যেকোনো টুর্নামেন্টে ট্রফির পাশাপাশি প্রাইজমানিতেও চোখ থাকে দলগুলোর। শিরোপা জেতা মানে বিশাল অঙ্কের অর্থ পুরস্কারের হাতছানি। তবে ক্লাব বিশ্বকাপ অর্থ পুরস্কারের দিক থেকে অন্য রকম এক দৃষ্টান্তই যেন স্থাপন করছে। টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ, ম্যাচ ড্র করা এবং জেতার জন্যও দলগুলো পাচ্ছে আলাদা আলাদা অর্থ পুরস্কার।

এমনকি চ্যাম্পিয়ন হতে না পারা বা খুব বেশি দূর যেতে না পারা দলগুলোও ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে নিয়ে যেতে পারবে বিপুল পরিমাণ অর্থ। লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামি যেমন শেষ ষোলোতেই উঠেই নিশ্চিত করেছে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫৬ কোটি টাকার বেশি। টুর্নামেন্টে আরও সামনে যেতে পারলে এই অঙ্ক বাড়তেই থাকবে।

ইন্টার মায়ামির অ্যাকাউন্টে যোগ হওয়া এই অর্থের ৯০ লাখ ৫৫ হাজার ডলার বা ১১৬ কোটি টাকা এসেছে কেবল অংশগ্রহণ ফি হিসেবে, যা টুর্নামেন্ট শুরু আগেই মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাবগুলোর জন্য নির্ধারণ করা ছিল।

আরও পড়ুনবিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশি টাকা পাবে ক্লাব বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন২৭ মার্চ ২০২৫

এর বাইরে গ্রুপ পর্বে আল আহলি ও পালমেইরাসের বিপক্ষে ড্রয়ের জন্য ১০ লাখ ডলার বা ১২ কোটি টাকা করে এবং পোর্তোর বিপক্ষে জয়ের জন্য ২০ লাখ ডলার বা ২৪ কোটি টাকা পেয়েছে তারা। আর শেষ ষোলোয় গিয়ে তারা নিশ্চিত করেছে আরও ৭০ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা ৯১ কোটি টাকা। যোগ করলে এই টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ২৫৬ কোটি টাকা।

মায়ামিকে টানছেন মেসি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বহুজাতিক কোম্পানি আনতে করছাড় যথেষ্ট নয়

বহুজাতিক এবং দেশীয় বড় কোম্পানির জন্য শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে শুধু করছাড় যথেষ্ঠ নয়। নীতিগত অনিশ্চয়তা তাদের শেয়ারবাজারে না আসার অন্যতম কারণ। দেশের বড় কোম্পানিগুলোও শেয়ারবাজারে নানা জটিলতার কারণে আসতে চায় না। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক আলোচনায় এমন মত দেন উদ্যোক্তারা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে করছাড় ও বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়ার পরও কোম্পানিগুলো কেন তালিকাভুক্ত হচ্ছে না, সে প্রশ্ন তুলেছে আইসিবিসহ শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

গতকাল বুধবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ, স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফিকির সভাপতি ও ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও এমডি জাভেদ আখতার, ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

ড. আনিসুজ্জামান বলেন, সরকার ও প্রধান উপদেষ্টা শেয়ারবাজার নিয়ে যথেষ্ট ‘সিরিয়াস’। সংস্কারে ধৈর্য দরকার। সংস্কার করতে গিয়ে রাশিয়া ভেঙে গিয়েছিল। সংস্কার কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবদিক ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে একটু সময় লাগছে।

আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বলেন, ভারত, পাকিস্তান, নেপালে ইউনিলিভার তালিকাভুক্ত হলেও বাংলাদেশে হয়নি। ইউনিলিভারের মতো কোম্পানি জনগণের কাছ থেকে ব্যবসা করে মুনাফা করে। তাহলে জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার প্রশ্ন আসা উচিত। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মাত্র কয়েকটি শাখা নিয়ে তারা হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে। বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক শত শত শাখা নিয়েও তা পারে না। তা সত্ত্বেও স্থানীয় ব্যাংকগুলো তালিকাভুক্ত। কারণ তারা জনগণের অর্থ নিয়ে কাজ করে। এসব বহুজাতিক কোম্পানি অন্য কোনো দেশে তালিকাভুক্ত না হলে তিনি এ প্রশ্ন তুলতেন না। আবু আহমেদ বলেন, বিভিন্ন দেশ বহুজাতিক কোম্পানিকে ২০ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে বাধ্যতামূলক আইন করলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে উদার। মাত্র ১০ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে তালিকাভুক্ত হয়ে করছাড় নিতে পারে।

জাভেদ আখতার বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিকল্প অর্থায়নের বহু সুযোগ আছে। শেয়ারবাজারে আসার জন্য শুধু করছাড় যথেষ্ট নয়। নীতিগত অনিশ্চয়তাও বড় কারণ। এক সময় বলা হয়েছিল ১০ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে এলেই করছাড় পাওয়া যাবে। পরে বাড়িয়ে সম্পূর্ণ আইপিওর কথা বলা হয়। তাঁর মতে, আয়কর আইনে করপোরেট কর সাড়ে ২৭ শতাংশ বলা হলেও কার্যকর করহার ৪০ শতাংশের বেশি, যা কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহ কমিয়ে দেয়।

তপন চৌধুরী বলেন, শেয়ারবাজারে আইনগত জটিলতা এবং বাজারের ভাবমূর্তি বড় কোম্পানিগুলোর আগমনকে বাধাগ্রস্ত করে। তাঁর মতে, বড় কোম্পানিগুলোর বাজারে না আসার আরেকটি কারণ হলো– ভালো মূল্য না পাওয়া এবং বাজারে মুনাফার সুযোগ নিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের লোকসান হওয়া।

শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স সদস্য এ এফ এম নেছারউদ্দিন বলেন, শুধু ‘টাকা দরকার নেই’ বলে শেয়ারবাজারে না আসার যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার ৫০০ কোটি রুপি ছাড়ালে তালিকাভুক্ত হতে ভারতে ২০১৮ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির প্রস্তাব স্মরণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশেও তালিকাভুক্তি সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি করতে বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের সমন্বয় জরুরি।

বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ইউনিলিভারের পণ্য যদি ২ কোটি মানুষ ব্যবহার করে এবং প্রতিজনে পাঁচ টাকা মুনাফা দেয়, তাহলে সেই বিপুল মুনাফা তাদের একা রাখা উচিত নয়। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে মালিকানার অংশ জনগণের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি নিজের ৩৯ শতাংশ মালিকানার মধ্যে থেকে ৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়ে তাহলে বাকি ৬১ শতাংশের অংশীদারেরও একইভাবে অংশীদারিত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত।

ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারের আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা না থাকলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো যাবে না। তিনি বাজেটে বাজারবান্ধব বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ