এগারো শিক্ষা বোর্ডের অধীনে গতকাল বৃহস্পতিবার একযোগে শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। প্রথম দিন সারাদেশে অনুপস্থিত ছিলেন ১৯ হাজার ৭৫৯ পরীক্ষার্থী। এদিন অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৪৩ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এবার দেশের ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি এ তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে, করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও খোদ রাজধানীর অনেক পরীক্ষা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে উদাসীন দেখা গেছে। পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা বেশির ভাগ অভিভাবকই ছিলেন মাস্ক ছাড়া। কারও হাতে ছিল না হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

সকালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ও সিদ্ধেশ্বরী কলেজ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পরীক্ষার্থীই মাস্কবিহীন অবস্থায় কেন্দ্রে ঢুকছেন। এমনকি দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। 

সিদ্ধেশ্বরী কলেজ কেন্দ্রের গেটে কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, অনেকে মাস্ক পরলেও বেশির ভাগই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। বারবার অনুরোধ করেও তেমন ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পরীক্ষার সময় যা যা মানার কথা ছিল, বাস্তবে এর অনেক কিছুই ছিল অনুপস্থিত। এবার নির্ধারিত সাতটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা ছিল। তবে রাজধানীর বেশির ভাগ পরীক্ষা কেন্দ্রে মাস্ক ব্যবহার ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কোনো মেডিকেল টিমেরও দেখা মেলেনি।

শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া

রাজধানীর ভাসানটেক সরকারি কলেজ পরিদর্শন শেষে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধেও প্রস্তুতি যথাযথ। ফলে শঙ্কার কিছু নেই।

তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি স্বীকার করেন, সব কেন্দ্রেই শতভাগ নিয়ম মানানো যাচ্ছে না। আমরা ধাপে ধাপে পরিস্থিতির উন্নয়ন করব।
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর নজরদারি রয়েছে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

প্রথম দিনে অনুপস্থিত ১৯৭৫৯ পরীক্ষার্থী, বহিষ্কার ৪৩

প্রথম দিন অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কার হওয়া ৪৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছয়জন এইচএসসির, ২৪ জন আলিমের ও ১৩ জন কারিগরির।
বোর্ডগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, অনুপস্থিত ১৯ হাজার ৭৫৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ৩ হাজার ৩২৬ জন, রাজশাহীতে ১ হাজার ৮৬৭, কুমিল্লায় ২ হাজার ৪২৮, যশোরে ১ হাজার ৬৩৮, চট্টগ্রামে ১ হাজার ২৩০, সিলেটে ৮২৪, বরিশালে ১ হাজার ২৯, দিনাজপুরে ১ হাজার ২৯১ ও ময়মনসিংহে ৮৮০ জন রয়েছেন।
মাদ্রাসা বোর্ডের অধীন আলিম পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিলেন ৪ হাজার ১৯৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডে ১ হাজার ৫০ জন পরীক্ষায় অংশ নেননি। শতাংশের হিসাবে সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিতি মাদ্রাসা বোর্ডে। এ বোর্ডে অনুপস্থিতির হার ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ক ষ পর ক ষ র থ প রথম দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওরা আমার নতুন বইও পুড়িয়ে দিল’

‘একনিমেষেই সব শেষ হয়ে গেল। এত দিন ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা ঘর পুড়িয়ে দিল, দোকানটাও জ্বালিয়ে দিল। তারা তো শুধু আমার ঘর ও দোকান পোড়ায়নি, আমার ভাত খাওয়ার অবলম্বনও নিয়ে গেছে। এখন আমি কীভাবে চলব? আমার দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ কীভাবে দেব?’

কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন লা সা প্রু মারমা। স্বামীহারা লা সা প্রু সংসার চালাতেন স্থানীয় বাজারে থাকা ছোট্ট কাপড়ের দোকানের আয়ে। এখন সেই দোকানটিও নেই, নেই বসতবাড়ি। জীবনের অবলম্বন হারিয়ে হতাশায় ডুবে আছেন তিনি।

গত সোমবার বিকেলে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজার এলাকায় কথা হয় লা সা প্রু মারমার সঙ্গে। পোড়া বাড়ির সামনের টিলায় ছোট মেয়ে ও স্বজনদের নিয়ে বসেছিলেন তিনি। পাশে ছিলেন দুই জা (স্বামীর ভাইয়ের স্ত্রী)। তাঁদেরও ঘর পুড়েছে, পুড়েছে দোকান।

খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কাছে কাপড় কেনাবেচার জন্য প্রসিদ্ধ। গত রোববার বাজারটি হয়ে ওঠে রণক্ষেত্র। সহিংসতার আগুনে পুড়ে যায় প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি ও ৪০টির মতো দোকান।

ভয়ে প্রথমে বাথরুমে (শৌচাগার) লুকিয়ে পড়েছিলাম। পরে বের হয়ে আসি। অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে কোনোরকমে জান নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। কী ঘটেছে, কী হয়েছে, তার কিছুই আমরা জানি না; কিন্তু আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিল। দোকানটাও পুড়িয়ে দিল।শিনু চিং চৌধুরী, রামেসু বাজার এলাকার বাসিন্দা

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এর প্রতিবাদে গত শনিবার খাগড়াছড়িতে অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত রোববার গুইমারার রামেসু বাজারে বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছিল স্থানীয় একটি পক্ষ। এ সময় গুলিতে তিন পাহাড়ির মৃত্যু হয়।

নারীদের জীবনে হাহাকার

একদিকে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছেন, আরেক দিকে জীবিকা আয়ের অবলম্বন দোকানও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে—এখন সর্বস্ব হারানো রামেসু বাজার এলাকার বাসিন্দারা পড়েছেন অকূলপাথারে। আগুনের লেলিহান শিখা শুধু তাঁদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়নি, বেঁচে থাকার অবলম্বনও শেষ করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামীর দিনগুলো শুধুই অন্ধকার দেখছেন লা সা প্রু মারমার মতো এই বাজারের পাহাড়ি নারীরা।

ঘর-দোকান হারানোর শোকে ক্ষোভ জন্মেছে লা সা প্রু মারমার মনে। ক্ষুব্ধ এই পাহাড়ি নারী বলতে থাকেন, ‘সবাই শুধু আগুনের তালে থাকে। কিছু হলেই আগুন ধরিয়ে দেয়। আমাদের ঘরবাড়ি কেন পুড়িয়ে দেবে? কেন দোকান জ্বালিয়ে দেবে? তার চেয়ে আমাদের মেরে ফেলুক।’

লা সা প্রু মারমার দুই জা-শিনু চিং চৌধুরী ও হ্লা পাই মারমাও হারিয়েছেন সবকিছু। শিনু চিং চৌধুরী, স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষিকা। ঋণ নিয়ে বাজারে দোতলা ভবন করে দোকান দিয়েছিলেন তিনি। দোকানের আয় ও বেতনে চলত সংসার, সন্তানের পড়াশোনার খরচও। তাঁর বড় মেয়ে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ছোট ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে ঢাকায় কোচিং করছে। এখন শিনু চিংয়ের দোকানটির সঙ্গে ঘরও পুড়ে ছাই।

গত রোববারের দুপুর বেলা জীবনের বেদনাদায়ক মুহূর্ত হয়ে থাকবে শিনু চিং চৌধুরীর। দুঃসহ সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন এই নারী। চোখেমুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছাপ স্পষ্ট। বলতে থাকেন, ‘ভয়ে প্রথমে বাথরুমে লুকিয়ে পড়েছিলাম। পরে বের হয়ে আসি। অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে কোনোরকম জান নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। কী ঘটেছে, কী হয়েছে, তার কিছুই আমরা জানি না; কিন্তু আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিল। দোকানটাও পুড়িয়ে দিল।’

পোড়া বাড়ির সামনে বসে আছেন লা সা প্রু মারমা (বামে) ও তাঁর দুই জা শিনু চিং চৌধুরী ও হ্লা পাই মারমা। আজ সকালে তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
  • গর্ভাবস্থায় চোখের যত্ন
  • ‘ওরা আমার নতুন বইও পুড়িয়ে দিল’