Samakal:
2025-11-17@11:18:01 GMT

কমিশনের সতর্কতা কাম্য

Published: 28th, June 2025 GMT

কমিশনের সতর্কতা কাম্য

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সন্মুখে রাখিয়া ইসি তথা নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাইবার জন্য যেইভাবে নামসর্বস্ব দলগুলি ভিড় জমাইয়াছে তাহা আমাদের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই পুনরায় উন্মোচিত করিয়াছে। শনিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত রবিবার নিবন্ধনের শেষ দিবস পর্যন্ত মোট ১৪৭টি রাজনৈতিক দল আবেদন করিয়াছে, যাহাদের সিংহভাগই নামসর্বস্ব, কোনো কোনোটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নেতাদের বাসগৃহ, হোটেল-রেস্তোরাঁ, ট্রাভেল এজেন্সি কিংবা ভাড়াকৃত ছোট্ট কক্ষ। এমনকি ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করিয়াও অনেকে নিবন্ধনের আবেদন করিয়াছে। বাহারি নামের কোনো দল নিছক স্বামী-স্ত্রী মিলিয়া বানাইয়াছেন; যেইখানে তৃতীয় নেতা বা কর্মী নাই। নিবন্ধনের জন্য আবেদনের এহেন চিত্রটি প্রমাণ করে যে, রাজনীতি এখনও দেশের একাংশের নিকট নিছক ব্যবসায়। রাজনীতি যেই অধিকাংশ জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রের ন্যায় জটিল প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দক্ষতা অর্জনের বিষয়, ইহা নিবন্ধনপ্রত্যাশী কতিপয় দলের প্রতি তাকাইলে বোঝা যায় না। এই কারণেই উক্ত নিবন্ধনপ্রত্যাশীর হিড়িককে আমরা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার দুর্বলতার প্রকাশ বলিয়াছি।

স্মরণ করা যাইতে পারে, অতীতে সামরিক শাসনকালে যখন নির্বাচন বা অন্য কোনো উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত দলগুলির দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হইত তখনই এই ধরনের অভিনব দল ভেকছত্রের ন্যায় গজাইয়া উঠিত। সেই সময় বিশেষত নির্বাচনকালে এই সকল দলের নেতারা বিশেষত সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নিকট হইতে বেশ কদর পাইত। ২০০৭-০৮ সালের বহুল আলোচিত এক-এগারোর 
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেও একই চিত্র দেখা গিয়াছিল। ২০০৮ সালে প্রণীত গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নিয়ম চালু হইলে ১৯০টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। দুর্ভাগ্যবশত, তখন এমন অনেক দলকেই নিবন্ধন প্রদান করা হয় যাহাদের আইনে বর্ণিত ন্যূনতম শর্ত পূরণেরও যোগ্যতা ছিল না। জনপরিসর তখন এই আলোচনায় বেশ সরগরম ছিল যে, তৎকালীন অনির্বাচিত সরকারের বিশেষ উদ্দেশ্যেই এহেন কাণ্ড ঘটিয়াছিল। 

বিগত সরকারের সময় বিশেষত সর্বশেষ তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনেও অনুরূপ চিত্র পরিলক্ষিত হইয়াছে। ফলে এখন এই কথা উঠিয়াছে যে, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নির্বাচনে বিশেষ কোনো সুবিধার আশায় ওই বিপুলসংখ্যক রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়াছে কিনা সেই সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ইহা সত্য, এইবার ইসির নিবন্ধন পাইবার শর্তগুলি বিশেষত ২০০৮ সাল অপেক্ষা অধিক শক্ত। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, নিবন্ধনের যোগ্য দলের সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও কেন্দ্রীয় কমিটি থাকিতে হইবে। এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলা ও ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকায় অফিসসহ প্রতিটিতে ২০০ জন ভোটার থাকিতে হইবে। কিন্তু নিয়মগুলি যদি কাগজেই থাকিয়া যায়, বাস্তবে যথাযথভাবে প্রয়োগ না করা হয় তাহা হইলে সকলই অতীতের ন্যায় অর্থহীন হইয়া পড়িবে।
নিঃসন্দেহে, রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ ইসির নিবন্ধনের উদ্দেশ্য হইতে পারে না। তবে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রয়োজন অস্বীকার করা যাইবে না। বিশেষত নির্বাচনী রাজনীতিকে নিয়মকানুনের মধ্যে রাখিতে হইলে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার কোনো বিকল্প নাই। সেই লক্ষ্যে ইসিকে নিবন্ধিত দলগুলির নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনাও নিশ্চিত করিতে হইবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের সহিত পরামর্শক্রমে নিবন্ধিত দলের জন্য আরও কিছু নিয়ম চালু করা যাইতে পারে। জাতীয় দলের স্বীকৃতি ধরিয়া রাখিবার জন্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নির্দিষ্টসংখ্যক ভোট প্রাপ্তির বিধান বহুদিন যাবৎ চালু রহিয়াছে। আমাদের দেশেও অনুরূপ নিয়ম করা যাইতে পারে। সর্বোপরি, রাজনীতিতে জনসমর্থনই যেহেতু সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্রকৃত কোনো রাজনৈতিক দলেরই জন্য সেই পরীক্ষা এড়াইবার সুযোগ থাকিতে পারে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র জন র জন য অন য য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাত বছর আগে সাংবাদিক খাসোগি হত্যার পর প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ

যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আগামীকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকের লক্ষ্য তেল ও নিরাপত্তা খাতে দুদেশের বহু দশকের সহযোগিতার সম্পর্ক আরও গভীর করা। একই সঙ্গে বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সম্ভাব্য পারমাণবিক জ্বালানি খাতে সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করা।

২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সাংবাদিক এবং সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর এটাই যুবরাজ সালমানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে বৈঠক করলেন ট্রাম্প১৩ মে ২০২৫

সৌদি আরবের গোয়েন্দারা ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসের ভেতর খাসোগিকে হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ। এ হত্যাকাণ্ড বিশ্বজুড়ে তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। অনেকে অভিযোগ করেছিলেন, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুবরাজ সালমানের হাত রয়েছে।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল, যুবরাজই খাসোগিকে অপহরণ বা হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন।

যুবরাজ সালমান খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তিনি সৌদি আরব সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে এ হত্যার দায় স্বীকার করেছিলেন।

খাসোগি হত্যার পর সাত বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং সবচেয়ে বেশি তেল উত্তোলনকারী দেশ সৌদি আরব নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নতুন করে এগিয়ে নিতে চাইছে।

আরও পড়ুনসৌদি আরবের সঙ্গে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রির চুক্তি’ যুক্তরাষ্ট্রের১৩ মে ২০২৫

ট্রাম্প গত মে মাসে সৌদি আরবে তাঁর সফরের সময় দেওয়া ৬০ হাজার কোটি ডলারের সৌদি বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন।

মে মাসের ওই সফরে ট্রাম্প সৌদি আরবে মানবাধিকার–সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা স্পষ্টভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এবারও তিনি একই পথে হাঁটবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে যুবরাজ মোহাম্মদ আঞ্চলিক অস্থিরতার মধ্যে নিজ দেশের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছেন। একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি (এআই) এবং বেসামরিক খাতে একটি পারমাণবিক প্রকল্প চুক্তির পথে অগ্রসর হতে চাইছেন।

আরও পড়ুনখাসোগি হত্যা সবচেয়ে জঘন্য ধামাচাপার ঘটনা: ট্রাম্প২৪ অক্টোবর ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই এমন একটি সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যেখানে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের পছন্দমতো দামে তেল বিক্রি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে নিরাপত্তা দেবে।

আরও পড়ুনখাসোগিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে: সৌদি আরব২৬ অক্টোবর ২০১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ