মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হতে পারে। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে কঙ্গো-রুয়ান্ডা চুক্তি উদযাপনের এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে দুই দফায় গাজায় যুদ্ধবিরতি হলেও তা স্থায়ী হয়নি। ইসরায়েলের অবরোধের মুখে উপত্যাকার প্রায় সব বাসিন্দা সীমাহীন দুর্দশায় জীবনযাপন করছেন।

শনিবার রয়টার্স জানায়, ইসরায়েল ও হামাসকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে চেষ্টা করে যাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর পরই তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি খুব শিগগিরই হবে বলে তাঁর মনে হচ্ছে। হামাস বলছে, তারা যুদ্ধ বন্ধের যে কোনো চুক্তির অধীনে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিয়ে দিতে আগ্রহী। অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, যুদ্ধ তখনই থামবে, যখন হামাস নিরস্ত্র ও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু হামাস অস্ত্র সমর্পণে রাজি নয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তেল আবিবের। জিম্মি হন ২৫০ জনের বেশি। এর পর গাজায় নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে উপত্যকার ৮০ শতাংশের বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়। বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েন প্রায় সব বাসিন্দা। সৃষ্টি হয় ভয়াবহ খাদ্য সংকট। সম্প্রতি ত্রাণকে অস্ত্র বানিয়ে ফিলিস্তিনে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে ইসরায়েল। 

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, শিগগিরই যুদ্ধবিরতি হতে যাচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে মাত্রই কথা হলো। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই একটি যুদ্ধবিরতি পেতে যাচ্ছি বলে আমরা মনে করছি।’ কাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তা জানাননি ট্রাম্প। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর যে প্রায় প্রতিদিনই কথা হতো, তা তিনি আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন।

এ বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের কার্যালয় বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তারা বলেছে, ট্রাম্পের মন্তব্যের বাইরে বলার মতো কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। এর আগে গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি করতে পেরেছিল। অবশ্য ওই চুক্তি বেশি দিন টেকেনি।

গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলজাজিরার বিশ্লেষক ক্রিস ডয়েলি বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে এখনও আমাদের অনেক পথ যেতে হবে।’ আরব-ব্রিটিশ আন্ডার স্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের এ পরিচালক বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্য কীভাবে তিনি ইসরায়েলের জন্য একটি যুদ্ধবিরতি করবেন। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে কেবল হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগই যথেষ্ট নয়।

যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সহায়তা কার্যক্রম মানুষ হত্যা করছে: গুতেরেস

গাজায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একটি সহায়তা কার্যক্রমকে ‘স্বাভাবিকভাবে অনিরাপদ’ বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। রয়টার্স জানায়, সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে সোজাসাপ্টা মূল্যায়নে গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, এটি মানুষ হত্যা করছে। 

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র চায়, জাতিসংঘ যেন নতুন বিতর্কিত এ সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে কাজ করে। কিন্তু জাতিসংঘ এতে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে এর নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। 

সাংবাদিকদের গুতেরেস বলেন, জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন মানবিক প্রচেষ্টা বর্তমানে ‘শ্বাসরুদ্ধ’ অবস্থায় রয়েছে। সহায়তা কর্মীরাও অনাহারে ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ কেবল নিজেদের ও পরিবারের জন্য খাবার আনতে গিয়ে মারা যাচ্ছে। খাদ্য খোঁজার চেষ্টা কখনোই মৃত্যুদণ্ড হতে পারে না।’ গত রোববার জাতিসংঘের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, মার্কিন সমর্থিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে গিয়ে গুলিতে নিহত হচ্ছেন বেশির ভাগ ফিলিস্তিনি।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ও য় ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

হজরত আলী (রা.)-এর ১০টি কালজয়ী উক্তি

ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর খুতবা, পত্র ও উপদেশের একটি বিখ্যাত সংকলন হলো নাহজুল বালাগা বা বাগ্মিতার পথ। এটি একাদশ শতাব্দীতে সাইয়্যেদ শরিফ এটি সংকলন করেন।

গ্রন্থটিতে ২৪১টি খুতবা, ৭৯টি পত্র এবং ৪৮৯টি উপদেশ রয়েছে। গ্রন্থটির সংকলক শিয়া মতাদর্শী বলে পরিচিত হলেও শিয়া-সুন্নি উভয় ধারার আলেমরা এই গ্রন্থের সত্যতা স্বীকার করেন, যদিও কয়েকটি বর্ণনা সূত্র নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

নাহজুল বালাগা ইসলামি সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ এবং আলী (রা.)-এর জীবনাদর্শ ও শিক্ষার অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত। সেখান থেকে তার ১০টি কালজয়ী উক্তি তুলে ধরা হলো।

গ্রন্থটিতে ২৪১টি খুতবা, ৭৯টি পত্র এবং ৪৮৯টি উপদেশ রয়েছে। গ্রন্থটির সংকলক শিয়া মতাদর্শী বলে পরিচিত হলেও শিয়া-সুন্নি উভয় ধারার আলেমরা এই গ্রন্থের সত্যতা স্বীকার করেন।হজরত আলী (রা.)-এর কালজয়ী উক্তি

১. জ্ঞানের মূল্য: ‘জ্ঞানই তোমার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ; এটি কখনো হ্রাস পায় না বরং বিতরণের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ১৯৫)

২. দুনিয়ার সত্যতা: ‘দুনিয়া একটি ক্ষণস্থায়ী ছায়া। এর পেছনে ছুটো না। যা চিরস্থায়ী, তার জন্য প্রস্তুত হও।’ (নাহজুল বালাগা, খুতবা ১০৩)

৩. নীরবতার শক্তি: ‘নীরবতা তোমাকে সম্মান দেয়, আর অপ্রয়োজনীয় কথা তোমার মর্যাদা কেড়ে নেয়।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ২২৪)

৪. ন্যায়বিচারের গুরুত্ব: ‘ন্যায়বিচার একটি সমাজের প্রাণশক্তি; এটি ছাড়া সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়ে।’ (নাহজুল বালাগা, পত্র ৫৩)

আরও পড়ুনইমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কয়েকটি কারণ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এমন সঙ্গী বেছে নাও যে তোমাকে ভালো পথে নিয়ে যায় এবং তোমার ভুল সংশোধন করে।হজর আলী (রা.), নাহজুল বালাগা, উপদেশ ১৬০

৫. অহংকারের ধ্বংস: ‘অহংকার মানুষের হৃদয়কে অন্ধ করে এবং তাকে পতনের দিকে নিয়ে যায়।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ৮৬)

৬. সত্যের পথ: ‘সত্য বলো, এমনকি যদি তা তোমার বিরুদ্ধে যায়। সত্যই তোমার মুক্তির পথ।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ১৪৬)

৭. সঙ্গী নির্বাচন: ‘এমন সঙ্গী বেছে নাও যে তোমাকে ভালো পথে নিয়ে যায় এবং তোমার ভুল সংশোধন করে।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ১৬০)

৮. ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ: ‘ক্রোধ তোমার শত্রু। যে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে নিজেকে জয় করতে পারে।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ১৫৩)

৯. দানের ফজিলত: ‘দান করো, কারণ এটি তোমার সম্পদ কমায় না, বরং তোমার মর্যাদা বাড়ায়।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ২৩৬)

১০. আল্লাহর ওপর ভরসা: ‘আল্লাহর ওপর নির্ভর করো, তিনি তোমার সব সমস্যার  সমাধানকারী। যে তাঁর ওপর ভরসা করে, সে কখনো হতাশ হয় না।’ (নাহজুল বালাগা, খুতবা ১১৪)

 সূত্র: দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন ডটকম

আরও পড়ুননামাজ: দাসের মহিমা০৪ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ