ইরানে ইসরায়েল যেভাবে পুরোপুরি ব্যর্থ হলো
Published: 25th, June 2025 GMT
ইরানে টানা ১১ দিন বোমাবর্ষণ করে ইরান কী অর্জন করল? যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দেওয়ার সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইসরায়েলি লক্ষ্যগুলো অর্জন হয়েছে। কিন্তু তাঁর এই দাবি যে সমস্যাজনক, সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
এই স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধের শুরুতে নেতানিয়াহু দুটি লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এক.
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কি গুঁড়িয়ে দেওয়া গেল? উত্তরটা হবে, না। এটা মনে হচ্ছে যে ফার্দো পারমাণবিক স্থপানায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালানোর আগেই সেখান থেকে ফিউশনযোগ্য বা বিভাজ্য পদার্থ অন্যখানে সরিয়ে নিয়েছিল। ইউরেনিয়ামের এই মজুতই ইরানের হাতে থাকা পারমাণবিক কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি গুঁড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যটি ব্যর্থ হয়েছে।
ইসরায়েল হামলা চালিয়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির যদি কোনো ক্ষতি করে থাকে, সেটা আসলে কী? এ প্রশ্নের উত্তর এখনো পরিষ্কার নয়। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বাংকার বাস্টার বোমা দিয়ে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে সক্ষম হয় ইসরায়েল। কিন্তু এর বাইরে এই আক্রমণ অভিযানে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পেয়েছে খুব সামান্য।
আরও পড়ুনইরান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র—কে জিতল এই যুদ্ধে২৪ জুন ২০২৫ইরান যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র নিরূপণ করা কঠিন।
ইসরায়েল কি ইরানে ‘সরকার পরিবর্তন’ ঘটাতে পেরেছে? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো, উল্টো ফলটাই বেশি হয়েছে। ইরানের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থায় নেতৃত্ব থাকা সামরিক নেতাদের হত্যা করে ইসরায়েল চেয়েছিল দেশটির শাসকদলের বিরুদ্ধে গণ–অভ্যুত্থান উসকে দিতে। এই কৌশল এসেছে ইসরায়েলিদের সেই দৃঢ় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে, যেখানে তারা মনে করে, শত্রুরাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার সেরা উপায় হলো জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যা করা।
কিন্তু এই কৌশল কখনোই কাজ করেনি। একমাত্র সম্ভাব্য ব্যতিক্রম হতে পারে লেবাননে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর হত্যার প্রভাব। তবে হিজবুল্লাহর দুর্বল হওয়ার পেছনে লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। অন্য সব ক্ষেত্রে নেতৃত্বকে নিকেশ করে দেওয়ার ইসরায়েলি এই কৌশল বড় কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইরান যথেষ্ট শক্তিশালী পক্ষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পেরেছে। ফলে ট্রাম্প ইসরায়েলকে সতর্ক করে দেন যে যুদ্ধবিরতি তারা যেন ভঙ্গ না করে। ইরান এমন একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হলো, যে শক্তি হিসেবে তারা দাঁড়াতে চেয়েছে। ইরান দৃঢ়ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কথা ইরান জানিয়ে দিয়েছে।ইরানের ক্ষেত্রেও ইসরায়েলি এই কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডে সরকারের প্রতি ইরানি জনগণের সংহতি জোরালো হয়েছে। ইসরায়েল ইরানিয়ান রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) শীর্ষ কমান্ডারদের হত্যা করে। আইআরজিসি সম্ভবত ইরানি রাজনীতির ক্ষমতাধর শক্তি। একই সঙ্গে ইরানি জনগণ সবচেয়ে ঘৃণা করে, এমন একটি সংস্থা আইআরজিসি।
তা সত্ত্বেও অনেক ইরানি, যাঁরা ইসলামিক রিপাবলিক ও বিশেষ করে আইআরজিসির কট্টর বিরোধী, তাঁরাও ইসরায়েলের হামলার পর সরকারকে সমর্থন দিয়েছেন। ইরানিরা ইসরায়েলের এই হামলাকে সরকারের ওপর হামলা নয়, গোটা ইরানের ওপর শত্রুর আক্রমণ হিসেবে দেখছেন।
আরও পড়ুনইরানে হামলা ইসরায়েলের জন্য কৌশলগত বিপর্যয় ডেকে আনবে ১৭ জুন ২০২৫ইরানি ‘শাসকদের প্রতীকগুলোতে’ ইসরায়েলি বোমা হামলা কেবল পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। এভিন কারাগারে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। রাজনৈতিক বন্দীদের দমন-পীড়নের জন্য এই কারাগারের কুখ্যাতি আছে। ইসরায়েল কারাগারটিতে হামলা চালিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের সংগ্রামে সহায়তা দিতে চেয়েছিল। অথচ বাস্তবে এই হামলার ফলে বন্দীদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। কেননা কর্তৃপক্ষ অনেক বন্দীকে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।
তেহরানে ‘ইসরায়েল ডুমসডে ক্লকে’ (এই ডিজিটাল ঘড়ি ইসরায়েলকে ধ্বংসের জন্য ইরানি প্রতিশ্রুতির প্রতীক বলে মনে করা হয়) বোমা হামলাটি ছিল নিতান্তই হাস্যকর।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার কেন্দ্র আইআরআইবিতে ইসরায়েলের বোমা হামলাও ছিল একেবারে উদ্ভট। ইসরায়েল দাবি করেছিল, ইরানি শাসকদের প্রোপাগান্ডা প্রচারের চেষ্টা রুখে দিয়েছে। এই বোমা হামলার পর অনেক ইসরায়েলি বলেছিলেন, এটি ইসরায়েলের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ইরানকে ন্যায্যতা দেবে।
ইসরায়েল যদি এর ঘোষিত যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন না-ই করতে পারে, তাহলে অন্তত বিশ্বজনমতকে কি তার পক্ষে টানতে পেরেছে? এটা সত্য যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এই হামলার মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক আইনের কয়েকটি গুরুতর নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
আরও পড়ুনইরান কিছুই ভুলবে না, সব মনে রাখবে১৮ ঘণ্টা আগেএর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। যা–ই হোক, ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প যুদ্ধে যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু হামলার পরই যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত বোমারু বিমান যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার আগে ও পরে ট্রাম্প বারবার জোর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চুক্তির বিষয়ে তাঁর আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছেন। সেখানে ইসরায়েলকেও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলকে সহায়তা করেন তাঁর নিজের এবং উপসাগরীয় মিত্রদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে।
বিশ্বের বেশ কয়েকজন নেতা (সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎসে) খুব দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সমর্থন করেন। একই সঙ্গে তারা ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারে’ সমর্থন দেন। কিন্তু তাদের কেউই ইসরায়েলের কঠোর দাবির তালিকা গ্রহণ করেননি। ইসরায়েল যে সব দাবি করেছিল এর মধ্যে ছিল, ইরান যেন একেবারেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে না পারে।
বিশ্ব আবার ‘কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নয়’ সেই নীতিতে ফিরে গেছে। ইরান এরই মধ্যে এই নীতি মেনে চলার ব্যাপারে আগ্রহী বলে জানিয়েছে।
আরও পড়ুন২৫০০ বছরের পুরোনো দুশমনি: ইসরায়েল কি ‘মরদখাই’? ইরান কি ‘হামান’?১৭ জুন ২০২৫মধ্যপ্রাচ্যের কার্যকর উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইরানকে বিশ্ব ব্যবসার জন্য একটি বৈধ অংশীদার হিসেবে মনে করছে। এটি ইসরায়েলের জন্য একটি পরাজয় এবং ইরানের জন্য একটি বিজয়।
ইসরায়েলের একেবারে কেন্দ্রে যে বাস্তব ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এই যুদ্ধে ইসরায়েল খুব দ্রুতই ইরানের আকাশসীমায় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং প্রায় ইচ্ছামতো হামলা চালাতে পেরেছিল। কিন্তু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বারবার ইসরায়েলের সুপ্রসিদ্ধ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে বারবার তেল আবিব, জেরুজালেমসহ একেবারে কেন্দ্রে এবং দেশের সর্বত্র আঘাত হানতে সক্ষম হয়। ইরানের এই হামলায় গোটা ইসরায়েল কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
নজিরবিহীন হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। ইসরায়েলের প্রতিরোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত ফুরিয়ে আসছিল, খুব দ্রুত সেই শূন্যস্থান পূরণের আশা ছিল না। অর্থনীতি দ্রুত ভেঙে পড়ার মুখে পড়ে। এটি ইরানের জন্য আরেকটি বিজয়।
আরও পড়ুনইসরায়েল হত্যা করে, মিথ্যা বলে, আর পশ্চিমা মিডিয়া তা বিশ্বাস করে০৮ এপ্রিল ২০২৫ইরান যুদ্ধের ক্ষত ও বোমা হামলার মধ্য দিয়ে নতুন ইরানের জন্ম হয়। শত শত মানুষের প্রাণহানি এবং নির্বিচার বোমা হামলায় ইরানের ক্ষয়ক্ষতি ছিল বাস্তব। কিন্তু শক্তিশালী ইসরায়েলি বাহিনীর মুখোমুখি হয়েও ইরান মাথা নত করেনি।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলিদের বাড়িঘরে আঘাত হেনেছে। কিন্তু তাতে ইরানের ভাবমূর্তিতে একটুও আঁচড় লাগেনি। কেননা বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ ইরানকে ইসরায়েলের আক্রমণের ভুক্তভোগী হিসেবে দেখেছে। ইরানের পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগগুলো তাই তীব্রভাবে বাধাগ্রস্ত হয়নি।
কাতারের মার্কিন ঘাটিতে প্রতিশোধমূলক হামলার কথা আগে থেকেই সতর্ক করে ইরান খুব সফলভাবে উত্তেজনা প্রশমন করতে পেরেছে।
ইরান যথেষ্ট শক্তিশালী পক্ষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পেরেছে। ফলে ট্রাম্প ইসরায়েলকে সতর্ক করে দেন যে যুদ্ধবিরতি তারা যেন ভঙ্গ না করে। ইরান এমন একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হলো, যে শক্তি হিসেবে তারা দাঁড়াতে চেয়েছে। ইরান দৃঢ়ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কথা ইরান জানিয়ে দিয়েছে।
অরি গোল্ডবার্গ মধ্যপ্রাচ্য ও বিশেষ করে ইরান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ
আল-জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ মনোজ দে
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র য় ইসর য় ল ইসর য় ল ক ইসর য় ল র ইসর য় ল য আইআরজ স র জন ত ন র জন র হত য এক ব র কর ছ ল লক ষ য র জন য সরক র সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে
বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনতির পর্বে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এ জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।
চলতি মাসে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দপ্তরে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সফরে আসা প্রতিনিধিদলের প্রধান মুনির সাতোরি।
মুনির সাতোরি বলেন, ‘আমাদের সফরের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রায় বিস্মৃত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা। রোহিঙ্গা সংকট যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য এটি ইইউর রাজনৈতিক এজেন্ডায় আবারও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ নিয়ে মুনির সাতোরি বলেন, ‘এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার প্রস্তাব করেছি।’
প্রতিনিধিদলের সদস্য ইজাবেল উইসেলার-লিমা বলেন, যখন বিশ্বে নাটকীয়ভাবে গণতন্ত্র অবনতির পথে, তখন বাংলাদেশ পথ পরিবর্তন করে দেখিয়েছে যে গণতন্ত্রের পথে যাওয়া যায়। তারা চেষ্টা করছে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়ার। আর এ জন্য সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটা আশা করা জরুরি যে সামনে নির্বাচন হবে এবং তা প্রতিযোগিতামূলক হবে, যা হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এ জন্য চেষ্টা করছে।
রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে ইজাবেল বলেন, ‘কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি মানুষ ভুলে যাচ্ছে। এ সংকট আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ, মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। আর বাংলাদেশও দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশের নিজেরই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ে নেওয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সংকটের এখনকার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশ বর্তমানে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে অবস্থায় রয়েছে।’
প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য আরকাদিউজ মুলারজিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বেশি মানবিক অনুদান আসে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো থেকে, যদিও আগে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দিত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রতিশ্রুতি খুবই নগণ্য, এটি আশ্চর্যজনক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বদলে অনেক দূরে থাকা ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোকে এর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বড় অংশগ্রহণকারী হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কারণ, বর্তমানে আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে দর–কষাকষি করছি।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্য ক্যাটারিনা ভিয়েরা বলেন, এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ইতিহাসে দেশটি বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি সুযোগ সত্যিকারের অগ্রগতির। শিগগিরই হয়তো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ভেতরে গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায়। এ বিষয়গুলো শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বের থেকে আসেনি, এসেছে নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকেও, যাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তারা নিজেদের মধ্যে সংলাপের মধ্যে রয়েছে। যদিও অনুতাপের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয়, লিঙ্গ ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নেই। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমাজ গঠনে এখানে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।
আরকাদিউজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সংস্কারে উৎসাহ, যারা সংস্কারে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় গঠনমূলক সহযোগিতা করে ইইউ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের উল্টো পথে যাত্রা করছে, তখন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের আশা করার অবকাশ রয়েছে। গণতন্ত্রের পথে আরও অনেক কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সামনে দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করি। এটি এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।’
১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করে। এ সময়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংগঠন, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং মাঠপর্যায়ে কর্মরত বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।
এ ছাড়া প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরও পরিদর্শন করে।