প্রতিনিয়ত সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে হার্ট পুরো শরীরে রক্ত পাম্প করে। একবারের সংকোচন-প্রসারণকে হার্টের একটা ‘বিট’ বা হৃৎস্পন্দন বলা যায়। অবিরাম হৃৎস্পন্দন তৈরি, এর স্বাভাবিক ওঠানামা ও ছন্দ বজায় রাখার জন্য হার্টের ভেতরে আছে বিশেষ এক পেশিবহুল বৈদ্যুতিক সার্কিট। হৃৎস্পন্দনের ছন্দ শুরু হয় এ বৈদ্যুতিক সংকেত থেকে, যা হার্টের একটি বিশেষ জায়গা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎপন্ন হয়। সংকেতটি যখন বৈদ্যুতিক চ্যানেল বা সার্কিটের মাধ্যমে হার্টের সব পেশিতে ছড়িয়ে পড়ে, তখন হার্টের ছন্দবদ্ধ সংকোচন-প্রসারণ ঘটে। কোনো কারণে এ সংকেত যদি চলতি পথে আটকে যায়, ধীর হয়ে যায় বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, তখন তাকে হার্ট ব্লক বলা হয়।
হার্টের রক্তনালির ব্লক ও হার্ট ব্লক এক নয়। হার্টের রক্তনালিতে দীর্ঘদিন ধরে চর্বি জমার ফলে আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে হার্টের রক্ত সরবরাহ কমে যায়, ফলে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক। হার্ট ব্লক হলো হার্টের বৈদ্যুতিক চ্যানেলের দুর্বলতা বা বৈদ্যুতিক সার্কিটের সমস্যা।
কেন হয়হার্ট ব্লকের কারণগুলোর মধ্যে হার্ট অ্যাটাক অন্যতম। বয়সজনিত বৈদ্যুতিক পেশির ক্ষয় থেকে হার্ট ব্লক হতে পারে। হৃৎস্পন্দনের গতি কমায় এমন ওষুধ থেকেও হার্ট ব্লক হতে পারে। এ ছাড়া জন্মগত সমস্যা, হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ ও হার্টের অস্ত্রোপচারের জটিলতাও হার্ট ব্লকের কারণ।
উপসর্গহার্ট ব্লকের ধরন ও মাত্রার ওপর উপসর্গ নির্ভর করে। যদি হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ব্লক একসঙ্গে হয়, তবে হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ, যেমন বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট প্রধান উপসর্গ হিসেবে প্রকাশ পায়। অন্যান্য ক্ষেত্রে নিচের উপসর্গগুলোকে হার্ট ব্লকের উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা।
মাথা ঘোরা।
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
অস্বাভাবিক ধীরগতির হার্টবিট (মিনিটে ৫০ বা কম)।
আরও পড়ুনকীভাবে বুঝবেন, আপনি ‘ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোমে’ ভুগছেন২৫ মে ২০২৫নির্ণয়ের উপায়পালস বা নাড়ির গতি পরীক্ষা করে অনেক সময় হার্ট ব্লক অনুমান করা যায়। ইসিজি পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সহজেই হার্ট ব্লক, এর মাত্রা ও ধরন নির্ণয় করা যায়। হার্ট ব্লকের কোনো কোনো ধরন সাময়িক হতে পারে। কিছু সময়ের জন্য উপসর্গ হয়, অন্য সময় লক্ষণ থাকে না। তখন ২৪ ঘণ্টা বা ৪৮ ঘণ্টার ইসিজি ধারণ করার জন্য হল্টার মনিটরিং পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে।
চিকিৎসাচিকিৎসা নির্ভর করে ব্লকের মাত্রা ও কারণের ওপর। কম মাত্রার হার্ট ব্লক হলে অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া গেলে এর চিকিৎসা করতে হবে। বেশি মাত্রার হার্ট ব্লক বা সম্পূর্ণ হার্ট ব্লক হলে পাশাপাশি পেসমেকার নামের একটি ছোট ইলেকট্রনিক যন্ত্র শরীরে স্থাপন করতে হয়, যা নিয়মিত বিদ্যুৎ সংকেত দিয়ে হার্টকে ঠিকভাবে চলতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনম্যাগনেশিয়াম-সমৃদ্ধ সুপার হেলদি ৮ খাবার০২ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ র ট ব লক র ও হ র ট ব লক র ট ব লক হ র উপসর গ
এছাড়াও পড়ুন:
গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া হলে করণীয়
দেশে এখন অনেকের চিকুনগুনিয়া হচ্ছে। চিকুনগুনিয়া হলে জ্বরের পাশাপাশি শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এ কারণে চিকিৎসকদের বিভিন্ন রকমের ব্যথা ও প্রদাহনাশক ওষুধ দিতে হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া হলে সব ওষুধ ব্যবহার নিরাপদ নয়। সে ক্ষেত্রে ব্যথা ও কষ্ট কমাতে করণীয় কী, তা একটি ভাবনার বিষয়।
চিকুনগুনিয়া কী
চিকুনগুনিয়া একধরনের ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস মশার মাধ্যমে এই রোগের সংক্রমণ ছড়ায়। এই একই মশা দিয়ে ডেঙ্গুও হয়। চিকুনগুনিয়া হলে জ্বর এবং শরীর ও অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথার পাশাপাশি অনেক সময় ত্বকে র্যাশ হতে পারে। এ ছাড়া অরুচি ও মাথাব্যথা হতে পারে।
সাধারণত উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকুনগুনিয়া ভালো হয়ে যায়। তবে অনেকেরই শরীর ও অস্থিসন্ধিতে এই ব্যথা দীর্ঘদিন ধরে থেকে যেতে পারে। এটা হলে অনেক দিন পর্যন্ত ভুগতে হয়।
গর্ভবতীদের জটিলতা হয় কি
গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া হলে উপসর্গ অন্যদের মতোই হবে। বেশির ভাগ সময়ই কোনো রকম গর্ভকালীন জটিলতা ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়। অনেকে আতঙ্কিত হন এই ভেবে যে গর্ভস্থ ভ্রূণ বা শিশুর কোনো সমস্যা হবে কি না বা গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না। স্বস্তির বিষয় এই যে এখনো গবেষণায় এমন কিছু পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বেশ কিছু ভাইরাসের সংক্রমণে গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে এমন কোনো ঝুঁকি নেই।
চিকিৎসা
গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া হলে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসায় জোর দিতে হবে। প্রথমত, মা ও তাঁর পরিবারকে আশ্বস্ত করতে হবে। গর্ভে থাকা শিশুর ঝুঁকির কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে মা আরও অসুস্থবোধ করতে পারেন। এ সময় মায়ের পাশে থাকতে হবে।
বেশি করে পানি, তরলজাতীয় খাবার ও স্যালাইন খাওয়াতে হবে। অনেকের গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ থাকে। তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্যালাইন ও অন্যান্য পানীয় খেতে হবে। মা যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম পান, নিশ্চিত করতে হবে।
জ্বর, শরীর ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারবে। প্যারাসিটামল গর্ভাবস্থায় নিরাপদ একটি ওষুধ। তবে ব্যথানাশক ওষুধ; অর্থাৎ পেইনকিলার খাওয়ানো নিষেধ। বিশেষ করে গর্ভকালীনের তৃতীয় পর্যায়ে এটি একেবারেই নিরাপদ নয়। ব্যথানাশক ওষুধ শিশুর জন্মগত ত্রুটি করতে পারে। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধও খাওয়ানো যাবে না।
ব্যথা হলে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। মায়ের পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশু যাতে সুস্থ থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। গর্ভের শিশু ঠিকমতো নড়াচড়া করছে কি না, হৃৎস্পন্দন ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা
আগামীকাল পড়ুন: বংশে কারও ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে আপনিও কি ঝুঁকিতে