মিথ্যা মামলা এবং এ-সংক্রান্ত গ্রেপ্তার সমাজের সব স্তরে উদ্বেগ তৈরি করেছে। নির্দোষ মানুষকেও আসামি করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার মিথ্যা মামলা এবং এসব মামলায় গ্রেপ্তার থামাতে নতুন বিধান করছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এবং জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ-সংক্রান্ত কার্যালয় (ইউনাইটেড নেশন্স অফিস অন ড্রাগ অ্যান্ড ক্রাইম-ইউএনওডিসি) আয়োজিত এক সংলাপে এসব কথা জানান তিনি।

সংলাপ উদ্বোধনের পর তিনটি আলাদা অধিবেশন হয়। প্রতিটি অধিবেশনের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিচার সংস্কার কমিশন, বার কাউন্সিল, পুলিশ, এনজিও এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।

বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিসের সভাপতিত্বে উদ্বোধনীতে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউএনওডিসির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের উপপ্রতিনিধি ড.

সুরুচি প্যান্ট। সংস্থার বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধান ফেলিপে রামোস সংলাপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘মিথ্যা মামলা ও অযৌক্তিক গ্রেপ্তার কমাতে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান আনছি। এখনই সব খুলে বলছি না। তবে এতটুকু বলতে পারি, মিথ্যা মামলা ও অযাচিত গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। কিছুটা হলেও এসব কমবে বলে আশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো ছেলে শিশুদের যৌন নির্যাতনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। গুমের ওপর একটি নতুন আইন প্রক্রিয়াধীন এবং আমরা এটিকে গুম-সংক্রান্ত কনভেনশনের সঙ্গে যতটা সম্ভব সামঞ্জস্যপূর্ণ করার চেষ্টা করছি।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘মামলাজট কমাতে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। আগে যেখানে প্রতি জেলায় একজন লিগ্যাল এইড অফিসার থাকতেন, এখন তিনজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি জানান, সরকার ইতোমধ্যে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে, যা প্রায় ৩ লাখ মানুষের জীবনকে বিপদে ফেলেছে। আগামী ছয় মাসে আরও ২০ হাজার মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বিচারকদের সম্পদের বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিচারিক আদালতের বিচারকদের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও আদালত কর্মী নিয়োগে কেন্দ্রীয় নিয়োগ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে বক্তারা বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের নানা দিক তুলে ধরেন। বিশেষ করে আইনি সহায়তা, রাষ্ট্রপক্ষের কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক মান ও প্রমাণভিত্তিক চর্চা নিয়ে আলোচনা হয়।

সংলাপের প্রথম অধিবেশনে আসামি, আটক, গ্রেপ্তার বা কারাবন্দি ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ও সাক্ষীদের জন্য আইনি সহায়তা আরও সহজে কীভাবে পাওয়া যায়, তা শক্তিশালী করা বিষয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। পর্বটি পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিম হুসাইন শাওন। 
বক্তৃতা করেন ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ইউএনওডিসির ভিয়েনা সদরদপ্তরের অ্যাকসেস টু জাস্টিস টিমের প্রধান আনা জিউডাইস, ইউএনডিপির বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার ডেকার ও ভার্চুয়ালি ইউএনওডিসির সাবেক পরামর্শক নিকোলাস লাইনো।

দ্বিতীয় অধিবেশন ছিল নিরপেক্ষ, পেশাদার ও জবাবদিহিমূলক প্রসিকিউশন সার্ভিস প্রতিষ্ঠা। এতে ইউএনডিপি, সরকারের প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বক্তৃতা করেন। আর অধিক কার্যকর ও মানবাধিকারভিত্তিক তদন্তের জন্য পুলিশ-প্রসিকিউশনের সহযোগিতা শক্তিশালী করা বিষয়ে তৃতীয় অধিবেশনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুলিশ, ইউএনওডিসি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট সরক র ব যবস থ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে

প্রযুক্তির উৎকর্ষের মধ্যেও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে প্রায়ই বিকৃতভাবে বা ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। গুগলে ‘ইনডিজেনাস পিপল’ লিখে খোঁজা হলে মাঝেমধ্যে এমন ছবি দেখানো হয়, যা তাদের ‘আদিম’, ‘বন্য’, ‘বর্বর’, ‘জংলি’ ও ‘হিংস্র’ আকারে উপস্থাপন করে।

সোমবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জা​দুঘর মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এমন অভিযোগ করেন। ‘আদিবাসী নারীর অধিকার রক্ষা ও ভবিষ্যৎ গড়ার লড়াইয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক।

আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ঘিরে এমন উপস্থাপনের প্রভাব নারীদের ওপরও পড়বে।

মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, দেশে জাতিসংঘের অনেকগুলো দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হলেও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করা হয় না। তিনি বলেন, বুঝুক আর না বুঝুক বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন কনভেনশনকে তড়িঘড়ি করে সমর্থন করে। কিন্তু এই কনভেনশনকে সমর্থন করেনি। সরকার বুঝেশুনেই সমর্থন করেনি। আগের সরকার বলেছে, বাংলাদেশে আদিবাসী নেই, এই সরকারও আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না।

একটাই ধর্ম ও জাতিসত্তা থাকবে, এমন মনোভাব কাম্য নয় উল্লেখ করে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘কিসের ভয়ে আমরা দেশে ভিন্ন ধর্ম, চিন্তা ও জাতিসত্তার মানুষকে থাকতে দেব না? কে অধিকার দিয়েছে যে একটি মাত্র মতবাদ, চিন্তা, ভাষা জাতি ও ধর্ম থাকবে? রাষ্ট্রের জন্য এটা কাম্য হতে পারে না।’

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে সমতল ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করে খুশী কবির বলেন, অভ্যুত্থানের পরে আর নারীদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। নারী কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু কমিশনের কোনো কিছু গ্রহণ করা হয়নি। এর অর্থ সরকার নারীদের ভয় পায়। এই অবস্থা টিকে থাকার জন্য অভ্যুত্থান হয়নি। তাই অধিকার আদায়ে নারীদের শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। এখনই উত্তম সময়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির ছবি: প্রথম আলো হেডিং: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ