যশোরে চাঁদা না পেয়ে ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যানকে মারধর
Published: 26th, June 2025 GMT
যশোরের চৌগাছায় ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানকে (ঢালি) মারধর করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলার মান্দারতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
জিয়াউর রহমান (৪৭) ফুলসরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তিনি প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আওয়ামী লীগের ফুলসারা ইউনিয়নের সভাপতি।
ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। গত ২৮ এপ্রিল তিনি গ্রেপ্তার হন। এরপর জিয়াউর রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। তাঁর স্বজনদের অভিযোগ, দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক মামলার আসামি লিটনের নেতৃত্বে পাঁচ থেকে ছয়জন জিয়াউর রহমানের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা না দেওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ হন। গতকাল বিকেলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মোটরসাইকেলে বাড়িতে যাওয়ার পথে লিটন ও তাঁর সহযোগীরা জিয়াউর রহমানের ওপর হামলা করেন। অস্ত্র ঠেকিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। পরে হকিস্টিক দিয়ে তাঁর দুই পা ও হাত ভেঙে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আহত জিয়াউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে একটি পক্ষ আমাকে মেনে নিতে পারেন না। আমাকে হত্যার চেষ্টা শুরু করে। স্থানীয় সন্ত্রাসী লিটন আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। সেই টাকা না দেওয়ায় আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। মারধরের এক পর্যায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করার চেষ্টা করছিল, কিন্তু স্থানীয় লোকজন চলে আসায় তারা পালিয়ে যায়।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় তাঁদের ভাষ্য পাওয়া যায়নি।
যশোর জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাসিবুর রহমান বলেন, আশাঙ্কাজনক অবস্থায় জিয়াউর রহমানকে আনা হয়েছিল। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত।
এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাটি জানার পরে পুলিশের একটি দলকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। পূর্বশত্রুতার জেরে জিয়াউর রহমানকে লিটন নামের এক ব্যক্তি পিটিয়ে আহত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদা দাবিতে তাঁকে মারপিট করা হয়েছে কি না, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে কোনো অবস্থাতেই ফেরত পাঠাবে না ভারত: রাজনৈতিক বিশ্লেষ
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার অপর আসামি সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের সাজা।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এরপর থেকে তিনি ভারত সরকারের আশ্রয়েই রয়েছেন। ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি তার বিচার পরিচালনা করে। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে কেবল সাবেক পুলিশ প্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত। তিনি বলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতের এই রায় প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না ভারত।”
আলজাজিরাকে দেওয়া মন্তব্যে দত্ত আরো বলেন, “কোনো অবস্থাতেই ভারত তাকে প্রত্যর্পণ করবে না। গত দেড় বছরে আমরা দেখেছি যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো অবস্থায় নেই এবং অনেক সময়ই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।”
দত্ত বলেন, “হাসিনার মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশিত ছিল।”
তিনি বলেন, “সবাই বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখেছেন। সবাই আশা করেছিলেন যে হাসিনার বিচার হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা একমত যে, বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেশের আইনি ব্যবস্থা অনুসরণ করেছে।”
দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, “নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে কারো সন্দেহ নেই। স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”
দত্তের ভাষ্যমতে, “আওয়ামী লীগ এখন একটি পাল্টা ব্যাখ্যা তৈরির তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলাদেশিরা মূলত বিশ্বাস করেন যে- হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।”
ঢাকা/ফিরোজ