কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ লাগোয়া একটি শহীদ মিনার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। তবে ঠিক কবে এসব ভাঙচুর করা হয়েছে, তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। গতকাল বুধবার ভাঙা ম্যুরাল ও শহীদ মিনারের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, কয়েক মাস ধরেই ম্যুরাল ও শহীদ মিনার ভাঙা দেখছেন তাঁরা।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহীদ মিনার সংস্কার ও ম্যুরালটি আবার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সর্বশেষ কমান্ডার শফিউল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা দেশকে ভালোবাসে এবং দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, তারা কখনো এমন নিকৃষ্ট কাজ করতে পারে না। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহীদ মিনার এবং ম্যুরালটি আবারও পুনর্নির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কুমিল্লার অহংকার। বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসীম। যারা এই নিকৃষ্ট কাজটি করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণাধীন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালে কুমিল্লা নগরের রাজগঞ্জ রাজবাড়ি কম্পাউন্ড এলাকায় এটির কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটি লাগোয়া একটি শহীদ মিনার ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মরণে ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। যেখানে ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে, সেটির পাশেই বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি। কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন শহীদ মিনারে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন।

আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদ মিনারটির মধ্যখানে লাল সূর্য থাকলেও তিনটি স্তম্ভের একটিও নেই। পাশের ম্যুরালটি ভাঙা। কাচের ওপর ম্যুরালটি তৈরি করা হয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন কর্মচারী প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক মাস ধরে এগুলো ভাঙা। ম্যুরালটি ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে ভাঙা বলে মনে হচ্ছে। আর শহীদ মিনারটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে কয়েক মাস আগে। তাঁদের ধারণা, মাদকাসক্ত ছিন্নমূলেরা স্তম্ভগুলো ভেঙে নিয়ে গেছেন। স্তম্ভগুলো লোহা ও স্টিলের পাত দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

প্রতিষ্ঠানটির একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক মাস ধরেই প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার সময় এমন দৃশ্য দেখছেন। তবে গত বুধবার বিকেলে ম্যুরাল ও শহীদ মিনারের ভাঙা ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর পর থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

কুমিল্লা জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি ১৯৫২ সালে ভাষাশহীদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন। রফিক তাঁর সহযোদ্ধা আবদুস সালামকে নিয়ে ‘এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান এবং অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্রের সমর্থনের আদায়ের চেষ্টা শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোতে পালিত হচ্ছে। এ গৌরবময় অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাঁদের সংগঠন একুশে পদক লাভ করে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর কানাডার একটি হাসপাতালে মারা যান।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো.

আমিরুল কায়ছার প্রথম আলোকে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল এবং পাশে থাকা শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। তবে কখন বা কারা এগুলো ভেঙেছে, সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এগুলো আবারও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া কারা এ ঘটনায় জড়িত, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক দ বস র

এছাড়াও পড়ুন:

সাত বছর আগে সাংবাদিক খাসোগি হত্যার পর প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ

যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আগামীকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকের লক্ষ্য তেল ও নিরাপত্তা খাতে দুদেশের বহু দশকের সহযোগিতার সম্পর্ক আরও গভীর করা। একই সঙ্গে বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সম্ভাব্য পারমাণবিক জ্বালানি খাতে সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করা।

২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সাংবাদিক এবং সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর এটাই যুবরাজ সালমানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক করলেন ট্রাম্প১৩ মে ২০২৫

সৌদি আরবের গোয়েন্দারা ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসের ভেতর খাসোগিকে হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ। এ হত্যাকাণ্ড বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। অনেকে অভিযোগ করেছিলেন, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুবরাজ সালমানের হাত রয়েছে।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল, যুবরাজই খাসোগিকে অপহরণ বা হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন।

যুবরাজ সালমান খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তিনি সৌদি আরব সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে এ হত্যার দায় স্বীকার করেছিলেন।

খাসোগি হত্যার পর সাত বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং সবচেয়ে বেশি তেল উত্তোলনকারী দেশ সৌদি আরব নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নিতে চাইছে।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের সঙ্গে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রির চুক্তি’ যুক্তরাষ্ট্রের১৩ মে ২০২৫

ট্রাম্প গত মে মাসে সৌদি আরবে তাঁর সফরের সময় দেওয়া ৬০ হাজার কোটি ডলারের সৌদি বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন।

মে মাসের ওই সফরে ট্রাম্প সৌদি আরবে মানবাধিকার–সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা স্পষ্টভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এবারও তিনি একই পথে হাঁটবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে যুবরাজ মোহাম্মদ আঞ্চলিক অস্থিরতার মধ্যে নিজ দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছেন। একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি (এআই) এবং বেসামরিক খাতে একটি পারমাণবিক প্রকল্প চুক্তির পথে অগ্রসর হতে চাইছেন।

আরও পড়ুনখাসোগি হত্যা সবচেয়ে জঘন্য ধামাচাপার ঘটনা: ট্রাম্প২৪ অক্টোবর ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই এমন একটি সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যেখানে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের পছন্দমতো দামে তেল বিক্রি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে নিরাপত্তা দেবে।

আরও পড়ুনখাসোগিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে: সৌদি আরব২৬ অক্টোবর ২০১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ