নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় এক শিশুকে (৬) যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এক মুদিদোকানিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার একটি গ্রাম থেকে জাফর আলী (৫৬) নামের ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে রাতে ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।

এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে খালিয়াজুরি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মকবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। শিশুটির বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ওই মামলায় অভিযুক্ত জাফর আলীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুর ১২টায় শিশুটি জাফর আলীর মুদিদোকানে চিপস কিনতে যায়। জাফর আলীর দোকানটি তাঁর বসতঘরের সামনের অংশে। তিনি শিশুটিকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে দোকানের পেছনে তাঁর কক্ষে নিয়ে যান। শিশুটি ফিরতে দেরি হওয়ায় তার মা ওই দোকানে যান এবং তার নাম ধরে ডাক দেন। এ সময় শিশুটির কান্না শুনে এগিয়ে গেলে ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পান। পরে তিনি লোকজন নিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় জাফর আলী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা শিশুটির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় ও অভিযুক্ত জাফর আলীকে আটক করা থানায় নিয়ে আসে। পরে শিশুটির বাবা রাতে জাফরকে একমাত্র আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা করেন।

শিশুটির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়েকে ওই মুদি ব্যবসায়ী শ্লীলতাহানি করেছে। বিচার চাইতে গেলে তিনি ও তাঁর লোকজন উল্টো ভয়ভীতি দেখানোসহ হুমকি দেন। আমি তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-চীন সম্পর্কের আসলে কতটা উন্নতি হতে পারে

দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীন এখন ধীরে এবং সতর্কভাবে সম্পর্ক জোরদার করার পথে হাঁটছে। একদিকে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট আবার চালু করার আলোচনা, অন্যদিকে উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সফরের ধারাবাহিকতা—যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনিশ্চিত নীতির প্রেক্ষাপটে সবই ঘটছে।

দুই দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এমন কয়েকটি সূত্র জানায়, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আগামী সপ্তাহে নয়াদিল্লি সফরে যাবেন। সেখানে তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে হিমালয় সীমান্ত বিরোধ নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। ২০২০ সালে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর এটি হবে দ্বিতীয় বৈঠক।

চলতি মাসের শেষ দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীন সফরে যাচ্ছেন। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করবেন। সাত বছরের মধ্যে এটি হবে তাঁর প্রথম চীন সফর। চীনে তিনি সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন।

গত বছরের অক্টোবরে সীমান্ত টহল চুক্তির পর সম্পর্কের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সর্বশেষ এসব ঘটনা ঘটছে। পাঁচ বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির কারণে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আকাশপথে যোগাযোগ বেশ ব্যাহত হচ্ছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিগত কয়েক সপ্তাহে ভারত-চীনের সম্পর্কে বেশ উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনার মধ্যে এই সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। ওয়াশিংটনের কৌশলগত অংশীদারদের মধ্যে এটি অন্যতম সর্বোচ্চ হার।

অন্যদিকে এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন নিজেদের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ আরও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে। ফলে চীনের পণ্যের ওপর সম্ভাব্য তিন অঙ্কের শুল্ক এড়ানো গেছে।

চীন ও ভারত ইতিমধ্যে ২০২০ সাল থেকে স্থগিত থাকা সরাসরি ফ্লাইট আবার চালু করতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাধা কমানোর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে হিমালয়ের তিনটি সীমান্তপথে বাণিজ্য আবার চালুর বিষয়ও রয়েছে।

গত অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে ১২ হাজার ৭০৭ কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের তুলনায় সীমান্ত বাণিজ্যের পরিমাণ বেশ কম। এরপরও সীমান্তপথ খুলে দেওয়াকে আবার চালু হওয়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নির্ধারিত সব বাণিজ্যপথের মাধ্যমে সীমান্ত বাণিজ্য আবার চালুর বিষয়ে আমরা চীনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়ন

চীন রয়টার্সকে জানায়, তারা সীমান্ত বাণিজ্য আবার চালু করতে প্রস্তুত। দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সীমান্ত বাণিজ্য ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ রেখেছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, সরাসরি ফ্লাইট যত দ্রুত সম্ভব আবার চালুর জন্য বেইজিং নয়াদিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফ্লাইট চালুর বিষয়ে সঠিক সময়সীমা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

ইতিমধ্যে ভারতের সরকারি চিন্তন প্রতিষ্ঠান চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য বিনিয়োগের কঠোর নিয়ম শিথিল করার প্রস্তাব দিয়েছে, যা অতিরিক্ত যাচাইয়ের শর্ত তৈরি করেছিল। এটিকে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততায় সম্ভাব্য পরিবর্তনের আরেকটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের সরকারি চিন্তক প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দিয়েছে, চীনা কোম্পানির বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যাচাইয়ের নিয়ম কিছুটা যেন শিথিল করা হয়। দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে সম্ভাব্য পরিবর্তনের আরেকটি ইঙ্গিত হিসেবে একে দেখা যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ