ভারতের ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’ কি সফল হবে
Published: 25th, June 2025 GMT
গণচীনের ‘চেয়ারম্যান মাও’ মারা গেছেন ৪৯ বছর হলো। তিনি বেঁচে থাকতেই ১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মাও সে–তুংয়ের রাজনৈতিক চিন্তা ও সামরিক কৌশল নিয়ে বিপ্লবের নিরীক্ষায় নেমেছিলেন চারু মজুমদারের নেতৃত্বে একদল কমিউনিস্ট। ১৯৭২ সালে চারুবাবুকে হত্যা করা হয়। তারপর ধীরে ধীরে পশ্চিমবঙ্গে সমাজ পরিবর্তনের ওই চেষ্টা দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু ভারতের অন্যত্র মাওবাদীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে—এমন বলার সুযোগ মেলেনি কখনো।
সম্প্রতি নতুন করে অনেক মাওবাদী সংগঠক হত্যা করল ভারত সরকার। প্রশ্ন উঠছে, চীনে যা নেই, ভারতে সেই আদর্শবাদের বীজ থেকে প্রাণ হয়ে জেগে ওঠে কেন বারবার? কী ধরনের বাস্তবতায় ভারত থেকে মাওবাদ নির্মূল করা যাচ্ছে না।
‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’পশ্চিমবঙ্গের আগে সমকালীন ভারতে সমাজবদলের প্রথম সশস্ত্র চেষ্টা হয় ১৯৪৬ সালে তেলেঙ্গানায়। প্রধানত ভূমি সংস্কারের দাবিতে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত এই বিদ্রোহ চলে। তারপর অনুরূপ বড় চেষ্টা হিসেবে নকশালবাড়ি আন্দোলন এই বাংলাতেও বেশ ছাপ রেখেছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রভাব এত বেশি ছিল যে মাওবাদীরা আজও রাজনৈতিক সাহিত্যে ‘নকশাল’ নামেও অভিহিত হন।
পশ্চিমবঙ্গের সেই অধ্যায়ের কাছাকাছি সময়ে একই রকম চেষ্টা শুরু হয় অন্ধ্র প্রদেশের দিকে। তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র তখন একই প্রদেশ ছিল। সেখানে অন্যদের মধ্যে বড় গ্রুপটি ছিল কোন্দাপল্লি সিতারামাইয়ার নেতৃত্বাধীন ‘পিপলস ওয়ার’। ওই অঞ্চল থেকে এ শতাব্দীর শুরুতে ভারতীয় মাওবাদীদের ভরকেন্দ্র স্থানান্তরিত হয় কাছের ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড ও বিহারের দিকে।
ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো মাওবাদী গেরিলাদের বিরুদ্ধে এবার বড় ধরনের সফলতা পেল এখানকারই (ছত্তিশগড়ের) নারায়ণপুরে। তারা এ অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’। এ বছরের ২১ এপ্রিল থেকে এ অভিযান চলছে।
গত মাসে এ অভিযানকালেই নিহত হন মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই-এম) সাধারণ সম্পাদক কেশব রাও এবং তাঁর সঙ্গে আরও ২৭ জন। এর মধ্যে অন্তত আটজন ছিলেন বড় মাপের সংগঠক। ৫ ও ৬ জুন সরকার হত্যা করে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য সুধাকর ও তেলেঙ্গানা কমান্ডার ভাস্করকে। তাঁদের দুজনকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ৪০ ও ৪৫ লাখ রুপি করে পুরস্কার ঘোষণা করা ছিল।
সরকার যদিও বলছে, অভিযানকালে সংঘর্ষে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তবে দেশটির মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এগুলো একদম ঠান্ডা মাথার খুন। একটা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাঁদের মেরে ফেলা হয়।
তবে ঘটনাস্থলে যা–ই ঘটে থাকুক, সরকারের দিক থেকে এ রকম বড় বড় নেতাকে ‘খতম’ করতে পারা সাফল্যের ব্যাপার। অমিত শাহ বেশ উল্লসিতও। কারণ, মনমোহন সিংয়ের মতো তাঁর কাছেও মাওবাদ ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ‘এক নম্বর শত্রু’ এবং এবারকার অভিযানেরও সরাসরি নির্দেশদাতা তিনি। ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে অমিত শাহ ভারতকে নকশালমুক্ত করবেন বলে জানান।
সরকার মাওবাদীদের প্রতি তার আক্রোশ লুকাচ্ছে না। কেশব রাওসহ আট গেরিলা নেতার মৃতদেহ নিকটজনদের না দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চলতি অভিযানকালে প্রায় ৫৫০ জন মাওবাদীকে হত্যা করেছে সরকার।
‘রেড জোন’ ম্যাপিংবর্তমানে অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট চলছে প্রধানত তেলেঙ্গানা ও মহারাষ্ট্রসংলগ্ন ছত্তিশগড়ের বিজয়পুর ও নারায়ণপুরে। এ অঞ্চল অন্ধ্র ও ওডিশারও কাছে। ওডিশার কালাহান্দি, মহারাষ্ট্রের গাদচিরোলি ও তেলেঙ্গানার ভাদ্রাদি কথাগুদেম ছত্তিশগড়সংলগ্ন এলাকা। বিজয়পুর ও নারায়ণপুরের পূর্বে জঙ্গলাকীর্ণ বস্তার অঞ্চল, যা এখন চারটি জেলায় ভাগ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে বস্তার ছিল স্বাধীন রাজ্য। বস্তার ও আশপাশের পাঁচ রাজ্যের সীমান্তবর্তী জনপদগুলোতেই মাওবাদীদের প্রভাব খুব বেশি। এখানকার ৪০ শতাংশ মানুষেরই জীবনযাপন বনাঞ্চলভিত্তিক।
ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে কোনো অবস্থাতেই ফেরত পাঠাবে না ভারত: রাজনৈতিক বিশ্লেষ
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার অপর আসামি সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের সাজা।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এরপর থেকে তিনি ভারত সরকারের আশ্রয়েই রয়েছেন। ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি তার বিচার পরিচালনা করে। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে কেবল সাবেক পুলিশ প্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত। তিনি বলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতের এই রায় প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না ভারত।”
আলজাজিরাকে দেওয়া মন্তব্যে দত্ত আরো বলেন, “কোনো অবস্থাতেই ভারত তাকে প্রত্যর্পণ করবে না। গত দেড় বছরে আমরা দেখেছি যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো অবস্থায় নেই এবং অনেক সময়ই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।”
দত্ত বলেন, “হাসিনার মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশিত ছিল।”
তিনি বলেন, “সবাই বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখেছেন। সবাই আশা করেছিলেন যে হাসিনার বিচার হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা একমত যে, বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেশের আইনি ব্যবস্থা অনুসরণ করেছে।”
দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, “নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে কারো সন্দেহ নেই। স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”
দত্তের ভাষ্যমতে, “আওয়ামী লীগ এখন একটি পাল্টা ব্যাখ্যা তৈরির তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলাদেশিরা মূলত বিশ্বাস করেন যে- হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।”
ঢাকা/ফিরোজ