যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে ভারতের ১০ সুবিধা
Published: 25th, July 2025 GMT
দীর্ঘ তিন বছর আলোচনার পর ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সই হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার লন্ডনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ডের এই এফটিএ সই করেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চুক্তিটিকে ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুক্তরাজ্যের ‘সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন। এর ফলে যুক্তরাজ্যে ২ হাজার ২০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলেও জানান তিনি। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী এটাকে ‘উভয় দেশের সমৃদ্ধির নকশা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এই এফটিএর ফলে যুক্তরাজ্যের তৈরি গাড়ি, চিকিৎসা সরঞ্জাম, কোমল পানীয় ও প্রসাধনী ভারতে রপ্তানি সহজ হবে। কারণ, গড় শুল্কহার কমে ১৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ হবে। তার বিপরীতে যুক্তরাজ্যের বাজারে ৯৯ শতাংশ রপ্তানি পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে ভারত। শুধু তা–ই নয়, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ভারতীয়দের জন্য যুক্তরাজ্যে কাজের সুযোগ সহজ হবে। অর্থাৎ ভারতীয়দের কর্মসংস্থান বাড়বে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এই এফটিএর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্য রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে ১০ ধরনের সুবিধা পাবে ভারত। সেগুলো হচ্ছে—
১.
শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার
নতুন এফটিএ অনুযায়ী, ভারতের ৯৯ শতাংশ রপ্তানি পণ্য যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। তার বিপরীতে ভারতও যুক্তরাজ্যের ৯০ শতাংশ পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। এসবের মধ্যে ৮৫ শতাংশ পণ্য আগামী দশ বছরের মধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা যাবে।
যুক্তরাজ্যের বাজারে ভারতের বিভিন্ন ধরনের পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। এত দিন সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ, তৈরি পোশাক ও বস্ত্রে ১২ শতাংশ, রাসায়নিক দ্রব্যে ৮ শতাংশ এবং ধাতু রপ্তানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক থাকলেও এখন সেগুলো কমবে। এ ছাড়া ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়েছে, যা এত দিন ছিল ৭০ শতাংশ।
২. চাকরির সুযোগ বাড়বে
পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কারণে ভারতজুড়ে চাকরির সুযোগ বাড়বে। বিশেষ করে শ্রমনির্ভর খাতে যেমন—খেলনা, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র, চামড়াজাত পণ্য, জুতা, সামুদ্রিক পণ্য ইত্যাদি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া রত্ন ও গয়না, প্রকৌশল পণ্য, গাড়ির যন্ত্রাংশ, জৈব রাসায়নিক খাতের রপ্তানি বাড়তে পারে। এতে নতুন নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে।
৩. সস্তা হবে ব্রিটিশ গাড়ি
যুক্তরাজ্যের গাড়ির ভারতের বাজারে প্রবেশে শুল্ক ১০০ শতাংশ থেকে কমে ১০ শতাংশ হবে। যদিও নির্দিষ্ট পরিমাণ গাড়ির ক্ষেত্রে এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া হুইস্কির ওপর শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে কমে প্রথম ধাপে ৭৫ শতাংশ হবে। পরে ১০ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে তা ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
জাগুয়ার, ল্যান্ড রোভারসহ ব্রিটিশ গাড়ির ব্র্যান্ডগুলো আগের চেয়ে কম শুল্কে ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে পারবে। ভারতীয় ক্রেতাদের জন্যও এসব গাড়ির দাম কমবে।
৪. কৃষি খাত ও কৃষকের লাভ
তিন বছরে যুক্তরাজ্যের বাজারে ভারতীয় কৃষিপণ্যের রপ্তানি ২০ শতাংশের বেশি বাড়বে। এর কারণ, ৯৫ শতাংশের বেশি কৃষিপণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। ফলে হলুদের মতো মসলা, গোলমরিচ, এলাচ, আমের মণ্ড, আচার, ডাল, শাকসবজি, সিরিয়াল, রেডি-টু-ইট খাবার ইত্যাদি বিনা শুল্কে দেশটিতে রপ্তানি করতে পারবেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। এতে ভারতীয় কৃষকেরা লাভবান হবেন।
৫. মৎস্য ও সামুদ্রিক পণ্য
চিংড়ি, টুনা মাছ ও মাছের খাবার রপ্তানিতে ৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক থাকলেও এফটিএর কারণে তা পুরোপুরি শূন্য হয়ে যাবে। যুক্তরাজ্যের সামুদ্রিক পণ্যের আমদানি বাজার প্রায় ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের। এই বড় বাজারে এখন ভারতীয় পণ্য রপ্তানিতে বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশ, ওডিশা, কেরালা ও তামিলনাড়ুর মতো উপকূলবর্তী রাজ্যগুলোর জন্য এটি খুবই লাভজনক হবে।
৬. ভারতের ব্র্যান্ডেড পণ্যের বাজার
এফটিএর কারণে ভারতের প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে কোমল পানীয় ও মসলা রপ্তানি বাড়বে। যুক্তরাজ্য এখন ভারত থেকে তাদের চাহিদার ১ দশমিক ৭ শতাংশ কফি, ৫ দশমিক ৬ শতাংশ চা এবং ২ দশমিক ৯ শতাংশ মসলা আমদানি করে। নতুন চুক্তির ফলে ভারতীয় ইনস্ট্যান্ট বা তাৎক্ষণিক কফি প্রস্তুতকারকেরা উচ্চমানের বাজার শ্রেণিতে জার্মান ও স্প্যানিশ সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন করবে।
৭. ওষুধ ও চিকিৎসা খাত
নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের জেনেরিক ওষুধ ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি, ফিন্যান্স, পরামর্শসেবা এবং শিক্ষা খাতেও ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
৮. ভারতীয় পেশাজীবীদের জন্য সুযোগ
এফটিএর কারণে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ভারতীয় নাগরিকদের জন্য যুক্তরাজ্যে কাজ করার সুযোগ সহজ হবে। যোগ্য শিক্ষক, সংগীতজ্ঞ ও রাঁধুনির মতো স্বাধীন পেশাজীবীরা যুক্তরাজ্যে অফিস না থাকলেও ৩৫টি খাতে দুই বছর কাজ করতে পারবেন।
৯. সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা
ভারতীয় কর্মীরা যুক্তরাজ্যে ৩ বছর কাজ করলে তাঁদের আর সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলে দ্বৈত চাঁদা দিতে হবে না। এতে প্রায় ৭৫ হাজার ভারতীয় কর্মী উপকৃত হবেন।
১০. নারীর ক্ষমতায়ন
ভারতের নারীদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, যা তাঁদের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখবে। মহারাষ্ট্রের কোলাপুরি চপ্পলের মতো পণ্য এখন শুল্কমুক্তভাবে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করা যাবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর জ য র দ র জন য এফট এ র ওপর দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
মাদারীপুরের সাবেক দুই ডিসিসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান
শিবচরে পদ্মা সেতু রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মাদারীপুরের সাবেক দুই জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন ও মো. ওয়াহিদুল ইসলামসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় এ সংক্রান্ত নোটিশ মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ অভিযুক্তদের কাছে পাঠিয়েছে ।
দুদক সূত্র জানায়, পদ্মা রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন জন্য দুদক মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামানকে দলনেতা ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান অপুকে সদস্য করে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
খুকৃবির সাবেক উপাচার্যসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুবির নতুন ক্যাম্পাসের জমি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ, তথ্য চেয়েছে দুদক
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৯ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি ৮ অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য এবং চাহিদাপত্র চেয়ে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে তারা হলেন- মাদারীপুর সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওহিদুল ইসলাম, সাবেক জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ ফারুক আহম্মদ, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ঝোটন চন্দ্র, মাদারীপুরের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস।
মোহাম্মদ সুমন শিবলী, প্রমথ রঞ্জন ঘটক, আল মামুন, মো. নাজমুল হক সুমন, মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কানুনগো (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাসির উদ্দিন, মো. আবুল হোসেন, রেজাউল হক এবং মাদারীপুর কালেক্টরেট রেকর্ড রুম শাখার রেকর্ড কিপার মানিক চন্দ্র মন্ডল।
দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, “মাদারীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ও ড. রহিমা খাতুনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তথ্য ও বিভিন্ন চাহিদাপত্র চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নোটিশ অভিযুক্তদের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
ঢাকা/বেলাল/মাসুদ