যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিয়ে সংশয়ের কথা স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। পেন্টাগনের ফাঁস হওয়া একটি গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেবল কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, এ বিষয়ে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্য সুনির্দিষ্ট ছিল না। গোয়েন্দারা বলেছে, আমরা জানি না। ক্ষয়ক্ষতি খুব গুরুতর হতে পারে। গোয়েন্দা তথ্যে এমনটাই বলা হয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের বি২ বোমারু বিমান। এরপর থেকে ট্রাম্প জোরের সঙ্গে দাবি করে আসছিলেন যে এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এই প্রথম বিষয়টি নিয়ে সংশয় থাকার কথা স্বীকার করলেন তিনি।

অবশ্য কিছুক্ষণ পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আবার আগের বক্তব্যে ফিরে গিয়ে বলেন, ‘এটা ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। সবকিছু একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে।’

ট্রাম্প ইরানের ফর্দো ও নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোতে বিপুল শক্তিধর ‘বাংকার–বাস্টার’ বোমা নিক্ষেপকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা হামলার ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করেন। ওই পারমাণবিক হামলার পর যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বন্ধ হয়েছিল, তেমনই এবার যুক্তরাষ্ট্রের এই বোমা ফেলার পর ইরান–ইসরায়েলের সংঘাত বন্ধ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ট্রাম্পের সঙ্গে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দেওয়া হেগসেথও ‘ভবিষ্যতে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে’ বলে আগে যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই অবস্থান থেকে নমনীয় হয়েছেন বলে মনে হয়েছে।

এদিন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বোমা হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ক্ষয়ক্ষতিকে ‘মাঝারি থেকে গুরুতর’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি পেন্টাগনের নথি ফাঁস নিয়ে এফবিআইয়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন, যদিও দাবি করেছেন যে ফাঁস হওয়া ওই তথ্য ‘মিথ্যা’।

এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণের চেষ্টা করছে তারা। অবশ্য ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা তাদের কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছি।’

সিএনএন মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানায়, মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) ফাঁস হওয়া প্রাথমিক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইরানের ভূপৃষ্ঠের অনেক গভীরের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনা এবং নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রের ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়নি এবং সেন্ট্রিফিউজসহ মূল অবকাঠামো কয়েক মাসের মধ্যেই আবার চালু করা সম্ভব।

গার্ডিয়ান ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম সিএনএনের ফাঁস করা প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, প্রতিবেদনটি ‘কম বিশ্বাসযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা ছিল। তবে একটি সূত্র গার্ডিয়ানকে বলেছে, অধিকতর মূল্যায়নে প্রাথমিক প্রতিবেদনের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও কম পাওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুনইরানে বোমা হামলার সঙ্গে জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলার তুলনা করলেন ট্রাম্প৪ ঘণ্টা আগে

মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ইরানের কাছে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুতের বড় অংশ থাকার কথা বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলে সেগুলো ব্যবহার করা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে ইরান সেগুলো অন্য গোপন পারমাণবিক স্থাপনায় সরিয়ে নিয়ে থাকতে পারে।
নাতাঞ্জের মূল পারমাণবিক স্থাপনার কাছাকাছি দক্ষিণে বেশ কয়েক বছর ধরে একটি পাহাড়ের গভীরে নতুন একটি স্থাপনা খনন করা হয়েছে।

ইসরায়েলিদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে গিয়ে বুধবার আইডিএফের (ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী) মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেন, বোমা হামলার ফল ‘প্রত্যাশার থেকেও ভালো’ হয়েছে।

ডেফরিন বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি বলতে পারি, আমাদের ধারণা হচ্ছে, আমরা (ইরানের) পারমাণবিক অবকাঠামোয় বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছি। আমি বলতে পারি যে আমরা তাদের কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছি।’

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা মনে করছেন, হামলার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক পরিকল্পনা দুই বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ফর্দো ও নাতাঞ্জের ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও সামগ্রিকভাবে মেনে নেওয়া হয়েছে যে ইরানের ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ করা ৪০০ কেজি ইউরেনিয়ামের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তা আর আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নজরদারিতেও নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

ডায়াবেটিসে ভোগা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়া কঠিন হলো

ডায়াবেটিসে ভুগছেন যাঁরা, বসবাসের জন্য তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠল। এমন নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে তাঁদের ভিসার আবেদন বাতিল করা যাবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এই নির্দেশনা গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দূতাবাস ও কনস্যুলার কর্মকর্তাদের কাছে এমন নির্দেশনা পাঠিয়েছে। তাতে যুক্তি দেখানো হয়েছে, এ ধরনের ব্যক্তিরা তাঁদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা বয়সের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের খরচের বোঝা বাড়িয়ে দিতে পারেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে ভিসা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় এমন নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, যার ভিত্তিতে তাঁরা ভিসার আবেদনকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য ঘোষণা করতে পারবেন। এর মধ্যে আছে বেশি বয়স বা এমন কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা, যার জন্য ওই ব্যক্তিরা সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল থাকবেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন নির্দেশনায় আবেদনকারীর স্বাস্থ্যগত দিকের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যেসব স্বাস্থ্যগত অবস্থায় ভিসার আবেদন বাতিল করা যাবে, সে তালিকাটি আরও দীর্ঘ হয়েছে। ভিসা কর্মকর্তাদের আবেদনকারীর স্বাস্থ্যগত অবস্থার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আগের চেয়ে আরও বেড়েছে।

ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র অনেক বছর ধরেই সম্ভাব্য অভিবাসীদের স্বাস্থ্যগত তথ্য যাচাই–বাছাই করে আসছে। যেমন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষা করা ও টিকার ইতিহাস যাচাই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন নির্দেশনায় আবেদনকারীর স্বাস্থ্যগত দিকের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যেসব স্বাস্থ্যগত অবস্থায় ভিসার আবেদন বাতিল করা যাবে, সে তালিকাটি আরও দীর্ঘ হয়েছে। ভিসা কর্মকর্তাদের আবেদনকারীর স্বাস্থ্যগত অবস্থার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আগের চেয়ে আরও বেড়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী এক বিতর্কিত অভিযানের অংশ হিসেবে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই অভিযানের লক্ষ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রে অননুমোদিতভাবে বসবাস করা অভিবাসীদের বিতাড়িত করা ও নতুন অভিবাসীদের ঠেকানো। এই অভিযানের অংশ হিসেবে নিয়মিত গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং অভিবাসীর প্রবেশ সীমিত করার মতো পরিকল্পনাও করা হয়েছে।

আইনি সহায়তাবিষয়ক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ক্যাথলিক লিগ্যাল ইমিগ্রেশন নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চার্লস হুইলার বলেন, নতুন নির্দেশনায় ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় অভিবাসীদের স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশনা প্রায় সব ভিসা আবেদনকারীর জন্য প্রযোজ্য হলেও খুব সম্ভবত যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করছেন, শুধু তাঁদের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভিসা কর্মকর্তাদের অবশ্যই আবেদনকারীর স্বাস্থ্যগত অবস্থা যাচাই করতে হবে। যেমন হৃদ্‌রোগ, শ্বাসনালির রোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, বিপাকজনিত রোগ, স্নায়ুবিষয়ক সমস্যা এবং মানসিক সমস্যাসহ যেসব স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে লাখ লাখ ডলার মূল্যের সুরক্ষা দিতে হবে, সেগুলো বিবেচনা করতে হবে।

বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছে। হৃদ্‌রোগও খুব দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি এটি।

নির্দেশনায় আবেদনকারীদের স্থূলতার বিষয়টিও বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। কারণ, এটি হাঁপানি, নিদ্রাহীনতা এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। অভিবাসীদের কারও এসব সমস্যা থাকলে তিনি সরকারের জন্য অতিরিক্ত খরচের বোঝা তৈরি করবেন। আর তা মাথায় রেখে ওই ব্যক্তির আবেদন খারিজ করে দেওয়া যেতে পারে।

নির্দেশনায় আবেদনকারীদের স্থূলতার বিষয়টিও বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। কারণ, এটি হাঁপানি, নিদ্রাহীনতা ও উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। অভিবাসীদের কারও এসব সমস্যা থাকলে তিনি সরকারের জন্য অতিরিক্ত খরচের বোঝা তৈরি করবেন। আর তা মাথায় রেখে ওই ব্যক্তির আবেদন খারিজ করে দেওয়া যেতে পারে।

এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি।

আবেদনকারী ব্যক্তি সরকারি সহায়তা ছাড়া নিজেই নিজের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারবেন কি না, সে বিষয়টিও বিবেচনা করতে ভিসা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে আইনজীবী চার্লস হুইলার বলেছেন, নির্দেশনাটি পররাষ্ট্র দপ্তরের নিজস্ব হ্যান্ডবুক ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যানুয়ালের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হচ্ছে। কারণ সেখানে বলা হয়েছে, ‘এটা হতে পারে’ এমন অনুমানের ভিত্তিতে ভিসা কর্মকর্তারা কোনো আবেদন বাতিল করতে পারেন না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ