লোকজনের ভিড়, সাক্ষাৎকারের ‘চাপ’—বাড়ি ছাড়লেন মুরাদনগরের নির্যাতিত সেই নারী
Published: 1st, July 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরে পাশবিক নির্যাতনের শিকার সেই নারী বাবার বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে তিনি ও তাঁর মা–বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে দেখা যায়নি। পুলিশ বলছে, ঘটনার পর প্রতিদিনই তাঁদের বাড়িতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ভিড় করছেন। এ ছাড়া গণমাধ্যমকর্মী ও ইউটিউবারদের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে তাঁর জীবন ‘দুর্বিষহ’ হয়ে উঠেছে। এমন ‘বিব্রতকর’ পরিস্থিতিতে তিনি বাড়ি ছেড়ে গেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন রাতে ফজর আলী নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ সময় স্থানীয় কিছু লোক ফজর আলীর পাশাপাশি ওই নারীকেও মারধর করেন। বিবস্ত্র করে নির্যাতনের পর ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় দুটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় তিন ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার বিকেলে ভুক্তভোগী নারী তাঁর স্বামীর বাড়ি যাবেন বলে বাবার বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। পুলিশের সহযোগিতায় তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে গেছেন। এরপর তাঁর মা–বাবাসহ পরিবারের লোকজনও অন্যত্র চলে যান। এমন পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার তাঁদের বাড়ি আসেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। তাঁর আগমন উপলক্ষে হাজারো মানুষ আজ বেলা ১১টার পর থেকে তাঁর বাবার বাড়ি ও আশপাশে অবস্থান নেন। এভাবে লোকজনের ভিড় হবে—সম্ভবত বিষয়টি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগী ও তাঁর বাবার বাড়ির লোকজন বাড়ি থেকে সরে গেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুমিল্লা জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর থেকেই ভুক্তভোগী নারী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন। প্রতিদিনই তাঁদের বাড়িতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ভিড় করছেন। গণমাধ্যমকর্মী ও ইউটিউবারদের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে ভুক্তভোগীর পারিবারিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া অনেকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ভিডিওতে ভুক্তভোগীর চেহারা দেখিয়ে আরও সমস্যায় ফেলছেন। এসব কারণেই ভুক্তভোগী বাড়ি থেকে সরে গেছেন। সোমবার তিনি পুলিশের কাছে সহায়তা চাইলে পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেছে।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ‘শুনেছি নির্যাতিত ওই নারী তাঁর শ্বশুরবাড়ি বা কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে গেছেন। এটি তাঁর নিজস্ব ও ব্যক্তিগত ব্যাপার।’ ভুক্তভোগীর কোনো নিরাপত্তার দরকার হলে তাঁরা অবশ্যই সেটি নিশ্চিত করবেন বলে জানান ওসি।
নতুন করে গ্রেপ্তার নেইনারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে করা মামলায় নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছে। তবে তাঁরা এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন।
এদিকে নির্যাতন ও ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার চার যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মমিনুল হক আগামী বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন।
কুমিল্লা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো.
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা ওই চার আসামি হলেন মোহাম্মদ আলী ওরফে সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিক।
নতুন করে কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি। তবে তাঁদের সবাই এলাকা থেকে পালিয়েছেন। তাঁদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে আশা করছি তাঁদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।’
ওসি বলেন, ওই চারজনকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছে থাকা মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সেগুলো সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হবে। এর মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হবে ভিডিওটি কোথা থেকে প্রথম ছড়ানো হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ম র দনগর র ল কজন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রেটা থুনবার্গসহ গাজামুখী নৌবহরের বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা নৌবহরে হস্তক্ষেপ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামের এই নৌবহরের অন্তত ছয়টি নৌকা থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে বেশ কয়েকজন অধিকারকর্মীকে আটক করেছে ইসরায়েলি সেনারা। তাদের মধ্যে সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন।
বুধবার রাতে ভূমধ্যসাগরে গাজা থেকে প্রায় ২১৮ কিলোমিটার দূরে ওই নৌযানগুলোয় ঢুকে পড়ে ইসরায়েলি সেনারা। সেগুলো থেকে আটক অধিকারকর্মীদের এখন ইসরায়েলের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে ‘ইয়ম কিপুর’ উপলক্ষে ছুটি থাকায় ইসরায়েলের প্রায় সব ধরনের সরকারি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
গাজামুখী নৌযানে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের খবর প্রথমে জানানো হয় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বহরের যে ছয়টি নৌযানে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের খবর পাওয়া গেছে সেগুলো হলো—দেইর ইয়াসিন, হিউগা, স্পেক্টার, আদারা, আলমা ও সিরিয়াস।
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘হামাস–সুমুদ ফ্লোটিলার কয়েকটি নৌযান নিরাপদভাবে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর আরোহীদের ইসরায়েলের একটি বন্দরে নেওয়া হচ্ছে। গ্রেটা ও তাঁর বন্ধুরা নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।’ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে থুনবার্গকে নৌযান থেকে সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
এই নৌবহরের ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে ইসরায়েল। তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা। এরই মধ্যে বুধবার রাতে নৌবহরটি থামাতে তৎপরতা শুরু করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। নৌবহরটির দিক পরিবর্তন করতেও নির্দেশ দেয় তারা। এমন পরিস্থিতিতে বহরটিতে হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
নৌযানের আরোহীদের আটকের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। আন্তর্জাতিক জলসীমায় তাদের ওপর ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের বিষয়ে এক্সে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘ন্যায়ের পক্ষে কথা বলা মানুষদের অপহরণ করা হয়েছে। ফ্লোটিলা কোনো আইন ভাঙেনি। যেটি অবৈধ, তা হলো ইসরায়েলের জাতিগত নিধন, অবৈধ গাজা অবরোধ এবং অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে বিগত প্রায় দুই বছরে সেখানে ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি গাজা অবরোধ করে উপত্যকাটিতে তীব্র খাদ্য সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে অনাহার–অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে গাজার বাসিন্দাদের।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। এই নৌবহরে রয়েছে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান। এই বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রথম বহর ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া ও ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে আরও নৌযান এই বহরে যুক্ত হয়। এ ছাড়া গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে পরবর্তী সময়ে আরও কিছু নৌযান ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয়। বর্তমানে বহরটিতে ৪০টি বেশি নৌযান রয়েছে।
এর আগে গত জুন মাসে গাজার দিকে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া একটি নৌযান আটক করেন ইসরায়েলি সেনারা। গাজা থেকে প্রায় ১৮৫ কিলোমেটার দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ‘ম্যাডলিন’ নামে নৌযানটি আটক করা হয়। ওই নৌযানে গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ জন অধিকারকর্মী ছিলেন। পরে জুলাই মাসে নৌযান ‘হান্দালা’কে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। ইসরায়েলের এসব পদক্ষেপ সে সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।