সিলেটের ভোলাগঞ্জে রেলওয়ের জন্য সংরক্ষিত প্রস্তর কোয়ারি তথা ‘রেলের বাঙ্কার’ হইতে যেইভাবে প্রকাশ্যে প্রস্তর উত্তোলন এবং শত শত নৌকা পূর্ণ করিয়া লইয়া যাইতেছে, উহা লুণ্ঠনেরই নামান্তর। বুধবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংরক্ষিত এলাকাটির নজরদারির জন্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী-আরএনবি রহিয়াছে। ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা হইবার কারণে তথায় বিজিবি সদস্যরাও সক্রিয়।
তথাপি এইরূপে সংঘবদ্ধ লুণ্ঠন কীভাবে চলিতে পারে, উহা মস্তিষ্কে ধারণ করিতে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। কেবল রেলওয়ের বাঙ্কারই নহে; খোদ ভোলাগঞ্জ কোয়ারি হইতেই লুট হইয়াছে প্রস্তর। বিগত ১০ মাসে ইহা এমন অধিক হারে ঘটিয়াছে, এই সাম্রাজ্যে এখন প্রস্তরের পরিবর্তে ছোট-বড় অসংখ্য গহ্বর দৃশ্যমান। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক মদদেই এই অবিমৃষ্যকারিতা চলিতেছে। তবে রেলের বাঙ্কার এলাকা নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকিলেও তথাকার লুটপাটের চিত্র সমস্ত এলাকার সংকটাপন্ন পরিস্থিতিরই সাক্ষ্যবহ।
সমকালের সচিত্র প্রতিবেদনে রেলওয়ের প্রস্তরক্ষেত্রের চতুর্দিকে ভিড় পরিলক্ষিত। সূর্যতাপ ও বৃষ্টিধারা হইতে রক্ষাকল্পে রীতিমতো বংশদণ্ডে ত্রিপল ও প্লাস্টিকের আচ্ছাদনও লাগানো হইয়াছে। রেলওয়ের মালিকানাধীন তথা সরকারি এই সম্পদের প্রহরীদিগের নিষ্ক্রিয়তাই প্রমাণ করিতেছে– রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। সমকাল প্রতিবেদক সংশ্লিষ্টদের সহিত সাক্ষাতে নিশ্চিত হইয়াছেন, প্রতিটি নৌকা হইতে আরএনবি সদস্যরা দুই-তিনশ টাকা বাম হস্তে গ্রহণ করিয়া থাকে। বিজিবি সদস্যদের তিনশত হইতে পাঁচশত টাকা দিতে হয় এবং প্রতি নৌকা তিন হইতে পাঁচ সহস্র টাকায় প্রস্তর বিক্রয় হয়। অর্থাৎ প্রস্তর লুণ্ঠন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় ধলাই নদীর বিভিন্ন স্থানে গড়িয়া উঠিয়াছে চোরাই বিপণি!
প্রায় সাড়ে তিনশত একরের রেলওয়ের বাঙ্কারের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রস্তর এই প্রকারে আহরণের কারণে টিলাসমূহ প্রায় সমতল ভূমিতে রূপ লইয়াছে। তথায় তৈয়ার হইয়াছে অসংখ্য গহ্বর, যেইগুলি বৃষ্টিধারায় ডোবায় পরিণত। এই প্রস্তর তুলিবার কারণে ভয়াবহ পরিবেশগত ও মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈয়ার হইয়াছে। যাহার ফলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, তৎসহিত নদীভাঙন, ভূমিধস ও প্রাণহানির ন্যায় অঘটনও ঘটমান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার তথ্যানুযায়ী, সিলেট জেলার আটটি প্রস্তর কোয়ারি রহিয়াছে। এই সকল জায়গায় ‘বোমা মেশিন’ ব্যবহার করিয়া প্রস্তর উত্তোলন পরিবেশ ও জনপদে ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। যেই কারণে উচ্চ আদালত যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ করিবার রায় দিয়াছেন। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকারের পতন হইলে পূর্বোক্ত রায় উপেক্ষা করিয়াই স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিকগণ পুনরায় প্রস্তর লুণ্ঠনের অশুভ সূচনা করিয়াছেন।
ভোলাগঞ্জে প্রস্তর কোয়ারি হইতে এই লুণ্ঠনের পর আমরা দেখিতেছি সংরক্ষিত এলাকা রেল বাঙ্কারের প্রস্তরও নিষ্কৃতি পাইতেছে না।
আমরা মনে করি, নিরাপত্তা বাহিনী তৎপর হইলে এহেন লুণ্ঠনকর্ম রোধ করা দুষ্কর হইবে না। এতদিন ধরিয়া তাহারা কেন দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা প্রদর্শন করিয়াছে, তজ্জন্য তাহাদের জবাবদিহি করিতে হইবে। প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা পালন করিলে সিলেটের এই প্রস্তররাজ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব। বিশেষত, শ্বেতপ্রস্তরের সৌন্দর্য দর্শন করিতে তথায় পর্যটক যেইভাবে ছুটিয়া যান, সেই পরিবেশ রক্ষা করিতে হইবে। প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালাইলে প্রস্তরের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ হইতে পারে। অন্যথায়, দেশের সম্পদের লুণ্ঠন যদ্রূপ বৃদ্ধি পাইবে, তদ্রূপ প্রতিবেশ ব্যবস্থাও পড়িবে ঝুঁকিতে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র লওয় র পর ব শ রক ষ ত হইয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
৬ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়
টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডেতেও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়খরা কাটাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কাল রাতে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সালমান আগাদের ডিএল মেথডে ৫ উইকেটে হারিয়েছে শাই হোপের দল। ২০১৯ সালের পর এই প্রথম পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতল ক্যারিবীয়রা। এর আগে দুই দলের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ৮ বছরের জয়খরা কাটিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেটি ছিল বৃষ্টিবিঘ্নিত। প্রথমে ব্যাট করে ৩৫ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭১ রান করে পাকিস্তান। বৃষ্টি-বিলম্বের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৫ ওভারে ১৮১। রোস্টন চেজ ও শারফেন রাদারফোর্ডের সৌজন্যে ১০ বল আগেই জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিকেরা।
রান তাড়ায় নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১২ রানের মধ্যেই হারিয়ে ফেলেছিল দুই ওপেনার ব্রান্ডন কিং ও এভিন লুইসকে। দুজনকেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান হাসান আলী। তিনে নামা কিসি কার্টিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, আবরার আহমেদের বলে বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন দলীয় ৪৮ রানে।
এরপর রাদারফোর্ডকে নিয়ে ৫৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন অধিনায়ক হোপ। মোহাম্মদ নওয়াজের বলে হোপ স্টাম্পড হন তিনি ((৩৫ বলে ৩২)। নওয়াজ পরের ওভারে ফেরান রাদারফোর্ডকেও (৩৩ বলে ৪৫)। ১০৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারানোর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাকি পথে আর বিপদে পড়তে দেননি চেজ ও গ্রিভস। ষষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে ৭২ বলে ৭৭ রান যোগ করে ম্যাচের সমাপ্তি টানেন তাঁরা। চেজ ৪৭ বলে ৪৯ এবং গ্রিভস ৩১ বলে ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানের হয়ে কেউই নিজেদের ইনিংস বড় করতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৩০ বলে ৩৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন হাসান নওয়াজ। হুসাইন তালাত করেন ৩১ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে জেইডেন সিলস ২৩ রানে নেন ৩ উইকেট। দিন শেষে ম্যাচসেরা অবশ্য চেজই, যিনি ৪৯ রানের অপরাজিত ইনিংসের আগে একটি উইকেটও নিয়েছেন।
২০১৯ বিশ্বকাপে নটিংহামে ৭ উইকেটে জয়ের পর গতকালের আগপর্যন্ত ৪ বার ওয়ানডেতে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিততে পারেনি কোনেটিতেই। এই সিরিজের প্রথম ম্যাচেও পাকিস্তান জিতেছিল ৫ উইকেট। তিন ম্যাচ সিরিজে এই মুহূর্তে ১-১ সমতা চলছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৩৫ ওভারে ১৭১/৭ (নওয়াজ ৩৬*, তালাত ৩১, শফিক ২৬; সিলস ৩/২৩)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩৩.২ ওভারে ১৮৪/৫ (চেজ ৪৯*, রাদারফোর্ড ৪৫, হোপ ৩২; নওয়াজ ২/১৭)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী (ডিএল মেথড)।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রোস্টন চেজ।