মাগুরায় যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে ও শ্বাস রোধ করে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে মাগুরা সদর থানায় মামলাটি করেন ওই গৃহবধূর ভাই রিজু শেখ।

নিহত নারীর নাম মনিরা আক্তার ওরফে মীম (২২)। তিনি মাগুরা সদর উপজেলার আলিধানী গ্রামের আরজু শেখের মেয়ে। তাঁর স্বামী শামীম শেখের (৩০) বাড়ি উপজেলার শিবরামপুর গ্রামে।

মনিরা আক্তারের আরেক ভাই সুজায়েত শেখ বলেন, পাশের শিবরামপুর গ্রামের বাসিন্দা শামীমের সঙ্গে পাঁচ বছর আগে তাঁর বোনের বিয়ে হয়। তাঁদের সাড়ে তিন বছরের একটা ছেলে আছে। বিয়ের পর বিভিন্ন সময় তাঁর বোনকে শারীরিক নির্যাতন করেছেন শামীম। এ বিষয়ে পারিবারিকভাবে সালিস মীমাংসা হয়েছে। ছয় মাস আগে স্বামীর জন্য ইজিবাইক কেনার কথা বলে বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা নেন মনিরা। কথা ছিল ইজিবাইক চালিয়ে ওই টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন শামীম, তবে তিনি টাকা ফেরত দেননি। এক সপ্তাহ আগে মনিরা আরও সাত হাজার টাকা বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। গতকাল বুধবার সেই টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়।

সুজায়েত শেখ অভিযোগ করেন, ‘কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মনিরাকে পিটিয়ে ও শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন শামীম ও তাঁর বাড়ির লোকজন। হত্যার পর তাঁকে টয়লেটের ভেতর ফেলে রাখা হয়েছিল। পরে তাঁরা মনিরাকে হাসপাতালে ফেলে রেখে চলে যান। আমরা আশপাশের লোকজনের কাছে বোনের মৃত্যুর খবর পাই।’

মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বেলা ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে ওই নারীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। ওই নারী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, এমন তথ্য দিয়ে সোহাগ নামের এক ব্যক্তি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এ বিষয়ে জানতে শামীম শেখের মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর বাবা মিরাজ শেখ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় গাড়ি চালাই। বাড়ির খবর জানি না। গতকাল একবার ছেলে ফোন করে বলেছিল পুত্রবধূ আত্মহত্যা করেছেন। এরপর আর তাঁকে ফোনে পাইনি।’

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইয়ুব আলী আজ দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, যৌতুকের দাবিতে হত্যা ও এর প্ররোচনার অভিযোগে নিহত গৃহবধূর ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে তাঁর স্বামীসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এরই মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হত য র কর ছ ন গ হবধ

এছাড়াও পড়ুন:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে

প্রযুক্তির উৎকর্ষের মধ্যেও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে প্রায়ই বিকৃতভাবে বা ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। গুগলে ‘ইনডিজেনাস পিপল’ লিখে খোঁজা হলে মাঝেমধ্যে এমন ছবি দেখানো হয়, যা তাদের ‘আদিম’, ‘বন্য’, ‘বর্বর’, ‘জংলি’ ও ‘হিংস্র’ আকারে উপস্থাপন করে।

সোমবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জা​দুঘর মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এমন অভিযোগ করেন। ‘আদিবাসী নারীর অধিকার রক্ষা ও ভবিষ্যৎ গড়ার লড়াইয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক।

আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ঘিরে এমন উপস্থাপনের প্রভাব নারীদের ওপরও পড়বে।

মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, দেশে জাতিসংঘের অনেকগুলো দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হলেও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করা হয় না। তিনি বলেন, বুঝুক আর না বুঝুক বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন কনভেনশনকে তড়িঘড়ি করে সমর্থন করে। কিন্তু এই কনভেনশনকে সমর্থন করেনি। সরকার বুঝেশুনেই সমর্থন করেনি। আগের সরকার বলেছে, বাংলাদেশে আদিবাসী নেই, এই সরকারও আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না।

একটাই ধর্ম ও জাতিসত্তা থাকবে, এমন মনোভাব কাম্য নয় উল্লেখ করে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘কিসের ভয়ে আমরা দেশে ভিন্ন ধর্ম, চিন্তা ও জাতিসত্তার মানুষকে থাকতে দেব না? কে অধিকার দিয়েছে যে একটি মাত্র মতবাদ, চিন্তা, ভাষা জাতি ও ধর্ম থাকবে? রাষ্ট্রের জন্য এটা কাম্য হতে পারে না।’

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে সমতল ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করে খুশী কবির বলেন, অভ্যুত্থানের পরে আর নারীদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। নারী কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু কমিশনের কোনো কিছু গ্রহণ করা হয়নি। এর অর্থ সরকার নারীদের ভয় পায়। এই অবস্থা টিকে থাকার জন্য অভ্যুত্থান হয়নি। তাই অধিকার আদায়ে নারীদের শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। এখনই উত্তম সময়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির ছবি: প্রথম আলো হেডিং: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ