বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দৃষ্টিশক্তি হারানো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের আজিজুল হক স্ত্রীর বিরুদ্ধে টাকা দাবিসহ নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন। থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের অর্থসহায়তা দেওয়ার ঘোষণার পর থেকে তাঁর স্ত্রী টাকার জন্য অত্যাচার-নির্যাতন করছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

আজিজুল হক উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের বাহেরচর পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হওয়ার পর তাঁর দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর আজিজুলকে ফেলে তাঁর স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার বাবার বাড়িতে চলে যান বলে তিনি অভিযোগ করেন।

থানায় দেওয়া লিখিতে অভিযোগে স্ত্রী একই গ্রামের সুমাইয়া আক্তার (২২), শাশুড়ি হাসনা আক্তার (৪০), সুমাইয়ার চাচা গণ অধিকার পরিষদের উপজেলা শাখার আহ্বায়ক এস কে শফিকুল ইসলাম (৪৫), বিষ্ণুরামপুর গ্রামের আশরাফুল মারুফ (২৫) ও মামা বাহেরচর গ্রামের রনি মিয়ার (৩৫) নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, দুই বছর আগে সুমাইয়ার সঙ্গে আজিজুলের বিয়ে হয়। গত বছর নরসিংদীর পৌলানপুর ইসলামিয়া মাদ্রাসার আলিম বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন আজিজুল। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বস্ত্রকলের উৎপাদন বিভাগে অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন তিনি। গত বছরের ১৮ জুলাই বিকেলে নরসিংদীর ভেলানগর এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তখন আজিজুলের দুই চোখ গুলিবিদ্ধ হয়। এতে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। একপর্যায়ে স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার তাঁকে ফেলে বাবার বাড়িতে চলে যান। পরে সরকার জুলাইয়ের আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা দেবে বলে ঘোষণা দেয়। এর পর থেকে স্ত্রী উল্লিখিত লোকজন নিয়ে আজিজুলকে অত্যাচার এবং মানসিক নির্যাতন করা শুরু করেন। তাঁর কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করলে শফিকুল ও আশরাফুল তাঁকে রাস্তায় একা পেলে হত্যার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান। ১১ জুন স্ত্রীসহ অন্য লোকজন বাড়িতে গিয়ে আবার ২০ লাখ টাকা দাবি করে আজিজুলকে মারধর করেন।

আজিজুল হক বলেন, ‘চোখের দৃষ্টি চলে গেলে স্ত্রী আমাকে ফেলে বাবার বাড়িতে চলে যায়। সরকার সহায়তা দেবে শুনে এখন টাকার জন্য চাপ প্রয়োগসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছে। তারা যেকোনো মুহূর্তে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। বড় ভাইয়ের বিয়ের সময় টাকা তারা দিয়েছিল। সেই টাকা আমার কাছে ফেরত চাইছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘তার (আজিজুলের) বড় ভাইয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। তখন পরিবার থেকে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছিল। বিয়ের এক বছর পর তার বড় ভাই মারা যায়। এরপর আজিজুলের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। আমার একটি হাতে সমস্যা আছে, আমি প্রতিবন্ধী। অসুস্থ হওয়ার পর স্বামীকে পাঁচ মাস সেবা করেছি। বাবার বাড়ি থেকে চিকিৎসার টাকা নিয়ে দিয়েছি। হাতে সমস্যা থাকায় আর সেবা করতে পারব না বলে স্বামী অসন্তুষ্ট ছিল। যখন বাবার বাড়ি আসি, স্বামী এক দিনও খোঁজখবর নেয়নি। এক স্বামী মারা গেছে, আরেক স্বামীর এমন অবস্থা।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত এস কে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিয়ের সময় সুমাইয়ার বাবার বাড়ি থেকে নগদ ৫ লাখসহ মোট ১৫ লাখ টাকা দিয়েছিল। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আজিজুলের পাশে স্ত্রী ছাড়া কেউ ছিল না। এখন বলছে, স্ত্রীকে সে মৌখিকভাবে তালাক দিয়েছে। তার মধ্যে প্রচুর লোভ। তার অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান জামিল খান বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র আজ জ ল আজ জ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

সাত বছর আগে সাংবাদিক খাসোগি হত্যার পর প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ

যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আগামীকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকের লক্ষ্য তেল ও নিরাপত্তা খাতে দুদেশের বহু দশকের সহযোগিতার সম্পর্ক আরও গভীর করা। একই সঙ্গে বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সম্ভাব্য পারমাণবিক জ্বালানি খাতে সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করা।

২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সাংবাদিক এবং সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর এটাই যুবরাজ সালমানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক করলেন ট্রাম্প১৩ মে ২০২৫

সৌদি আরবের গোয়েন্দারা ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসের ভেতর খাসোগিকে হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ। এ হত্যাকাণ্ড বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। অনেকে অভিযোগ করেছিলেন, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুবরাজ সালমানের হাত রয়েছে।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল, যুবরাজই খাসোগিকে অপহরণ বা হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন।

যুবরাজ সালমান খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তিনি সৌদি আরব সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে এ হত্যার দায় স্বীকার করেছিলেন।

খাসোগি হত্যার পর সাত বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং সবচেয়ে বেশি তেল উত্তোলনকারী দেশ সৌদি আরব নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নিতে চাইছে।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের সঙ্গে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রির চুক্তি’ যুক্তরাষ্ট্রের১৩ মে ২০২৫

ট্রাম্প গত মে মাসে সৌদি আরবে তাঁর সফরের সময় দেওয়া ৬০ হাজার কোটি ডলারের সৌদি বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন।

মে মাসের ওই সফরে ট্রাম্প সৌদি আরবে মানবাধিকার–সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা স্পষ্টভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এবারও তিনি একই পথে হাঁটবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে যুবরাজ মোহাম্মদ আঞ্চলিক অস্থিরতার মধ্যে নিজ দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছেন। একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি (এআই) এবং বেসামরিক খাতে একটি পারমাণবিক প্রকল্প চুক্তির পথে অগ্রসর হতে চাইছেন।

আরও পড়ুনখাসোগি হত্যা সবচেয়ে জঘন্য ধামাচাপার ঘটনা: ট্রাম্প২৪ অক্টোবর ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই এমন একটি সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যেখানে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের পছন্দমতো দামে তেল বিক্রি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে নিরাপত্তা দেবে।

আরও পড়ুনখাসোগিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে: সৌদি আরব২৬ অক্টোবর ২০১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ