নারী ও শিশু বিশেষত, তাদের প্রতি অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি, নানা ধরনের পর্নোগ্রাফিক ছবি ছাপানো এবং সেগুলো দিয়ে ভিডিও তৈরি করে পোস্ট করা, ব্ল্যাকমেইল করা– এগুলো মোটামুটি পুরোনো রোগে পরিণত হয়েছে। যদিও আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়।
তবুও বিভিন্নভাবে এর মাধ্যমে নারী ভয়াবহ সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
অন্যান্য সম্পর্কের মতো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও ঘটছে এগুলো। স্ত্রীকে হয়তো স্বামী ক্রমাগত ভয় দেখাচ্ছেন– তাঁর সঙ্গে না থাকলে বা তাঁর কথা না শুনলে নিজেদের অন্তরঙ্গ ছবিগুলো প্রকাশ করে দেবেন। কিংবা প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতার কারণে এগুলো একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আমাদের পূর্ববর্তী কোনো আইনে নারী ও শিশুকে এ ধরনের নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কোনো বিধান ছিল না। ২০২৩ সালের সাইবার সুরক্ষা আইন অধ্যাদেশেও বিষয়টি খুব পরিষ্কার না। যৌন হয়রানি, ব্ল্যাকমেইলিংসহ বিভিন্ন হয়রানিকে একসঙ্গে করে একটি ধারাতে যুক্ত করা হয়েছে। এটি স্বীকৃতির দিক থেকে খুব ছোট আকারে হলেও একটি পথ উন্মুক্ত হলো। এ আইনে অন্যায়কারীকে আগে থেকেই চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে ভার্চুয়াল পৃথিবীতে এই কাজ করা বেশ জটিল এবং ভার্চুয়াল জগতের অপরাধগুলো অত্যন্ত আকস্মিকভাবেই হয়ে থাকে। কে, কার সঙ্গে ব্যক্তিগত মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করছে এবং সেই যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কে, কার সঙ্গে কেমন সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে– সেটি কোনোভাবেই মনিটর করা সম্ভব নয়। যদি তা মনিটর করার জন্য আইন করা হয়, সেটি আবার ব্যক্তিগত জায়গা লঙ্ঘন করবে।
ফলে অনলাইন নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়ার পরিবর্তে আমাদের অনলাইন সচেতনতা বাড়াতে হবে। ভার্চুয়াল জগৎ ব্যবহার করতে গিয়ে নিপীড়িত বা বিপদের মধ্যে পড়তে হতে পারে, সে জন্য নয় শুধু; সারা পৃথিবীর বৃহৎ অর্থনৈতিক লেনদেন ও ব্যক্তিগত তথ্যের ভান্ডার জমা থাকে এই ভার্চুয়াল জগতে। পশ্চিমা দেশগুলোতে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক অপরাধ ঘটে। এসব অপরাধ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্যও দরকার সচেতনতা বাড়ানো।
ব্যক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ ছাড়াও অনলাইনে যে কোনো ধরনের তথ্য চুরি, তা ফাঁস করা কিংবা অন্য কাজে ব্যবহার করা– এগুলো সবচেয়ে
বড় বিপদের জায়গা।
আসলে কীভাবে সচেতন ও সতর্কতার সঙ্গে অনলাইন ব্যবহার করা যায়, নিজের ক্ষতি যাতে না হয় কিংবা প্রলোভনের ফাঁদে না পড়া– রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এই শিক্ষাগুলোর সঙ্গে প্রচার-প্রচারণাও বাড়ানো দরকার। তাহলে তরুণ প্রজন্মও বুঝতে পারবে যে কোনটা আসল বিষয়।
এর মধ্যেও যে সম্পর্কে বন্ধন আসলেই তৈরি হচ্ছে না, তাও কিন্তু না। আমি পেশাগত জীবনে বেশ কয়েকজনকে পেয়েছি, যাদের পরিচয় ফেসবুকের মাধ্যমে। পরবর্তী সময়ে তাদের প্রণয় ও পরিণতি ঘটেছে। তাই অনলাইনের বিপদ কী, সেসব নিয়ে শিক্ষাদীক্ষা প্রচার-প্রচারণা যেমন দরকার, তেমনি শিক্ষা কার্যক্রমের মাঝেও এ বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি দরকার। প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হতে পারে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাদা করে এসব বিষয়ে কথা বলা এবং প্রচার-প্রচারণা চালানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ দায়িত্ব নিতে পারে। তাদের অবকাঠামো ও লোকবল সবকিছুই আছে। তাদের অতিরিক্ত একটি দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। যখনই এসব ইস্যু তৈরি হবে, তখন এবং তার আগে থেকেই মানুষের সঙ্গে হৃদ্যতা বাড়িয়ে সতর্ক করা। যখনই কেউ একজন বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে, কোনোকিছু না জানিয়ে বা তাকে কেউ অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে– সে তথ্য জানার পর দ্রুততর সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা। ভিকটিমের অ্যাকাউন্ট অ্যাকসেস করার মাধ্যমে মূল ঘটনা বের করা। অ্যাকাউন্ট অ্যাকসেস বর্তমানে খুব কঠিন বিষয় না। তাহলে পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপের দিকে যাওয়ার আগে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করি। v
গ্রন্থনা : দ্রোহী তারা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অনল ইন ব যবহ র অপর ধ ধরন র দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরো পড়ুন:
টানা বৃষ্টিতে সড়কজুড়ে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী
১০৬ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড, ঘনীভূত হতে পারে লঘুচাপ
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে স্থল গভীর নিম্নচাপটি উপকূলীয় ওড়িশা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সমুদ্রে অবস্থানরত মাছ ধরা ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে আজ দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে, আজ ভোর ৬টার দিকে রাজধানীতে বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় বৃষ্টির পরিমাণ কমে যায়। ঢাকার আকাশ মেঘে ঢেকে আছে।
ঢাকা/মাসুদ