ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষতির মাত্রা নিয়ে সংশয় স্বীকার করলেন ট্রাম্প ও হেগসেথ
Published: 26th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিয়ে সংশয়ের কথা স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। পেন্টাগনের ফাঁস হওয়া একটি গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেবল কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, এ বিষয়ে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্য সুনির্দিষ্ট ছিল না। গোয়েন্দারা বলেছে, আমরা জানি না। ক্ষয়ক্ষতি খুব গুরুতর হতে পারে। গোয়েন্দা তথ্যে এমনটাই বলা হয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের বি২ বোমারু বিমান। এরপর থেকে ট্রাম্প জোরের সঙ্গে দাবি করে আসছিলেন যে এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এই প্রথম বিষয়টি নিয়ে সংশয় থাকার কথা স্বীকার করলেন তিনি।
অবশ্য কিছুক্ষণ পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আবার আগের বক্তব্যে ফিরে গিয়ে বলেন, ‘এটা ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। সবকিছু একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে।’
ট্রাম্প ইরানের ফর্দো ও নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোতে বিপুল শক্তিধর ‘বাংকার–বাস্টার’ বোমা নিক্ষেপকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা হামলার ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করেন। ওই পারমাণবিক হামলার পর যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বন্ধ হয়েছিল, তেমনই এবার যুক্তরাষ্ট্রের এই বোমা ফেলার পর ইরান–ইসরায়েলের সংঘাত বন্ধ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দেওয়া হেগসেথও ‘ভবিষ্যতে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে’ বলে আগে যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই অবস্থান থেকে নমনীয় হয়েছেন বলে মনে হয়েছে।
এদিন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বোমা হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ক্ষয়ক্ষতিকে ‘মাঝারি থেকে গুরুতর’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি পেন্টাগনের নথি ফাঁস নিয়ে এফবিআইয়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন, যদিও দাবি করেছেন যে ফাঁস হওয়া ওই তথ্য ‘মিথ্যা’।
এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণের চেষ্টা করছে তারা। অবশ্য ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা তাদের কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছি।’
সিএনএন মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানায়, মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) ফাঁস হওয়া প্রাথমিক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইরানের ভূপৃষ্ঠের অনেক গভীরের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনা এবং নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রের ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়নি এবং সেন্ট্রিফিউজসহ মূল অবকাঠামো কয়েক মাসের মধ্যেই আবার চালু করা সম্ভব।
গার্ডিয়ান ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম সিএনএনের ফাঁস করা প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, প্রতিবেদনটি ‘কম বিশ্বাসযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা ছিল। তবে একটি সূত্র গার্ডিয়ানকে বলেছে, অধিকতর মূল্যায়নে প্রাথমিক প্রতিবেদনের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও কম পাওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুনইরানে বোমা হামলার সঙ্গে জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলার তুলনা করলেন ট্রাম্প৪ ঘণ্টা আগেমার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ইরানের কাছে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুতের বড় অংশ থাকার কথা বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলে সেগুলো ব্যবহার করা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে ইরান সেগুলো অন্য গোপন পারমাণবিক স্থাপনায় সরিয়ে নিয়ে থাকতে পারে।
নাতাঞ্জের মূল পারমাণবিক স্থাপনার কাছাকাছি দক্ষিণে বেশ কয়েক বছর ধরে একটি পাহাড়ের গভীরে নতুন একটি স্থাপনা খনন করা হয়েছে।
ইসরায়েলিদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে গিয়ে বুধবার আইডিএফের (ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী) মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেন, বোমা হামলার ফল ‘প্রত্যাশার থেকেও ভালো’ হয়েছে।
ডেফরিন বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি বলতে পারি, আমাদের ধারণা হচ্ছে, আমরা (ইরানের) পারমাণবিক অবকাঠামোয় বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছি। আমি বলতে পারি যে আমরা তাদের কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছি।’
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা মনে করছেন, হামলার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক পরিকল্পনা দুই বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ফর্দো ও নাতাঞ্জের ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও সামগ্রিকভাবে মেনে নেওয়া হয়েছে যে ইরানের ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ করা ৪০০ কেজি ইউরেনিয়ামের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তা আর আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নজরদারিতেও নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালীতে আগুনে পুড়ল ১১টি দোকান ও একটি কারখানা
নোয়াখালীর সেনবাগে একটি কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, গোডাউনসহ অন্তত ১১টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ১টার দিকে উপজেলার সেবারহাট বাজারে ঘটনাটি ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের সেনবাগ, চৌমুহনী ও মাইজদীর পাঁচটি ইউনিট প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রবিবার (১০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানায়, শনিবার রাত ১টার দিকে সেবারহাটে একটি আসবাবপত্র তৈরির কারখানা থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর আগুন আশপাশের ১১টি দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আরো পড়ুন:
নেত্রকোণার ধলাই নদীতে বাল্কহেড ডুবে ২ শ্রমিক নিখোঁজ
মানিকগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানার আগুন, ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি
আগুনে আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, মেশিনারিজ সামগ্রী, থাই অ্যালুমিনিয়াম পণ্য বিক্রির দোকানসহ অন্তত ১১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আগুনে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের ৩৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সেনবাগ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মো.সাব্বির হোসেন বলেন, “পাঁচটি ইউনিট প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষয়ক্ষতি ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ তদন্ত শেষে বলা যাবে।”
ঢাকা/সুজন/মাসুদ