যৌতুক না পেয়ে গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ, স্বামীসহ পাঁচজনের নামে মামলা
Published: 26th, June 2025 GMT
মাগুরায় যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে ও শ্বাস রোধ করে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে মাগুরা সদর থানায় মামলাটি করেন ওই গৃহবধূর ভাই রিজু শেখ।
নিহত নারীর নাম মনিরা আক্তার ওরফে মীম (২২)। তিনি মাগুরা সদর উপজেলার আলিধানী গ্রামের আরজু শেখের মেয়ে। তাঁর স্বামী শামীম শেখের (৩০) বাড়ি উপজেলার শিবরামপুর গ্রামে।
মনিরা আক্তারের আরেক ভাই সুজায়েত শেখ বলেন, পাশের শিবরামপুর গ্রামের বাসিন্দা শামীমের সঙ্গে পাঁচ বছর আগে তাঁর বোনের বিয়ে হয়। তাঁদের সাড়ে তিন বছরের একটা ছেলে আছে। বিয়ের পর বিভিন্ন সময় তাঁর বোনকে শারীরিক নির্যাতন করেছেন শামীম। এ বিষয়ে পারিবারিকভাবে সালিস মীমাংসা হয়েছে। ছয় মাস আগে স্বামীর জন্য ইজিবাইক কেনার কথা বলে বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা নেন মনিরা। কথা ছিল ইজিবাইক চালিয়ে ওই টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন শামীম, তবে তিনি টাকা ফেরত দেননি। এক সপ্তাহ আগে মনিরা আরও সাত হাজার টাকা বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। গতকাল বুধবার সেই টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়।
সুজায়েত শেখ অভিযোগ করেন, ‘কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মনিরাকে পিটিয়ে ও শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন শামীম ও তাঁর বাড়ির লোকজন। হত্যার পর তাঁকে টয়লেটের ভেতর ফেলে রাখা হয়েছিল। পরে তাঁরা মনিরাকে হাসপাতালে ফেলে রেখে চলে যান। আমরা আশপাশের লোকজনের কাছে বোনের মৃত্যুর খবর পাই।’
মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বেলা ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে ওই নারীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। ওই নারী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, এমন তথ্য দিয়ে সোহাগ নামের এক ব্যক্তি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ বিষয়ে জানতে শামীম শেখের মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর বাবা মিরাজ শেখ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় গাড়ি চালাই। বাড়ির খবর জানি না। গতকাল একবার ছেলে ফোন করে বলেছিল পুত্রবধূ আত্মহত্যা করেছেন। এরপর আর তাঁকে ফোনে পাইনি।’
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইয়ুব আলী আজ দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, যৌতুকের দাবিতে হত্যা ও এর প্ররোচনার অভিযোগে নিহত গৃহবধূর ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে তাঁর স্বামীসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এরই মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হত য র কর ছ ন গ হবধ
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে কোনো অবস্থাতেই ফেরত পাঠাবে না ভারত: রাজনৈতিক বিশ্লেষ
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার অপর আসামি সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের সাজা।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এরপর থেকে তিনি ভারত সরকারের আশ্রয়েই রয়েছেন। ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি তার বিচার পরিচালনা করে। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে কেবল সাবেক পুলিশ প্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়ান স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত। তিনি বলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতের এই রায় প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না ভারত।”
আলজাজিরাকে দেওয়া মন্তব্যে দত্ত আরো বলেন, “কোনো অবস্থাতেই ভারত তাকে প্রত্যর্পণ করবে না। গত দেড় বছরে আমরা দেখেছি যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো অবস্থায় নেই এবং অনেক সময়ই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।”
দত্ত বলেন, “হাসিনার মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশিত ছিল।”
তিনি বলেন, “সবাই বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখেছেন। সবাই আশা করেছিলেন যে হাসিনার বিচার হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা একমত যে, বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেশের আইনি ব্যবস্থা অনুসরণ করেছে।”
দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, “নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে কারো সন্দেহ নেই। স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”
দত্তের ভাষ্যমতে, “আওয়ামী লীগ এখন একটি পাল্টা ব্যাখ্যা তৈরির তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলাদেশিরা মূলত বিশ্বাস করেন যে- হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।”
ঢাকা/ফিরোজ