সুইস ব্যাংকগুলোতে ভারতীয়দের আমানত বাড়ছে কেন
Published: 25th, June 2025 GMT
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো একসময় গোপনীয়তার জন্য বিখ্যাত ছিল। সারা বিশ্বের কালো টাকার মূল গন্তব্যই ছিল এসব ব্যাংক। কিন্তু এখন প্রতিবছরই সুইস ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সঞ্চিত অর্থের হিসাব বেরিয়ে যাচ্ছে। তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরও কেন বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশের মানুষেরা এসব ব্যাংকে টাকা রাখছেন।
ভারতীয় নাগরিকেরা কেন সুইস ব্যাংকগুলোতে টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন, তা নিয়ে ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে ভিন্ন এক প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব ব্যাংকে গচ্ছিত কিছু অর্থের উৎস সন্দেহজনক হতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের নতুন নিয়ম, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রাবাজারের ওঠানামা—এসব কারণে অনেক অনাবাসী ভারতীয়, ভারত ত্যাগ করা ধনী পরিবার ও ভারতের ধনী পরিবারও সুইস ব্যাংকে অর্থ রাখছেন।
অভিবাসনবিষয়ক বিশ্লেষক ও খাত–সংশ্লিষ্ট অন্যদের মতে, সুইস ব্যাংকগুলোতে সম্প্রতি ভারতীয়দের যে বিপুল অঙ্কের অর্থ জমেছে, তার বেশির ভাগই ‘কালো টাকা’ নয়। বরং এই অর্থ মূলত বিদেশে থাকা ভারতীয়দের, যাঁরা অন্যান্য দেশে সঞ্চিত অর্থ স্থানান্তর করে সুইজারল্যান্ডে আনছেন। অনেকে তাঁদের পারিবারিক সম্পদ সুইস ফাউন্ডেশন ও ট্রাস্টে রাখছেন, এসব ফাউন্ডেশন তুলনামূলকভাবে অনুকূল নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এমনকি বিদেশি আইন অনুযায়ী গঠিত ট্রাস্টকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিধান সুইজারল্যান্ডের আইনে আছে।
ভারতের আইন সংস্থা খাইতান অ্যান্ড কোর অংশীদার মইন লাধা ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের নিয়মে সাম্প্রতিক রদবদলের ফলে অনেক অনাবাসী ভারতীয় আরব আমিরাত বা ইউরোপে বসবাসের পরিকল্পনা করছেন। স্বাভাবিকভাবেই তারা সম্পদও সরিয়ে নিচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ড হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক গন্তব্য। এটাই হতে পারে সুইস ব্যাংকগুলোতে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির মূল কারণ। এই দুটি দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা এখন অন্যদের তুলনায় অনুকূল। সে কারণে বিশ্বের অনেক দেশের বিনিয়োগকারীরা এসব দেশের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছর যুক্তরাজ্যের ২০০ বছরের পুরোনো ব্যবস্থায় বদল এসেছে। ফলে বহু ভারতীয় পরিবার বিদেশে দ্বিতীয় আবাস খুঁজছেন, বিদেশি আয় ও উত্তরাধিকারে উচ্চ কর এড়ানোর জন্য।
সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সম্পদ ব্যবস্থাপক, বিমা কোম্পানি ও অন্যান্য আর্থিক মাধ্যমে ভারতীয়দের সঞ্চিত অর্থ ৩ গুণ বেড়ে ৩৯২ কোটি ডলার হয়েছে। তবে ভারতীয় গ্রাহকদের ব্যক্তিগত বা খুচরা হিসাবের অর্থ মাত্র ১১ শতাংশ বেড়েছে। লাধা বলেন, বিষয়টি কার্যত একধরনের পুনর্বিন্যাস। বৈশ্বিক নিয়মকানুন ও করনীতির কারণে মূলধন পুনর্বিন্যাসে যে বড় পরিবর্তন এসেছে, এটি তার ইঙ্গিত।
ভারতীয়দের আমানত কেন বাড়ল, সে বিষয়ে যদিও সুইস ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক করব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ ঈশা শেখরি ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, সুইজারল্যান্ড যে আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বস্ত, এই ঘটনা থেকে তা আবারও বোঝা যায়। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও সুইস মুদ্রার শক্তি ও স্থিতিশীলতা, নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে এর পরিচিতি ও দ্রুত খাপ খাওয়ানো নিয়মনীতি—সব মিলিয়ে মূলধন সংরক্ষণের জন্য দেশটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।
গত বছর সুইস মুদ্রা কিছুটা দুর্বল হলেও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডলারের বিপরীতে এই মুদ্রার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে জি১০ দেশগুলোর মধ্যে সুইস মুদ্রার দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য আর্থিক সম্পদের তথ্য বিনিময়ের চুক্তিতে সই করছে। ফলে সুইস ব্যাংকগুলোতে গোপনে অবৈধ অর্থ রাখার আগ্রহ অনেকটাই কমেছে। সুইস কর্তৃপক্ষও সক্রিয়। অনেক বন্ধ হয়ে যাওয়া হিসাবের তথ্য প্রকাশ করছে তারা। এই পরিস্থিতিতে ভারতের আয়কর বিভাগ ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কালো টাকা ও অর্থ পাচারসংক্রান্ত আইনের কঠোর প্রয়োগ করে অনাবাসী ভারতীয়দের নোটিশ পাঠিয়েছে। সেই সঙ্গে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আয়করবিষয়ক পরামর্শক ঈশা শেখরি ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, এসব হিসাবের অনেকটি (যেগুলোর সঙ্গে ভারতীয়দের সম্পর্ক রয়েছে) বিনিয়োগ মাধ্যম বা ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, ভারতীয় ব্যক্তিরাই যার ‘চূড়ান্ত উপকারভোগী মালিক’, যদিও তাঁদের নাম সরাসরি হিসাবে উল্লেখিত না–ও থাকতে পারে। বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিবেদনের মানদণ্ডের পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের সম্পদ আরও দৃশ্যমান হচ্ছে।
আইন পরিবর্তনের পরও সুইস ব্যাংকগুলোতে ভারতীয়রা অর্থ গচ্ছিত রাখছেন। সংবাদে বলা হয়েছে, বড় বড় পরিবারগুলো উত্তরাধিকারীদের নাম গোপন রাখতে চাইত। সে ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকগুলোর এই গোপনীয়তা কাজে এসেছে, কর ফাঁকির পাশাপাশি সম্পদ পরিকল্পনাতেও সুবিধা হয়েছে।
এদিকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে ৩৩ গুণ বেড়েছে। জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি সুইস ফ্রাঁ (সুইজারল্যান্ডের মুদ্রা) বা ৬৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ পর ব র আর থ ক অর থ র
এছাড়াও পড়ুন:
‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ
হাজার হাজার মানুষ বৃষ্টি উপেক্ষ করে ঢাকায় একত্রিত হয়ে এ সপ্তাহেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের বার্ষিকী উদযাপন করেছে। তারা দেশের নতুন ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে এই আনন্দের দৃশ্য গত ১২ মাসের পুরো ছবি বর্ণনা করে না। ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের পথে বেশ কিছু জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মীয় উগ্রপন্থার উত্থান, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা প্রতিবন্ধকতা দেশের উন্নয়নযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে বলে রবিবার (১০ আগস্ট) প্রকাশিত বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির অঙ্গীকার রেখে গত ৫ আগস্ট ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
২৮ দফার এ ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।”
আরো পড়ুন:
‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ
ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা দেশে টিকতে পারবে না: মৎস্য উপদেষ্টা
বিবিসিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, সংঘবদ্ধ সহিংসতা, প্রতিশোধমূলক হামলা এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থার পুনরুত্থান ঘটেছে, যা দেশের গণতন্ত্রের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাজার হাজার বিক্ষোভকারী শেখ হাসিনার বাসভবন ও কার্যালয় ঘেরাও করে। ঠিক তার আগ মুহূর্তে সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান। এখনও তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে দেশের আদালতের মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন মামলার বিচারকাজ চলছে।
নারী অধিকারকর্মী শিরীন হক বিবিসিকে বলেন, “আমার মনে হয় আমরা একটি শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করেছি, বিপ্লব হয়নি। মূলত, নারীবিদ্বেষ অক্ষুণ্ণ রয়েছে।”
নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৮ নভেম্বর নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে। ‘নারীপক্ষ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হক ছিলেন সেই কমিশনের প্রধান।
গত ১০ এপ্রিল এ কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার— এ তিন বিষয়ে সুপারিশ করেছে, যেখানে সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি জোরালো করার কথা বলা হয়েছে। নারীর অগ্রগতির জন্য আছে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও জাতীয় সংস্থাগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর সুপারিশও। সেখানে লিঙ্গ সমতার জন্য আহ্বান জানানো হয় — বিশেষ করে নারীদের উত্তরাধিকার ও বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার নিয়ে, বিবাহের ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা এবং পুলিশ ও অন্যদের দ্বারা হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার যৌনকর্মীদের অধিকার সুরক্ষার আহ্বান জানানো হয়।
পরে হাজার হাজার ইসলামি কট্টোরপন্থীরা এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে, তাদের দাবি ছিল এই সুপারিশগুলো ইসলামবিরোধী এবং ‘পুরুষ ও নারী কখনোই সমান হতে পারে না’। তারা নারীবিষয়ক কমিশন বিলুপ্ত করার এবং কমিশনের সদস্যদের শাস্তি দেওয়ার দাবি তুলেছিল। এরপর কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে আর আগায়নি।
শিরীন হক বিবিসিকে বলেন, “আমি হতাশ হয়েছিলাম যে অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের যথেষ্ট সমর্থন করেনি যখন আমরা নানাবিধ হয়রানির শিকার হয়েছিলাম। তবে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার অফিসে বিবিসি যোগাযোগ করলে কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি।
বিবিসিকে কর্মী সংগঠকরা বলছেন, এই বিক্ষোভ ছিল কেবল একটি উদাহরণ কীভাবে কট্টোরপন্থীরা সাহসী হয়ে উঠেছে। তারা দেশের কিছু অঞ্চলে মেয়েদের ফুটবল খেলা, নারী সেলিব্রেটিদের বাণিজ্যিক প্রচারমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে নারীদের পোশাকের কারণে জনসম্মুখে হয়রানি করেছে।
সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ এবং মানবাধিকার বিষয়ক পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে অনেকেই আছেন যারা শুধু দায়বদ্ধতা চান না, তারা প্রতিশোধ ও বিচার চেয়েছেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে যেসব অবিচার ঘটেছিল তা চলতে পারে না এবং বর্তমান সময়েও সেগুলোকে পুনরায় চালানো উচিত নয়।"
আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, গত এক বছরে তাদের শতাধিক সমর্থক লাঞ্ছিত হয়েছে। যদিও সরকার তা অস্বীকার করছে। কয়েকজন সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগের কিছু সমর্থক হত্যার অভিযোগে কারাগারে রয়েছেন। তাদের জামিন আবেদন বারবার আদালত থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
আরো পড়ুন: আশা আর অচলাবস্থার দোলাচলে দেশ
নাহিদ ইসলাম গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বে ছিলেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, “বৃহৎ কোনো উত্তোলনের পর স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে সময় লাগে। আমরা এখন একটি রূপান্তরকালীন পর্যায়ে আছি।”
দেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে স্বীকার করেলেও নাহিদ ধর্মীয় উগ্রপন্থার বৃদ্ধির আশঙ্কাকে অস্বীকার করেন।
তবে উন্নতিরও কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অনেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনীতি স্থিতিশীল করার জন্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন এবং আশঙ্কার বিপরীতে ব্যাংকিং খাত টিকে আছে। বাংলাদেশ তার ঋণের দায়িত্ব পালন করেছে, খাদ্যমূল্য মোটামুটি স্থিতিশীল রেখেছে, এবং রেমিট্যান্স ও আন্তর্জাতিক ঋণের কারণে শক্তিশালী বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ (বর্তমানে ৩০ বিলিয়ন ডলার) বজায় রেখেছে। রপ্তানিও স্থিতিশীল রয়েছে।
এছাড়া, আরো অনেক এমন বিষয় আছে যা সহজে মাপা যায় না।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “হাসিনা পতনের পর থেকে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এবং এখন সবাই মুক্তভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে।”
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কেউ কেউ ছাত্র নেতাদের অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর প্রভাব নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল হাসিনা পতনের অভূতপূর্ব প্রতিবাদের নেতৃত্ব দেওয়ার স্বীকৃতিতে। এখনও দুজন অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। সমালোচকরা বলছেন, ছাত্রদের চাপের কারণে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
“সরকার মাঝে মাঝে জনমতের কিছু দাবি মেনে নিয়েছে, বিশেষ করে ছাত্রদের, কারণ তারা ভয় পায় যে অন্যথায় আরো কঠোর প্রতিবাদ শুরু হতে পারে। তবে এটি ব্যতিক্রম, নিয়ম নয়,” বলেন ডেভিড বার্গম্যান।
এদিকে, আওয়ামী লীগের এক নির্বাসিত নেতা অভিযোগ করেছেন, দলটির সমর্থকদের নিস্তব্ধ করা হচ্ছে এবং আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।”
“আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে না,” বলেন হাসিনার মন্ত্রিসভার সাবেক এক মন্ত্রী।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও কারাগারে মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমরা একটি স্বৈরশাসন ব্যবস্থার পতন করেছি, কিন্তু যতক্ষণ আমরা সেই স্বৈরশাসকের মতো আচরণ বন্ধ না করব ততক্ষণ নতুন বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়।”
বিবিসির মতে, বাংলাদেশ এখন একটি সংকটপূর্ণ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে, এবং আগামী ছয় মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। অনেকে বলেন, যদি এই সংকীর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থবহ পরিবর্তন না আসে, তাহলে বিদ্রোহে নিহতদের আত্মত্যাগ অর্থহীন হয়ে যেতে পারে।
ঢাকা/ইভা/তারা