকাশসীমা বন্ধ করা হয় কুয়েত, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
ইরানের এই হামলা প্রতীকী বলে মনে করেন দোহা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মুহানাদ সালুম।
আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটি থেকে আগেই মার্কিন ও কাতারি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আর আমার মনে হয় এই হামলার আগে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারকে জানিয়েছিল তেহরান। সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে এটি একটি প্রতীকী হামলা।’
ইরাকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয়কাতারে হামলার সময় গতকাল ইরাকে মার্কিন আইন আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতেও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে বলে জানায় রয়টার্স। পরে ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে কাতারে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তবে ইরাকে হামলা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
যদিও ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছিল, কাতারের সঙ্গে ইরাকেও হামলা চালিয়েছে ইরান। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও শুরুতে ইরাকে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছিল।
১৩ জুন থেকে ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। পরে ২১ জুন রাতে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি আগেই দিয়েছিল তেহরান। এরই মধ্যে গতকাল এক সতর্কবার্তায় কাতারে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছিল মার্কিন দূতাবাস। হামলার আগেই আকাশসীমা বন্ধ করেছিল কাতারও।
কাতারে হামলার পর বিবিসির খবরে বলা হয়, মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, কাতারের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইরান। একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, এখন পর্যন্ত হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি এখনো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল রাতে হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হামলার নিন্দামার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
নিন্দা জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কাতারের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি রয়েছে তাদের।
কাতারের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বলেছেন, সব পক্ষকে সংযত থাকার এবং সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে সবাইকে আলোচনার টেবিলে ফেরার কথা বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যত ঘাঁটিকয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক ঘাঁটি পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় ঘাঁটি হলো কাতারের আল–উদেইদ। ৬০ একর জায়গার ওপর এই ঘাঁটিটি দোহার দক্ষিণ–পশ্চিমে অবস্থিত। ১৯৯৬ সালে কাতারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে ঘাঁটিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেখানে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করেন।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক, বাহরাইন, কুয়েত, সৌদি আরব, সিরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। এসব ঘাঁটিতে স্বাভাবিক সময়ে প্রায় ৩০ হাজার মার্কিন সেনা থাকেন। কিন্তু বড় কোনো অভিযানের সময়ে তা কয়েক গুণ বাড়ানো হয়। যেমন ২০০৩ সালে ইরাকে হামলার পর ২০০৭ সালের মধ্যে এসব ঘাঁটিতে মার্কিন সেনাসংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি।
ইসরায়েলে দিনের বেলা বড় হামলাগতকাল সংঘাতের ১১তম দিনে ইসরায়েলে ইরানের হামলা ছিল ব্যতিক্রম। সাধারণত রাতে হামলা চালায় ইরান। গতকাল বড় হামলা চালানো হয় দিনের বেলায়। আইআরজিসি জানায়, ইসরায়েলের তেল আবিব, সাফাদ, আশকেলন, আশদদ ও বেইসান শহরে তাদের ছোড়া রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এর বাইরে হামলা চালানো হয় পশ্চিম জেরুজালেমেও।
ইরানের হামলার সময় মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে সাইরেন বাজে ও বিস্ফোরণে শব্দ শোনা যায় বলে জানান সেখানকার বাসিন্দারা। একটি ভিডিওতে আশদদ শহরে রাস্তার ধারে বিকট বিস্ফোরণ হতে দেখা যায়। হামলার সময় পশ্চিম জেরুজালেমে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের আইনপ্রণেতারা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দক্ষিণ ইসরায়েল।
এদিকে গতকালও ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই সাজা দিতে হবে। আর ইরানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী সাইদ খতিবজাদেহ আল-জাজিরাকে বলেন, নিজেদের রক্ষার জন্য ইরান কত সময় ধরে লড়তে পারে, তার উদাহরণ ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চলা ইরাক-ইরান যুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত তেহরান।
আইআরজিসির ১০ সদস্য হত্যা, বিমানবন্দরে হামলাইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, ২২ জুন রাতে প্রায় ২০টি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের পশ্চিমাঞ্চল ও তেহরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এ হামলার লক্ষ্য ছিল পশ্চিমাঞ্চলের কেরমানশাহ প্রদেশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডার-সংশ্লিষ্ট স্থাপনা। হামলা হয় তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণব্যবস্থায়। এই রাতে তেহরানের কাছে পারচিন এলাকাতেও হামলা হয় বলে জানিয়েছে ইরানের গণমাধ্যমগুলো।
গতকাল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, এদিন তেহরানের কেন্দ্রে ইরানের সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আইআরজিসির বাসিজ বাহিনীর প্রধান কার্যালয়, আইআরজিসির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক প্রধান কার্যালয়, ফিলিস্তিন স্কয়ার ও এভিন কারাগার।
ইরানের ছয়টি বিমানবন্দরেও হামলার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেহরাবাদ, মাশহাদ ও দেজফুল বিমানবন্দর। হামলায় ইরানের ১৫টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংসের দাবি করেছে ইসরায়েল। এ ছাড়া গতকাল হামলার সময় কারাজ, সিরাজ ও তাবরিজ শহরে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। কাজ শহরের একটি হাসপাতালেও হামলার খবর পাওয়া যায়।
গতকাল ইরানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আগের দিন রোববার ইয়াজদ শহরে ইসরায়েলের হামলায় আইআরজিসির অন্তত ১০ সদস্য নিহত হন। এ ছাড়া গতকাল কেরমানশাহ প্রদেশে হামলায় এক নারী ও তাঁর শিশুসন্তান নিহত হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ইরানে সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও সদস্য, পরমাণুবিজ্ঞানী ও বেসামরিক নাগরিকসহ প্রায় ৫০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
পরমাণুকেন্দ্রে হামলায় কতটা ক্ষয়ক্ষতি২১ জুন রাতে ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে বোমা হামলার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে বলেছিলেন, ওই কেন্দ্রগুলো ‘নিশ্চিহ্ন’ হয়ে গেছে। পরদিন ২২ জুন অবশ্য তিনি জানান, ‘স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা ছবি অনুযায়ী, ইরানের সব পরমাণুকেন্দ্রে চরম ক্ষতি হয়েছে।’ ছবিতে ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক বোমা হামলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তবে ওই ছবিগুলো থেকে তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। জাতিসংঘের সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রসি গতকাল জানিয়েছেন, ফর্দো পরমাণু কেন্দ্রে বোমার আঘাতে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে সেখানে ‘উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি’ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাতাঞ্জেও পরমাণু সমৃদ্ধকরণ প্লান্টে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এরই মধ্যে গতকাল আবার ফর্দো পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার এক দিন পর ফর্দো পরমাণু কেন্দ্রে যাওয়ার সড়কগুলো ‘অকার্যকর করতে’ এই হামলা চালানো হয়।
নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের আহ্বানচলমান সংঘাতের মধ্যে গতকাল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মস্কোয় সাক্ষাৎ করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। এ সময় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শুভেচ্ছা পুতিনের কাছে পৌঁছে দেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্টকে আরাগচি বলেন, রাশিয়া ‘ইতিহাসের সঠিক পক্ষে’ রয়েছে। এ সময় পুতিন বলেন, তাঁর দেশ ইরানের জনগণকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। ইরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগে আগ্রাসন চালানো হচ্ছে, তা ‘ভিত্তিহীন’।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ২২ জুন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশন ডাকার অনুরোধ জানায় ইরান। এ নিয়ে এদিনও নিরাপত্তা পরিষদে প্রথম দফায় অধিবেশন বসে। সেখানে অবিলম্বে শর্তহীন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব করার জন্য ১৫ সদস্যের পরিষদকে আহ্বান জানায় রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান। গতকাল দ্বিতীয় দফায় পরিষদের অধিবেশন বসার কথা ছিল।
ট্রাম্পের সুর বদলইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলার পর সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে ২২ জুন ট্রাম্প বলেছিলেন, তেহরানকে জানানো হয়েছে ইরানের সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে এ হামলা চালানো হয়নি। তবে ওই দিন তিনি আবার সুর বদলে বলেন, ‘তেহরানের বর্তমান সরকার যদি ইরানকে আবার মহান করে তুলতে সক্ষম না হয়, তাহলে সেখানে কেন সরকার পরিবর্তন হবে না?’
একই ভাষ্য হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট। গতকাল ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, ‘ইরান সরকার যদি শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক সমাধানে রাজি না হয়, তাহলে কয়েক দশক ধরে ইরানিদের দমনকারী এই সহিংস সরকারের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার অধিকার জনগণের থাকা কি উচিত নয়?’ তবে তিনি এ–ও বলেন, ‘ইরান নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো কূটনীতিতে আগ্রহী।’
ইরানের সরকার পরিবর্তনের পরিণতি ভালো হবে না বলে মনে করেন আইএইএর ভেরিফিকেশন অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসি কো–অর্ডিনেশনের সাবেক প্রধান তারিক রউফ। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘যদি ইরানের বর্তমান সরকারের পতন হয়, এর ফল কী হবে, তা অজানা। ইরাক ও লিবিয়ায় কী হয়েছে, তা আমরা দেখেছি। দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতায় থাকা একটি সরকারের পতনের পর দেশটিতে কে ক্ষমতায় আসবে, পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, সেখানে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে কি না, তা বাইরের দেশ থেকে কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র পরম ণ ক ন দ র আইআরজ স র ইসর য় ল র পর স থ ত র সরক র সরক র র ন সরক র ব যবস থ র পর ব ক র পর ২২ জ ন ন র পদ প রস ত অবস থ গতক ল সদস য র খবর
এছাড়াও পড়ুন:
মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: ২১ জুলাইকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ পালনের দাবি
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই দিনটিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ হিসেবে পালন করার দাবি জানিয়েছে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার। এ ছাড়া তারা বলেছে, নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদাসহ প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায়।
হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে—ঘটনার সঠিক তদন্ত করতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের কবর সংরক্ষণ করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে উত্তরায় একটি মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন দুর্ঘটনায় নিহত নাজিয়া ও নাফির বাবা আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর যখন বাচ্চাদের পেয়েছেন, তখন তাঁরা তাদের চিনতে পারেননি। অনেক দিন হলো তাঁরা ঘরে রান্না করতে পারেন না। তাঁর স্ত্রী বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, কারও সঙ্গে দেখা করেন না।
নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবির প্রসঙ্গে আশরাফুল ইসলাম বলেন, শুধু পাইলট আর শিক্ষক শহীদ হতে পারেন না। সবাই শহীদ। সবাই ইউনিফর্ম পরা ছিল। শিক্ষার্থীরা কেন বৈষম্যের শিকার হবে?
নিহত তাসমিয়া হকের বাবা নাজমুল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, সন্তানদের মধ্যে যারা আহত, তাদের অনেকের অবস্থা এতটাই খারাপ যে তারা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কি না তা তাঁরা জানেন না। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা খুবই উদ্বিগ্ন। আবার অনেকে আছে, যাদের দীর্ঘ সময় চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হবে। কয়েকজন আহত শিক্ষক আছেন, যাঁরা আর কখনো কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারবেন না, অথচ তাঁদের ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
আরও পড়ুনমাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: দগ্ধ দুই শিশু চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলে, তারা অবর্ণনীয় ট্রমার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। অনেকের জীবন-জীবিকা থমকে গেছে। বর্তমানে স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউ তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা তিনজন শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।
রেজাউল করিমের ছেলে সামিউল এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়। এই বাবা বলেন, তাঁরা ভালো নেই। দুই মাস ধরে তাঁরা ঘুমাতে পারেন না। এ দেশে এত মানুষ, তবু পাশে কি কাউকে তাঁরা পাবেন না? এই মুহূর্তে তাঁদের স্কুলের বারান্দায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু এখন এখানে। সরকার তাঁদের পাশে আসেনি। চোখের সামনে ছেলেকে লুটিয়ে পড়তে দেখেছেন তিনি, যা ভুলতে পারেন না।
সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, লাশের সঙ্গে একটা কপি পেয়েছেন। এরপর আর কারও কোনো যোগাযোগ নেই।
আরও পড়ুনমাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে১১ আগস্ট ২০২৫সানজিদা বেলায়েতের মেয়ে জায়ানা মাহবুব এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। এই মা বলেন, ‘আমার মেয়েটা পরিপাটি ছিল। হাতে মেহেদি দিত, ব্রেসলেট পরত। ওর হাত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সে বলে, হাত জম্বির মতো হয়ে গেছে। ওর প্রশ্নের উত্তর আমি কী দেব? এই বাচ্চাগুলোকে সমাজ কোন চোখে দেখবে? কারও হাতে কলম উঠবে না।’
সানজিদা বেলায়েত আরও বলেন, আরেক বাচ্চা বসতে পারে না। তার ফিজিওথেরাপি দরকার। সেই বাচ্চার বাবা নেই। সে কার কাছে যাবে? আবিদুর রহিম নামের এক বাচ্চা কী যে কষ্ট পাচ্ছে। তার শরীরে আর কোনো জায়গা নেই যে চামড়া নেবে। একটা বাচ্চা মানসিক সমস্যা নিয়ে আবার ভর্তি হয়েছে। শব্দ শুনলে সে চিৎকার দেয়। অনেকে কানেও শোনে না। কয়েকজন শিক্ষকও আহত। তাঁরা কি কর্মজীবনে ফিরতে পারবেন?
আরও পড়ুনবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যা যা জানা গেল২১ জুলাই ২০২৫আহত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান সানজিদা বেলায়েত। তিনি আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর দাবি জানান।
আহত রায়ান তৌফিকের বাবা সুমন বলেন, তাঁদের কান্না শুকিয়ে গেছে। সরকারের কাউকে তাঁরা পাশে পাননি। তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছেন।
গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের হায়দার আলী ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় যুদ্ধবিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ অন্তত ৩৪ জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৭ জনই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ছিল। আহত হয় অনেকে।
আরও পড়ুনউত্তরায় মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা তদন্তে সরকারের কমিশন গঠন২৭ জুলাই ২০২৫