শিল্পকলার তিন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী
Published: 26th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে বুধবার শুরু হয়েছে বিষয়ভিত্তিক তিনটি প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী। একাডেমির প্রশিক্ষণ ও চারুকলা বিভাগ এর আয়োজন করেছে।
এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মধ্য রয়েছ ১০ দিনব্যাপী ‘মৃৎশিল্প কর্মশালা’, ১৬ দিনব্যাপী ‘বাঁশশিল্পে সৃষ্টিশীলতা’–বিষয়ক কর্মশালা ও প্রদর্শনী এবং সপ্তাহব্যাপী ‘আর্ট অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স’। প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হবে।
বুধবার বেলা তিনটায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে মৃৎশিল্প কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিল্পী আব্দুস সাত্তার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কর্মশালার কোর্স সমন্বয়কারী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষক আইরিন পারভীন, চারুকলা বিভাগের উপপরিচালক প্রদ্যোত কুমার দাস, কর্মশালার প্রশিক্ষক দেবাশীষ পাল ও অসীম হালদার।
কর্মশালায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করছেন।
বাঁশশিল্পে সৃষ্টিশীলতা–বিষয়ক কর্মশালা ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল বিকেল চারটায়। কর্মশালার মূল প্রশিক্ষক হচ্ছেন মো.
এ কর্মশালায় বিভিন্ন জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করছেন।
আর্ট অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্সের উদ্বোধনী চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়। কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পী আব্দুস সাত্তার। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান। উপস্থিত ছিলেন কর্মশালার প্রশিক্ষক রশীদ আমিন।
আয়োজকেরা জানান, মূলত আর্ট, শিল্পের পরিভাষা, নান্দনিক বোধ, শিল্পভাবনা ও লেখার উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে এ অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স আয়োজন করা হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী এ কর্মশালায় ইউরোপীয় শিল্পকলা ও আধুনিক শিল্পের বিবর্তনশীল ধারাসমূহ, গ্রিস ও রোমের শিল্পকলার ধ্রুপদি চর্চা, মধ্যযুগের খ্রিষ্টীয় শিল্পধারা, রেনেসাঁশিল্পের বহুবিধ মাত্রা, রোমান্টিক ধারার উত্থান ও শিল্পে জাতীয় চরিত্র, আধুনিক শিল্পের নৈর্ব্যক্তিক ও আত্মবিশ্লেষণী ধারাসমূহ, সমাজ চেতনা ও মনোবিকলনের প্রভাবে গড়ে ওঠা শিল্প ধারাসমূহ এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর শিল্পচর্চার বিবিধ মাত্রাবিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
কোর্সে ১০০ প্রশিক্ষণার্থী সরাসরি ও ৫০ প্রশিক্ষণার্থী অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। কোর্সের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের প্রশিক্ষক সাইফুল ইসলাম।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ শ ল পকল এক ড ম র চ র কল করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে
বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনতির পর্বে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এ জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।
চলতি মাসে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দপ্তরে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সফরে আসা প্রতিনিধিদলের প্রধান মুনির সাতোরি।
মুনির সাতোরি বলেন, ‘আমাদের সফরের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রায় বিস্মৃত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা। রোহিঙ্গা সংকট যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য এটি ইইউর রাজনৈতিক এজেন্ডায় আবারও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ নিয়ে মুনির সাতোরি বলেন, ‘এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার প্রস্তাব করেছি।’
প্রতিনিধিদলের সদস্য ইজাবেল উইসেলার-লিমা বলেন, যখন বিশ্বে নাটকীয়ভাবে গণতন্ত্র অবনতির পথে, তখন বাংলাদেশ পথ পরিবর্তন করে দেখিয়েছে যে গণতন্ত্রের পথে যাওয়া যায়। তারা চেষ্টা করছে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়ার। আর এ জন্য সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটা আশা করা জরুরি যে সামনে নির্বাচন হবে এবং তা প্রতিযোগিতামূলক হবে, যা হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এ জন্য চেষ্টা করছে।
রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে ইজাবেল বলেন, ‘কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি মানুষ ভুলে যাচ্ছে। এ সংকট আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ, মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। আর বাংলাদেশও দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশের নিজেরই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ে নেওয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সংকটের এখনকার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশ বর্তমানে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে অবস্থায় রয়েছে।’
প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য আরকাদিউজ মুলারজিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বেশি মানবিক অনুদান আসে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো থেকে, যদিও আগে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দিত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রতিশ্রুতি খুবই নগণ্য, এটি আশ্চর্যজনক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বদলে অনেক দূরে থাকা ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোকে এর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বড় অংশগ্রহণকারী হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কারণ, বর্তমানে আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে দর–কষাকষি করছি।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্য ক্যাটারিনা ভিয়েরা বলেন, এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ইতিহাসে দেশটি বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি সুযোগ সত্যিকারের অগ্রগতির। শিগগিরই হয়তো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ভেতরে গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায়। এ বিষয়গুলো শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বের থেকে আসেনি, এসেছে নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকেও, যাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তারা নিজেদের মধ্যে সংলাপের মধ্যে রয়েছে। যদিও অনুতাপের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয়, লিঙ্গ ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নেই। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমাজ গঠনে এখানে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।
আরকাদিউজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সংস্কারে উৎসাহ, যারা সংস্কারে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় গঠনমূলক সহযোগিতা করে ইইউ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের উল্টো পথে যাত্রা করছে, তখন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের আশা করার অবকাশ রয়েছে। গণতন্ত্রের পথে আরও অনেক কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সামনে দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করি। এটি এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।’
১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করে। এ সময়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংগঠন, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং মাঠপর্যায়ে কর্মরত বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।
এ ছাড়া প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরও পরিদর্শন করে।