কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা
Published: 24th, June 2025 GMT
কাতার ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত ও পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রেক্ষাপটে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ হামলা হয়। ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিমের বরাত দিয়ে আলজাজিরা এ খবর জানায়। কাতারের রাজধানী দোহার কাছে বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরান এ অভিযানের নাম দিয়েছে ‘বিজয়ের ঘোষণা’।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে হামলার খবর নিশ্চিত করেছে। বিস্ফোরণের জেরে দোহায় কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ হামলায় কেউ হতাহত হননি। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দেয়। তেহরান থেকে আলজাজিরার আলি হাসেম জানান, এটা সম্ভবত উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরানের হামলার শুরু।
আল উদেইদ বিমান ঘাঁটির ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা কাতারের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেহরান কামরাভ বলেন, ‘আমরা বড় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। ভবনগুলো নড়ে ওঠে। রাতের আকাশ আলোয় ছেয়ে যায়।’ তিনি জানান, ‘লোকজন দৌড়াতে শুরু করে। অনেকেই আতঙ্কিত ছিল। ১৮ বছর ধরে কাতারে আছি। প্রথম সাইরেনের শব্দ শুনতে পেলাম।’
কাতারের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে। বিবিসি জানায়, কাতার এটাকে তাদের সার্বভৌমত্বের ‘গুরুতর লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করেছে। এমন এক সময় এ হামলা হলো যখন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এরই মধ্যে ঘাঁটিতে হামলার খবর নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলছে, মধ্যম ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরান এ হামলা চালিয়েছে। কেউ হাতহত হননি। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। সৌদি এটাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করেছে। কাতারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। এ অবস্থায় ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল বলেছে, বন্ধু ও ভ্রাতৃসুলভ দেশ কাতারের সম্মানিত মানুষের জন্য এ হামলা কোনো আতঙ্কের কারণ নয়। কাতারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে ইরান অঙ্গীকারবদ্ধ।
ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ হামলাকে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছে। তারা চলমান পরিস্থিতিকে ‘নজিরবিহীন’ ও ‘অত্যন্ত ভয়ংকর’ বলে বর্ণনা করেছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংঘাত সম্প্রসারণের আভাস দেওয়া হয়েছে।
আলজাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশরা বলেন, গাজা যুদ্ধ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ছে। সার্বিক বিচারে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পুরো অঞ্চলকে অভিযুক্ত অপরাধীর মতো অজ্ঞাত গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর এবার দেশটির সরকার হটানোর বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে তাঁর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সরকার পরিবর্তন নয়; তারা চান, ইরান যেন পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসে। ট্রাম্পের এ নতুন বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর আগে ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার বারবার ইরানে সরকার হটানোর কথা বলেছে। নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মহান’ করার স্লোগান দিয়ে প্রেসিডেন্ট হওয়া ট্রাম্প এবার ইরানকেও ‘মহান’ করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
গতকাল সোমবার ছিল ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের ১১তম দিন। শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যস্থতার ভূমিকায় দেখা গেলেও আকস্মিক মোড় পরিবর্তন করে পুরো ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে যান ট্রাম্প। তাঁর প্রশাসনের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলাকালেই ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। পরে হামলায় যোগ দেয় মার্কিন বোমারু বিমান। ইসরায়েলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এবার আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটানোর যে বার্তা ট্রাম্প দিলেন, তাতে ইরানে আরও মার্কিন হামলার ইঙ্গিত রয়েছে। এ বাস্তবতায় মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা যুক্তরাষ্ট্রকে পুরোপুরি সংঘাতে টেনে আনাকে আরও জোরালো করল।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি রাশিয়া সফর করছেন। সফরকালে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে কী ধরনের সহায়তার আশ্বাস পেয়েছেন, তা স্পষ্ট জানা যায়নি। গতকাল সোমবার তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পুতিন ইরানের ওপর হামলার নিন্দা জানান। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি কোনো সামরিক সহায়তার আশ্বাস দেননি। এ অবস্থায় গতকাল সোমবারও ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ব্যাপক পাল্টাপাল্টি হামলা হয়।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে আজ মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্প নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলনে যোগ দিতে রওনা করবেন। আলজাজিরা জানায়, সম্মেলন সামনে রেখে দ্য হেগে বড় ধরনের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। এ ছাড়া গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসেও বিক্ষোভ হয়। এতে নানা ধরনের স্টিকার নিয়ে শত শত মার্কিনি অংশ নেন।
টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়্যাং ই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বিশ্বকে ভুল বার্তা দিচ্ছে; তারা খারাপ নজির সৃষ্টি করেছে। সব পক্ষকে অবশ্যই শান্ত হতে হবে এবং আলোচনায় ফিরতে হবে।
ইরানের হামলা
ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। গতকাল সোমবার ইসরায়েলের আশদদ শহরে হামলা হয়। ইসরায়েলের সাবেক বিচারমন্ত্রী জোসি বেইলিন জানান, ইরান সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ইসরায়েলে হামলা চালায়। তেল আবিব থেকে আলজাজিরাকে বেইলিন বলেন, হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাধারণত হামলাগুলো রাতে ঘটে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, আটটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ কোম্পানির কৌশলগত স্থাপনার কাছে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি শহরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের হার্মিস-৯০০ ড্রোন ভূপাতিত করার ফুটেজ প্রকাশ করেছে ইরানের গণমাধ্যম। গতকাল সোমবার ইরানের সেনাবাহিনী এগুলো ভূপাতিত করে।
ইসরায়েলের হামলা
আবারও ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনার কাছে হামলা চালিয়েছে তেল আবিব। ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় ইরানের মধ্যাঞ্চলের কেরমানশাহ প্রদেশের হামিল শহরে এক মা ও তাঁর ৬ বছরের ছেলে নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার ফার্স নিউজ জানায়, হামলায় ওই নারীর স্বামী ও আরেক সন্তান আহত হন।
ইরানের সংবাদ সংস্থা ইসনা জানায়, দেশটির মধ্যাঞ্চলে অ্যাম্বুলেন্সে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। নাজাফাবাদ কাউন্টির গভর্নর হামিদরেজা মোহাম্মদি ফেসহারাকি বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে এক রোগীকে অন্য হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। ড্রোন হামলায় অ্যাম্বুলেন্সটি অনেকটাই ভেঙেচুরে গেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন অ্যাম্বুলেন্সের চালক, রোগী ও রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজন।
এর আগে ইরানের ইয়াজদ প্রদেশে গত রোববার ইসরায়েলে হামলায় আইআরজিসির ১০ সদস্য নিহত হন। ইরানের আধাসরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম এ তথ্য জানায়।
জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক করার কথা রয়েছে। সূত্রের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার বিকেলে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ইরানে সরকার হটাতে চান ট্রাম্প
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইরানের সরকার হটানোর বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় রোববার বিকেল ৫টার দিকে ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তিনি লেখেন, সরকার পরিবর্তন (রেজিম চেঞ্জ) শব্দটি রাজনৈতিকভাবে সঠিক নয়। কিন্তু ইরানের বর্তমান শাসন ব্যবস্থা যদি দেশটিকে ‘আবার মহান’ করতে না পারে, তাহলে কেনই বা সরকার পরিবর্তন হবে না? তারপর তিনি লেখেন, ‘মিগা!’। এর মাধ্যমে ‘মেক ইরান গ্রেট এগেইন’ বা ইরানকে আবারও মহান করে তোলা বুঝানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে তেহরানে লাখো মানুষের বিক্ষোভের মধ্যে এ পোস্ট দিলেন।
গত বছরের শেষ দিকে নির্বাচনের প্রচারণায় ট্রাম্প ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ বা যুক্তরাষ্ট্রকে মহান করার স্লোগান তুলেছিলেন। এবার ইসরায়েলের হয়ে হামলা চালিয়ে ইরানকেও তিনি ‘মহান’ করতে চান। এর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখা, সরকার পরিবর্তন নয়।
পৃথক পোস্টে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা জানান। তিনি জানান, ইরান ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দেখানোর যে চেষ্টা করছে, তা সঠিক নয়। ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, ইরানের সব পারমাণবিক স্থাপনাতেই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ভূগর্ভের অনেক গভীরে। একেবারে লক্ষ্যভেদ!
ইরান এখনও তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, অত্যন্ত সুরক্ষিত ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনার তিনটি স্থানে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি বিশাল গর্ত। বাঙ্কার-বিধ্বংসী বোমার আঘাতে এমন গর্ত তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। একটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি গতকাল সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি অধিবেশনে বলেন, ফর্দোতে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতিটা হয়েছে ভূগর্ভে।
শত্রু বড় অপরাধ করেছে, শাস্তি পেতেই হবে: খামেনি
ইসরায়েলকে শাস্তি দেওয়া অব্যাহত থাকবে বলে অঙ্গীকার করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। আলজাজিরা জানায়, ইরানে মার্কিন হামলার পর দেওয়া প্রথম বিবৃতিতে খামেনি এ অঙ্গীকার করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে খামেনি বলেন, শত্রু বড় ভুল করেছে, বড় অপরাধ করেছে। এর শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। তারা সেই শাস্তি পাচ্ছে; তারা এখনই শাস্তি পাচ্ছে।
গত ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ইরানও পাল্টা হামলা শুরু করে। নিরাপত্তাজনিত কারণে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে বাঙ্কারে সরিয়ে নেওয়া হয়। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ৮৬ বছর বয়সী খামেনিকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দ্রুত সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বাছাইয়ের নির্দেশনাও তিনি দিয়ে রেখেছেন। ইরানের আইনসভা, বিচারব্যবস্থা, নির্বাহী বিভাগ ও সামরিক বাহিনীর সর্বময় ক্ষমতা সর্বোচ্চ নেতার হাতে থাকে।
মার্কিন নাগরিকদের জন্য বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা সতর্কতা জারি
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাতের জেরে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বিদেশে অবস্থানকারী মার্কিন নাগরিকদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে ভ্রমণ ব্যাহত হচ্ছে; অঞ্চলটির আকাশসীমা কখনও কখনও বন্ধ রাখা হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও স্বার্থবিরোধী বিক্ষোভের আশঙ্কা রয়েছে।
সিএনএন জানায়, নাগরিকরা যেন ভ্রমণের আগে সংশ্লিষ্ট দেশের তথ্য ও সাম্প্রতিক নিরাপত্তা সতর্কতাগুলো মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখে নেন, সে বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তর পরামর্শ দিয়েছে।
ইরানে হামলার কোনো মানে হয় না, বললেন পুতিন
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইরানে হামলার কোনো মানে হয় না। তেহরানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ‘অবৈধ’ ও ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’। গতকাল সোমবার মস্কোয় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। রুশ গণমাধ্যম আরটি জানায়, আরাগচি ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানানোয় পুতিনকে ধন্যবাদ জানান। আরাগচি বলেন, রাশিয়া ‘ইতিহাসের সঠিক পক্ষে’ রয়েছে। সম্মেলনে ইরানকে প্রকাশ্যে সামরিক সহযোগিতার কোনো বার্তা দেননি পুতিন।
ফোনে স্টারমার-ট্রাম্পের আলোচনা
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টেলিফোনে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, লন্ডনের স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় হওয়া এ ফোনালাপে দুই নেতা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য ‘গম্ভীর হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়েও তারা আলোচনা করেন। স্টারমার ও ট্রাম্প মনে করেন, এ হামলা ইরান থেকে আসা হুমকি কমানোর একটি প্রচেষ্টা। ডাউনিং স্ট্রিটের বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া যাবে না, এ বিষয়ে তারা একমত।
জুয়াড়ি ট্রাম্প যুদ্ধ শুরু করতে পারেন, শেষ করব আমরা: আইআরজিসির মুখপাত্র
ইরানের অভিজাত ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) মুখপাত্র ইব্রাহিম জোলফাঘারি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে ঢুকে গেছে এবং ইরানের ভূমির পবিত্রতা নষ্ট করেছে। বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে এ মুখপাত্র বলেছেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালানো হবে। ইব্রাহিম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘জোরালো, দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। ইব্রাহিম বলেন, ‘জনাব ট্রাম্প, আপনি জুয়াড়ি! আপনি এ যুদ্ধ শুরু করতে পারেন, কিন্তু আমরাই এটি শেষ করব!’
হরমুজ প্রণালির অন্যদিকে ঘুরে গেল তিন জাহাজ
মেরিন ট্রাফিক প্ল্যাটফর্মের তথ্য অনুসারে, তিনটি তেল ও রাসায়নিকবাহী ট্যাঙ্কার হরমুজ প্রণালি দিয়ে না গিয়ে অন্য দিকে গেছে। পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার শঙ্কা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে। ট্র্যাকিং তথ্য অনুসারে, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের পতাকাবাহী ম্যারি সি ও পানামার পতাকাবাহী রেড রুবি ট্যাঙ্কারগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলে ফুজাইরার কাছে নোঙর ফেলে। যুক্তরাজ্যের পতাকাবাহী কোহজান মারু ওমান উপসাগরে ওমানির জলসীমার কাছাকাছি চলে যায়।
ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালি বন্ধের একটি পদক্ষেপ অনুমোদন করেছে। তবে এ সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ওপর নির্ভর করবে।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র হ স থ ন য় সময় ইসর য় ল র স র পরর ষ ট র ও ইসর য় ল র ইসর য় ল আইআরজ স আলজ জ র রমন ত র ব যবস থ র বব র ত হয় ছ বল ছ ন মন ত র র বর ত অবস থ চলম ন
এছাড়াও পড়ুন:
সৌদি, আরব আমিরাত, ওমানে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা কেন কমছে
বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের শুরু থেকেই শীর্ষে আছে সৌদি আরব। এখন পর্যন্ত বিদেশে যাওয়া কর্মীদের ৩৪ শতাংশেরই গন্তব্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশ। চলতি বছরের মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে কাজের জন্য দেশ ছেড়ে যাওয়া কর্মীদের ৭৩ শতাংশই গেছেন সৌদিতে। তবে এ শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসছে।
অন্যদিকে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশিদের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। তৃতীয় শীর্ষে থাকা ওমানের বাজারও বন্ধ রয়েছে গত বছর থেকে। গত বছরের জুন থেকে বন্ধ হয়ে আছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। অবশ্য এটি দ্রুত চালু করতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় চাহিদামতো কর্মী পাঠানো যাচ্ছে না। ইউরোপে কর্মী পাঠানোর সম্ভাবনাও সেভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
অভিবাসন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্দিষ্ট কয়েকটি শ্রমবাজারের ওপর নির্ভরতার কারণেই বিদেশে কর্মী পাঠানোর হার বাড়ছে না। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, সৌদি আরবের চাহিদা একই রকম থাকবে না। ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে সৌদিতে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে কর্মীর চাহিদা বেড়েছিল। তবে এরই মধ্যে তা কমতেও শুরু করেছে। চলতি জুন মাসে ভিসা বন্ধ রেখেছে
মধ্যপ্রাচ্যে নারী কর্মীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত হয়নি। এ ছাড়া সৌদিতে বাসাবাড়ির কাজে যে শ্রম দিতে হয়, সে তুলনায় তেমন আয় হয় না। বিভিন্ন অভিযোগ তো আছেই। তাই নারীদের আগ্রহ কমে গেছে। আবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিকল্প উৎস হিসেবে আফ্রিকার দেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে।বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের (বিএনএসকে) নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলামসৌদি। জুলাইয়ে নতুন ঘোষণা দিতে পারে দেশটি। বিকল্প শ্রমবাজার চালু করা না গেলে কর্মী পাঠানো কমে যাবে।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন ১১ লাখের বেশি কর্মী। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ লাখে। তবে ২০২৪ সালে ৩ লাখ কমে হয় ১০ লাখ।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশ ছেড়েছেন ৪ লাখ ২০ হাজার কর্মী। তাঁদের মধ্যে তিন লাখই গেছেন সৌদি আরবে। এরপর রয়েছে কাতার। দেশটিতে ৪০ হাজার কর্মী গেছেন। ২৬ হাজারের বেশি কর্মী গেছেন সিঙ্গাপুরে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সৌদি যেতে অধিকাংশ কর্মী পরিচিত বা স্বজনের মাধ্যমে নিয়োগের চাহিদাপত্র সংগ্রহ করে থাকেন। এ নিয়ে একটি দালাল শ্রেণিও তৈরি হয়েছে। তারা নকল নিয়োগপত্র গছিয়ে দেয়। তাই কেউ কেউ সৌদিতে গিয়ে কাজ পান না, প্রতারিত হন। এটি বন্ধ হলে দেশটিতে গিয়ে বেকার থাকার অভিযোগ কমে আসবে।
রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি আরবে এক মাস ভিসা বন্ধ। নতুন চাহিদাও কমে গেছে। জুলাইয়ে দেশটি কী ধরনের ঘোষণা দেয়, সে জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কর্মী নিয়োগে তারা আরও যাচাই–বাছাই চালু করতে পারে। তাই বিকল্প শ্রমবাজার চালু করতেই হবে।
বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়ার তেমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। নতুন শ্রমবাজার চালুর ক্ষেত্রেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। যেসব দেশে সম্ভাবনা আছে, সেটিও কাজে লাগানো হচ্ছে না। শাকিরুল ইসলাম, চেয়ারপারসন, ওকাপকমছে নারী কর্মীওবিদেশে কর্মসংস্থানে বাংলাদেশি নারীদের মূল গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। অধিকাংশ নারীই যান গৃহকর্মী হিসেবে। তাঁদের কেউ কেউ নানা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসেন। যৌন নিপীড়নের অভিযোগও আছে। এতে নারীদের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার উৎসাহ কমছে।
বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বিদেশে নারী কর্মী গেছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ১০৮, অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় কমে ২৮ শতাংশ। গত বছর এটি আরও কমে ৬১ হাজার ১৫৮–তে নেমে এসেছে। কমার হার ২০ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে গেছেন ২৪ হাজার ৬১৭ নারী। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন ১৭ হাজার ৭৮৬ জন। সাড়ে চার হাজার নারী গেছেন জর্ডানে।
অর্থাৎ গত কয়েক বছরে বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়লেও আনুপাতিক হারে নারী কর্মীর সংখ্যা কমছে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল—এই তিন বছর বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। এ সময় বিদেশে গেছেন ৩৪ লাখের বেশি কর্মী। এর মধ্যে নারী কর্মী গেছেন আড়াই লাখের কম। অথচ ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর লক্ষাধিক নারী কর্মী বিদেশে গেছেন। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে এ সংখ্যা কমে আসে। পরের দুই বছর আবার বাড়ে। তবে দুই বছর ধরে কমছে।
বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের (বিএনএসকে) নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে নারী কর্মীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত হয়নি। এ ছাড়া সৌদিতে বাসাবাড়ির কাজে যে শ্রম দিতে হয়, সে তুলনায় তেমন আয় হয় না। বিভিন্ন অভিযোগ তো আছেই। তাই নারীদের আগ্রহ কমে গেছে। আবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিকল্প উৎস হিসেবে আফ্রিকার দেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে।
সম্ভাবনা কাজে লাগানোর তাগিদবৈদেশিক শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসার প্রধান কারণ একক দেশের ওপর নির্ভরতা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, একটা সময় কোনো এক দেশে বিপুল হারে কর্মী যেতে শুরু করেন। এরপর নানা সমস্যা তৈরি হওয়ার পর ওই শ্রমবাজার কয়েক বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তখন আরেক দেশে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। এভাবে ঘুরেফিরে হাতে গোনা কয়েকটি দেশের শ্রমবাজারে সীমিত হয়ে আছে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান।
পরিস্থিতি আসলেই হতাশাজনক বলে মনে করেন তৃণমূল অভিবাসীদের সংগঠন অভিবাসীকর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম। প্রস্তাবিত বাজেটে আগের চেয়েও এ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়ার তেমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। নতুন শ্রমবাজার চালুর ক্ষেত্রেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। যেসব দেশে সম্ভাবনা আছে, সেটিও কাজে লাগানো হচ্ছে না।