দীর্ঘ তিন বছর আলোচনার পর ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সই হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার লন্ডনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ডের এই এফটিএ সই করেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চুক্তিটিকে ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুক্তরাজ্যের ‘সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন। এর ফলে যুক্তরাজ্যে ২ হাজার ২০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলেও জানান তিনি। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী এটাকে ‘উভয় দেশের সমৃদ্ধির নকশা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

এই এফটিএর ফলে যুক্তরাজ্যের তৈরি গাড়ি, চিকিৎসা সরঞ্জাম, কোমল পানীয় ও প্রসাধনী ভারতে রপ্তানি সহজ হবে। কারণ, গড় শুল্কহার কমে ১৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ হবে। তার বিপরীতে যুক্তরাজ্যের বাজারে ৯৯ শতাংশ রপ্তানি পণ্যে  শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে ভারত। শুধু তা–ই নয়, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ভারতীয়দের জন্য যুক্তরাজ্যে কাজের সুযোগ সহজ হবে। অর্থাৎ ভারতীয়দের কর্মসংস্থান বাড়বে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এই এফটিএর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্য রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে ১০ ধরনের সুবিধা পাবে ভারত। সেগুলো হচ্ছে—

১.

শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার

নতুন এফটিএ অনুযায়ী, ভারতের ৯৯ শতাংশ রপ্তানি পণ্য যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। তার বিপরীতে ভারতও যুক্তরাজ্যের ৯০ শতাংশ পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। এসবের মধ্যে ৮৫ শতাংশ পণ্য আগামী দশ বছরের মধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা যাবে।

যুক্তরাজ্যের বাজারে ভারতের বিভিন্ন ধরনের পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। এত দিন সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ, তৈরি পোশাক ও বস্ত্রে ১২ শতাংশ, রাসায়নিক দ্রব্যে ৮ শতাংশ এবং ধাতু রপ্তানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক থাকলেও এখন সেগুলো কমবে। এ ছাড়া ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়েছে, যা এত দিন ছিল ৭০ শতাংশ।

২. চাকরির সুযোগ বাড়বে

পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কারণে ভারতজুড়ে চাকরির সুযোগ বাড়বে। বিশেষ করে শ্রমনির্ভর খাতে যেমন—খেলনা, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র, চামড়াজাত পণ্য, জুতা, সামুদ্রিক পণ্য ইত্যাদি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া রত্ন ও গয়না, প্রকৌশল পণ্য, গাড়ির যন্ত্রাংশ, জৈব রাসায়নিক খাতের রপ্তানি বাড়তে পারে। এতে নতুন নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে।

৩. সস্তা হবে ব্রিটিশ গাড়ি

যুক্তরাজ্যের গাড়ির ভারতের বাজারে প্রবেশে শুল্ক ১০০ শতাংশ থেকে কমে ১০ শতাংশ হবে। যদিও নির্দিষ্ট পরিমাণ গাড়ির ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া হুইস্কির ওপর শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে কমে প্রথম ধাপে ৭৫ শতাংশ হবে। পরে ১০ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে তা ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

জাগুয়ার, ল্যান্ড রোভারসহ ব্রিটিশ গাড়ির ব্র্যান্ডগুলো আগের চেয়ে কম শুল্কে ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে পারবে। ভারতীয় ক্রেতাদের জন্যও এসব গাড়ির দাম কমবে।

৪. কৃষি খাত ও কৃষকের লাভ

তিন বছরে যুক্তরাজ্যের বাজারে ভারতীয় কৃষিপণ্যের রপ্তানি ২০ শতাংশের বেশি বাড়বে। এর কারণ, ৯৫ শতাংশের বেশি কৃষিপণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। ফলে হলুদের মতো মসলা, গোলমরিচ, এলাচ, আমের মণ্ড, আচার, ডাল, শাকসবজি, সিরিয়াল, রেডি-টু-ইট খাবার ইত্যাদি বিনা শুল্কে দেশটিতে রপ্তানি করতে পারবেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। এতে ভারতীয় কৃষকেরা লাভবান হবেন।

৫. মৎস্য ও সামুদ্রিক পণ্য

চিংড়ি, টুনা মাছ ও মাছের খাবার রপ্তানিতে ৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক থাকলেও এফটিএর কারণে তা পুরোপুরি শূন্য হয়ে যাবে। যুক্তরাজ্যের সামুদ্রিক পণ্যের আমদানি বাজার প্রায় ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের। এই বড় বাজারে এখন ভারতীয় পণ্য রপ্তানিতে বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশ, ওডিশা, কেরালা ও তামিলনাড়ুর মতো উপকূলবর্তী রাজ্যগুলোর জন্য এটি খুবই লাভজনক হবে।

৬. ভারতের ব্র্যান্ডেড পণ্যের বাজার

এফটিএর কারণে ভারতের প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে কোমল পানীয় ও মসলা রপ্তানি বাড়বে। যুক্তরাজ্য এখন ভারত থেকে তাদের চাহিদার ১ দশমিক ৭ শতাংশ কফি, ৫ দশমিক ৬ শতাংশ চা এবং ২ দশমিক ৯ শতাংশ মসলা আমদানি করে। নতুন চুক্তির ফলে ভারতীয় ইনস্ট্যান্ট বা তাৎক্ষণিক কফি প্রস্তুতকারকেরা উচ্চমানের বাজার শ্রেণিতে জার্মান ও স্প্যানিশ সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন করবে।

৭. ওষুধ ও চিকিৎসা খাত

নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের জেনেরিক ওষুধ ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি, ফিন্যান্স, পরামর্শসেবা এবং শিক্ষা খাতেও ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

৮. ভারতীয় পেশাজীবীদের জন্য সুযোগ

এফটিএর কারণে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ভারতীয় নাগরিকদের জন্য যুক্তরাজ্যে কাজ করার সুযোগ সহজ হবে। যোগ্য শিক্ষক, সংগীতজ্ঞ ও রাঁধুনির মতো স্বাধীন পেশাজীবীরা যুক্তরাজ্যে অফিস না থাকলেও ৩৫টি খাতে দুই বছর কাজ করতে পারবেন।

৯. সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা

ভারতীয় কর্মীরা যুক্তরাজ্যে ৩ বছর কাজ করলে তাঁদের আর সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলে দ্বৈত চাঁদা দিতে হবে না। এতে প্রায় ৭৫ হাজার ভারতীয় কর্মী উপকৃত হবেন।

১০. নারীর ক্ষমতায়ন

ভারতের নারীদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, যা তাঁদের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখবে। মহারাষ্ট্রের কোলাপুরি চপ্পলের মতো পণ্য এখন শুল্কমুক্তভাবে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করা যাবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর জ য র দ র জন য এফট এ র ওপর দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবি উপাচার্য-প্রক্টরসহ ৩ জনকে আইনি নোটিশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসিন হলে নিজের সিট ফিরে পাওয়াসহ তিন দফা দাবিতে উপাচার্য, প্রক্টর ও হলটির প্রাধ্যক্ষ বরাবর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এক শিক্ষার্থী।

ওই শিক্ষার্থী হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের আলোচিত ভিপি পদপ্রার্থী জালাল আহমদ ওরফে জ্বালাময়ী জালাল। 

আরো পড়ুন:

রাবিতে পোষ্য কোটা পুনর্বহাল, উত্তাল রাতের ক্যাম্পাস

চাকসু: ৩ পদ শূন্য রেখে বামপন্থিদের ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট বেল্লাল হোসাইন (মুন্সী বেল্লাল) স্বাক্ষরিত এক আইনি নোটিশে তিনি ঢাবি প্রশাসনের কাছে তিন দফা দাবি জানান।

জালাল আহমদ অভিযোগ করে জানান, হলে বহিরাগত ও মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। এ সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের মদদে তার ওপর মব হামলাও চালানো হয়। কিন্তু তদন্ত ছাড়াই হল প্রাধ্যক্ষ তাকে বহিষ্কার করেন এবং প্রশাসন তার নামে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করে।

এর আগে, হলের রুমমেটকে মারধর এবং ভাঙা টিউবলাইট দিয়ে আঘাত করার ঘটনায় জালাল আহমদ ওরফে জ্বালাময়ী জালালের বিরুদ্ধে ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন এবং ২৭ আগস্ট তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর আদালত জামিন মঞ্জুর করলে কারাগার থেকে মুক্ত হন জালাল।

ওই শিক্ষার্থীর দাবিগুলো হলো— হামলার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি ও প্রশাসনের ক্ষমা প্রার্থনা; অবৈধভাবে বাতিল হওয়া তার বৈধ সিট ফেরত দেওয়া; বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বহিরাগত ও মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্ছেদ করা।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ