বাউল শিল্পী আসলাম হোসেন চোখে দেখতে পান না। বাবা অসুস্থ, তাই সংসারের ভার পড়েছে তারই কাঁধে। গান করেই দিন চলে তার। তবে আগের মত এখন আর কেউ বাউল গান শুনতে চান না। তাই গানের আসরও জমে না। অন্ধ বাউল আসলামের আয় উপার্জন বলতে গেলে একেবারেই নেই। একে অন্ধ, তার উপরে পরিবারের চাপ কাঁধে নিয়ে দিশেহারা এই শিল্পী।
কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের বটতৈল গ্রামের আজাদ সর্দারের ছেলে অন্ধ বাউল আসলাম হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে বাবা আজাদ সর্দার শরীরের ব্যথা ও হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছেন। বর্তমানে তিনি কানেও খুব একটা ভালো শুনতে পান না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হারিয়েছেন কাজের সক্ষমতাও। অভাবের সংসারে যেখানে ঠিকমতো খেতেই পান না, সেখানে চিকিৎসা যেনো বিলাসিতা। তাই বিনা চিকিৎসায় পড়ে আছেন তিনি।
সংসারের টুকিটাকি কাজের ফাঁকে প্রতিবেশীদের সাথে প্রতিনিয়ত গানের আসর বসাতো আসলাম। এভাবেই এলাকাবাসী ভালোবেসে তার নাম দিয়েছেন বাউল আসলাম। এখন তিনি এই নামে পরিচিত।
বাউল আসলাম বলেন, “জন্ম থেকেই অন্ধ। অনেক ডাক্তার, কবিরাজ এবং সর্বশেষ খুলনা শিরোমণি চক্ষু হাসপাতালে চোখের অপারেশন করেও দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাইনি। আমি গান শুনতে এবং গাইতে ভালোবাসি।”
দেখতে না পেলেও গান-বাজনার ছন্দের তালে তালে এবং মেধার জোরে দোতারা বাজাতে পারেন আসলাম। এভাবেই গান-বাজনার আসর জমিয়ে মনের শান্তিও মেলে, আবার কিছু উপার্জনও হয়। তা দিয়েই কোনো মতে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে আছেন এই শিল্পী। একবেলা খাচ্ছেন তো আরেক বেলা না খেয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে তিন মাস পর পর আড়াই হাজার টাকা পান। এতে তো জীবন চলে না!
শহর থেকে গ্রাম, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাটে লাঠির সাহায্যে একাই ঘুরে বেড়ান আসলাম। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সংগীত পরিবেশন করে অল্প কিছু রোজগার হয়।
তিনি জানান, তার বাবা অনেক বছর ধরে কোন কাজ কর্ম করতে পারে না। তাকেই চিকিৎসার খরচ চালাতে হয়। তিনি ছাড়া বাবাকে দেখার মত কেউ নেই। অর্থের অভাবে তার পিতার চিকিৎসা এখন বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রতিবেশী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘অন্ধ হয়েই আসলাম জন্ম গ্রহণ করেছে। পরিবার বলতে পিতা ও মাতা ছাড়া সংসারে তেমন কেউ নেই। আগে আসলামের পিতা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় সংসারে হাল ধরেছেন আসলাম। হাট বাজারে গান করেই তার সংসার চলছে। তাকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোছা.
ঢাকা/কাঞ্চন/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সাত বছর আগে সাংবাদিক খাসোগি হত্যার পর প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আগামীকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকের লক্ষ্য তেল ও নিরাপত্তা খাতে দুদেশের বহু দশকের সহযোগিতার সম্পর্ক আরও গভীর করা। একই সঙ্গে বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সম্ভাব্য পারমাণবিক জ্বালানি খাতে সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করা।
২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সাংবাদিক এবং সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর এটাই যুবরাজ সালমানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।
আরও পড়ুনসৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক করলেন ট্রাম্প১৩ মে ২০২৫সৌদি আরবের গোয়েন্দারা ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসের ভেতর খাসোগিকে হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ। এ হত্যাকাণ্ড বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। অনেকে অভিযোগ করেছিলেন, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুবরাজ সালমানের হাত রয়েছে।
পরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল, যুবরাজই খাসোগিকে অপহরণ বা হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন।
যুবরাজ সালমান খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তিনি সৌদি আরব সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে এ হত্যার দায় স্বীকার করেছিলেন।
খাসোগি হত্যার পর সাত বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং সবচেয়ে বেশি তেল উত্তোলনকারী দেশ সৌদি আরব নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নিতে চাইছে।
আরও পড়ুনসৌদি আরবের সঙ্গে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রির চুক্তি’ যুক্তরাষ্ট্রের১৩ মে ২০২৫ট্রাম্প গত মে মাসে সৌদি আরবে তাঁর সফরের সময় দেওয়া ৬০ হাজার কোটি ডলারের সৌদি বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন।
মে মাসের ওই সফরে ট্রাম্প সৌদি আরবে মানবাধিকার–সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা স্পষ্টভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এবারও তিনি একই পথে হাঁটবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে যুবরাজ মোহাম্মদ আঞ্চলিক অস্থিরতার মধ্যে নিজ দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছেন। একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি (এআই) এবং বেসামরিক খাতে একটি পারমাণবিক প্রকল্প চুক্তির পথে অগ্রসর হতে চাইছেন।
আরও পড়ুনখাসোগি হত্যা সবচেয়ে জঘন্য ধামাচাপার ঘটনা: ট্রাম্প২৪ অক্টোবর ২০১৮যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই এমন একটি সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যেখানে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের পছন্দমতো দামে তেল বিক্রি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে নিরাপত্তা দেবে।
আরও পড়ুনখাসোগিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে: সৌদি আরব২৬ অক্টোবর ২০১৮