বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় এনসিপি নেতা ও তাঁর স্ত্রীকে মারধর, অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে
Published: 25th, June 2025 GMT
মাদারীপুরে বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতা ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে যুবদলের স্থানীয় এক নেতা ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের তাঁতিকান্দা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন এনসিপির মাদারীপুর জেলা সমন্বয়কারী কমিটির সদস্য ও রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের তাতিকান্দা ২ নম্বর ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা মহাসিন ফকির (৩৫) ও তাঁর স্ত্রী জান্নাতুল জারা (৩০)। তাঁদের উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, তাঁতিকান্দা এলাকার কুমার নদে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু ব্যবসার জন্য পাইপলাইন টানেন হোসেনপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা এনামুল শেখ ও তাঁর লোকজন। পরে তাঁদের বাধা দেন মহাসিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এনামুলসহ যুবদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী। গতকাল সন্ধ্যায় মহাসিনকে মুঠোফোনে বাড়ির সামনের সড়কে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন তাঁরা। এ সময় মহাসিনের চিৎকার শুনে বাঁচাতে গিয়ে মারধরের শিকার হন তাঁর দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জান্নাতুল। পরে স্বজন ও স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রাজৈর থানা-পুলিশ।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মহাসিন ফকির বলেন, ‘এনামুল শেখ আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। এখন তিনি হোসেনপুর ইউনিয়ন যুবদলের নেতা। তাঁদের অবৈধ বালু ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। লতিফ বয়াতি নামে যুবদলের আরেক কর্মী আমাকে ফোন করে ঘর থেকে বের করে আনেন। এনামুল, হকসহ আরও সাত-আটজন মিলে আমাকে বেধড়ক মারধর করে। একই সঙ্গে আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকেও মারধর করা হয়।’
মহাসিনের স্ত্রী জান্নাতুল জারা বলেন, ‘আমার স্বামীকে এনামুল ও তাঁর ভাই নাজমুল, হক নামের ব্যক্তিরাসহ বেশ কয়েকজন মিলে মারধর করেন। চিৎকার শুনে এগিয়ে গেলে আমাকেও তাঁরা পেটে ও পিঠে লাথি মারেন। নাজমুল গলা থেকে আমার স্বর্ণের চেইন ছিঁড়ে নিয়ে গেছেন। আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শামীম আক্তার আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, মহাসিন ও জান্নাতুল গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁরা মারধরের শিকার; শরীরে ব্যথা আছে। তবে মারাত্মক কোনো জখম নেই। দুজনই শঙ্কামুক্ত।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এনামুল শেখ বলেন, ‘বাড়ি নির্মাণের জন্য আমার একটি পুকুর ভরাট করতে এনসিপির এক নেতার কাছ থেকে ড্রেজার পাইপের লাইন নেওয়া হয়েছিল। এ জন্য মহাসিন চাঁদা দাবি করেছেন। তিনি চাঁদার টাকা না পেয়ে একটি পাইপ ভেঙে ফেলেন। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে আগে আমাকে মারধর করেন মহাসিন। পরে আমার ছোট ভাই (নাজমুল শেখ) মহাসিনের চোখে ঘুষি মারছে। এ বিষয়ে আমরা রাজৈর থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।’ এনামুল শেখ নিজেকে হোসেনপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি দাবি করলে কমিটি হয়েছে কি না, জানতে চান এই প্রতিবেদক। জবাবে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে সম্মেলন হবে। প্রার্থী আমি একাই।’
অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, ‘রাতে একপক্ষের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জ র উপজ ল এন ম ল শ খ য বদল র এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে
প্রযুক্তির উৎকর্ষের মধ্যেও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে প্রায়ই বিকৃতভাবে বা ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। গুগলে ‘ইনডিজেনাস পিপল’ লিখে খোঁজা হলে মাঝেমধ্যে এমন ছবি দেখানো হয়, যা তাদের ‘আদিম’, ‘বন্য’, ‘বর্বর’, ‘জংলি’ ও ‘হিংস্র’ আকারে উপস্থাপন করে।
সোমবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এমন অভিযোগ করেন। ‘আদিবাসী নারীর অধিকার রক্ষা ও ভবিষ্যৎ গড়ার লড়াইয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক।
আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ঘিরে এমন উপস্থাপনের প্রভাব নারীদের ওপরও পড়বে।
মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, দেশে জাতিসংঘের অনেকগুলো দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হলেও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করা হয় না। তিনি বলেন, বুঝুক আর না বুঝুক বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন কনভেনশনকে তড়িঘড়ি করে সমর্থন করে। কিন্তু এই কনভেনশনকে সমর্থন করেনি। সরকার বুঝেশুনেই সমর্থন করেনি। আগের সরকার বলেছে, বাংলাদেশে আদিবাসী নেই, এই সরকারও আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না।
একটাই ধর্ম ও জাতিসত্তা থাকবে, এমন মনোভাব কাম্য নয় উল্লেখ করে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘কিসের ভয়ে আমরা দেশে ভিন্ন ধর্ম, চিন্তা ও জাতিসত্তার মানুষকে থাকতে দেব না? কে অধিকার দিয়েছে যে একটি মাত্র মতবাদ, চিন্তা, ভাষা জাতি ও ধর্ম থাকবে? রাষ্ট্রের জন্য এটা কাম্য হতে পারে না।’
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে সমতল ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করে খুশী কবির বলেন, অভ্যুত্থানের পরে আর নারীদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। নারী কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু কমিশনের কোনো কিছু গ্রহণ করা হয়নি। এর অর্থ সরকার নারীদের ভয় পায়। এই অবস্থা টিকে থাকার জন্য অভ্যুত্থান হয়নি। তাই অধিকার আদায়ে নারীদের শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। এখনই উত্তম সময়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির ছবি: প্রথম আলো হেডিং: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে