Samakal:
2025-11-17@11:19:28 GMT

রক্ষকই যখন ভক্ষক

Published: 26th, June 2025 GMT

রক্ষকই যখন ভক্ষক

সিলেটের ভোলাগঞ্জে রেলওয়ের জন্য সংরক্ষিত প্রস্তর কোয়ারি তথা ‘রেলের বাঙ্কার’ হইতে যেইভাবে প্রকাশ্যে প্রস্তর উত্তোলন এবং শত শত নৌকা পূর্ণ করিয়া লইয়া যাইতেছে, উহা লুণ্ঠনেরই নামান্তর। বুধবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংরক্ষিত এলাকাটির নজরদারির জন্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী-আরএনবি রহিয়াছে। ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা হইবার কারণে তথায় বিজিবি সদস্যরাও সক্রিয়।

তথাপি এইরূপে সংঘবদ্ধ লুণ্ঠন কীভাবে চলিতে পারে, উহা মস্তিষ্কে ধারণ করিতে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। কেবল রেলওয়ের বাঙ্কারই নহে; খোদ ভোলাগঞ্জ কোয়ারি হইতেই লুট হইয়াছে প্রস্তর। বিগত ১০ মাসে ইহা এমন অধিক হারে ঘটিয়াছে, এই সাম্রাজ্যে এখন প্রস্তরের পরিবর্তে ছোট-বড় অসংখ্য গহ্বর দৃশ্যমান। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক মদদেই এই অবিমৃষ্যকারিতা চলিতেছে। তবে রেলের বাঙ্কার এলাকা নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকিলেও তথাকার লুটপাটের চিত্র সমস্ত এলাকার সংকটাপন্ন পরিস্থিতিরই সাক্ষ্যবহ।

সমকালের সচিত্র প্রতিবেদনে রেলওয়ের প্রস্তরক্ষেত্রের চতুর্দিকে ভিড় পরিলক্ষিত। সূর্যতাপ ও বৃষ্টিধারা হইতে রক্ষাকল্পে রীতিমতো বংশদণ্ডে ত্রিপল ও প্লাস্টিকের আচ্ছাদনও লাগানো হইয়াছে। রেলওয়ের মালিকানাধীন তথা সরকারি এই সম্পদের প্রহরীদিগের নিষ্ক্রিয়তাই প্রমাণ করিতেছে– রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। সমকাল প্রতিবেদক সংশ্লিষ্টদের সহিত সাক্ষাতে নিশ্চিত হইয়াছেন, প্রতিটি নৌকা হইতে আরএনবি সদস্যরা দুই-তিনশ টাকা বাম হস্তে গ্রহণ করিয়া থাকে। বিজিবি সদস্যদের তিনশত হইতে পাঁচশত টাকা দিতে হয় এবং প্রতি নৌকা তিন হইতে পাঁচ সহস্র টাকায় প্রস্তর বিক্রয় হয়। অর্থাৎ প্রস্তর লুণ্ঠন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় ধলাই নদীর বিভিন্ন স্থানে গড়িয়া উঠিয়াছে চোরাই বিপণি! 

প্রায় সাড়ে তিনশত একরের রেলওয়ের বাঙ্কারের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রস্তর এই প্রকারে আহরণের কারণে টিলাসমূহ প্রায় সমতল ভূমিতে রূপ লইয়াছে। তথায় তৈয়ার হইয়াছে অসংখ্য গহ্বর, যেইগুলি বৃষ্টিধারায় ডোবায় পরিণত। এই প্রস্তর তুলিবার কারণে ভয়াবহ পরিবেশগত ও মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈয়ার হইয়াছে। যাহার ফলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, তৎসহিত নদীভাঙন, ভূমিধস ও প্রাণহানির ন্যায় অঘটনও ঘটমান।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার তথ্যানুযায়ী, সিলেট জেলার আটটি প্রস্তর কোয়ারি রহিয়াছে। এই সকল জায়গায় ‘বোমা মেশিন’ ব্যবহার করিয়া প্রস্তর উত্তোলন পরিবেশ ও জনপদে ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। যেই কারণে উচ্চ আদালত যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ করিবার রায় দিয়াছেন। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকারের পতন হইলে পূর্বোক্ত রায় উপেক্ষা করিয়াই স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিকগণ পুনরায় প্রস্তর লুণ্ঠনের অশুভ সূচনা করিয়াছেন।

ভোলাগঞ্জে প্রস্তর কোয়ারি হইতে এই লুণ্ঠনের পর আমরা দেখিতেছি সংরক্ষিত এলাকা রেল বাঙ্কারের প্রস্তরও নিষ্কৃতি পাইতেছে না।

আমরা মনে করি, নিরাপত্তা বাহিনী তৎপর হইলে এহেন লুণ্ঠনকর্ম রোধ করা দুষ্কর হইবে না। এতদিন ধরিয়া তাহারা কেন দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা প্রদর্শন করিয়াছে, তজ্জন্য তাহাদের জবাবদিহি করিতে হইবে। প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা পালন করিলে সিলেটের এই প্রস্তররাজ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব। বিশেষত, শ্বেতপ্রস্তরের সৌন্দর্য দর্শন করিতে তথায় পর্যটক যেইভাবে ছুটিয়া যান, সেই পরিবেশ রক্ষা করিতে হইবে। প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালাইলে প্রস্তরের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ হইতে পারে। অন্যথায়, দেশের সম্পদের লুণ্ঠন যদ্রূপ বৃদ্ধি পাইবে, তদ্রূপ প্রতিবেশ ব্যবস্থাও পড়িবে ঝুঁকিতে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র লওয় র পর ব শ রক ষ ত হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনাকে কোনো অবস্থাতেই ফেরত পাঠাবে না ভারত: রাজনৈতিক বিশ্লেষ

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার অপর আসামি সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের সাজা।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এরপর থেকে তিনি ভারত সরকারের আশ্রয়েই রয়েছেন। ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি তার বিচার পরিচালনা করে। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে কেবল সাবেক পুলিশ প্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত। তিনি বলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতের এই রায় প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না ভারত।” 

আলজাজিরাকে দেওয়া মন্তব্যে দত্ত আরো বলেন, “কোনো অবস্থাতেই ভারত তাকে প্রত্যর্পণ করবে না। গত দেড় বছরে আমরা দেখেছি যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো অবস্থায় নেই এবং অনেক সময়ই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।”

দত্ত বলেন, “হাসিনার মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশিত ছিল।”

তিনি বলেন, “সবাই বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখেছেন। সবাই আশা করেছিলেন যে হাসিনার বিচার হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা একমত যে, বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেশের আইনি ব্যবস্থা অনুসরণ করেছে।”

দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, “নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে কারো সন্দেহ নেই। স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”

দত্তের ভাষ্যমতে, “আওয়ামী লীগ এখন একটি পাল্টা ব্যাখ্যা তৈরির তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলাদেশিরা মূলত বিশ্বাস করেন যে- হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ