জামালপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক আহ্বায়ক কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ বলে অভিযোগ করেছেন বিগত কমিটির নেতারা। তারা কমিটি বাতিল করে ত্যাগী নেতাদের দিয়ে পুনরায় কমিটি গঠন করার দাবি জানিয়েছেন।

সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে শহরের সকাল বাজার এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দ্বিতীয় তলায় ‘জামালপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীর ব্যানারে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা।  

সংবাদ সম্মেলনে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের বিগত কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো.

আবু বক্কর সিদ্দিকী বাবু, পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এ এস এম মিজানুর রহমান মিলন, সহ-কোষাধ্যক্ষ মো. ফয়সাল বক্তব্য রাখেন। বিগত কমিটির বিভিন্ন পদের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। 

আরো পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের মিটিংয়ের পর স্থিতিশীলতা এসেছে: শরিফ

‘মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করলাম’

বক্তারা বলেন- গত ২৬ জুন নুরল মমিন আকন্দ কাউছারকে আহ্বায়ক ও মঞ্জুরুল করিম সুমনকে সদস্য সচিব করে কেন্দ্র থেকে জামালপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা করে। সেই কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দেওয়া হয়। 

তাদের অভিযোগ, কমিটির আহ্বায়ক কাউছার ৫ আগস্টের পর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু বিজন কুমার চন্দের নতুন হাই স্কুল মোড়ের অফিস দখল করেছেন। সদস্য সচিব সুমন স্টেশন এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন এবং তার বাবা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। একজন সরকারি কর্মকর্তার জমি দখল ও সেই কর্মকর্তার স্ত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে সুমনের বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কমিটি বাতিল ঘোষণা করে পুনরায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করতে হবে। 

অভিযোগের বিষয়ে জামালপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক নুরল মমিন আকন্দ কাউছার মোবাইলে বলেন, ‘আমাদের দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দেওয়া হয়েছে। যখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে, তখন ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। আমরা এই শহরের বাসিন্দা। এই শহরসহ সাংবাদিক সমাজের সবাই জানে আমরা কেমন। একটি সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত অভিযোগ করলেই মিথ্যা সত্য হয়ে যায় না। আমি বিষয়টি কেন্দ্রকে অবহিত করব।”

জামালপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নবগঠিত কমিটির সদস্য সচিব মঞ্জুরুল করিম সুমন মোবাইলে বলেন, “আমি ছাত্রদলের প্রার্থী ছিলাম। যেহেতু আমার ছাত্রত্ব নেই। আমি বিবাহিত, সন্তান রয়েছে, তাই সেখান থেকে আমি সরে আসি। এর আগে একটি ঘটনায় আমাকে শোকজ করা হয়েছিল, আমি এর জবাব দিয়েছিলাম। পরে আমাকে আর বহিষ্কার করা হয়নি।” 

তিনি বলেন, “আমি স্টেশনের কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত না। এই এলাকার যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই এর জবাব পাবেন। আমার বাবা আওয়ামী লীগ করতো। কিন্তু আমি বিএনপির আদর্শে আদর্শিত। আমার বাবা-মা মারা গেছেন অনেক আগেই। এই দুনিয়াতে আমার কেউ নেই। পরিবার আর রাজনীতি এক না। আমি অনেকগুলো রাজনৈতিক মামলার আসামি ছিলাম। দলের দুঃসময়ে আমার কি অবদান এটা আপনারা একটু খোঁজ নেবেন। কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে ত্যাগীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।”

ঢাকা/শোভন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ অভ য গ ত কম ট র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ সফরে আসছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার প্রধান

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনার জন্য তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার সচিব অধ্যাপক হালুক গরগুন ৮ জুলাই ঢাকায় আসছেন। এক দিনের সফরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

তুরস্ক থেকে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র সোমবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীর মাঝে সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ, গবেষণা, কেনাকাটা, বিনিয়োগ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অধ্যাপক হালুক গরগুন আলোচনা করতে পারেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অধীনে সরাসরি কাজ করে প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থা (ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি এজেন্সি–এসএসবি)। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক—বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, গবেষণার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর বিকাশ ও বিবর্তনের বিষয়ে এসএসবি মূল ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং বিনিয়োগের দেখভাল করে এসএসবি।

তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুল বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রাজনৈতিক দিকটি দেখভাল করেন। আর তুরস্কের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কৌশলগত বিষয়টির দায়িত্বে রয়েছেন হালুক গরগুন। কারণ, এসএসবি প্রতিরক্ষাশিল্প নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্পের জন্য প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। এটি সমরাস্ত্রের নকশা ও উৎপাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়।

বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, সম্প্রতি ঢাকা–আঙ্কারা সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে তুরস্ক নানা ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিয়ে থাকে। গত সাত বছরে বারাক্তার টিবি–২ ড্রোনসহ অন্তত ১৫ ধরনের আধুনিক সমরাস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ।

মূলত ২০১৮ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির আরও কিছু সমরাস্ত্র কেনাকাটা, বাংলাদেশে সমরাস্ত্রের কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়েও আলোচনা চলছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দীর্ঘ মেয়াদে আরও শক্তিশালী হওয়ার নানা ইঙ্গিত আছে বলে মনে করেন ঢাকার কূটনীতিকেরা।

গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ওমের বোলাত। সফরকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষাশিল্প স্থাপন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

উত্তরে ওমের বোলাত বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক টেক্সটাইল শিল্প ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৈচিত্র্যময় করতে পারে। প্রতিরক্ষাশিল্প, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধশিল্প এবং কৃষিযন্ত্র খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।

সমরাস্ত্রবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে আঙ্কারার কাছ থেকে কোবরা আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে ঢাকা।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় তুরস্ক নির্মিত মাইন থেকে সুরক্ষাকারী যান, সাঁজোয়া যান এবং বহুমাত্রিক রকেট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত কামানের গোলা বিক্রির বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কাছে সামরিক হেলিকপ্টার ও ট্যাংক বিক্রিতে আগ্রহী তুরস্ক। তুরস্কের একটি কোম্পানি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে শেল বানানোর প্রযুক্তি দিয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের টহল নৌযান তৈরির জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সমরাস্ত্র কিনেছে। ওই বছর গ্রাউন্ডেড সার্ভিলেন্স রাডার, কৌশলগত সাঁজোয়া যান কোবরা ২-সহ কয়েক ধরনের সাঁজোয়া যান ও বহনযোগ্য জ্যামার কেনা হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে অফশোর ক্রেন, সাঁজোয়া যান এবং অ্যাম্বুলেন্স, মিসাইল লঞ্চিং সিস্টেম, ওরলিকন স্কাই গার্ড রাডার সিস্টেমসহ নানা ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হয়েছে।

আরও পড়ুনতুরস্ক থেকে সমরাস্ত্র কেনা বেড়েছে২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ