মুরাদনগরে দরজা ভেঙে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ৫
Published: 29th, June 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ রোববার সকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান।
এই ঘটনায় গত শুক্রবার দুপুরে মুরাদনগর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে আজ ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, মো.
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে আসেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ফজর আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তি তাঁর বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করেন।
ওই নারীর পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে অনেক শব্দ হচ্ছিল। আমি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে আসি। লোকজন গিয়ে দেখেন দরজা ভাঙা। পরে আমরা ওই নারীকে উদ্ধার করি। এ সময় কিছু লোক তাঁকে মারধর ও ভিডিও করে। পরে তাঁরা বুঝতে পারেন, ওই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তখন লোকজন ফজর আলীকে মারধর করেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’ ওই হাসপাতাল থেকে ফজর আলী পালিয়ে যান। পরে আজ তাঁকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আরও পড়ুনমুরাদনগরে দরজা ভেঙে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, থানায় মামলা৮ ঘণ্টা আগেএ ঘটনার একটি ভিডিও গতকাল শনিবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী প্রথমে থানায় অভিযোগ করেননি। ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার পর পুলিশ বিষয়টি জানতে পারে। পরে তিনি থানায় মামলা করেন। ভুক্তভোগী নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ম র দনগর ওই ন র
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারী হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক, হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন গ্রামের নারীরা। গ্রেপ্তার আতঙ্কে এক মাসের বেশি সময় ধরে কড়ইবাড়ি গ্রাম পুরুষশূন্য বলে দাবি করেছেন মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শতাধিক নারী। এ সময় তাঁরা দুই সন্তানসহ নারী হত্যাকে ‘গণপিটুনি’ ও নিহত রোকসানা বেগম ওরফে রুবিকে ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ বলে দাবি করেছেন।
সোমবার সকালে কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের কড়ইবাড়ি এলাকায় এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন গ্রামের নারীরা। তাঁদের অভিযোগ, গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত না হলেও তাঁদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হয়রানি করা হচ্ছে। এর আগে ৫ আগস্ট একই দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন গ্রামের নারীরা।
গত ৩ জুলাই সকালে উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে মব সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটে। তাঁরা হলেন কড়ইবাড়ি গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার (২৯)। পরদিন ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০–২৫ জনকে আসামি করে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলা করেন রোকসানা বেগমের বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার। মামলার প্রধান আসামি আকুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ। এর মধ্যে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের এক মাস আট দিন পার হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা সায়েরা বানু বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই একটি পক্ষ এখানে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। গ্রামের পুরুষেরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ফিরছেন না। এতে পুরো গ্রাম এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। ঘটনার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরীহ গ্রামবাসীকে হয়রানি করছে। আমরা এই অবস্থার অবসান চাই। নিরীহ মানুষের হয়রানি বন্ধ হোক।’
কড়ইবাড়ি গ্রামের রুমা বেগম বলেন, ‘এক মাসের বেশি সময় ধরে পুরুষেরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। এতে অর্থকষ্টে পড়েছি আমরা। শিশুসন্তানদের নিয়ে অনেকটাই মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক। নিরপরাধ মানুষেরা গ্রামে ফিরে আসুক। আমাদের প্রতিটি দিনই এখন আতঙ্কে কাটে।’
গ্রামবাসীর নিরাপত্তাহীনতা প্রসঙ্গে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের মামলাটি বর্তমানে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। এলাকায় শান্তি–শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রতি রাতেই কড়ইবাড়ি এলাকাসহ আশপাশের গ্রামে পুলিশের চারটি টহল দল কাজ করছে। এ ছাড়া নিরপরাধ কোনো মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। আমরা পুলিশের পোশাক পরেই ডিউটিতে বের হই। তবে সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য কোনো সংস্থার লোকজন আসেন কি না, সেটি আমার জানা নেই।’
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘নিরীহ একজন মানুষকেও হয়রানি করা হয়নি। আমরা শুরু থেকেই মামলাটি নিয়ে সতর্ক। গ্রামবাসীর আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। যাঁরা এ ঘটনায় জড়িত নন, তাঁরা গ্রামে ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন। ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’