বন্দরে মুকুলের উপর হামলার ঘটনায় মামলা
Published: 30th, June 2025 GMT
বন্দরে ১৫ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টিআই কাজের সাব ঠিকাদার, মহানগর বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুকুলের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
গত রোববার (২৯ জুন) রাতে মোস্তাকুর রহমান বাদী হয়ে সোনারগাঁও বিএনপি কথিত নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ডান বজলুসহ ৪৩ জনকে আসামী করে বন্দর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ৪৬(৬)২৫ ধারা- ১৪৩/ ৩৪১/ ৩২৩/ ৩২৪/ ৩২৫/ ৩০৭/ ৩৮৫/ ৩৭৯/ ১১৪/ ৫০৬/ ৫০০ পেনাল কোড-১৮৬০। এর আগে গত রোববার (২৯ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় বন্দর থানার হরিপুরস্থ ৪১২ বিদুৎত কেন্দ্রের সামনে এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি ঘটে।
মামলার এজাহারভূক্ত আসামীরা হলো নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানার কুতুবপুর এলাকার মৃত মতিউর রহমান মিয়ার বজলুর রহমান ওরফে ডন বজলু (৫৫) একই এলাকার মৃত আলী মিয়ার ছেলে রাসেল(৪৪) আলী আক্কাস মিয়ার ছেলে কামাল ওরফে কেরা কামাল (৪৪) ফজলুর রহমানের ছেলে গোলজার (৪৮) কাশেম মিয়ার ছেলে নাদিম (৩৮) মৃত আবুল বাশারের ছেলে আব্দুল করিম নোমান (৩৫) মৃত আক্তার হোসেনের ছেলে আকাশ (২৫) মৃত সিরাজ উদ্দিন মিয়ার ২ ছেলে সেলিম (৪৫) ও শামীম (৪২) মৃত মগবুল হোসেনের ছেলে শাহাজালাল (৪০) মৃত ছালিম উদ্দিন মিয়ার ছেলে হযরত আলী (৫৬) রফিক মিয়ার ছেলে রাজ মিয়া (৫৫) সাদেক আলী ছেলে সাইদুর ওরফে সাইফুল (৪৪) মৃত লতিফ মিয়ার ছেলে হানিফ (৪২) ফজলুর রহমানের ছেলে আক্তার (৪৫) মিছির আলী ছেলে ইসমাঈল (৫৮) বশির উদ্দিন মিয়ার ছেলে খালেক (৫৮) ও একই এলাকার আলী আক্কাস (৩৬)সহ অজ্ঞাত নামা ২০/২৫ জন।
মামলার এজাহারের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (২ জুন) মেসার্স দেওয়ান এন্টার প্রাইজ হাজীগঞ্জ ফতুল্লা ইউপি টেন্ডারের মাধ্যমে হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টি আই কাজের কার্যাদেশ প্রাপ্ত হয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা পিজি জমা প্রধান করে বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আতাউর রহমান মুকুল চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেয়।
এর জের ধরে সোনারগাঁ থানার কুতুবপুর এলাকার চিহ্নিত খুনি সন্ত্রাসী বজলুর রহমান ওরফে ডন বজলু নেতৃত্বে উল্লেখিত সন্ত্রাসীসহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন মের্সাস দেওয়ান এন্টার প্রাইজের নিকট ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসতেছে।
এর ধারাবাহিকতা গত রোববার (২৯ জুন) দুপুর অনুমানিক সাড়ে ১২টায় সাব ঠিকাদার ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ মোঃ আতাউর রহমান মুকুল (৬৮), ও মামলার বাদীসহ সোবহান ও কাউছার বন্দর থানাধীন হরিপুর বিদুৎ কেন্দ্রে চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য গেলে উল্লেখিত সকল বিবাদীগংরা অতর্কিত ভাবে গাড়ীর চারদিকে ঘোরাও করে গাড়ীর গতিরোধ করে।
একপর্যায়ে গাড়ীতে থাকা অবস্থায় ১ নং বিবাদীর হুকুমে উল্লেখিত সকল বিবাদীরসহ অজ্ঞাত বিবাদীরা বে আইনী জনতাবদ্ধে দেশীয় অস্ত্র সন্ত্র নিয়া আমার ও আলহাজ্ব মোঃ আতাউর রহমান মুকুল নিকট পূনরায় পূর্বের দাবিকৃত টাকা চাঁদা দাবি করে। এবং বলে যে, বিবাদীদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে কোন চুক্তি স্বাক্ষর করিতে দিবে না।
আমি ও আলহাজ্ব মোঃ আতাউর রহমান মুকুল এবং সঙ্গীরা তাদের কথামত চাঁদা দিতে অস্বীকার করিলে ১৩ নং বিবাদী সাইদুর ওরফে সাইফুল আমাকে ও আলহাজ মোঃ আতাউর রহমান মুকুলকে গাড়ী হতে টেনে হেচড়ে নামায়।
২ নং বিবাদী রাসেল ভিকটিম আলহাজ্ব মোঃ আতাউর রহমান মুকুলকে তার হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্বক জখম করে। ৩ নং বিবাদী কামাল ওরফে কেরা কামাল তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে আলহাজ্ব মোঃ আতাউর রহমান মুকুলকে মাথার ডান পাশে কপালের উপরে আঘাত করে মারাত্বক জখম করে।
৪ নং বিবাদী গোলজার আলহাজ্ব মোঃ আতাউর রহমান মুকুল এর গালের বাম পাশে বারি মারিয়া মারাত্বক জখম করে। ১৩ নং বিবাদী সাইদুর ওরফে সাইফুলের হাতে থাকা লোহার রড দিয়া সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ আতাউর রহমান মুকুলের ডান পায়ের পাতায় হাড়ভাংঙ্গা গুরুত্বর জখম করে।
পরবর্তীতে উল্লেখিত বিবাদীরা তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র সন্ত্র নিয়া আমাদের সকলের উপর আক্রমন করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম করে। ১১ নং বিবাদী হযরত আলী, ১২নং বিবাদী রাজ মিয়া ও ১৮ নং বিবাদী আলী আক্কাস সাবেক চেয়ারম্যানআলহাজ মোঃ আতাউর রহমান মুকুলের গায়ে পরিহিত পাঞ্জাবী ও পায়জামা ছিড়ে ফেলে তার সম্মানহানী করে।
৭ নং বিবাদী আকাশ আতাউর রহমান মুকুলের একটি ব্যবহৃত মোবাইল আইফোন যার মূল্য অনুঃ ১,৫০,০০০/- টাকা সহ মানিব্যাগের ভিতরে থাকা ১,২০,০০০/- টাকা নিয়া যায়। আমাদের ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন আগাইয়া আসিলে উল্লেখিত বিবাদীরা আমাদের প্রকাশ্যে খুন জখমের হুমকি দিয়া চলে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজন থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়। পরবর্তীতে থানা পুলিশের সহায়তায় আশেপাশের লোকজন আমাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে।
উন্নত চিকিৎসার জন্যআলহাজ আতাউর রহমান মুকুলকে নারায়ণগঞ্জ মেডিনোভা ও সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতাল চিকিৎসা গ্রহন করে।
এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি লিয়াকত আলী গণমাধ্যমকে জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার এজাহারভূক্ত আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যহত রয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ আলহ জ ব ম ল র রহম ন উল ল খ ত ল র উপর এল ক র আম দ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ সফরে আসছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার প্রধান
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনার জন্য তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার সচিব অধ্যাপক হালুক গরগুন ৮ জুলাই ঢাকায় আসছেন। এক দিনের সফরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
তুরস্ক থেকে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র সোমবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীর মাঝে সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ, গবেষণা, কেনাকাটা, বিনিয়োগ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অধ্যাপক হালুক গরগুন আলোচনা করতে পারেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অধীনে সরাসরি কাজ করে প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থা (ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি এজেন্সি–এসএসবি)। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক—বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, গবেষণার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর বিকাশ ও বিবর্তনের বিষয়ে এসএসবি মূল ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং বিনিয়োগের দেখভাল করে এসএসবি।
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুল বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রাজনৈতিক দিকটি দেখভাল করেন। আর তুরস্কের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কৌশলগত বিষয়টির দায়িত্বে রয়েছেন হালুক গরগুন। কারণ, এসএসবি প্রতিরক্ষাশিল্প নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্পের জন্য প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। এটি সমরাস্ত্রের নকশা ও উৎপাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়।
বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, সম্প্রতি ঢাকা–আঙ্কারা সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে তুরস্ক নানা ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিয়ে থাকে। গত সাত বছরে বারাক্তার টিবি–২ ড্রোনসহ অন্তত ১৫ ধরনের আধুনিক সমরাস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ।
মূলত ২০১৮ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির আরও কিছু সমরাস্ত্র কেনাকাটা, বাংলাদেশে সমরাস্ত্রের কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়েও আলোচনা চলছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দীর্ঘ মেয়াদে আরও শক্তিশালী হওয়ার নানা ইঙ্গিত আছে বলে মনে করেন ঢাকার কূটনীতিকেরা।
গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ওমের বোলাত। সফরকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষাশিল্প স্থাপন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
উত্তরে ওমের বোলাত বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক টেক্সটাইল শিল্প ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৈচিত্র্যময় করতে পারে। প্রতিরক্ষাশিল্প, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধশিল্প এবং কৃষিযন্ত্র খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।
সমরাস্ত্রবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে আঙ্কারার কাছ থেকে কোবরা আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে ঢাকা।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় তুরস্ক নির্মিত মাইন থেকে সুরক্ষাকারী যান, সাঁজোয়া যান এবং বহুমাত্রিক রকেট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত কামানের গোলা বিক্রির বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কাছে সামরিক হেলিকপ্টার ও ট্যাংক বিক্রিতে আগ্রহী তুরস্ক। তুরস্কের একটি কোম্পানি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে শেল বানানোর প্রযুক্তি দিয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের টহল নৌযান তৈরির জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সমরাস্ত্র কিনেছে। ওই বছর গ্রাউন্ডেড সার্ভিলেন্স রাডার, কৌশলগত সাঁজোয়া যান কোবরা ২-সহ কয়েক ধরনের সাঁজোয়া যান ও বহনযোগ্য জ্যামার কেনা হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে অফশোর ক্রেন, সাঁজোয়া যান এবং অ্যাম্বুলেন্স, মিসাইল লঞ্চিং সিস্টেম, ওরলিকন স্কাই গার্ড রাডার সিস্টেমসহ নানা ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হয়েছে।
আরও পড়ুনতুরস্ক থেকে সমরাস্ত্র কেনা বেড়েছে২৭ ডিসেম্বর ২০২৩