রাজধানীর মগবাজারের একটি আবাসিক হোটেলে এক দম্পতি ও তাঁদের সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আটক রফিকুল ইসলাম মারা যাওয়া সৌদিপ্রবাসী মনির হোসেনের কেরানীগঞ্জের পাঁচতলা ভবনের তত্ত্বাবধায়ক।

পুলিশ বলছে, খাবারের বিষক্রিয়ায় আধা ঘণ্টার মধ্যে তিনজনের মারা যাওয়ার কথা নয়। প্রাথমিক তদন্তে তাঁদের কাছে এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মনে হচ্ছে। রফিকুল বাইরে থেকে আনা খাবারের মধ্যে কোনো কিছু মিশিয়ে দিয়েছিলেন কি না, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

সৌদিপ্রবাসী মনির হোসেন ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না আক্তার প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈম হোসেনের চিকিৎসার জন্য গত শনিবার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। ওই দিন বিকেলে মগবাজারের ‘সুইট স্লিপে’ উঠেছিলেন তাঁরা। রাতে পাশের একটি রেস্তোরাঁ থেকে তাঁদের খাবার এনে দেন মনির হোসেনের কেরানীগঞ্জের বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল। অসুস্থ হয়ে পরদিন রোববার দুপুরে তিনজনের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় গতকাল রোববারই রফিকুল ইসলামকে আটক করে রমনা থানা পুলিশ। এ ঘটনার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল ওই আবাসিক হোটেলের পাশের একটি দোকান থেকে তিনজনের জন্য খাবার এনেছিলেন বলে জানান। ওই রেস্তোরাঁর খাবার খেয়ে আগে–পরে কেউ অসুস্থ হয়েছেন কি না, সেটার খোঁজ নেওয়া হয়েছে। কেউ এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি।

জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুলের কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, মারা যাওয়া মনির হোসেনের এক ভাই ইতালি থেকে দেশে এসেছেন। তিনি বাদী হয়ে মামলা করবেন। মামলায় রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সংশ্লিষ্ট ডিবির একজন কর্মকর্তা আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। খাবারের বিষক্রিয়া হলেও আধা ঘণ্টার মধ্যে এভাবে তিনজন মারা যাওয়ার কথা নয়।

মগবাজারের ওই আবাসিক হোটেলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী আজ প্রথম আলোকে জানান, পুলিশ হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে গেছে। ঘটনার দিন রাত ও সকালে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

ওই হোটেলের সহকারী ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম এ ঘটনা সম্পর্কে প্রথম আলোকে জানান, শনিবার বিকেলে মনির হোসেন তাঁর প্রতিবন্ধী ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে হোটেলে আসেন। এ সময় রফিকুল ইসলাম তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে তাঁদেরকে হোটেলকক্ষ ভাড়া করে দেন। হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গেছে, সন্ধ্যার দিকে একটি ব্যাগে করে খাবার নিয়ে আসেন রফিকুল। পরে তিনি চলে যান। রাত আটটার দিকে মনির হোসেন নিচে নামেন। পরে পানি নিয়ে ওপরে উঠে যান মনির।

আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, মনির হোসেন ও তাঁর স্ত্রী–সন্তানেরা অসুস্থ হলেও হোটেলের কাউকে কিছু জানাননি। রোববার বেলা ১১টার দিকে রফিকুল তাঁর মেয়েকে নিয়ে হোটেলে আসেন। তিনি প্রথমে স্বপ্না আক্তারকে ধরে পাশের আদ–দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যান। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পরে এসে মনিরকে একই হাসপাতালে নিয়ে যান। কক্ষে রফিকুলের মেয়ের চিৎকার শুনে হোটেলের কর্মচারীরা অচেতন অবস্থায় এই দম্পতির ছেলে নাঈমকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তিনজনেরই মৃত্যু হয়।

আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজে এই তিনজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। বিকেলে তাঁদের স্বজনেরা মরদেহ নিয়ে যান।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক জাকিয়া তাসনিম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের সন্দেহ ও চাহিদা অনুযায়ী তাঁদের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য মৃতদেহ থেকে ভিসেরা, ব্লাডসহ প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আলামতগুলো প্যাথলজিক্যাল ও কেমিক্যাল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক মন র হ স ন কর মকর ত ত নজন র র জন য তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নারী নিহত

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের রাজৈরে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খাদে পড়ে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) মধ্যরাতে রাজৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। 

নিহত নিলুফা ইয়াসমিন নিলা (৩০) বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রুনসী গ্রামের আবুল বাসারের স্ত্রী।

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে ডাম্পট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, মা-মেয়ে নিহত

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটা থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল চন্দ্রা পরিবহনের বাসটি। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের রাজৈর বাসস্ট্যান্ড পার হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি সড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়।  পরে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিলার মরদেহ উদ্ধার করে। আহত হন অন্তত ২০ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

মাদারীপুরের মস্তফাপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, বাস খাদে পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করা হয়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহত নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা/বেলাল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ