Prothomalo:
2025-10-03@06:43:13 GMT

সাত দশকের শিল্পসম্ভার

Published: 28th, June 2025 GMT

টুকরো টুকরো মেঘ ভাসছে আকাশে। নিচে নিবিড় সবুজ গাছপালার সারি। তার ভেতর দিয়ে এঁকে-বেঁকে বয়ে গেছে নদীটি। এক পাশে সিঁড়ি বাঁধানো ঘাট। সেখানে বজরা নোঙর করে আছে। অন্য তীরে নৌকা বেয়ে যাচ্ছে মাঝি। ‘ধানসিঁড়ি নদী’।

কবি জীবনানন্দ দাশ বরিশালের ঝালকাঠির এই ধানসিঁড়ি নদীর সৌন্দর্য চিরকালীন করে রেখেছেন তাঁর কবিতায়। সেই ধানসিঁড়ি নদীকে রঙে রেখায় রঙিন করে তুলে এনেছিলেন বাংলার প্রকৃতির আরেক নান্দনিক রূপকার বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। ঝালকাঠিতে কোনো এক আর্টক্যাম্পে গিয়ে ২০০২ সালে জলরঙে নয়নাভিরাম করে এঁকেছিলেন ধানসিঁড়ি নদীটিকে। সেই ছবি এখন চিত্রকলা বা কবিতার অনুরাগীরা দেখতে পাবেন উত্তরার গ্যালারি কায়ায়।

বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যাত্রার ২১তম বছর পেরিয়ে এল গ্যালারি কায়া। সে উপলক্ষে ‘২১তম বর্ষপূতির প্রদর্শনী’ নামে এক বিশেষ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে গতকাল শুক্রবার। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর ধানসিঁড়ি নদীর ছবিসহ দেশবরেণ্য শিল্পীদের বিভিন্ন মাধ্যমের ৭০টি শিল্পকর্মের এই প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে দেশের চারুকলা চর্চার সাত দশকের প্রতিচ্ছবি। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। প্রদর্শনী খোলা থাকবে ১২ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা অবধি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গ্যালারি কায়ার পরিচালক শিল্পী গৌতম চক্রবর্তী জানালেন, ২০০৪ সালের ২৮ মে গ্যালারি কায়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল। শুরু থেকেই কায়া শুদ্ধ সৃজনশীলতা শিল্পকলার বিভিন্ন মাধ্যমগত উপাদানকে উপস্থাপনের চেষ্টা করে আসছে। এই দুই দশকে কায়া নবীন, প্রবীণ শিল্পীদের একক ও দলীয় শিল্পকর্মের ১৫২টি প্রদর্শনী করেছে। এ ছাড়া দেশে ও দেশের বাইরে ৯টি আর্ট ক্যাম্প, ৩৯টি আর্ট ট্রিপ ও ৭টি কর্মশালা আয়োজন করেছে। ভবিষ্যতেও শিল্পকর্ম নিয়ে কায়া তার কর্মোদ্যোগ অব্যাহত রাখবে।

মতিউর রহমান তাঁর বক্তৃতায় চারুশিল্পীদের প্রতি ব্যক্তিগত অনুরাগ ও শিল্পীদের সান্নিধ্যের স্মৃতিচারণা করেন। তিনি গত শতকের পঞ্চাশের দশকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, রশিদ চৌধুরী, আনোয়ারুল হক, মোহাম্মদ কিবরিয়া, মুর্তজা বশীর, কাজী আবদুল বাসেত, দেবদাস চক্রবর্তী, প্রাণেশ মণ্ডল, নিতুন কুন্ডু, কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান, রফিকুন নবীসহ অগ্রণী শিল্পীদের নেতৃত্বে চারুকলাচর্চা ও বিকাশ, সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শিল্পীদের অংশগ্রহণের বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেন। স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, পুরান ঢাকার নবাবপুর স্কুলের ছাত্র থাকাকালে চারুকলার শিক্ষক হিসেবে শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া, মুর্তজা বশীর ও কাজী আবদুল বাসেতকে পেয়েছিলেন। এই প্রথিতযশা শিল্পী শিক্ষকেরাই শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে রুচি ও সৌন্দর্যের বীজ বপন করেছিলেন। সেই শিল্পচেতনা থেকেই শিল্পকলার প্রতি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর অনুরাগ ও শিল্পকলা সংগ্রহের সূচনা। এই আলোচনায় তিনি দেশের শিল্পকলার বিকাশ, ষাট-সত্তরের দশকে ছাত্র ইউনিয়ন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের কর্মসূচি, প্রগতিশীল আন্দোলনে বিভিন্নভাবে শিল্পীদের যুক্ততার বিভিন্ন ঘটনা স্মৃতির আলোয় তুলে আনেন।

এর পাশাপাশি কলকাতার শিল্পীদের সাহচর্য এবং বিশ্বখ্যাত শিল্পী পাবলো পিকাসোর কাজের কথাও উঠে আসে মতিউর রহমানের আলোচনায়। উপসংহারে তিনি বলেন, প্রথম আলো অতীতের সব সরকারের আমলেই নানামুখী দমন, ভয়ভীতির ভেতর দিয়ে গেছে। এই ভীতি ও চাপ সামলে ওঠার ক্ষেত্রে সাহস ও ধৈর্য ধরতে প্রেরণা দিয়েছে হৃদয়ে থাকা গান, কবিতা, শিল্পকলার প্রতি ভালোবাসা। তিনি বলেন, শিল্প ছাড়া আনন্দ নেই, স্বপ্ন নেই, জীবন নেই। এই শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই চিরতর চলে গেছেন, অনেকে আছেন। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

প্রদর্শনীতে দর্শকেরা শিল্পী কামরুল হাসানের ছাপচিত্র, মোহাম্মদ কিবরিয়ার একটি বড় আকারের বিমূর্ত রীতির লিথোপ্রিন্ট, মুর্তজা বশীরের মহান ভাষা আন্দোলনের সময় করা বিখ্যাত লিনোকাট, ঈদমেলা থেকে ফেরা দুই কিশোর–কিশোরীর ড্রয়িং, কাজী আবদুল বাসেতের সন্তান কোলে মা, হাশেম খানের অ্যাক্রিলিকে আঁকা বিশালাকার বকপাখি, রফিকুন নবীর জলরঙে আঁকা ফুলদানি, চারকোলের করা বনভূমিতে সন্ধ্যা, কাকের ড্রয়িং, দেবদাস চক্রবতীর আঁকা দম্পতির রেখাচিত্র দেখতে পাবেন।

প্রদর্শনীতে ৩৫ জন শিল্পীর শিল্পকর্ম রয়েছে। শিল্পীদের মধ্যে আরও রয়েছেন আবদুশ শাকুর, আবুল বারক আলভী, আহমেদ শামসুদ্দোহা, আলপ্তগীন তুষার, আনিসুজ্জামান, আশরাফুল হক, চন্দ্রশেখর দে, ফরিদা জামান, গৌতম চক্রবর্তী, হামিদুজ্জামান খান, জামাল আহমেদ, কামালউদ্দিন, কামরুজ্জামান সাগর, কনকচাঁপা চাকমা, মাহমুদুল হক, মাকসুদা ইকবাল, মোহাম্মদ ইউনুস, মোহাম্মদ ইকবাল, মোস্তাফিজুল হক, নগরবাসী বর্মণ, রণজিৎ দাস, রতন মজুমদার, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, শাহানুর মামুন, শেখ আফজাল হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য্য ও সোহাগ পারভেজ।

এই শিল্পকর্মগুলো ১৯৫২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ের। এসব কাজে দেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য, ভাষা আন্দোলন, নাচোলের সাঁওতাল আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে মানুষের জীবনসংগ্রাম, প্রেম, সন্তানের প্রতি মায়ের মমতা, ব্যক্তিগত অনুভব শিল্পীরা তুলে ধরেছেন তাঁদের নিজস্ব শৈল্পিক বাকভঙ্গিতে।

ফলে শিল্পকলার সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি গত সাত দশকের দেশের চারুশিল্পের বিকাশের গতিপ্রকৃতির একটা ধারণা পেতে পারেন আগ্রহী দর্শকেরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল পকর ম শ ল পকল র ম হ ম মদ স ন দর য

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়ে নিয়ে যা বললেন পূজা চেরি

শারদীয় দুর্গাপূজা—হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ঢাকের তালে, উলুধ্বনির সুরে, আলোকসজ্জার ঝলকে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল প্রতিটি পূজামণ্ডপ। এই আনন্দে শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও যুক্ত হন। 

গতকাল বিজয়া দশমীর পবিত্র তিথিতে দেবীকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটে। পূজামণ্ডপগুলোতে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছিলেন ভক্তরা। একে অপরের মুখে সিঁদুর মেখে উল্লাসে মাতেন সনাতনীরা। দুর্গোৎসবের আনন্দ ছুঁয়ে গেছে অভিনেত্রী পূজা চেরিকেও। গতকাল সিঁদুর খেলায় অংশ নেন তিনি।  

আরো পড়ুন:

‘সবাই ধরে নেয় আমি ঋষি কাপুরের অবৈধ মেয়ে’

সংসার ভাঙার কারণে স্বামীকে ১১ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে অভিনেত্রীর?

পূজামণ্ডপে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পূজা চেরি। এ সময় জানতে চাওয়া হয়, বিজয়া দশমীর দিনে দেবী দুর্গার কাছে কী চাইলেন? জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমার যে গর্ভধারিণী মা মারা গেছেন সে যেন ভালো থাকেন। যেখানেই থাকেন যেন ভালো থাকেন এটাই চেয়েছি এবং দুর্গা মাকে বলেছি ‘তুমি যেন ভালো থেকো’। কারণ আমরা সবাই চেয়ে বেড়াই কিন্তু মাকে একটু জিজ্ঞেস করি না যে, ‘মা তুমি কেমন আছো?”  

ব্যক্তিগত জীবনে পূজা চেরি এখনো একা। ফলে তার বিয়ে নিয়ে ভক্ত-অনুরাগীদের আগ্রহের শেষ নেই। বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এই অভিনেত্রী বলেন, “এখানে একজন সিঁদুর আমার গালে লাগিয়ে দিচ্ছিল, তখন তারা বলল, ‘প্রার্থনা করি আগামীবার যেন দাদাসহ মণ্ডপে আসতে পারো’।” এ কথা বলে একটু হাসি মুখে পূজা বলেন, “দেখ যাক কী হয়! চিন্তার বিষয় চিন্তা করে দেখি।” 

পূজা চেরি শোবিজ অঙ্গনে যাত্রা শুরু করেছিলেন শিশুশিল্পী হিসেবে। ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে নায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যেই অভিনয় গুণে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন তিনি। 

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ