সৌদি আরব প্রবাসী মনির হোসেন (৪৮) গত ঈদুল আজহার আগে দেশে আসেন। চার-পাঁচ দিন পরই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু যাওয়ার আগে ১৮ বছর বয়সী অসুস্থ ছেলে নাঈম হোসেনের চিকিৎসা করাতে ঢাকায় আসেন। গত শনিবার লক্ষ্মীপুর থেকে স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না (৪০) ও ছেলেকে নিয়ে মগবাজার মোড়সংলগ্ন একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। ওই হোটেল থেকে গতকাল রোববার মনির দম্পতি ও তাদের ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। একই পরিবারের এই তিনজনের মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের। 

পুলিশ বলছে, মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে হোটেল কক্ষে নিয়ে খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। ওই খাবার কিনে দিয়েছিলেন মনির হোসেনের ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদের বাড়ির কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলাম। তাকে ও তার মেয়েকে রমনা থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 
স্বজন জানান, মনিরের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামে। ৩০ বছর আগে তিনি সৌদি আরবে যান। সেখানে ঠিকাদারি করতেন। দেশেও রয়েছে পরিবহন ব্যবসা। এ ছাড়া গ্রামের বাড়িতে মার্কেটসহ রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। তিন ছেলেকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। বড় ছেলে নাঈম জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। মেজো ও ছোট ছেলেকে বাড়িতে দাদা-দাদির কাছে রেখে ঢাকায় আসেন তারা। 

মনিরের তিন ভাইও প্রবাসে থাকেন। তাঁর কেরানীগঞ্জে আট বছর আগে তৈরি করা বহুতল ভবন রয়েছে। সেখানকার ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এগুলোই দেখাশোনা করেন রফিকুল।

মনিরের ফুফাতো ভাই সাখাওয়াত হোসেন জানান, প্রতিবছর একবার মনির দেশে আসতেন। মাসখানেক থাকার পর ফিরে যেতেন। এবার ঈদুল আজহার আগে তিনি দেশে আসেন। চার-পাঁচ দিন পর ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। তাঁর অসুস্থ ছেলেকে ইস্কাটন এলাকার একজন চিকিৎসকের কাছে দেখাতেন। যেহেতু তিনি সৌদি চলে যাবেন, তাই শনিবার গ্রামের বাড়ি থেকে স্ত্রীসহ ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। ওই দিন চিকিৎসকের কাছে সিরিয়াল না পেয়ে তারা হোটেলে ওঠেন।

তিনি আরও জানান, খাবার খাওয়ার পর তিনজনের মৃত্যু রহস্যজনক। কেউ পরিকল্পিতভাবে খাবারের সঙ্গে বিষজাতীয় কিছু খাইয়ে তাদের হত্যা করতে পারে। মনির এলাকায় দানশীল এবং গরিবের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। 

সুইট স্লিপ আবাসিক হোটেলটির সহকারী ম্যানেজার আনারুল ইসলাম জানান, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মনির হোসেন ও তাঁর কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলাম হোটেলে আসেন। রফিকুলের নামে ১০৩ নম্বর কক্ষটি ভাড়া নেন। এর পর তারা চলে যান। আনুমানিক ১০-১২ মিনিট পর মনির, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে আসেন। সঙ্গে কেয়ারটেকারও ছিলেন। রাতে রফিকুল বাইরের রেস্তোরাঁ থেকে তাদের খাবার কিনে আনেন। তবে রফিকুল রাতে কখন চলে যান, বলতে পারেন না বলে জানান তিনি। 

সহকারী ম্যানেজার বলেন, সকালে রফিকুল ও তাঁর মেয়ে হোটেলে আসেন। এর পর বেলা ১১টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় মনিরের স্ত্রী স্বপ্নাকে আদ্-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন জানতে পারি, হোটেল কক্ষে তারা অসুস্থ হয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রফিকুল ও তাঁর মেয়ে ফিরে এসে অসুস্থ অবস্থায় মনিরকে একই হাসপাতালে নিয়ে যান। এর ঘণ্টাখানেক পর মনিরের ছেলেকে অচেতন অবস্থায় ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, কক্ষটি এক দিনের জন্য ভাড়া করা হয়েছিল। তবে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রফিকুলের মেয়ে বলেন, আরও এক দিন কক্ষটি ভাড়া নেওয়া হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, স্বপ্না ও তাঁর ছেলেকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। মনিরকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আদ্-দ্বীন হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আলমগীর হোসেন বলেন, মনিরকে যখন হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তখন কোনো রকম তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস চলছিল। তবে নড়াচড়া করছিলেন না। দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া হয়। এর কয়েক মিনিট পরই তাঁর মৃত্যু হয়।  

পুলিশ, আবাসিক হোটেলের কর্মচারী ও স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেয়ারটেকার রফিকুল স্বজন ও পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, গতকাল সকালে মনির তাঁকে ফোন করে জানান, স্ত্রী, সন্তান ও তিনি রাতে খাবার খাওয়ার পর খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রাতে সবাই বমি করেছেন। এর পরই রফিকুল কেরানীগঞ্জ থেকে হোটেলে আসেন এবং ফার্মেসি থেকে বমির ওষুধ কিনে দেন। পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান। 

মরদেহ আদ্-দ্বীন হাসপাতালে রাখা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ইউনিট হাসপাতাল ও হোটেল কক্ষ থেকে আলামত সংগ্রহ করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। 

রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, খাবার খেয়ে শনিবার রাতে তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোববার তাদের মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের আগে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই কক্ষে কারা যাতায়াত করেছে, তা দেখা হচ্ছে। 

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় দেহলা গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা গ্রামের বাড়িতে ভিড় করছেন। 

 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবস থ য় মন র র র মন র ত নজন স বজন

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়ে নিয়ে যা বললেন পূজা চেরি

শারদীয় দুর্গাপূজা—হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ঢাকের তালে, উলুধ্বনির সুরে, আলোকসজ্জার ঝলকে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল প্রতিটি পূজামণ্ডপ। এই আনন্দে শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও যুক্ত হন। 

গতকাল বিজয়া দশমীর পবিত্র তিথিতে দেবীকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটে। পূজামণ্ডপগুলোতে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছিলেন ভক্তরা। একে অপরের মুখে সিঁদুর মেখে উল্লাসে মাতেন সনাতনীরা। দুর্গোৎসবের আনন্দ ছুঁয়ে গেছে অভিনেত্রী পূজা চেরিকেও। গতকাল সিঁদুর খেলায় অংশ নেন তিনি।  

আরো পড়ুন:

‘সবাই ধরে নেয় আমি ঋষি কাপুরের অবৈধ মেয়ে’

সংসার ভাঙার কারণে স্বামীকে ১১ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে অভিনেত্রীর?

পূজামণ্ডপে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পূজা চেরি। এ সময় জানতে চাওয়া হয়, বিজয়া দশমীর দিনে দেবী দুর্গার কাছে কী চাইলেন? জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমার যে গর্ভধারিণী মা মারা গেছেন সে যেন ভালো থাকেন। যেখানেই থাকেন যেন ভালো থাকেন এটাই চেয়েছি এবং দুর্গা মাকে বলেছি ‘তুমি যেন ভালো থেকো’। কারণ আমরা সবাই চেয়ে বেড়াই কিন্তু মাকে একটু জিজ্ঞেস করি না যে, ‘মা তুমি কেমন আছো?”  

ব্যক্তিগত জীবনে পূজা চেরি এখনো একা। ফলে তার বিয়ে নিয়ে ভক্ত-অনুরাগীদের আগ্রহের শেষ নেই। বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এই অভিনেত্রী বলেন, “এখানে একজন সিঁদুর আমার গালে লাগিয়ে দিচ্ছিল, তখন তারা বলল, ‘প্রার্থনা করি আগামীবার যেন দাদাসহ মণ্ডপে আসতে পারো’।” এ কথা বলে একটু হাসি মুখে পূজা বলেন, “দেখ যাক কী হয়! চিন্তার বিষয় চিন্তা করে দেখি।” 

পূজা চেরি শোবিজ অঙ্গনে যাত্রা শুরু করেছিলেন শিশুশিল্পী হিসেবে। ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে নায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যেই অভিনয় গুণে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন তিনি। 

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ