Samakal:
2025-11-17@11:19:34 GMT

মাপজোখ হয়, সেতু হয় না

Published: 24th, June 2025 GMT

মাপজোখ হয়, সেতু হয় না

নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি এলাকায় চেল্লাখালী নদীর ওপর নির্মিত আয়রন সেতুটি প্রায় তিন বছর আগে ভেঙে পড়েছে। এতদিন পরও নতুন করে সেতু নির্মাণ বা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তিন বছর আগে বন্যায় সেতু ভেঙে গেলেও নতুন কোনো সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। এ বাড়তি পথ পাড়ি দিতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
জানা গেছে, বাতকুচি এলাকায় চেল্লাখালী নদীর ওপর আয়রন সেতুটি এলজিএসপির অর্থায়নে নির্মিত হয়েছিল। সেতুটি দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ২০২৩ সালে বন্যায় প্রবল স্রোতে ভেঙে পড়ে। পরে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে বাঁশ-খুঁটি দিয়ে সাময়িক চলাচলের উপযোগী করলেও পরের বছরের বন্যায় সেটিও বিলীন হয়ে যায়। এর পর নদী পারাপারের আর কোনো ব্যবস্থা করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা জানান, এই সেতু দিয়ে মধুটিলা ইকোপার্ক, পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ, পলাশীকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়, আমবাগান বাজার, কয়রাকুড়ি, বেকিকুড়া, আন্ধারুপাড়া, শেখেরকুড়া ও বোনারপাড়া গ্রামের মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করতেন। সেতুটি ভেঙে পড়ায় কমপক্ষে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে শিশু-নারী, বৃদ্ধ, রোগীসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থী সুমাইয়া ও নাঈম ইসলামের ভাষ্য, ভেঙে পড়ার আগে সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আশা করত তারা। সেতু ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে তাদের মতো শিক্ষার্থীরা। অনেক পথ ঘুরে স্কুলে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
বাতকুচি এলাকার কৃষক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এ পথে প্রতিদিন কোনো না কোনো কাজে আমাদের আসা-যাওয়া করতে হয়। এখন সেতুর অভাবে নদী পারাপারে নিদারুণ কষ্টে আছি। অনেকবার মাপজোখ হয়েছে, কিন্তু সেতু হচ্ছে না।’
পথচারী আজিজুল হক জানান, নিয়মিত এ পথে যাতায়াত করেন তিনি। সেতু ভেঙে যাওয়ায় অনেক পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। হাট-বাজারে কৃষি পণ্য আনা-নেওয়া, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ পথচারী ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
কৃষক আসাদুজ্জমান বলেন, মাঝেমধ্যে বন্যহাতির পাল লোকালয়ে চলে আসে। তখন যাওয়ার কোনো উপায় থাকে না। এখানে একটি সেতু হলে দৌড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া যেত।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় পোড়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বাতকুচি এলাকায় চেল্লাখালী নদীর ওপর সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিনই হাজারো মানুষ যাতায়াত করতেন। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় নদী পারাপারে মানুষের সমস্যা হচ্ছে। তিনি জানান, দুই বছর আগে বন বিভাগ, পরিবেশ ও মৃত্তিকা অধিদপ্তরের টিম এসে পর্যাবেক্ষণ করে গেছে এবং এলজিইডির প্রকৌশলীরা এসে মাপজোখ করেছেন। এখন কোন অবস্থায় আছে, তা জানা নেই তাঁর। তিনি বলেন, মানবিক কারণে হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে একটি সেতু নির্মাণ প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া পিয়ালের ভাষ্য, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখানে সেতুর ব্যাপারে প্রকল্পের প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। এখন আদেশ এলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ত য় ত করত য ত য় ত কর পথ ঘ র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

সুস্বাস্থ্যের জন্য কৈশোরে সঠিক পুষ্টি 

কিশোরকালে শরীর ও মনের দ্রুত বৃদ্ধি ও পরিবর্তন ঘটে। শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধি, হাড় ও পেশির গঠন, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নয়ন ও হরমোনের ভারসাম্য স্থাপিত হতে থাকে। তাই এই বয়সে পুষ্টিহীনতা শুধু সাময়িক দুর্বলতা নয়, বরং ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য ও জীবনমানকে স্থায়ীভাবে প্রভাবিত করে।

সঠিক পুষ্টি না পেলে যা হয়

ওজন-উচ্চতা দ্রুত বাড়ে বলে কিশোরকালে পর্যাপ্ত প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পুষ্টি না পেলে পেশি ঠিকভাবে গড়ে ওঠে না, হাড়ের ঘনত্ব কমে, উচ্চতা কাঙ্ক্ষিত হয় না, সহজে ক্লান্তি লাগে। ফলে প্রাপ্ত বয়সে শরীর হয় দুর্বল ও সক্ষমতাও কমে যায়।

কিশোরকালে বিশেষ করে কিশোরীদের ক্ষেত্রে আয়রনের ঘাটতি খুব বেশি দেখা যায়। এ থেকে রক্তস্বল্পতা, মাথা ঘোরা, মনোযোগ কমে যাওয়া, শারীরিক পরিশ্রমে অসুবিধা, ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। এটি পড়াশোনা ও দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।

কৈশোরে মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও একাগ্রতার দক্ষতা তৈরি করে। প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি হলে শেখার ক্ষমতা কমে, স্মৃতিশক্তি দুর্বল, মানসিক চাপ সহ্যের ক্ষমতা কমে। এভাবে পুষ্টিহীনতা ধীরে ধীরে শিক্ষাগত অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারে।

একজন কিশোরী অপুষ্টির শিকার হলে সে ভবিষ্যতে মা হলে তার গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়, জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হতে পারে। এ ছাড়া মা অপুষ্টিতে থাকলে শিশুর মধ্যেও অপুষ্টির ঝুঁকি থেকে যায়। একইভাবে অপুষ্টি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে, যাকে বলা হয় ‘অপুষ্টির দুষ্টচক্র’।

যেসব খাবার খেতে হবে

শর্করার উৎস হিসেবে আছাঁটা চাল, গোটা গমের আটা, লাল চিড়া ও ওটস রাখা উচিত। নন-স্টার্চি সবজি যেমন শাকপাতা, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, করলা, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, গাজর ও মুলা ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস।

আমিষের জন্য দুধ, টকদই, ডিম, মাছ, মাংস, ডাল ও শিমজাত খাবার খেতে হবে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি পাওয়া যায় দুধ, দই, পনির, ছোট মাছ, কচুশাক, শজনেপাতা, কুমড়ার বীজ ও রোদে হালকা হাঁটাহাঁটি থেকে। জিংকের জন্য মাংস, মাছ, ডাল ও কুমড়ার বীজ উপকারী। 

আয়োডিনের জন্য দুধ, দই, ডিম, চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে। আয়রনের চাহিদা পূরণে মাছ, মাংস, ডিম, কচুশাক, পুঁইশাক, তরমুজ, জাম, খেজুর, পাকা তেঁতুল ভালো। ভিটামিন সি পাওয়া যায় পেয়ারা, আমড়া, আমলকী, লেবু, জলপাই, জামরুল, পাকা টমেটো, কামরাঙা, পাকা পেঁপে, আনারস ইত্যাদিতে।

অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, বাইরের অস্বাস্থ্যকর ভাজা-পোড়া খাবার, ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত তেল-চর্বি ও লবণাক্ত খাবার, সফট ড্রিংক পরিত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি পরিমিত মাত্রায় খাবার খাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও মাত্রাতিরিক্ত খাবার গ্রহণ কৈশোরকালীন স্থূলতার জন্য দায়ী।

মো. নাহিদ নেওয়াজ, টেকনিক্যাল অফিসার, নিউট্রিশন, হীড বাংলাদেশ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুস্বাস্থ্যের জন্য কৈশোরে সঠিক পুষ্টি