ইরানের দুটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এগুলোর প্রবেশপথ বন্ধ করে দিতে পেরেছে। কিন্তু স্থাপনার ভূগর্ভস্থ ভবনগুলো ধ্বংস করতে পারেনি।

একটি প্রাথমিক গোপন মার্কিন প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি অবগত আছেন—এমন কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা এ খবর জানিয়েছেন।

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহান্তের হামলায় (ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় গত শনিবার সন্ধ্যা) ইরানের পরমাণু কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাসের জন্য পিছিয়েছে।

হামলার আগেই মার্কিন গোয়েন্দারা বলেছিলেন, ইরান দ্রুত (পারমাণবিক) বোমা তৈরির চেষ্টা করলেও তাতে অন্তত তিন মাস লাগবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা ও ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর কয়েক দিনের হামলা শেষে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) ধারণা, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির অগ্রগতি শুধু ছয় মাসের কম সময়ই পিছিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার আগেই ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় অংশ সরিয়ে ফেলে। এতে হামলায় পারমাণবিক উপাদানের খুব সামান্যই ধ্বংস হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউরেনিয়ামের কিছু অংশ ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সাবেক কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ইরান যদি তড়িঘড়ি পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করে, তবে তা হবে অপেক্ষাকৃত ছোট ও অপরিপক্ব ধাঁচের বিস্ফোরক ডিভাইস। একটি ক্ষুদ্রাকৃতির (আকারে ছোট হলেও অত্যন্ত বিধ্বংসী) পারমাণবিক বোমা তৈরি করা অনেক বেশি জটিল কাজ। কিন্তু মার্কিন হামলায় ইরানের উন্নত মানের পারমাণবিক গবেষণায় কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক মূল্যায়ন আমলে নিলে বলতে হয়, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি অতিরঞ্জিত বলে মনে হচ্ছে। এ হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার কংগ্রেস সদস্যদের ব্রিফ করার কথা ছিল এবং তাঁরা এ মূল্যায়ন প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলারও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু সেই ব্রিফ অধিবেশন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হামলার আগেই ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় অংশ সরিয়ে ফেলে। এতে হামলায় পারমাণবিক উপাদানের খুব সামান্যই ধ্বংস হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউরেনিয়ামের কিছু অংশ ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

কয়েকজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, তাঁরাও মনে করেন, ইরান কিছু ছোট ও গোপন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে; যেন বড় স্থাপনা আক্রান্ত হলেও কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়া যায়।

আরও পড়ুনএবার মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা ২৩ জুন ২০২৫

মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলছেন, পাঁচ পৃষ্ঠার এ গোপন প্রতিবেদন শুধু প্রাথমিক মূল্যায়ন। আরও তথ্য সংগ্রহের পর এবং ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান—এ তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা নিয়ে ইরানের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে নতুন মূল্যায়ন আসবে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের সামনে যেসব প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো ‘মিশ্র’ প্রকৃতির এবং চূড়ান্ত কিছু এখনো তৈরি করা হয়নি বলে মন্তব্য করেন একজন কর্মকর্তা।

কিন্তু ডিআইএর প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, হামলায় ইরানের স্থাপনাগুলোর ক্ষতি ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, ইরান তার প্রায় সব পারমাণবিক উপকরণের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেও সক্ষম। এর মানে, তারা যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তুলনামূলকভাবে দ্রুতই তা করতে পারবে।

মার্কিন হামলায় ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা এখনো বাকি রয়েছে। তবে প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ইরানের তিনটি লক্ষ্যবস্তুই ‘গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত ও বিনাশ’ হয়েছে।ড্যান কেইন, যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান

ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে নিউইয়র্ক টাইমস যেসব মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে, তাঁরা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। কারণ, প্রাথমিক প্রতিবেদনটি এখনো গোপনীয় নথির পর্যায়ভুক্ত।

তবে হোয়াইট হাউস ডিআইএর মূল্যায়নের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট এক বিবৃতিতে প্রাথমিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনকে ‘পুরোপুরি ভুল’ মন্তব্য করে বলেন, ‘কথিত এ মূল্যায়ন ফাঁস করার উদ্দেশ্য পরিষ্কার—প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় করা এবং যাঁরা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসের অভিযানে অংশ নিয়েছেন, সেই সাহসী বৈমানিকদের ছোট করা।’

আরও পড়ুনইরান কিছুই ভুলবে না, সব মনে রাখবে১০ ঘণ্টা আগে

লেভিট আরও বলেন, ‘৩০ হাজার পাউন্ডের ১৪টি বোমা যদি নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে ফেলা হয়, তবে কী হয়, তা সবাই জানেন। ফলাফল হয় সম্পূর্ণ ধ্বংস।’

এর আগে এই গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কিছু অংশ মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনও প্রকাশ করে।

কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনার বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ের ভেতরে অবস্থিত এ স্থাপনা হামলা থেকে সুরক্ষার জন্য অনেক গভীরে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবেশপথ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইরান কত দ্রুত এ ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় আবার ঢুকতে পারবে এবং বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা মেরামত ও সরানো যন্ত্রপাতি পুনঃস্থাপন করতে পারবে, তা অনিশ্চিত।

ইসরায়েলের প্রাথমিক মূল্যায়নও মার্কিন হামলার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দেশটির প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী ফর্দোর ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ধ্বংস হয়নি।

হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কতটা পিছিয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে বিভিন্ন মাত্রার পূর্বাভাস দিয়েছিল। এতে সর্বনিম্ন কয়েক মাস থেকে সর্বোচ্চ কয়েক বছরের জন্য তা পিছিয়ে যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।

কয়েকজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, তাঁরাও মনে করেন, ইরান কিছু ছোট ও গোপন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে; যেন বড় স্থাপনা আক্রান্ত হলেও কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়া যায়।

কিছু কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, এসব পূর্বাভাস সুনির্দিষ্ট নয়। ইরান এ কর্মসূচি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিলে তা করতে ঠিক কত সময় লাগবে, তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, বি-২ বোমারু বিমান ও টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়েছে। গত রোববার পেন্টাগনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন হামলার প্রভাব সম্পর্ক বলতে গিয়ে কিছুটা সংযত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কাঠামোকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে দেওয়াই ছিল এ অভিযানের উদ্দেশ্য।’

আরও পড়ুনট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা: কত ঘণ্টায় কীভাবে কার্যকর হবে ২৪ জুন ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে হেগসেথের পাশে দাঁড়িয়ে জেনারেল কেইন জানান, হামলায় ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা এখনো বাকি রয়েছে। তবে প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ইরানের তিনটি লক্ষ্যবস্তুই ‘গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত ও বিনাশ’ হয়েছে।

গত সোমবার কংগ্রেসে অনুষ্ঠিত শুনানিতে ট্রাম্পের বক্তব্যকে ঘিরে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা। সশস্ত্র বাহিনী-সংক্রান্ত কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড বলেন, ‘আমরা এখনো ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত মূল্যায়নের জন্য অপেক্ষা করছি।’

সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানের ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোয় বড় ধরনের ক্ষতি করতে কয়েক দফায় হামলা চালানো দরকার ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথম দফার পরই হামলা বন্ধের ঘোষণা দেন।

হামলার আগেই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছিল, ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে তাদের কাছে এ পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে যে চাইলে তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, ফর্দো বা অন্যান্য পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে তা ইরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। কিন্তু ইরান সে পথে এগোবে কি না, এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুনইরানে বোমা ফেলে মার্কিন ঘাঁটিতে ফিরল একটি বি-২ বোমারু বিমান২৩ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র ক ন কর মকর ত য ক তর ষ ট র র ইউর ন য় ম র কর মকর ত র ধ ব স হয় ইসর য় ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে

বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনতির পর্বে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এ জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।

চলতি মাসে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দপ্তরে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সফরে আসা প্রতিনিধিদলের প্রধান মুনির সাতোরি।

মুনির সাতোরি বলেন, ‘আমাদের সফরের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রায় বিস্মৃত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা। রোহিঙ্গা সংকট যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য এটি ইইউর রাজনৈতিক এজেন্ডায় আবারও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ নিয়ে মুনির সাতোরি বলেন, ‘এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার প্রস্তাব করেছি।’

প্রতিনিধিদলের সদস্য ইজাবেল উইসেলার-লিমা বলেন, যখন বিশ্বে নাটকীয়ভাবে গণতন্ত্র অবনতির পথে, তখন বাংলাদেশ পথ পরিবর্তন করে দেখিয়েছে যে গণতন্ত্রের পথে যাওয়া যায়। তারা চেষ্টা করছে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়ার। আর এ জন্য সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটা আশা করা জরুরি যে সামনে নির্বাচন হবে এবং তা প্রতিযোগিতামূলক হবে, যা হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এ জন্য চেষ্টা করছে।

রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে ইজাবেল বলেন, ‘কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি মানুষ ভুলে যাচ্ছে। এ সংকট আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ, মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। আর বাংলাদেশও দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশের নিজেরই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ে নেওয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সংকটের এখনকার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশ বর্তমানে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে অবস্থায় রয়েছে।’

প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য আরকাদিউজ মুলারজিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বেশি মানবিক অনুদান আসে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো থেকে, যদিও আগে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দিত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রতিশ্রুতি খুবই নগণ্য, এটি আশ্চর্যজনক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বদলে অনেক দূরে থাকা ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোকে এর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বড় অংশগ্রহণকারী হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কারণ, বর্তমানে আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে দর–কষাকষি করছি।’

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্য ক্যাটারিনা ভিয়েরা বলেন, এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ইতিহাসে দেশটি বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি সুযোগ সত্যিকারের অগ্রগতির। শিগগিরই হয়তো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ভেতরে গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায়। এ বিষয়গুলো শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বের থেকে আসেনি, এসেছে নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকেও, যাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তারা নিজেদের মধ্যে সংলাপের মধ্যে রয়েছে। যদিও অনুতাপের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয়, লিঙ্গ ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নেই। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমাজ গঠনে এখানে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

আরকাদিউজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সংস্কারে উৎসাহ, যারা সংস্কারে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় গঠনমূলক সহযোগিতা করে ইইউ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের উল্টো পথে যাত্রা করছে, তখন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের আশা করার অবকাশ রয়েছে। গণতন্ত্রের পথে আরও অনেক কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সামনে দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করি। এটি এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।’

১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করে। এ সময়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংগঠন, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং মাঠপর্যায়ে কর্মরত বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।

এ ছাড়া প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরও পরিদর্শন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ