ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়নি, কয়েক মাস পিছিয়েছে মাত্র
Published: 25th, June 2025 GMT
ইরানের দুটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এগুলোর প্রবেশপথ বন্ধ করে দিতে পেরেছে। কিন্তু স্থাপনার ভূগর্ভস্থ ভবনগুলো ধ্বংস করতে পারেনি।
একটি প্রাথমিক গোপন মার্কিন প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি অবগত আছেন—এমন কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা এ খবর জানিয়েছেন।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহান্তের হামলায় (ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় গত শনিবার সন্ধ্যা) ইরানের পরমাণু কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাসের জন্য পিছিয়েছে।
হামলার আগেই মার্কিন গোয়েন্দারা বলেছিলেন, ইরান দ্রুত (পারমাণবিক) বোমা তৈরির চেষ্টা করলেও তাতে অন্তত তিন মাস লাগবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা ও ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর কয়েক দিনের হামলা শেষে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) ধারণা, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির অগ্রগতি শুধু ছয় মাসের কম সময়ই পিছিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার আগেই ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় অংশ সরিয়ে ফেলে। এতে হামলায় পারমাণবিক উপাদানের খুব সামান্যই ধ্বংস হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউরেনিয়ামের কিছু অংশ ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।সাবেক কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ইরান যদি তড়িঘড়ি পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করে, তবে তা হবে অপেক্ষাকৃত ছোট ও অপরিপক্ব ধাঁচের বিস্ফোরক ডিভাইস। একটি ক্ষুদ্রাকৃতির (আকারে ছোট হলেও অত্যন্ত বিধ্বংসী) পারমাণবিক বোমা তৈরি করা অনেক বেশি জটিল কাজ। কিন্তু মার্কিন হামলায় ইরানের উন্নত মানের পারমাণবিক গবেষণায় কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক মূল্যায়ন আমলে নিলে বলতে হয়, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি অতিরঞ্জিত বলে মনে হচ্ছে। এ হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার কংগ্রেস সদস্যদের ব্রিফ করার কথা ছিল এবং তাঁরা এ মূল্যায়ন প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলারও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু সেই ব্রিফ অধিবেশন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হামলার আগেই ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় অংশ সরিয়ে ফেলে। এতে হামলায় পারমাণবিক উপাদানের খুব সামান্যই ধ্বংস হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউরেনিয়ামের কিছু অংশ ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কয়েকজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, তাঁরাও মনে করেন, ইরান কিছু ছোট ও গোপন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে; যেন বড় স্থাপনা আক্রান্ত হলেও কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়া যায়।
আরও পড়ুনএবার মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা ২৩ জুন ২০২৫মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলছেন, পাঁচ পৃষ্ঠার এ গোপন প্রতিবেদন শুধু প্রাথমিক মূল্যায়ন। আরও তথ্য সংগ্রহের পর এবং ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান—এ তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা নিয়ে ইরানের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে নতুন মূল্যায়ন আসবে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের সামনে যেসব প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো ‘মিশ্র’ প্রকৃতির এবং চূড়ান্ত কিছু এখনো তৈরি করা হয়নি বলে মন্তব্য করেন একজন কর্মকর্তা।
কিন্তু ডিআইএর প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, হামলায় ইরানের স্থাপনাগুলোর ক্ষতি ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, ইরান তার প্রায় সব পারমাণবিক উপকরণের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেও সক্ষম। এর মানে, তারা যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তুলনামূলকভাবে দ্রুতই তা করতে পারবে।
মার্কিন হামলায় ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা এখনো বাকি রয়েছে। তবে প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ইরানের তিনটি লক্ষ্যবস্তুই ‘গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত ও বিনাশ’ হয়েছে।ড্যান কেইন, যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যানওই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে নিউইয়র্ক টাইমস যেসব মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে, তাঁরা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। কারণ, প্রাথমিক প্রতিবেদনটি এখনো গোপনীয় নথির পর্যায়ভুক্ত।
তবে হোয়াইট হাউস ডিআইএর মূল্যায়নের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট এক বিবৃতিতে প্রাথমিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনকে ‘পুরোপুরি ভুল’ মন্তব্য করে বলেন, ‘কথিত এ মূল্যায়ন ফাঁস করার উদ্দেশ্য পরিষ্কার—প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় করা এবং যাঁরা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসের অভিযানে অংশ নিয়েছেন, সেই সাহসী বৈমানিকদের ছোট করা।’
আরও পড়ুনইরান কিছুই ভুলবে না, সব মনে রাখবে১০ ঘণ্টা আগেলেভিট আরও বলেন, ‘৩০ হাজার পাউন্ডের ১৪টি বোমা যদি নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে ফেলা হয়, তবে কী হয়, তা সবাই জানেন। ফলাফল হয় সম্পূর্ণ ধ্বংস।’
এর আগে এই গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কিছু অংশ মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনও প্রকাশ করে।
কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনার বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ের ভেতরে অবস্থিত এ স্থাপনা হামলা থেকে সুরক্ষার জন্য অনেক গভীরে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবেশপথ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইরান কত দ্রুত এ ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় আবার ঢুকতে পারবে এবং বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা মেরামত ও সরানো যন্ত্রপাতি পুনঃস্থাপন করতে পারবে, তা অনিশ্চিত।
ইসরায়েলের প্রাথমিক মূল্যায়নও মার্কিন হামলার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দেশটির প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী ফর্দোর ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ধ্বংস হয়নি।
হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কতটা পিছিয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে বিভিন্ন মাত্রার পূর্বাভাস দিয়েছিল। এতে সর্বনিম্ন কয়েক মাস থেকে সর্বোচ্চ কয়েক বছরের জন্য তা পিছিয়ে যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।
কয়েকজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, তাঁরাও মনে করেন, ইরান কিছু ছোট ও গোপন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে; যেন বড় স্থাপনা আক্রান্ত হলেও কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়া যায়।কিছু কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, এসব পূর্বাভাস সুনির্দিষ্ট নয়। ইরান এ কর্মসূচি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিলে তা করতে ঠিক কত সময় লাগবে, তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, বি-২ বোমারু বিমান ও টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়েছে। গত রোববার পেন্টাগনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন হামলার প্রভাব সম্পর্ক বলতে গিয়ে কিছুটা সংযত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কাঠামোকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে দেওয়াই ছিল এ অভিযানের উদ্দেশ্য।’
আরও পড়ুনট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা: কত ঘণ্টায় কীভাবে কার্যকর হবে ২৪ জুন ২০২৫সংবাদ সম্মেলনে হেগসেথের পাশে দাঁড়িয়ে জেনারেল কেইন জানান, হামলায় ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা এখনো বাকি রয়েছে। তবে প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ইরানের তিনটি লক্ষ্যবস্তুই ‘গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত ও বিনাশ’ হয়েছে।
গত সোমবার কংগ্রেসে অনুষ্ঠিত শুনানিতে ট্রাম্পের বক্তব্যকে ঘিরে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা। সশস্ত্র বাহিনী-সংক্রান্ত কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড বলেন, ‘আমরা এখনো ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত মূল্যায়নের জন্য অপেক্ষা করছি।’
সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানের ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোয় বড় ধরনের ক্ষতি করতে কয়েক দফায় হামলা চালানো দরকার ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথম দফার পরই হামলা বন্ধের ঘোষণা দেন।
হামলার আগেই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছিল, ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে তাদের কাছে এ পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে যে চাইলে তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, ফর্দো বা অন্যান্য পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে তা ইরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। কিন্তু ইরান সে পথে এগোবে কি না, এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুনইরানে বোমা ফেলে মার্কিন ঘাঁটিতে ফিরল একটি বি-২ বোমারু বিমান২৩ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র ক ন কর মকর ত য ক তর ষ ট র র ইউর ন য় ম র কর মকর ত র ধ ব স হয় ইসর য় ল র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালীতে আগুনে পুড়ল ১১টি দোকান ও একটি কারখানা
নোয়াখালীর সেনবাগে একটি কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, গোডাউনসহ অন্তত ১১টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ১টার দিকে উপজেলার সেবারহাট বাজারে ঘটনাটি ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের সেনবাগ, চৌমুহনী ও মাইজদীর পাঁচটি ইউনিট প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রবিবার (১০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানায়, শনিবার রাত ১টার দিকে সেবারহাটে একটি আসবাবপত্র তৈরির কারখানা থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর আগুন আশপাশের ১১টি দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আরো পড়ুন:
নেত্রকোণার ধলাই নদীতে বাল্কহেড ডুবে ২ শ্রমিক নিখোঁজ
মানিকগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানার আগুন, ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি
আগুনে আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, মেশিনারিজ সামগ্রী, থাই অ্যালুমিনিয়াম পণ্য বিক্রির দোকানসহ অন্তত ১১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আগুনে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের ৩৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সেনবাগ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মো.সাব্বির হোসেন বলেন, “পাঁচটি ইউনিট প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষয়ক্ষতি ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ তদন্ত শেষে বলা যাবে।”
ঢাকা/সুজন/মাসুদ