ভারতীয় সীমান্তে লাশ পাওয়ার খবর, ৬ দিনেও বুঝে পায়নি পরিবার
Published: 25th, June 2025 GMT
ছয় দিন পার হলেও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে নিহত গ্রাম পুলিশ সদস্য মো. হানিফ মিয়ার লাশ পায়নি পরিবার। এ নিয়ে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। গত শুক্রবার নিহত মো. হানিফের হাত বাঁধা লাশের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয়। তবে এরপরও পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন স্থানটি চিহ্নিত করে লাশ উদ্ধার করতে পারেনি।
পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে দুজন ব্যক্তি হানিফ মিয়াকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পরদিন শুক্রবার বিকেলে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তে এক ব্যক্তির মরদেহের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি দেখে হানিফের স্ত্রী পারভিন আক্তার মরদেহটি তাঁর স্বামীর বলে শনাক্ত করেন। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ ওসমান আলী। তিনি জানান, যাঁরা হানিফ মিয়াকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজনের নাম বেলাল। তাঁকে খুঁজছে পুলিশ।
ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, হানিফ মিয়ার দুই হাত পেছন থেকে বাঁধা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এর আগে জানানো হয়েছিল, হানিফ মিয়াসহ পাঁচ ব্যক্তি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরায় প্রবেশ করলে বিএসএফ তাঁদের ধাওয়া দেয়। এতে অন্য চারজন ফিরে আসেন, কিন্তু হানিফ মিয়া আটক হন। পরে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে নিহত ব্যক্তির ছেলে ও শ্যালক পুলিশকে জানান, ভিডিওতে দেখা ওই ব্যক্তি নিখোঁজ হানিফ মিয়া। মরদেহটি বর্তমানে ভারতের কোথায় আছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
মাটিরাঙ্গা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে দুর্গম মাদ্রাসাপাড়া এলাকায় নিহত মো.
উঠানে দাঁড়িয়ে থাকা হানিফ মিয়ার ছেলে মো. পারভেজ বলেন, তাঁরা টাকাপয়সা কিছুই চান না। শুধু বাবার লাশ ফেরত চান। বাবাকে কবর দিতে পারলে কিছুটা শান্তি পাবেন। তাঁর বাবাকে যাঁরা ডেকে নিয়ে গেছেন, তাঁদের বিচার ও শাস্তির দাবি করেন তিনি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ ওসমান আলী বলেন, গত শুক্রবার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে সীমান্তে এক বাংলাদেশির মৃত্যুর ভিডিও দেখে হানিফ মিয়ার স্ত্রী পারভিন আক্তার মৃতদেহটি তাঁর স্বামীর বলে নিশ্চিত করেন। এরপর বিষয়টি বিজিবি ও পুলিশকে জানিয়েছেন তাঁরা। এমনকি এলাকার লোকজন সীমান্তে লাশটি খুঁজতে গিয়েছিলেন। কিন্তু লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আলম বলেন, ‘আমি নিজে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর দুই সন্তান এবং স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কিছু আর্থিক সাহায্য এবং ঢেউটিন দিয়ে এসেছি। যেহেতু পরিবারের লোকজন দাবি করছেন, ভারতের সীমানায় লাশ পড়ে রয়েছে, এ জন্য আমি বিজিবি এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে তারাও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারছে না।’
মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসিবুল হক বলেন, ‘গত শনিবার হানিফ মিয়ার স্ত্রী পারভিন আক্তার থানায় একটি ডায়েরি করেছেন। বিষয়টি আমরা দেখছি।’
আরও পড়ুনমাটিরাঙ্গা সীমান্তসংলগ্ন ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশি গ্রাম পুলিশের মৃত্যুর অভিযোগ২০ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতীয় সীমান্তে লাশ পাওয়ার খবর, ৬ দিনেও বুঝে পায়নি পরিবার
ছয় দিন পার হলেও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে নিহত গ্রাম পুলিশ সদস্য মো. হানিফ মিয়ার লাশ পায়নি পরিবার। এ নিয়ে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। গত শুক্রবার নিহত মো. হানিফের হাত বাঁধা লাশের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয়। তবে এরপরও পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন স্থানটি চিহ্নিত করে লাশ উদ্ধার করতে পারেনি।
পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে দুজন ব্যক্তি হানিফ মিয়াকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পরদিন শুক্রবার বিকেলে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তে এক ব্যক্তির মরদেহের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি দেখে হানিফের স্ত্রী পারভিন আক্তার মরদেহটি তাঁর স্বামীর বলে শনাক্ত করেন। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ ওসমান আলী। তিনি জানান, যাঁরা হানিফ মিয়াকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজনের নাম বেলাল। তাঁকে খুঁজছে পুলিশ।
ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, হানিফ মিয়ার দুই হাত পেছন থেকে বাঁধা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এর আগে জানানো হয়েছিল, হানিফ মিয়াসহ পাঁচ ব্যক্তি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরায় প্রবেশ করলে বিএসএফ তাঁদের ধাওয়া দেয়। এতে অন্য চারজন ফিরে আসেন, কিন্তু হানিফ মিয়া আটক হন। পরে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে নিহত ব্যক্তির ছেলে ও শ্যালক পুলিশকে জানান, ভিডিওতে দেখা ওই ব্যক্তি নিখোঁজ হানিফ মিয়া। মরদেহটি বর্তমানে ভারতের কোথায় আছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
মাটিরাঙ্গা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে দুর্গম মাদ্রাসাপাড়া এলাকায় নিহত মো. হানিফ মিয়ার বাড়ি। টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘর। জীর্ণ বাড়িটির উঠানে অনেক মানুষের ভিড়। সেখানে স্বামীর জন্য আহাজারি করছিলেন নিহত মো. হানিফ মিয়ার স্ত্রী পারভিন আক্তার। ঘটনার পরদিন থেকেই পরিবারটিতে এমন শোকের মাতম চলছে, নেই কোনো স্বাভাবিকতা। প্রতিবেশীরা জানান, হানিফ মিয়া পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর অনুপস্থিতিতে পরিবারটির ওপর বড় দুর্যোগ নেমে এল। তাঁর স্ত্রী পারভিন আজও বেশ কয়েকবার মূর্ছা গেছেন। সামনে যাঁকে পাচ্ছেন, তাঁকেই বলছেন লাশ খুঁজে নিয়ে আসার জন্য। বারবার বলছেন, ‘রাতে খেতে বসা একজন সুস্থ মানুষকে ডেকে নিয়ে গেল। পরদিন বিকেলে ডিভিওতে দেখি, লাশ হয়ে পড়ে আছে।’
উঠানে দাঁড়িয়ে থাকা হানিফ মিয়ার ছেলে মো. পারভেজ বলেন, তাঁরা টাকাপয়সা কিছুই চান না। শুধু বাবার লাশ ফেরত চান। বাবাকে কবর দিতে পারলে কিছুটা শান্তি পাবেন। তাঁর বাবাকে যাঁরা ডেকে নিয়ে গেছেন, তাঁদের বিচার ও শাস্তির দাবি করেন তিনি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ ওসমান আলী বলেন, গত শুক্রবার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে সীমান্তে এক বাংলাদেশির মৃত্যুর ভিডিও দেখে হানিফ মিয়ার স্ত্রী পারভিন আক্তার মৃতদেহটি তাঁর স্বামীর বলে নিশ্চিত করেন। এরপর বিষয়টি বিজিবি ও পুলিশকে জানিয়েছেন তাঁরা। এমনকি এলাকার লোকজন সীমান্তে লাশটি খুঁজতে গিয়েছিলেন। কিন্তু লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আলম বলেন, ‘আমি নিজে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর দুই সন্তান এবং স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কিছু আর্থিক সাহায্য এবং ঢেউটিন দিয়ে এসেছি। যেহেতু পরিবারের লোকজন দাবি করছেন, ভারতের সীমানায় লাশ পড়ে রয়েছে, এ জন্য আমি বিজিবি এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে তারাও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারছে না।’
মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসিবুল হক বলেন, ‘গত শনিবার হানিফ মিয়ার স্ত্রী পারভিন আক্তার থানায় একটি ডায়েরি করেছেন। বিষয়টি আমরা দেখছি।’
আরও পড়ুনমাটিরাঙ্গা সীমান্তসংলগ্ন ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশি গ্রাম পুলিশের মৃত্যুর অভিযোগ২০ জুন ২০২৫