তিনজন এসেছিলেন চিকিৎসা করাতে, হোটেলে মিলল লাশ
Published: 30th, June 2025 GMT
সৌদি আরব প্রবাসী মনির হোসেন (৪৮) গত ঈদুল আজহার আগে দেশে আসেন। চার-পাঁচ দিন পরই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু যাওয়ার আগে ১৮ বছর বয়সী অসুস্থ ছেলে নাঈম হোসেনের চিকিৎসা করাতে ঢাকায় আসেন। গত শনিবার লক্ষ্মীপুর থেকে স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না (৪০) ও ছেলেকে নিয়ে মগবাজার মোড়সংলগ্ন একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। ওই হোটেল থেকে গতকাল রোববার মনির দম্পতি ও তাদের ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। একই পরিবারের এই তিনজনের মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের।
পুলিশ বলছে, মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে হোটেল কক্ষে নিয়ে খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। ওই খাবার কিনে দিয়েছিলেন মনির হোসেনের ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদের বাড়ির কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলাম। তাকে ও তার মেয়েকে রমনা থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
স্বজন জানান, মনিরের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামে। ৩০ বছর আগে তিনি সৌদি আরবে যান। সেখানে ঠিকাদারি করতেন। দেশেও রয়েছে পরিবহন ব্যবসা। এ ছাড়া গ্রামের বাড়িতে মার্কেটসহ রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। তিন ছেলেকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। বড় ছেলে নাঈম জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। মেজো ও ছোট ছেলেকে বাড়িতে দাদা-দাদির কাছে রেখে ঢাকায় আসেন তারা।
মনিরের তিন ভাইও প্রবাসে থাকেন। তাঁর কেরানীগঞ্জে আট বছর আগে তৈরি করা বহুতল ভবন রয়েছে। সেখানকার ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এগুলোই দেখাশোনা করেন রফিকুল।
মনিরের ফুফাতো ভাই সাখাওয়াত হোসেন জানান, প্রতিবছর একবার মনির দেশে আসতেন। মাসখানেক থাকার পর ফিরে যেতেন। এবার ঈদুল আজহার আগে তিনি দেশে আসেন। চার-পাঁচ দিন পর ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। তাঁর অসুস্থ ছেলেকে ইস্কাটন এলাকার একজন চিকিৎসকের কাছে দেখাতেন। যেহেতু তিনি সৌদি চলে যাবেন, তাই শনিবার গ্রামের বাড়ি থেকে স্ত্রীসহ ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। ওই দিন চিকিৎসকের কাছে সিরিয়াল না পেয়ে তারা হোটেলে ওঠেন।
তিনি আরও জানান, খাবার খাওয়ার পর তিনজনের মৃত্যু রহস্যজনক। কেউ পরিকল্পিতভাবে খাবারের সঙ্গে বিষজাতীয় কিছু খাইয়ে তাদের হত্যা করতে পারে। মনির এলাকায় দানশীল এবং গরিবের বন্ধু হিসেবে পরিচিত।
সুইট স্লিপ আবাসিক হোটেলটির সহকারী ম্যানেজার আনারুল ইসলাম জানান, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মনির হোসেন ও তাঁর কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলাম হোটেলে আসেন। রফিকুলের নামে ১০৩ নম্বর কক্ষটি ভাড়া নেন। এর পর তারা চলে যান। আনুমানিক ১০-১২ মিনিট পর মনির, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে আসেন। সঙ্গে কেয়ারটেকারও ছিলেন। রাতে রফিকুল বাইরের রেস্তোরাঁ থেকে তাদের খাবার কিনে আনেন। তবে রফিকুল রাতে কখন চলে যান, বলতে পারেন না বলে জানান তিনি।
সহকারী ম্যানেজার বলেন, সকালে রফিকুল ও তাঁর মেয়ে হোটেলে আসেন। এর পর বেলা ১১টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় মনিরের স্ত্রী স্বপ্নাকে আদ্-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন জানতে পারি, হোটেল কক্ষে তারা অসুস্থ হয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রফিকুল ও তাঁর মেয়ে ফিরে এসে অসুস্থ অবস্থায় মনিরকে একই হাসপাতালে নিয়ে যান। এর ঘণ্টাখানেক পর মনিরের ছেলেকে অচেতন অবস্থায় ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, কক্ষটি এক দিনের জন্য ভাড়া করা হয়েছিল। তবে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রফিকুলের মেয়ে বলেন, আরও এক দিন কক্ষটি ভাড়া নেওয়া হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, স্বপ্না ও তাঁর ছেলেকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। মনিরকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আদ্-দ্বীন হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আলমগীর হোসেন বলেন, মনিরকে যখন হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তখন কোনো রকম তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস চলছিল। তবে নড়াচড়া করছিলেন না। দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া হয়। এর কয়েক মিনিট পরই তাঁর মৃত্যু হয়।
পুলিশ, আবাসিক হোটেলের কর্মচারী ও স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেয়ারটেকার রফিকুল স্বজন ও পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, গতকাল সকালে মনির তাঁকে ফোন করে জানান, স্ত্রী, সন্তান ও তিনি রাতে খাবার খাওয়ার পর খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রাতে সবাই বমি করেছেন। এর পরই রফিকুল কেরানীগঞ্জ থেকে হোটেলে আসেন এবং ফার্মেসি থেকে বমির ওষুধ কিনে দেন। পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান।
মরদেহ আদ্-দ্বীন হাসপাতালে রাখা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ইউনিট হাসপাতাল ও হোটেল কক্ষ থেকে আলামত সংগ্রহ করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, খাবার খেয়ে শনিবার রাতে তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোববার তাদের মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের আগে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই কক্ষে কারা যাতায়াত করেছে, তা দেখা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় দেহলা গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা গ্রামের বাড়িতে ভিড় করছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবস থ য় মন র র র মন র ত নজন স বজন
এছাড়াও পড়ুন:
‘স্ট্রিট ফুডের’ দোকানের চাপে ছোট হয়ে আসছে খেলার মাঠ
মাগুরা পৌরসভার নিজনান্দুয়ালী গ্রামের তরুণ রিফাত হোসেন প্রায় প্রতিদিন বিকেলে শহরের নোমানী ময়দানে ফুটবল খেলেন। তাঁর মতো অনেক তরুণের শৈশব-কৈশোরের বিকেল কেটেছে এই মাঠে। তবে এখন সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ। কারণ, মাঠে দোকানপাট বসতে থাকায় ক্রমেই খেলার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে।
শহরের একটি কলেজের স্নাতকে পড়া মো. রিফাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে নিয়মিত সভা-সমাবেশের জন্য গর্ত খোঁড়া হয়। সেই সমস্যার মধ্যেও এখানে খেলাধুলা চলে। তবে গত কয়েক মাসে এখানে দোকান বসে যাওয়ায় মাঠ ছোট হয়েছে। ফলে খেলাধুলায় বিঘ্ন ঘটছে। এ ছাড়া এখানে প্রতিদিন ড্রাইভিং শেখানো হয়। এতে মাঠের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। মাঠে এখন ঘাস নেই বললেই চলে। প্রায়ই খেলোয়াড়দের ইনজুরিতে পড়তে হয়।’
মাগুরা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নোমানী ময়দান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। বহু বছর ধরে শহরের বাসিন্দাদের খেলার মাঠ ও বিনোদনের একমাত্র উন্মুক্ত স্থান হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ মাঠেই প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মাঠটি ব্যবহৃত হয়। শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ নির্দিষ্ট সময় ছাড়া বন্ধ থাকা বা খেলার অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় খেলাধুলার জন্য নোমানী ময়দানের ওপর নির্ভরশীল শিশু ও তরুণদের একটি বড় অংশ।
খেলোয়াড় ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের আগস্টে সরকার পতনের পর শহরের যানজট কমাতে সড়কের পাশে বসা অস্থায়ী দোকানগুলোকে নোমানী ময়দান–সংলগ্ন সেগুনবাগিচা সড়কের পাশে বসার নির্দেশনা দেয় পৌর প্রশাসন। এর পর থেকে ওই সড়কের পাশ ছাড়িয়ে নোমানী ময়দানের একটি অংশ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভের চারপাশে বসতে শুরু করে।
গত শনিবার নোমানী ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশে অন্তত ৫২টি অস্থায়ী দোকান বসেছে। এর মধ্যে ৪৫টির বেশি চালু রয়েছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে প্রায় রাত ১২টা পর্যন্ত এসব দোকান চালু থাকে।
নোমানী ময়দানের আশপাশে অন্তত ৫২টি অস্থায়ী দোকান বসেছে। এতে বিঘিন্ন হচ্ছে খেলাধূলার পরিবেশ। গত শনিবার বিকেলের চিত্র