বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারকগুলোর ওপর ধারাবাহিক হামলা ও ভাঙচুর উদার গণতন্ত্র ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তের লক্ষণ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে ৫২ জন নাগরিকের দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিজয় সরণিতে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ ভেঙে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।

আজ শনিবার দেশের শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীসহ ৫২ জন নাগরিক এই বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মরণে নির্মিত ম্যুরাল কিছু দুর্বৃত্ত ভাঙচুর করে। এটা নিছক একটি শিল্পবস্তুর ক্ষতিসাধন নয়। বরং ভাষাশহীদদের প্রতি অবমাননা এবং স্বাধীনতা, ইতিহাস ও সংস্কৃতিবোধের বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি নগ্ন অপতৎপরতা, যা জাতি হিসেবে অত্যন্ত লজ্জার।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রয়াত রফিকুল ইসলাম ছিলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা। তাঁর চিন্তা ও সক্রিয় প্রচেষ্টাতেই ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা আজ বিশ্বজুড়ে মাতৃভাষার প্রতি অঙ্গীকারের প্রতীক।

ম্যুরাল ভাঙার মধ্য দিয়ে এই কর্মবীরের প্রতি অবমাননাকর আচরণ জাতিগত গৌরব, বোধ এবং বিবেককে আহত করেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে নির্মিত প্রতিটি স্মৃতিচিহ্ন আমাদের ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেই প্রতীকের ওপর আঘাত হানা মানে আমাদের অস্তিত্ব ও মানবিক মূল্যবোধে আঘাত হানার শামিল।’

ভাঙচুর রোধে কিংবা পরে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন নীরবতা পালন করছে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক আমাদের অহংকারের প্রতীক, তা রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। সেই দায়িত্বের অংশ হিসেবে আমরা রফিকুল ইসলামের ম্যুরালসহ অন্যান্য ম্যুরাল ও স্মৃতিস্মারক ভাঙার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

রাজধানীর বিজয় সরণিতে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ ভাঙা প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের দৃঢ়মত, জুলাই চেতনাকে ধরে রাখতে এমন প্রতীক গড়ার প্রয়াস রাজধানীর যেকোনো উন্মুক্ত স্থানে নেওয়া যেত। সে জন্য পূর্বস্থিত জাতীয় ঐতিহ্যের স্মৃতিস্মারক ভেঙে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক সৃষ্টির কোনো প্রয়োজন ছিল না।’

বিবৃতিদাতারা হলেন আবুল মোমেন, এম এম আকাশ, নুরুন নবী, ইসহাক খান, জাকির তালুকদার, সালাহউদ্দিন বাদল, অজয় দাশগুপ্ত, তাজুল ইমাম, ফরিদুর রহমান, মকবুল হোসেন, শাহেদ কায়েস, সরকার আবদুল মান্নান, সন্তোষ রায়, শওগাত আলী সাগর, রফিকুর রশীদ, ঝর্ণা রহমান, সেজান মাহমুদ, আতিকুল হক, মুকিদ চৌধুরী, হোসেন দেলওয়ার, মোজাম্মেল হক নিয়োগী, গোলাম মোর্শেদ, মোহাম্মদ আনওয়ারুল কবীর, হামীম কামরুল হক, শামীম আশরাফ, স্বকৃত নোমান, আরিফ নজরুল, মোহাম্মদ মাহমুদ হাসান, মনি হায়দার, সরদার ফারুক, ফজলুল কবিরী, আবদুল্লাহ আল ইমরান, শফিক হাসান, আলমগীর মাসুদ, মাসুদ পথিক, আরিফুর রহমান, মেহেদী হাসান, আবদুল্লাহ আল মামুন, শামস সাইদ, বিনয় কর্মকার, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, মিলন সব্যসাচী, এ কে এম মাহতাব ঊদ্দীন, গিরীশ গৈরিক, সমর চক্রবর্তী, গোলাম মুজতবা মর্তুজা, নিশাত বিজয়, জহিরুল হক, নাদিম ইকবাল, অনিরুদ্ধ দিলওয়ার, রাফায়েত চৌধুরী ও রাশিদা স্বরলিপি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম রক আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

সাত বছর আগে সাংবাদিক খাসোগি হত্যার পর প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ

যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আগামীকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকের লক্ষ্য তেল ও নিরাপত্তা খাতে দুদেশের বহু দশকের সহযোগিতার সম্পর্ক আরও গভীর করা। একই সঙ্গে বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সম্ভাব্য পারমাণবিক জ্বালানি খাতে সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করা।

২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সাংবাদিক এবং সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর এটাই যুবরাজ সালমানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক করলেন ট্রাম্প১৩ মে ২০২৫

সৌদি আরবের গোয়েন্দারা ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসের ভেতর খাসোগিকে হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ। এ হত্যাকাণ্ড বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। অনেকে অভিযোগ করেছিলেন, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুবরাজ সালমানের হাত রয়েছে।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল, যুবরাজই খাসোগিকে অপহরণ বা হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন।

যুবরাজ সালমান খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তিনি সৌদি আরব সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে এ হত্যার দায় স্বীকার করেছিলেন।

খাসোগি হত্যার পর সাত বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং সবচেয়ে বেশি তেল উত্তোলনকারী দেশ সৌদি আরব নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নিতে চাইছে।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের সঙ্গে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রির চুক্তি’ যুক্তরাষ্ট্রের১৩ মে ২০২৫

ট্রাম্প গত মে মাসে সৌদি আরবে তাঁর সফরের সময় দেওয়া ৬০ হাজার কোটি ডলারের সৌদি বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন।

মে মাসের ওই সফরে ট্রাম্প সৌদি আরবে মানবাধিকার–সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা স্পষ্টভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এবারও তিনি একই পথে হাঁটবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে যুবরাজ মোহাম্মদ আঞ্চলিক অস্থিরতার মধ্যে নিজ দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছেন। একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি (এআই) এবং বেসামরিক খাতে একটি পারমাণবিক প্রকল্প চুক্তির পথে অগ্রসর হতে চাইছেন।

আরও পড়ুনখাসোগি হত্যা সবচেয়ে জঘন্য ধামাচাপার ঘটনা: ট্রাম্প২৪ অক্টোবর ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই এমন একটি সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যেখানে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের পছন্দমতো দামে তেল বিক্রি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে নিরাপত্তা দেবে।

আরও পড়ুনখাসোগিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে: সৌদি আরব২৬ অক্টোবর ২০১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ